আমি কেন ইসলামে বিশ্বাস করি না। পর্ব-৩
বয়েস হয়েছে তাই হেরে যাচ্ছি, অনবরত হেরে যাচ্ছি অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দিতে নেই, অন্যের বিশ্বাসে আঘাত দিতে নেই চতুর্দিকে এত বিশ্বাস, দিনদিন বেড়ে যাচ্ছে কত রকম বিশ্বাস যে গেরুয়াবাদী ঠিক করেছে, পরধর্মের শিশুর রক্ত গড়াবে মাটিতে, চাটবে কুকুরে সেটাও তার দৃঢ় বিশ্বাস ধর্মের যে ধ্বজাধারী মনে করে, মেয়েরা গান গাইলে গলার নলি কেটে দেওয়া হবে টেনিস খেলতে চাইলেও পরতে হবে বোরখা সেটাও তার দৃঢ় বিশ্বাস যে পেটে বোমা বেঁধে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে যে পেশি ফুলিয়ে, দেঁতো হাসি হেসে পদানত করতে চাইছে গোটা বিশ্বকে এরা সবাইতো বিশ্বাসীর দল সবাই বিশ্বাসী, বিশ্বাসী, বিশ্বাসী ... এক-একবার ভাঙা গলায় বলতে ইচ্ছে করে অবিশ্বাসীর দল জাগো দুনিয়ার সর্বহারা অবিশ্বাসীরা এক হও! - সর্বহারা অবিশ্বাসী- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
মুসলমানগণ প্রায়শই দাবী করেন যে, কোরানে নাকি সেই ১৪০০ বছর আগেই অনেক বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা আল্লাহ পাক বলে দিয়েছেন। এটি যে শুধু মুসলমানগণই দাবী করেন তা অবশ্য নয়। হিন্দুগণেরও একই দাবী বহুবছর ধরেই। হিন্দু ধর্মান্ধ মৌলবাদীগণ এই নিয়ে মোটা মোটা বইও লিখেছেন। এই যেমন, উনারা দাবী করেন সংস্কৃত উচ্চারনে নাকি ব্রেইন সেল বৃদ্ধি পায়। আধুনিক বিজ্ঞান নাকি এমনটা প্রমাণ করেছে! এরকম অনেকগুলো দাবী তারা উত্থাপন করেন, কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সেগুলোর প্রত্যেকটিই স্যুডো সায়েন্স। কথাগুলো এমনভাবে বলা হবে, এমন বৈজ্ঞানিক টার্ম এবং গুরুগম্ভীর উপায়ে উপস্থাপন করা হবে যে, সাধারণ বুদ্ধি সম্পন্ন একজন অশিক্ষিত বা অর্ধ শিক্ষিত মানুষ সহজেই তা বিশ্বাস করবে। ভারতীয় টিভি চ্যানেলে আজকাল এইসব বাবাদের ভীড় বাড়ছে, তারা টিভি চ্যানেলে এইসব গাজাখুরি কথাবার্তা মানুষকে খাওয়াচ্ছে। তারা বিক্রি করছে কিছু পাথর, অথবা মালা, দাবী করা হচ্ছে এইসব পাথর বা মালা নাকি পজিটিভ এনার্জি বের করে মানুষের রোগ ব্যাধি, বালা মুসিবত দূর করে। সাদা পোষাক পড়া কিছু কথিত বিজ্ঞানীকে তারা টিভিতে নিয়ে আসছে, সেই সব বিজ্ঞানী ইংরেজিতে পটাপট বলে যাচ্ছে, কীভাবে আধুনিক বিজ্ঞান নাকি এইসব মিরাকল দেখে হতবাক। সত্য হচ্ছে, এগুলো সবই ধর্ম এবং অশিক্ষাকে ব্যবহার করে ব্যবসা। যেই সাদা পোষাকের কথিত বিজ্ঞানীদের দেখা যাচ্ছে, ডাক্তারদের দেখা যাচ্ছে, পুরনো সিনেমার নায়কদের দেখা যাচ্ছে, যারা বলে যাচ্ছে, তারা নাকি এইসব পাথর বা মালা ব্যবহার করে উপকার পেয়েছে। আপনারা অনেকেই হয়তো এইরকম বিজ্ঞাপন দেখে থাকবেন ভারতীয় চ্যানেলে। সেগুলো বিজ্ঞান নয়, অপবিজ্ঞান মাত্র। এগুলো অশিক্ষিত মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় হয়, শিক্ষাবঞ্চিত ভারতের লক্ষ লক্ষ মানুষ এইসব বিজ্ঞাপন দেখে মালা কেনে, কিংবা পাথর কেনে। তারা বুঝতেও পারে না, বিজ্ঞানের নামে এইসব ধোকাবাজি তাদের সাথে কত কৌশলেই না করা হচ্ছে।
