Table of Contents
ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্প কাকে বলে?
ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্প একটি কগনিটিভ বায়াস বা জ্ঞানীয় পক্ষপাত, যেখানে মানুষ মনে করে যে পৃথিবী ও প্রকৃতি সর্বদাই ন্যায়সঙ্গত এবং প্রত্যেক মানুষ তার কাজের জন্য যথাযথ পুরস্কার বা শাস্তি পায়। এই বিশ্বাস অনুসারে, সৎ ব্যক্তি শেষমেশ পুরস্কৃত হন, এবং অন্যায়কারী শাস্তি পান। কোন অলৌকিক উপায়ে প্রকৃতি সবকিছুর হিসেব নিকেশ রাখে, এবং যথাযথভাবে সব বিচার হয়! এই ধারণা একটি মানসিক শান্তি ও নিরাপত্তা দেয় যে, সমাজে কোনো অপ্রত্যাশিত বা অন্যায় ঘটনা ঘটলেও, তা ন্যায়সঙ্গতভাবে সমাধান হবে। যদিও বাস্তবে এমনটি প্রায়শই ঘটে না। এই অনুকল্পটি মানুষের বিচারক্ষমতাকে প্রভাবিত করে এবং নানা রকম কুযুক্তি বা বিকৃত ধারণার জন্ম দেয়।
ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্প অনেক সময় সমাজে গভীরভাবে প্রোথিত এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক আচরণের ক্ষেত্রে এটি প্রচণ্ড প্রভাব ফেলে। বিশেষত যখন মানুষ কোনো অপ্রত্যাশিত বা অন্যায় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তখন তারা সহজেই অন্যায়কে সঠিক বলে প্রতিষ্ঠিত করতে “ন্যায্য বিশ্ব” ধারণাটি ব্যবহার করে। এর ফলে ভিক্টিম ব্লেমিং বা ভুক্তভোগীকে দায়ী করার প্রবণতা দেখা যায়। এই ধারণার সঙ্গে যুক্ত কিছু কুযুক্তি উদাহরণসহ নিচে আলোচনা করা হলো:
উদাহরণসমূহ
উদাহরণ ১:
- দাবী: ধর্ষণের শিকার মেয়েটি যদি এতো রাতে একা বাইরে না যেত, তাহলে তার এই পরিস্থিতি হতো না।
এখানে ভিক্টিম ব্লেমিং দেখা যায়। সমাজের রক্ষণশীল কিছু মানুষ মনে করে যে, ধর্ষণ বা অন্য যে কোনো অপরাধমূলক ঘটনার শিকার হওয়া আক্রান্ত ব্যক্তির দোষেই ঘটেছে, এবং এর মাধ্যমে অপরাধীকে ন্যায়সঙ্গতভাবে দায়মুক্ত করা হয়। ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্প অনুযায়ী, মেয়েটির সাথে খারাপ কিছু ঘটেছে, কারণ সে কিছু না কিছু ভুল করেছে বা তার এটা প্রাপ্য ছিল! কিন্তু এটি এক ধরনের কুযুক্তি, যেখানে অপরাধের প্রকৃত দায় অপরাধীর উপর না দিয়ে, ভুক্তভোগীর উপর চাপানো হয়। একইসাথে, এটি একটি সামাজিক ধারণা তৈরি করে, যেখানে বিচারহীনতা ও আক্রান্তকেই দোষারোপ করার বাজে সংস্কৃতি বিকশিত হয়।
উদাহরণ ২:
- দাবী: গরিব মানুষরা গরিবই থাকে, কারণ তারা পরিশ্রম করে না।
এই কুযুক্তির মাধ্যমে বলা হচ্ছে, গরিব হওয়া গরিব মানুষের নিজস্ব দোষ। অথচ দারিদ্র্যের পেছনে জটিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং রাজনৈতিক কারণ থাকে, যা কোনো ব্যক্তির পরিশ্রমের অভাবের সাথে সম্পর্কিত নাও হতে পারে। হয়তো কেউ খুব দরিদ্র পরিবারে জন্মেছে, যার ফোলে সে ভালভাবে পড়ালেখার সুযোগটিই পায়নি। ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের কারণে, মানুষ মনে করে যে কেউ যদি কষ্ট পায় বা গরিব থাকে, তাহলে সেটি তার প্রাপ্য, এবং সে নিজেই তার দুরবস্থার জন্য দায়ী।
উদাহরণ ৩:
- দাবী: ধনী ব্যক্তি সবসময়ই তার সাফল্যের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন, তাই সে ধনী হয়েছে।
এখানে ধনী ব্যক্তির সফলতার পুরো কৃতিত্ব তাকে দেওয়া হয়, এবং বলা হয় যে তার পরিশ্রমই তার সফলতার একমাত্র কারণ। তবে বাস্তবে অনেক সময় বিভিন্ন সামাজিক সুবিধা, পিতামাতার সহায়তা বা অন্যান্য বাহ্যিক কারণও মানুষের সফলতার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের কারণে মানুষ সহজেই বিশ্বাস করতে চায় যে সব ধনী মানুষ তাদের ধনসম্পদ অর্জন করেছেন শুধুমাত্র নিজেদের পরিশ্রমের ফলে, যা সর্বদা সত্য নয়।
