আমাদের সমাজে এমন অনেক নারী বা পুরুষকে পাওয়া যায় যারা আমাদের দৃষ্টিতে একটু খারাপ ভাষা ব্যবহার করে। ছোটবেলা আমাদের বাসাতেও একজন কাজের মহিলা ছিলেন, যার মুখের ভাষা ছিল অত্যন্ত বাজে। আসলে এই বিষয়গুলো বেশিরভাগ সময়ই নির্ভর করে একজন মানুষের বেড়ে ওঠা, পারিবারিক শিক্ষা এবং পরিবেশের ওপর। একজন বস্তিবাসী মানুষের কাছ থেকে সভ্য এবং সুন্দর ভাষা আমরা কেউই আশা করি না। আমরা বুঝি যে, উনার পরিবেশ পরিস্থিতি হয়তো এমন ছিল না যে, উনি সভ্য ভদ্র ও ভালো ভাষায় কথা বলতে ছোটবেলা থেকেই শিখবেন। কিন্তু আমরা কখনই এরকম অতি সামান্য বিষয়ের কারণে কাউকে শাস্তি দিই না। আমরা গালি পছন্দ করি না, কিন্তু গালি দিলে কাউকে মেরেও ফেলি না। কারণ গালি দেয়া অনৈতিকভাবে সঠিক না হলেও, কোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ নয়। এর মাধ্যমে কারো কোন দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে না। আজপকের সোশ্যাল মিডিয়াতে অনেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে গালি দেন, অনেকে জাতিসংঘ কিংবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেও গালি দেন। অনেকে আমাকে গালি দেন। আমি সেগুলো পছন্দ করি না, কিন্তু খুব বেশি হলে আমি যেটি করতে পারি, তা হচ্ছে সেই ব্যক্তিকে ব্লক করে দেয়া, কিংবা গালি দেয়ার জন্য একটি রিপোর্ট করা। তাকে খুঁজে বের করে কতল করি না। কারণ এগুলো কোন শাস্তিযোগ্য অপরাধ না।
নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করুন। হাদিসটিতে একজন অন্ধ ব্যক্তির ক্রীতদাসী, যার পেতে সেই অন্ধ সাহাবী বাচ্চা জন্ম দিয়েছে, তাকে সে খুব নির্মমভাবে হত্যা করে, শুধুমাত্র নবী-কে গালি দেওয়ার কারণে। নবী মুহাম্মদ পরবর্তীতে এই কথা জানতে পেরে খুশী হন, এবং এই হত্যাকাণ্ডকে বৃথা বলে উল্লেখ করেন। নবী মুহাম্মদ যে তাকে গালি দেয়া কিংবা তার সমালোচনা করা সকলের প্রতি সীমাহীন পাষণ্ড এবং বর্বর ছিলেন, এই হাদিসটি তার জলন্ত প্রমাণ [1] [2] [3] [4] [5] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
পাবলিশারঃ আল্লামা আলবানী একাডেমী
অধ্যায়ঃ ৩৩/ অপরাধ ও তার শাস্তি
পরিচ্ছদঃ ২. যে নবী (ﷺ)-কে গালি দেয় তার সম্পর্কিত বিধান
৪৩৬১। ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। জনৈক অন্ধ লোকের একটি উম্মু ওয়ালাদ’ ক্রীতদাসী ছিলো। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালি দিতো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতো। অন্ধ লোকটি তাকে নিষেধ করা সত্ত্বেও সে বিরত হতো না। সে তাকে ভৎর্সনা করতো; কিন্তু তাতেও সে বিরত হতো না। এক রাতে সে যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে গালি দিতে শুরু করলো এবং তাঁর সম্পর্কে মন্দ কথা বলতে লাগলো, সে একটি একটি ধারালো ছোরা নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করলো। তার দু’ পায়ের মাঝখানে একটি শিশু পতিত হয়ে রক্তে রঞ্জিত হলো। ভোরবেলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘটনাটি অবহিত হয়ে লোকজনকে সমবেত করে বলেনঃ আমি আল্লাহর কসম করে বলছিঃ যে ব্যক্তি একাজ করেছে, সে যদি না দাঁড়ায় তবে তার উপর আমার অধিকার আছে।