সে যাইহোক। এগুলো যে ভারতে হিন্দুদের মধ্যেই প্রচলিত তা নয়, সব দেশেই এরকম ভণ্ডামী ব্যবসা চালু রয়েছে ধর্মের নামে। আমরা বাসে করে কোথাও যাওয়ার সময়ও কিছু খুঁজলির মলম, স্বপ্নে পাওয়া মলমের বিজ্ঞাপন শুনি হকারদের মুখে। তারা বেশ জোর গলাতেই দাবী করে, নাসার মত সংস্থাও নাকি তাদের এই স্বপ্নে পাওয়া তেলেসমাতি শান্ডার মাণ্ডার তেলকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ঠিক যেমনটা দাবী করা হয় ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রেও। এবারে নিচের ভিডিওটি দেখুন।
শুধু কী তাই? বেদে নাকি আগে থেকেই এনক্রিপ্টেড ভাবে লিখিত রয়েছে যে, চাঁদে পানি পাওয়া যাবে। এই ধরণের বহু সংখ্যক দাবী দাওয়া। নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন।
আরো আছে। বেদে নাকি একটি সময়ের ইউনিটের কথা বলা হয়েছে, যেই ইউনিটটিকে তারা নাম দিয়েছিল “নিমিষা”। এই নিমিষা ইউনিটটিকে বলা হচ্ছে, ২২০২ যোজনা(দূরত্বের একক) যায় অর্ধেক(০.৫) নিমিষে। যাদের সংস্কৃত সম্পর্কে সামান্য ধারণা রয়েছে, তারা যোজনা এবং নিমিষা শব্দগুলো ধরতে পারবেন। বাঙলাতেও শব্দগুলো একটু ভিন্নভাবে রয়েছে। হিসেব অনুসারে, এক যোজনা সমান হচ্ছে ৯ মাইল। এবং ১ নিমিষাকে দাবী করা হচ্ছে, ১ নিমিষা = ১৬/৭৫ সেকেন্ড। তাহলে এক সেকেন্ড = ৭৫/১৬ নিমিষা। তাহলে,
২২০২ যোজন যদি অর্ধেক নিমিষায় যায়, তাহলে ১ নিমিষায় যাবে ৪৪০৪ যোজন। এক যোজন = ৯ মাইল।
৪৪০৪ যোজনা X ৯ মাইল X ৭৫/১৬ = ১৮৫৭৯৩.৭৫ মাইল/সেকেন্ড। মানে দাবী করা হচ্ছে, এই হিসেব অনুসারে প্রাপ্ত ফলাফল আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারা পাওয়া আলোর গতি ১৮৬ হাজার মাইলের খুব কাছাকাছি। তার মানে হচ্ছে, বেদে আগে থেকেই আলোর গতি বলে দেয়া রয়েছে। নিচের ভিডিওটি দেখুন।
এই বিষয়ে আরো আগ্রহীগণ এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। শুধু কী তাই? বেদে নাকি বহুকাল আগে থেকেই পৃথিবী যে গোলাকার তা বর্ণনা করা আছে। এই ভিডিওটি দেখুন।
আরো অনেক হাস্যকর বিষয় রয়েছে। এই যেমন হিন্দুদের হনুমান নাকি সূর্যকে ছোটবেলা খেয়ে ফেলেছিল। হনুমান নাকি আলোর চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে পারতো। এগুলোর “সায়েন্টেফিক ব্যাখ্যা” দিয়েছে হিন্দু ধর্মান্ধরা। দেখুন ভিডিওটিতে,
হনুমানের সূর্যকে খেয়ে ফেলা নাকি আর কিছু নয়, ব্ল্যাক হোলের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। হাসবেন না, হাসবেন না।
আমি মোটেও বলছি না, বেদের লেখকরা সব আহাম্মক বা রাম ছাগল ছিল। অবশ্যই প্রাচীন ভারতে আর্যভট্টের মত অসম্ভব মেধাবী গণিতবিদ ছিলেন, শোনা যায় তিনি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এরকম অসংখ্য বিজ্ঞানী, দার্শনিক বা গণিতবিদকে প্রাচীন ভারত মুনী ঋষি মনে করতো। এবং তাদের বলে যাওয়া কথাগুলো নানাভাবে লিপিবদ্ধ রাখতেন। শুন্যের আবিষ্কার প্রাচীন ভারতেই হয়েছিল। শুধু তাই নয়, প্রাচীন ভারতের এই সকল তথাকথিত মুনী ঋষি যারা আসলে ধর্মগুরুই ছিলেন না, ছিলেন শিক্ষক, তাদের ধারণাগুলো ধর্মবানীর আকারেই মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। কিন্তু আধুনিক হিন্দুরা যেই সমস্ত দাবী করছে, তা একেবারেই হাস্যকর এবং গাজাখুরি, তা নিশ্চয়ই বলে দিতে হবে না। এগুলো যে কেন গাজাখুরি, তা নিয়ে আরেকদিন লিখবো, তথ্য প্রমাণ সহকারে। এখানে প্রাসঙ্গিকভাবে কথাগুলো বললাম এটি বোঝাতে যে, এরকম দাবী সকল ধর্মের অনুসারীই করে থাকেন। এটা নতুন কিছু নয়।