উদাহরণ ৪:
- দাবী: কেউ যদি অপরাধ করে এবং শাস্তি না পায়, তাহলে ঈশ্বর বা কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি তাকে একদিন শাস্তি দেবে।
এটি এক ধরনের কাল্পনিক বিশ্বাস, যা ন্যায়সঙ্গত বিশ্বে বিশ্বাসের একটি রূপ। যদিও বাস্তবে অপরাধীরা অনেক সময় শাস্তি পায় না, মানুষ মনে করে যে কোনো অলৌকিক শক্তি তাদের শাস্তি দেবে। এই জীবনে না হলে পরকালে তারা শাস্তি পাবে! এই বিশ্বাসের কারণে মানুষ অনেক সময় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে চুপ করে থাকে, বা অবহেলা করে। এবং অপরাধের প্রকৃত শাস্তির ব্যবস্থা করার জন্য কোনো পদক্ষেপ নেয় না। যেমন ধরুন, মাদ্রাসায় একটি বালক তার শিক্ষক দ্বারা ধর্ষণের শিকার হলো। সে তার বাবামাকে বিষয়টি জানাবার পরে, বাবামা আইনের শরণাপন্ন হওয়ার বদলে তাকে বোঝাল যে, এর বিচার আল্লাহই একদিন করবে। বা পরকালে ঐ হুজুরের কঠিন বিচার হবে। এরকম বিশ্বাসের কারণে তারা আর আইন বা বিচার ব্যবস্থার ঝামেলার মধ্যে যেতে চাইবে না। যার ফলাফল হিসেবে ঐ শিক্ষক হয়তো আর কয়েকজন বালককে ধর্ষণ করবে। অথচ, ঐ পিতামাতা শুরুতেই আইনের শরণাপন্ন হলে এরকম পরিস্থিতি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব হতো!
উদাহরণ ৫:
- দাবী: ঐ ব্যাক্তি এতদিন অসুস্থ ছিল কারণ সে কোনো পাপ করেছিল, আর এটি তার শাস্তি।
এই ধরণের ধারণা সামাজিক ও কাল্পনিক বিশ্বাসের অংশ, যেখানে অসুস্থতা বা বিপদকে পাপের ফল হিসেবে গণ্য করা হয়। বাস্তবিকভাবে অসুস্থতা বা শারীরিক কষ্ট বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে শারীরিক অসুস্থতা বা জিনগত কারণে কোনো রোগের সম্ভাবনাও থাকতে পারে। কিন্তু ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের কারণে মানুষ মনে করে যে, সেই ব্যক্তি নিশ্চয়ই কিছু ভুল করেছে যার ফলে সে শারীরিক কষ্ট পাচ্ছে।
ইসলামের বিবরণ
আসুন কোরআন ও হাদিসের কিছু বক্তব্য পড়ে নিই, [1] [2] [3] [4] [5]
আল্লাহ যদি তাঁর সকল বান্দাহদের জন্য রিযক পর্যাপ্ত করে দিতেন, তাহলে তারা অবশ্যই যমীনে বিদ্রোহ সৃষ্টি করত; কিন্তু তিনি একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে যতটুকু ইচ্ছে নাযিল করেন। তিনি তাঁর বান্দাহদের সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল, তিনি তাদের প্রতি সর্বদা দৃষ্টি রাখেন।
— Taisirul Quran
আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে জীবনোপকরণের প্রাচুর্য দিলে তারা পৃথিবীতে অবশ্যই বিপর্যয় সৃষ্টি করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছা মত সঠিক পরিমানেই দিয়ে থাকেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সম্যক জানেন ও দেখেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর আল্লাহ যদি তার বান্দাদের জন্য রিয্ক প্রশস্ত করে দিতেন, তাহলে তারা যমীনে অবশ্যই বিদ্রোহ করত। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট পরিমাণে যা ইচ্ছা নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে পূর্ণ অবগত, সম্যক দ্রষ্টা।
— Rawai Al-bayan
