ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, মাছির এক ডানায় রোগ এবং অপর ডানায় আরোগ্য থাকে—এই ধারণাটি সম্পূর্ণরূপে অবৈজ্ঞানিক এবং মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর। বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, নবী মুহাম্মদ যদি কোনো খাবার বা পানীয়ে মাছি পড়ে, তবে সেটিকে সম্পূর্ণভাবে ডুবিয়ে নেওয়ার পর তা খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পেছনে যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে যে, মাছির এক ডানায় রোগ এবং অন্য ডানায় আরোগ্য বা শিফা রয়েছে। এই অন্ধবিশ্বাসটি শুধু ইসলাম ধর্মীয় ভাবাবেগের সাথে জড়িত নয়, বরং এটি জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি গুরুতর হুমকি। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত, মাছি খাদ্য বা পানীয়তে পড়লে তা বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু যেমন, Salmonella, E. coli, এবং Staphylococcus বহন করে, যা খাদ্যদ্রব্যকে দূষিত করে এবং খাদ্যবাহিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। ফলে, মাছিকে খাবার বা পানিতে সম্পূর্ণরূপে ডুবিয়ে খাওয়ার নির্দেশ বাস্তবিক অর্থে অসুস্থতা এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মাছি অত্যন্ত দূষিত পরিবেশে বসবাস করে এবং তার শরীরের প্রতিটি অংশে প্রচুর পরিমাণে জীবাণু বহন করে। মাছির পা, ডানা এবং শরীরের ভেতরকার কোষে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস থাকে, যা মানব শরীরে প্রবেশ করলে তীব্র অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে। মাছির শরীর থেকে বের হওয়া ক্ষুদ্র জীবাণুগুলো খাবারে মিশে গেলে তা অত্যন্ত ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছির শরীরে প্রায় ৩৫০টিরও বেশি প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকে, যা খাবারকে বিষাক্ত করে তুলতে সক্ষম [1]। এই ধরনের হাদিসের ওপর ভিত্তি করে যদি কেউ মাছি পড়া খাবার বা পানীয় গ্রহণ করে, তবে তা সরাসরি খাদ্যবাহিত রোগের (Foodborne Illness) কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, যা ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়া, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এছাড়াও, মাছির শরীর থেকে নিঃসরিত সালমোনেলা এবং শিগেলা ব্যাকটেরিয়া আমাদের অন্ত্রের জৈবিক পরিবেশ ধ্বংস করতে পারে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এই ধরনের বিশ্বাসকে প্রচার করা অত্যন্ত বিপজ্জনক, কারণ এটি জনগণকে অবৈজ্ঞানিক এবং ক্ষতিকর আচরণে উদ্বুদ্ধ করে। ইসলামের এই অন্ধবিশ্বাস সমাজে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার প্রচলন বাধাগ্রস্ত করে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করে। আধুনিক বিশ্বে যেখানে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং খাদ্য নিরাপত্তার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেখানে এই ধরনের বিশ্বাস শুধুমাত্র ব্যাধি এবং মৃত্যুর ঝুঁকি বৃদ্ধি করবে। তাই, এই ধরনের ধর্মীয় কুসংস্কার থেকে মানুষকে বিরত রাখতে হবে এবং বৈজ্ঞানিক তথ্যের আলোকে সঠিক স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে ধর্মীয় বিশ্বাসকে নয়, বরং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এবং যুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। আসুন জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি ইসলামের এই বিধানটি সম্পর্কে শুরুতেই আলেমদের মুখ থেকে কিছু বক্তব্য শুনি,
এবারে আসুন হাদিসগুলো পড়ি [2] [3] [4] [5]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৭৬/ চিকিৎসা
৫৭৮২. আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারও কোন খাবার পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তাকে পুরোপুরি ডুবিয়ে দিবে, তারপরে ফেলে দিবে। কারণ, তার এক ডানায় থাকে আরোগ্য, আর আরেক ডানায় থাকে রোগ। (৩৩২০) আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৫৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৫৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সূনান আবু দাউদ (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ২১/ খাদ্যদ্রব্য
৩৮০১. আহমদ ইবন হাম্বল (রহঃ) ……….. আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কোন খাবার পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তোমরা তাকে পাত্রের মাঝে সম্পূর্ণরুপে ডুবিয়ে দেবে। কেননা, তার এক ডানায় রোগ এবং অপর ডানায় শিফা থাকে। আর মাছি খাবারে পতিত হওয়ার সময় ঐ ডানা নিক্ষেপ করে, যাতে রোগ-জীবাণু থাকে। কাজেই তোমরা তাকে পাত্রের মধ্যে ডুবিয়ে দেবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৬৩/ চিকিৎসা
৫৩৬৬। কুতায়বা (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের কারও কোন খাবার পাত্রে মাছি পড়ে, তখন তাকে সম্পূর্নভাবে ডুবিয়ে দিবে, তারপরে ফেলে দিবে। কারন, তার এক ডানায় থাকে শিফা, আর অন্য ডানায় থাকে রোগ জীবানু।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