একথা শুনে অন্ধ লোকটি মানুষের ভিড় ঠেলে কাঁপতে কাঁপতে সামনে অগ্রসর হয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে এসে বসে বললো, হে আল্লাহর রাসূল! আমি সেই নিহত দাসীর মনিব। সে আপনাকে গালাগালি করতো এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বলতো। আমি নিষেধ করতাম; কিন্তু সে বিরত হতো না। আমি তাকে ধমক দিতাম; কিন্তু সে তাতেও বিরত হতো না। তার গর্ভজাত মুক্তার মতো আমার দু’টি ছেলে আছে, আর সে আমার খুব প্রিয়পাত্রী ছিলো। গত রাতে সে আপনাকে গালাগালি শুরু করে এবং আপনার সম্পর্কে অপমানজনক কথা বললে, আমি তখন একটি ধারালো ছুরি নিয়ে তার পেটে স্থাপন করে তাতে চাপ দিয়ে তাকে হত্যা করে ফেলি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাকো, তার রক্ত বৃথা গেলো।(1)
সহীহ।
(1). নাসায়ী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৩/ শাস্তির বিধান
পরিচ্ছেদঃ ২. নবী (ﷺ) এর মর্যাদাহানিকারী ব্যক্তির শাস্তি সম্পর্কে।
৪৩১০. আব্বাদ ইব্ন মূসা (রহঃ) …. ইব্ন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ কোন এক অন্ধ ব্যক্তির একটি দাসী ছিল। সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে বেয়াদবিসূচক কথাবার্তা বলতো। সে অন্ধ ব্যক্তি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতো, কিন্তু সে তা মানতো না। সে ব্যক্তি তাকে ধমকাতো, তবু সে তা থেকে বিরত হতো না। এমতাবস্থায় এক রাতে যখন সে দাসী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শানে অমর্যাদাকর কথাবার্তা বলতে থাকে, তখন ঐ অন্ধ ব্যক্তি একটি ছোরা নিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে, যার ফলে সে দাসী মারা যায়। এ সময় তার এক ছেলে তার পায়ের উপর এসে পড়ে, আর সে যেখানে বসে ছিল, সে স্থানটি রক্তাপ্লুত হয়ে যায়।
পরদিন সকালে এ ব্যাপারে যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আলোচনা হয়, তখন তিনি সকলকে একত্রিত করে বলেনঃ আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করে এ ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই এবং ইহা তার জন্য আমার হক স্বরূপ। তাই, যে ব্যক্তি তাকে হত্যা করেছে, সে যেন দাঁড়িয়ে যায়। সে সময় অন্ধ লোকটি লোকদের সারি ভেদ করে প্রকম্পিত অবস্থায় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে গিয়ে বসে পড়ে এবং বলেঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি তার হন্তা।
সে আপনার সম্পর্কে কটুক্তি ও গালি-গালাজ করতো। আমি তাকে এরূপ করতে নিষেধ করতাম ও ধমকাতাম। কিন্তু সে তার প্রতি কর্ণপাত করতো না। ঐ দাসী থেকে আমার দু’টি সন্তান আছে, যারা মনি-মুক্তা সদৃশ এবং সেও আমার প্রিয় ছিল। কিন্তু গত রাতে সে যখন পুনরায় আপনার সম্পর্কে কটুক্তি গাল-মন্দ করতে থাকে, তখন আমি আমার উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলি এবং ছোরা দিয়ে তার পেটে প্রচন্ড আঘাত করে তাকে হত্যা করি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক যে, ঐ দাসীর রক্ত ক্ষতিপূরণের অযোগ্য বা মূল্যহীন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
বুলুগুল মারাম
পর্ব – ৯ঃ অপরাধ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছেদঃ ৪. সম্পদ রক্ষার্থে নিহত হওয়া ব্যক্তি প্রসঙ্গে – নাবী (ﷺ) এর নিন্দাকারীদেরকে হত্যা করা আবশ্যক