আর যদি আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদের রিযিক প্রশস্ত করে দিতেন, তবে তারা যমীনে অবশ্যই সীমালংঘন করত; কিন্তু তিনি তাঁর ইচ্ছেমত পরিমানেই নাযিল করে থাকেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক অবহিত ও সর্বদ্ৰষ্টা।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আল্লাহ রিযক সম্প্রসারিত করেন যার জন্য ইচ্ছে করেন, আর যার জন্য চান সীমিত পরিমাণে দেন। তারা পার্থিব জীবনে আনন্দে মেতে আছে অথচ আখেরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন অতি নগণ্য বস্তু।
— Taisirul Quran
আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন তার জীবনোপকরণ বর্ধিত করেন কিংবা সংকুচিত করেন; কিন্তু তারা পাথির্ব জীবন নিয়েই উল্লসিত, অথচ ইহজীবনতো পরজীবনের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র।
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন রিযক বাড়িয়ে দেন এবং সঙ্কুচিত করেন। আর তারা দুনিয়ার জীবন নিয়ে উৎফুল্লতায় আছে, অথচ আখিরাতের তুলনায় দুনিয়ার জীবন খুবই নগণ্য।
— Rawai Al-bayan
আল্লাহ্ যার জন্য ইচ্ছে তার জীবনোপকরণ বৃদ্ধি করেন এবং সংকুচিত করেন; কিন্তু এরা দুনিয়ার জীবন নিয়েই আনন্দিত, অথচ দুনিয়ার জীবন তো আখিরাতের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগমাত্র [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
যারা অবিশ্বাস করেছে তাদের পার্থিব জীবন সুশোভিত করা হয়েছে এবং তারা বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে উপহাস করে থাকে, এবং যারা ধর্মভীরু তাদেরকে উত্থান দিনে সমুন্নত করা হবে; এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন অপরিমিত জীবিকা দান করে থাকেন।
— Sheikh Mujibur Rahman
যারা কুফরী করেছে, দুনিয়ার জীবনকে তাদের জন্য সুশোভিত করা হয়েছে। আর তারা মুমিনদের নিয়ে উপহাস করে। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে, তারা কিয়ামত দিবসে তাদের উপরে থাকবে। আর আল্লাহ যাকে চান, বেহিসাব রিয্ক দান করেন।
— Rawai Al-bayan
যারা কুফুরী করে তাদের জন্য দুনিয়ার জীবন সুশোভিত করা হয়েছে এবং তারা মুমিনদেরকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে থাকে। আর যারা তাকওয়া অবলম্বন করে কেয়ামতের দিন তারা তাদের উর্ধ্বে থাকবে। আর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছে অপরিমিত রিযিক দান করেন।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
যমীনে বিচরণশীল এমন কোন জীব নেই যার জীবিকার দায়িত্ব আল্লাহর উপর নেই, তিনি জানেন তাদের থাকার জায়গা কোথায় আর কোথায় তাদেরকে (মৃত্যুর পর) রাখা হয়, সব কিছুই আছে সুস্পষ্ট লিপিকায়।
— Taisirul Quran
আর ভূ-পৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নেই যাদের রিয্ক আল্লাহর যিম্মায় না রয়েছে, আর তিনি প্রত্যেকের দীর্ঘ অবস্থানের স্থান এবং অল্প অবস্থানের স্থানকে জানেন, সবই কিতাবে মুবীনে (লাউহে মাহফুযে) রয়েছে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর যমীনে বিচরণকারী প্রতিটি প্রাণীর রিয্কের দায়িত্ব আল্লাহরই এবং তিনি জানেন তাদের আবাসস্থল ও সমাধিস্থল* । সব কিছু আছে স্পষ্ট কিতাবে**। * এখানে مستقر বা আবাসস্থল বলতে মাতৃগর্ভে অবস্থান মতান্তরে মৃত্যু পর্যন্ত দুনিয়ায় অবস্থানকে বুঝানো হয়েছে। আর مستودع দ্বারা কবরস্থ করার স্থান মতান্তরে জন্মের পূর্বে পিতৃমেরুদন্ডে অবস্থান কিংবা মৃত্যুর সময় বা স্থান বুঝানো হয়েছে।
— Rawai Al-bayan
আর যমীনে বিচরণকারী সবার জীবিকার [১] দায়িত্ব আল্লাহ্রই [২] এবং তিনি সেসবের স্থায়ী ও অস্থায়ী অবস্থিতি [৩] সম্বন্ধে অবহিত; সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে আছে [৪]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৪/ দুনিয়াবী ভোগবিলাসের প্রতি অনাসক্তি