নিচের ভিডিওটিতে দেখুন, খ্রিস্টানদের দাবীও একই রকম। বাইবেলে নাকি বহু আগে থেকেই সাংকেতিকভাবে সব বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা বলা রয়েছে।
এমনকি, বর্তমান সময়ের বহু খ্রিস্টান মৌলবাদী এটাও দাবী করছে যে, বাইবেলে নাকি গলাকার পৃথিবীর কথাই বলা হয়েছে। ফ্ল্যাট পৃথিবীর কথা নাকি বাইবেলের ভুল ব্যাখ্যা। অনুবাদে ভুল! কী হাস্যকর ভেবে দেখুন। যেই চার্চ আর খ্রিস্টান ধর্মগুরুরা হাজার হাজার বিজ্ঞানীকে হত্যা করেছে পৃথিবী সমতল এই ধারণার বিরোধীতা করায়, সেই খ্রিস্টানরাই এখন দাঁত কেলিয়ে হাজির হচ্ছে নতুন অনুবাদ নিয়ে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, পৃথিবী গোলাকার তা বিজ্ঞানীগণ প্রমাণ করার আগে কোন ধর্মের অনুসারীরাই এরকম কিছু দাবী করেন নি। যেই না বিজ্ঞান তা প্রমাণ করলো, এমনকি সব ধর্মের লোকজন নিজ নিজ ধর্মগ্রন্থ নিয়ে হাজির হতে লাগলো, যে তাদের ধর্মগ্রন্থে এমনটা আগেই বলা ছিল। আচ্ছা বাবা, তাহলে এটা এতদিন পরে কেন মনে পড়লো? আগেই তা বলে দিলে ভাল হতো না?
আবার ধরুন, দাবী করা হচ্ছে, কোরানও নাকি বলেছে পৃথিবী গোলাকার। কিন্তু কোরানে যে এরকম কিছু বলা রয়েছে, বৈজ্ঞানিকভাবে তা আবিষ্কারের আগে মুসলমানগণ কখনই তা দাবী করেন নি। দাবী করেছেন ঠিক তখনই, যখন বিজ্ঞান পরিষ্কারভাবে পৃথিবীর আকৃতি সম্পর্কে আমাদের ধারণা দিলো। যেই না বিজ্ঞান তা পরিষ্কারভাবে বলে দিলো, তার পরেই মুসলমানগণ কোরানের শব্দের অর্থ এদিক সেদিক করে প্রমাণ করতে বসে গেলেন, ওটা কোরানে আগেই বলা ছিল। ধার্মিকদের মধ্যে এরকম সবসময়ই দেখতে পাওয়া যায়। আজ সেই নিয়েই কিছু কথা বলি। বেদ কিংবা বাইবেলের দাবী নিয়ে পরে সময় পেলে এক সময় বলা যাবে। উল্লেখ্য, বেদ বা বাইবেলের দাবীও কোরানের দাবীর মতই সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। আমি শুধু কোরানের দাবী নিয়ে আলোচনা করছি।
■ আমি তো আগেই কইছিলাম।
আমাদের গ্রামের এক আত্মীয় ছিল। আত্মীয়কে আমরা নাম দিয়েছিলাম, আমি তো আগেই কইছিলাম। ভদ্রমহিলার স্বভাব হচ্ছে, যেকোন ঘটনাই ঘটুক না কেন, উনি বলবেন, আমি তো এইটা আগেই কইছিলাম। এখন দেখলা?
যেমন ধরুন, আমি একবার খেলতে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে বাসায় ফিরলাম। ভদ্রমহিলা তখন ঢাকায় আমাদের বাসায় কিছুদিনের জন্য থাকছিলেন। তিনি দৌড়ে এসে বললেন, দেখছো, আমি তো আগেই কইছিলাম খেলতে যাইস না। খেলতে গেলে এইরকমই হইবো। এখন দেখলি? আমি অনেক চেষ্টা করেও মনে করতে পারলাম না, ভদ্রমহিলা কবে কখন আমাকে খেলতে যেতে নিষেধ করেছিলেন। আসলে তিনি কখনই সেরকম কিছু বলেন নি। কিন্তু তিনি যে বিশিষ্ট একজন পণ্ডিত, এবং সব আগেই জেনে ফেলেন, তা উনার ঢোল পিটিয়ে সবাইকে বোঝাবার চেষ্টাটা করতেই হবে। প্রতিটি ঘটোনা দুর্ঘটনা যাই ঘটুক, উনার এসে বলতেই হবে, আগে কইছিলাম না? আমরা হাসতে হাসতে উনাকে বলতাম, “আপনি তো সবই আগে কইছিলেন। কিন্তু আগে যে কইছিলেন, সেইটা আগে না বইলা ঘটনার পরে বলেন।”
■ পৃথিবী গোলাকার তা কোরানে কোথায় বলা আছে?