১২০৪। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত; কোন এক অন্ধ সাহাবীর একটা সন্তানের মাতা দাসী ছিল, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে গালি দিত এবং তাঁর প্রসঙ্গে অশোভনীয় মন্তব্য করত। সাহাবী তাকে নিষেধ করতেন কিন্তু সে বিরত হত না। এক রাত্রে অন্ধ সাহাবী (তার এরূপ দুব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে) কুড়ালি জাতীয় এক অস্ত্র দিয়ে ঐ দাসীর পেটে বাসিয়ে দেন ও তার উপর বসে যান ও তাকে হত্যা করে ফেললেন। এ সংবাদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকটে পৌছালে তিনি বলেন: তোমরা সাক্ষী থাক, এ খুন বাতিল এ জন্য কোন খেসারত দিতে হবে না।[1]
[1] আবূ দাউদ ৪৩৬১, নাসায়ী ৪০৭০।
ইকরিমাহ (রহঃ) হতে। তিনি বলেন, ‘আলী (রাঃ)-এর কাছে একদল ফিন্দীককে (নাস্তিক ও ধর্মত্যাগীকে) আনা হল। তিনি তাদেরকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিলেন। এ ঘটনা ইবনু আব্বাস (রাঃ)-এর কাছে পৌছলে তিনি বললেন, আমি কিন্তু তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলতাম না। কেননা, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিষেধাজ্ঞা আছে যে, তোমরা আল্লাহর শাস্তি দ্বারা শাস্তি দিও না। বরং আমি তাদেরকে হত্যা করতাম। কারণ, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশ আছে ……………. অতঃপর উপরোক্ত হাদীসটি বর্ণনা করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সুনান আন-নাসায়ী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৮/ হত্যা অবৈধ হওয়া
পরিচ্ছেদঃ ১৬. রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে মন্দ বলার শাস্তি
৪০৭১. উসমান ইবন আবদুল্লাহ (রহঃ) … উসমান শাহহাম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক অন্ধ লোকের চালক ছিলাম। একদা তাকে নিয়ে ইকরিমার কাছে গেলাম। তিনি আমাদের কাছে বর্ণনা করলেন যে, ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সময় এক অন্ধ লোক ছিল। তার এক দাসী ছিল, যার গর্ভে তার দুই ছেলে জন্মে। সে দাসী সর্বদাই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা উল্লেখ করে তাঁকে মন্দ বলতো। অন্ধ ব্যক্তিটি তাকে এজন্য তিরস্কার করতো, কিন্তু সে তাতে কর্ণপাত করত না। তাকে নিষেধ করত, কিন্তু তবুও বিরত হত না। অন্ধ লোকটি বলেন, একরাত্রে আমি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কথা উল্লেখ করলে সে তার নিন্দা করতে শুরু করল। আমার তা সহ্য না হওয়ায় আমি একটি হাতিয়ার নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলাম। তাতে সে মারা গেল।
ভোরে লোক তাকে মৃতাবস্থায় দেখে ব্যাপারটি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমতে জানাল। তিনি সকল লোককে একত্র করে বললেনঃ আমি আল্লাহর কসম দিয়ে ঐ ব্যক্তিকে বলছি, যে এমন কাজ করেছে সে আসুক। একথা শুনে ঐ অন্ধ ব্যক্তি ভয়ে উঠে এসে হাযির হলেন এবং বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি এই কাজ করেছি। সে আমার বাদী ছিল, আমার অত্যন্ত স্নেহশীলা ছিল, সঙ্গিণী ছিল। তার গর্ভের আমার দুটি ছেলে রয়েছে, যারা মুক্তাসদৃশ। কিন্তু সে প্রায় আপনাকে মন্দ বলতো, গালি দিত। আমি নিষেধ করলেও সে কর্ণপাত করতো না। তিরস্কার করলেও সে নিবৃত্ত হতো না। অবশেষে গত রাতে আমি আপনার উল্লেখ করলে সে আপনাকে মন্দ বলতে আরম্ভ করল। আমি একটি অস্ত্র উঠিয়ে তার পেটে রেখে চেপে ধরি, তাতে সে মারা যায়। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা সাক্ষী থাক, ঐ দাসীর রক্তের কোন বিনিময় নেই।
তাহক্বীকঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উসমান শাহহাম (রহঃ)
এবারে আসুন আমরা আলেমদের মুখ থেকে বিষয়গুলো আরও ভালভাবে জেনে নিই,