পরিচ্ছেদঃ ৩৩. আল্লাহ তা’আলার উপর পুরোপরি নির্ভরশীল হওয়া
২৩৪৪। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা যদি প্রকৃতভাবেই আল্লাহ্ তা’আলার উপর নির্ভরশীল হতে তাহলে পাখিদের যেভাবে রিযিক দেয়া হয় সেভাবে তোমাদেরকেও রিযিক দেয়া হতো। এরা সকালবেলা খালি পেটে বের হয় এবং সন্ধ্যা বেলায় ভরা পেটে ফিরে আসে।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৪১৬৪)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। আমরা এই হাদীসটি শুধুমাত্র উপরোক্ত সূত্রেই জেনেছি। আবূ তামীম আল-জাইশানীর নাম আবদুল্লাহ ইবনু মালিক।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)
আসুন প্রখ্যাত আলেম আহমদুল্লাহর কিছু বক্তব্য শুনে নিই,
তাহলে, অপুষ্টির শিকার এই বালকটির রিজিক কে সংকুচিত করে দিয়েছে? তার রিজিক কে সীমিত করে দিয়েছে?

আবার ধরুন, ছয়মাসের একটি বাচ্চা মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ম অনুসারে, ছয়মাসের এই বাচ্চাটির সাথে এ কেমন পরীক্ষা? নাকি, এই শিশুরাই তাদের অবস্থার জন্য দায়ী? অনেক ধার্মিক মানুষই মনে করেন, এগুলো এই মানুষদেরই কর্মফল, পরীক্ষা অথবা যা হচ্ছে ভালোর জন্যেই হচ্ছে!
ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের প্রভাব ও পরিণতি
ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্প মানুষের মানসিকতায় গভীরভাবে প্রোথিত একটি কগনিটিভ বায়াস। এটি মানুষকে সামাজিক বিচ্যুতির প্রতি অসংবেদনশীল করে তোলে এবং অনেক সময় অন্যায় বা অবিচারকেও ন্যায্য বলে প্রতিষ্ঠিত করে। এর ফলে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেয়:
- ভিক্টিম ব্লেমিং: ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করার প্রবণতা তৈরি হয়। যেমন ধর্ষণ, নির্যাতন, বা সামাজিক অবিচারের শিকার মানুষদের দোষী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- অপরাধের প্রতি সমর্থন: অপরাধীদের শাস্তি না পাওয়ার ক্ষেত্রে ন্যায়সঙ্গত পৃথিবী বিশ্বাস করে অপরাধকে মেনে নেওয়া হয়। মানুষ মনে করে যে, অপরাধীকে তার প্রাপ্য শাস্তি না দেওয়া হলেও, কোনো অতিপ্রাকৃত শক্তি একদিন তাকে শাস্তি দেবে।
- সামাজিক অসংবেদনশীলতা: সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের প্রতি অসংবেদনশীল মনোভাব তৈরি হয়। গরীব বা দুর্বলদের নিজেদের দোষে তাদের অবস্থান বলে মনে করা হয়, এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি কমে যায়।
উপসংহার
ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্প একটি বিপজ্জনক কগনিটিভ বায়াস, যা মানুষের নৈতিক বিচারক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। এটি মানুষকে এমন একটি ভুল ধারণা দেয় যে পৃথিবী ন্যায়সঙ্গত, এবং প্রত্যেক ব্যক্তি তার কাজের জন্য প্রাপ্য পুরস্কার বা শাস্তি পায়। এই ধারণার মাধ্যমে মানুষ সহজেই অন্যায় বা অবিচারকে ন্যায্যতা দিতে পারে, এবং ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করে। সমাজে সমানাধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য এই কুযুক্তি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন, এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার পরিস্থিতি ও দায়িত্ব সঠিকভাবে বিচার করা উচিত।
Note: The post content was very long; a truncated portion was analyzed.
