কোরআনের আয়াত সমূহ দ্বারা বিভিন্ন তাফসীরকারক এবং কোরআন বিশেষজ্ঞ তাদের তাফসীর গ্রন্থগুলোতে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, “ইহুদিদের মধ্যে কোন ভাল মানুষ থাকা সম্ভব নয়, একইসাথে তাদের দ্বারা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কখনো সম্ভব নয়!” এই কারণেই মুসলিমদের মধ্যে একটি বিরাট অংশ আজও ইসরাইল রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয় না। কারণ তা দিলে কোরআনের এই সম্পর্কিত আয়াতগুলো ভুল প্রমাণিত হবে। এই অত্যন্ত জাতিবিদ্বেষী এবং সাম্প্রদায়িক বক্তব্য অত্যন্ত নিন্দনীয়। কোরআনকে জেদ করে সঠিক প্রমাণের জন্য আজও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে। নিহত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ নিরাপরাধ মানুষ। আরব বিশ্বের বড় অংশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের রাস্তা কখনই বাস্তবায়ন হতে দেবে না, কারণ সেটি তারা করলে কোরআনের অবমাননা হবে বলে মনে করে। তাই ইসলামী বিশ্বাসীকে রক্ষায় তারা এখনো যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছে, হয়তো যুদ্ধ করেই যাবে [1]
১৯০
তাফসীরে জালালাইন : আরবি-বাংলা, প্রথম খণ্ড
এজন্যই এমন কোনো ইহুদি পাওয়া যাবে না, যে মনের দিক থেকে ধনী। পৃথিবীর সকল ধর্মালম্বীদের মাঝে ইহুদিদের চেয়ে সম্পদের প্রতি অধিক লোভী কাউকে দেখা যায় না।
…
মোদ্দাকথা ইহুদিদের লাঞ্ছনা ও অসহায়তার মধ্যে এটাও একটি যে, কিয়ামত পর্যন্ত তাদের থেকে রাজত্ব ছিনিয়ে নেওয় হয়েছে। যদি অন্যায়ভাবে চিল্লা-ফাল্লা করে কোথাও জমিনের কোনো অংশ শুধু কাগজে বা পত্র-পত্রিকায় দখল করে নেয় এবং সেটাও অন্যান্য রাষ্ট্রের সাহায্যে ও উস্কানিতে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্যের অধীনে। তবে সেটাকে কোনো বুদ্ধিমান ব্যক্তি রাষ্ট্র বলতে পারে না। তা সত্ত্বেও জগদ্বাসীর দৃষ্টিতে অপদস্থাবস্থায় থাকা ইজ্জত ও সম্মানের ক্ষেত্রে স্থান না পাওয়া যা লাঞ্ছনার মূল। তারপরও তা থেকে যাবে। সুতরাং এ ভবিষ্যদ্বাণীকে আজো পর্যন্ত ইতিহাস মিথ্যা সাব্যস্ত করতে পারেনি।
[ইহুদিদের জন্য চিরস্থায়ী লাঞ্ছনার অর্থ ইহকালে চিরস্থায়ী লাঞ্ছনা-গঞ্জনা এবং ইহকাল ও পরকালে খোদায়ী গজবও রোষে পতিত থাকবে । আল্লামা ইবনে কাছীরের ভাষায়: তারা যত ধন সম্পদের অধিকারীই হোক না কেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে তুচ্ছ ও নগণ্য বলে বিবেচিত থাকবে। যার সংস্পর্শে যাবে, সেই তাদেরকে অপমাণিত করবে এবং তাদেরকে দাসত্বের শৃঙ্খলে জড়িয়ে রাখবে।
প্রশ্ন: পবিত্র কুরআনের আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, ইহুদিদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কখনও সম্ভব হবে না। অথচ বাস্তবে দেখা যাচ্ছে যে, ফিলিস্তীনে তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
উত্তর: বিষয়টি অত্যন্ত সুস্পষ্ট। কেননা ফিলিস্তীন ইহুদিদের বর্তমান রাষ্ট্রের নিগুঢ়তত্ত্ব সম্পর্কে যারা সম্যক অবগত, তারা ভালোভাবে জানেন যে, এ রাষ্ট্র প্রকৃত পক্ষে ইসরাঈলের নয়; বরং আমেরিকা ও বৃটেনের একটি ঘাঁটি ছাড়া অন্য কিছু নয়। পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান শক্তি ইসলামি বিশ্বকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তাদের মাঝখানে ইসরাঈল নাম দিয়ে একটি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছে । এটা আমেরিকা ও ইউরোপীয়দের দৃষ্টিতে একটি অনুগত আজ্ঞাবহ ষড়যন্ত্রের কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনো গুরুত্ব বহন করে না। সুতরাং বর্তমান ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কারণে কুরআনে পাকের কোনো আয়াত সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সন্দেহেরও অবকাশ সৃষ্টি হতে পারে না ।

তথ্যসূত্রঃ
- তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৯০ ↩︎
