অসুস্থতার কারণে নবীর বিবি তালাক

নবী মুহাম্মদ তো শুধু নবী নন, তিনি সকল নবী-রাসুলের সেরা নেতা, মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব! ইব্রাহীম, মুসা, ঈসা—এদের কথা আর কী বলব? এরা তো তার সামনে বালক মাত্র! চাঁদটাকে মাঝখান দিয়ে ভাগ করা? ওহ, সে তো তার হাতের আঙুলের খেলা মাত্র! আরও কত অলৌকিক ক্ষমতা যে তার ছিল, তার ইয়ত্তা নেই। মহাবিশ্বের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলে কথা! শুধু কী আশ্চর্য, তিনি সেগুলো দেখাতে চাইতেন না! আহা, বিনয়ী মানুষ কাকে বলে! কিন্তু দেখুন ভাগয়ের কী নির্মম পরিহাস! সেই অলৌকিক মহাশক্তিধর, আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা, যিনি আল্লাহর তাকদীরে অগাধ বিশ্বাস রাখতেন—তিনি কিনা নিজের এক স্ত্রীকে তালাক দিলেন, কারণ কী? সেই হতভাগী নারী কুষ্ঠে আক্রান্ত হয়েছিলেন! হায় হায়! যিনি চাইলেই অলৌকিক কুদরতে স্পর্শ করে কুষ্ঠ দূর করতে পারতেন, ক্যান্সার এইডস যার কাছে দুধভাত, সর্বদা ফেরেশতা বাহিনী যার আশেপাশে ঘুরঘুর করে কিংবা আকাশ ফুঁড়ে স্বর্গে যাওয়ার যোগ্যতা রাখতেন, তিনি কিনা সামান্য একটি রোগের ভয়ে ভীত হয়ে স্ত্রীকে তালাক দিলেন! খুব সম্ভবত, নবীজির মোজেজার ব্যাটারি তখন “লো ব্যাটারি” দেখাচ্ছিল।

আহারে, স্বয়ং আল্লাহর প্রিয়তম রাসুল হয়েও রোগব্যাধির ক্ষেত্রে এ যেন এক অদ্ভুত দুর্বলতা! মোজেজার ক্ষমতা নিয়ে এতসব গল্পগুজব শুনতে শুনতে আমরা তো ধরে নিয়েছিলাম, কুষ্ঠরোগ তার স্পর্শে সেরে উঠবে! কিন্তু বাস্তবে? বাস্তবে নবীজির মনে হল, ‘ভাই, এ তো সিরিয়াস ব্যাপার, এই রোগ না আবার আমার ভেতরে চলে আসে!’ আল্লাহর লিখিত তাকদীরে সম্পূর্ণ বিশ্বাসী নবীজীর আল্লাহর ওপর কত অগাধ বিশ্বাস আর আস্থা, তাই না?

তাহলে কী দাঁড়াল? অলৌকিক ক্ষমতা, তাকদীরের উপর অবিচল বিশ্বাস—সবই জায়গামতো ঠিক আছে, কিন্তু যখন নিজের বিপদের গন্ধ পেলেন, তখন ব্যস, তালাক দিয়ে নিরাপদ গণ্ডিতে চলে গেলেন! নবীর এত মহাশক্তির মাঝেও এই ছোট্ট ‘ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া’ মুহূর্তটা সত্যিই গবেষণার দাবি রাখে! [1]

তালাক

এই বিষয়ে আরও বর্ণনা পাওয়া যায় আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে [2]

বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এ নারীর তথ্য সরবরাহ করেছিলেন যাহ্হাক ইন সুফিয়ান আল কিলাবী (রা)। আমি তখন পর্দার অন্তরাল থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম। সে বলল, উম্মু শাবীব-এর বোনের প্রতি কি আগ্রহ বোধ করবেন ? উম্মু শাবীব হল যাহ্হাক-এর স্ত্রী। এ সূত্রেই যুহরী (র) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বনূ আমর ইব্‌ন কিলাব-এর এক নারীকে বিবাহ করেছিলেন। পরে তাকে এ মর্মে অবহিত করা হল যে, তার গায়ে ধবল কুষ্ঠ রয়েছে। তখন তিনি তার সংগে নিভৃত বাস না করেই তাকে তালাক দিয়ে দেন। গ্রন্থকারের মতে, এ নারী এবং পূর্বোল্লিখিত নারী একই ব্যক্তিত্ব। -আল্লাহই সর্বাধিক অবগত।
বর্ণনাকারী (যুহরী) বলেন, বনূল জাওন আল কিন্তী কন্যা” -কেও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছিলেন। এ কিনদীরা ছিল বনূ ফাযারা-র মিত্র গোত্র এই মহিলাটি নবী করীম (সা) থেকে আল্লাহর স্মরণ প্রার্থনা করলে তিনি বললেন, “তুমি এক মহান সত্তার আশ্রয় নিয়েছ, যও তোমার আপন জনের সংগে মিলিত হও।” এ ভাবে তার সাথে বাসর না করেই তাকে তা দিয়ে দিলেন।
বর্ণনাকারী আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা)-এর মারিয়া নাম্নী একজন বাঁদী ছিলেন। এ বাঁদীর ঘরে তার পুত্র ইবরাহীমের জন্ম হয়। কোলের শিশু অবস্থায় তাঁর ইনতিকাল হয়ে গেল। এছাড়া রায়হানা বিনত শাম’উন নাম্নী তাঁর অন্য এক বাঁদী ছিলেন। তিনি ছিলেন আহলে কিতাব (ইয়াহুদী) এবং বনূ কুরায়জা-র শাখা গোত্র খিনাফা-র মেয়ে। রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে বন্দীত্ব হতে মুক্তি দিয়েছিলেন। বর্ণনাকারীদের মতে তিনি পর্দানশীল ভুক্ত ছিলেন। হাফিজ ইবন আসাকির (র) আলী ইব্‌ন মুজাহিদ (র) সনদে রিওয়ায়াত করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) খাওলা বিনতুল হুযায়ল ইব্‌ন হুযায়রা আত তাগলিবকেও পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ করেছিলেন। তাঁর মা ছিলেন খারনাক বিনত খালাফা -দিহয়া বিনত খালীফা-র বোন। সিরিয়া (শাম) হতে তাকে নবী করীম (সা)-এর জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল। পথিমধ্যে তার মৃত্যু হয়ে গেল। পরে তার খালা শিরাফ বিনত ফুলা ইবন খালীফা-কে তিনি বিবাহ করেন। তাকেও সিরিয়া থেকে তার কাছে নিয়ে আসার সময় তিনিও মারা গেলেন। আর ইউনুস ইন বুকায়র (র) মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসহাক থেকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা) আসমা বিনত কা’ব আল জাওনীকে বিবাহ করেছিলেন। কিন্তু তার সংগে নিভৃত বাস’ না করেই নবী করীম (সা) তাঁকে তালাক দিয়ে দিলেন। অনুরূপ বনূ কিলাব ও পরে বনূল ওয়াহীদ-এর অন্যতমা নারী আমরা বিনত যায়দকে নবী করীম (সা) বিবাহ করেছিলেন। তার আগেকার স্বামী ছিলেন ফাযল ইব্‌ন আব্বাস ইবন আবদুল মুত্তালিব। এ স্ত্রীকেও তিনি সহবাসের আগেই তালাক দিয়েছিলেন। বায়হাকী (র) বলেছেন, যুহরী (র) নাম নির্দিষ্ট না করে যে দুজনের কথা উল্লেখ করেছেন এরা এ দুজনই । তবে ইবন ইসহাক (র) আলিয়া নাম্নী মহিলার উল্লেখ করেননি।
বায়হাকী (র) বলেন, হাকিম (র)….শা’বী (র) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, কয়েকজন নারী নিজেদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা) সমীপে ‘হিবা’ রূপে সমর্পিত করেছিলেন। তাদের কতকের সংগে তিনি নিভৃত বাস করেছিলেন এবং অন্য কতককে প্রতীক্ষিতা
১. রওযুল উনুফে তার নাম বরা হয়েছে আসমা বিনতে নু’মান। সম্পাদকমণ্ডলী

তালাক 1

তথ্যসূত্রঃ
  1. তাহকীক বুলুগুল মারাম মিন আদিল্লাতিল আহকাম বা লক্ষ্যে পৌঁছার দলিলসম্মত বিধিবিধান, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৪৬০ ↩︎
  2. আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৬ ↩︎