### তথ্যগত সঠিকতা
- **তথ্যসূত্রের উপস্থিতি:** প্রবন্ধে কোরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে, যা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের ব্যাখ্যা প্রদান করে। তবে, এই উদ্ধৃতিগুলি প্রবন্ধের মূল যুক্তির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।
- **যাচাইযোগ্যতা:** ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের বর্ণনা এবং উদাহরণগুলি সাধারণত মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক গবেষণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, কিছু দাবির জন্য নির্দিষ্ট গবেষণা বা পরিসংখ্যানের উল্লেখ নেই, যেমন ভিক্টিম ব্লেমিং বা সামাজিক অসংবেদনশীলতার প্রভাব।
### যুক্তির গঠন
- **যুক্তির প্রবাহ:** প্রবন্ধের যুক্তি সুসংগঠিত এবং ধারাবাহিক। উদাহরণগুলি ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছে।
- **যুক্তির ভ্রান্তি:** কিছু ক্ষেত্রে সাধারণীকরণ দেখা যায়, যেমন "সমাজের রক্ষণশীল কিছু মানুষ মনে করে" ধরনের বক্তব্যে। এটি কিছুটা স্ট্রোম্যান ফ্যালাসির দিকে ইঙ্গিত করে।
### স্পষ্টতা ও নিরপেক্ষতা
- **স্পষ্টতা:** ভাষা সহজবোধ্য এবং উদাহরণগুলি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
- **নিরপেক্ষতা:** প্রবন্ধটি নিরপেক্ষভাবে ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের নেতিবাচক প্রভাবগুলি আলোচনা করেছে। তবে, ধর্মীয় উদ্ধৃতিগুলি নিরপেক্ষতার কিছুটা ব্যত্যয় ঘটাতে পারে।
### মূল শক্তি
- **উদাহরণ:** প্রবন্ধে বিভিন্ন উদাহরণ ব্যবহার করে ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের প্রভাবগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যা পাঠকের জন্য বিষয়টি সহজবোধ্য করে তোলে।
- **সমাজবিজ্ঞানী দৃষ্টিকোণ:** প্রবন্ধটি সমাজবিজ্ঞানী দৃষ্টিকোণ থেকে ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের প্রভাবগুলি বিশ্লেষণ করেছে।
### মূল দুর্বলতা ও সুপারিশ
- **উৎসের অভাব:** কিছু দাবির জন্য নির্দিষ্ট গবেষণা বা পরিসংখ্যানের অভাব রয়েছে। এই ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট গবেষণা বা পরিসংখ্যান উল্লেখ করা উচিত।
- **ধর্মীয় উদ্ধৃতি:** ধর্মীয় উদ্ধৃতিগুলি প্রবন্ধের মূল যুক্তির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এবং নিরপেক্ষতা ব্যাহত করতে পারে। এগুলি বাদ দিয়ে প্রবন্ধটি আরও নিরপেক্ষ হতে পারে।
### সারাংশ রায়
- **তথ্যগত সঠিকতা:** ৭/১০
- **যুক্তির গুণমান:** ৮/১০
- **উৎসব্যবহার:** ৬/১০
- **সামগ্রিক স্কোর:** ৭/১০
প্রবন্ধটি ন্যায্য বিশ্ব অনুকল্পের নেতিবাচক প্রভাবগুলি ভালোভাবে তুলে ধরেছে, তবে আরও নির্দিষ্ট গবেষণা ও পরিসংখ্যানের উল্লেখ প্রবন্ধটিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