যেকোন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পরেই ধার্মিকদের হঠাৎ মনে পড়ে যায়, এটা আগে থেকেই কোরানে লেখা আছে। কিন্তু উনারা যদি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারটির আগেই এই কথাটি বলতেন, আমাদের কতই না সুবিধা হতো। ১৪০০ বছর ধরে দিনরাত বিজ্ঞানময় কোরান গবেষণা করে মুসলমানগণ ঠিক কী কী আবিষ্কার করেছেন, তার একটি তালিকা উনারা আমাদের দিতে পারতেন। দিনরাত বিজ্ঞানময় কেতাব মুখস্ত করেন মুসলমানগণ, আর বেশিরভাগ বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কার করে ইহুদী নাসারা নাস্তিক বিজ্ঞানীগণ, এটা কীভাবে হয়? খুবই হাস্যকর এবং বিরক্তিকর দাবী।
আজকে আমরা যারা কিছুটা হলেও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ালেখা করি, তারা জানি, একটা সময় পৃথিবীতে ডায়নোসররা রাজত্ব করে গেছে। অথচ ডায়নোসর বিষয়ে কোরানে কোন বক্তব্য খুঁজে পাওয়া যায় না। কিংবা ধরুন, ক্যাঙ্গারু নামক প্রাণীটি নিয়ে কোরানে কোন বক্তব্য নেই। গরু উট ইত্যাদি বিষয়ে অসংখ্য কথাবার্তা রয়েছে। কেন? কারণ আরব দেশে ক্যাঙ্গারু পাওয়া যায় না। বা নবী মুহাম্মদ ডায়নোসর দেখেন নি। বা ধরুন আজকের যেই আমেরিকা, সেই আমেরিকা সম্পর্কেও কোরানে কোন কথাবার্তা নেই। কারণ সেই সময়ে ইউরোপীয়দের দ্বারা আমেরিকা আবিষ্কার হয় নি। কোরানে শুধুমাত্র সেইসব বিষয়েরই বর্ণনা রয়েছে, যা আরবের মানুষ সেই সময়ে জানতো। আরবের মানুষ সেই সময়ে কীভাবে জানতো, কতটুকু জানতো, সেই নিয়ে শুরুতে কিছু আলোচনা করা দরকার।
সেই সময়ে গ্রীসকে মনে করা হতো জ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যতম কেন্দ্র। গ্রীসের বিজ্ঞানী এবং দার্শনিকগণ অনেক কিছুই সেই সময়ে বলেছেন, তা সেই সময়ের ধারণা অনুসারে সকলেই সঠিক বলে মনে করতো। যেমন ধরুন, থেলিস, পিথাগোরাস থেকে শুরু করে যারা ছিলেন, তারা নানাভাবে পৃথিবী এবং সূর্যের অবস্থান নিয়ে ভেবেছেন। ভাবনার সময় উনারা লক্ষ্য রাখতেন, উনাদের পর্যবেক্ষণের সাথে উনাদের ধারণা মিলে যাচ্ছে নাকি গড়মিল থাকছে। আলেক্সান্ডিয়ায় সেই সময়ে দার্শনিকদের বড় বড় বিদ্যালয় ছিল, আপনারা যারা হাইপেশিয়ার নাম শুনেছেন তারা জানেন উনি বহু বছর কয়েকটি পর্যবেক্ষণের সাথে প্রচলিত ধারণা মিলছে না কেন তা নিয়ে গবেষণা করছিলেন। হাইপেশিয়াকে বলা হয় প্রাচীন গ্রীসের অন্যতম মেধাবী একজন দার্শনিক এবং গণিতজ্ঞ। উনি মুহাম্মদের জন্মের অনেক আগেই মারা যান। উনাকে হত্যা করে খ্রিস্টান মৌলবাদীরা। হাইপেশিনার গবেষণা নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আলোচনা অনেক লম্বা হয়ে যাবে, তাই সেই দিকে না গেলাম। তবে আগ্রহী পাঠক অবশ্যই হাইপেশিয়া সম্পর্কে পড়ে দেখবেন। এগুলো বললাম এই কারণেই যে, কোরান লেখার বহু আগে থেকেই যে পৃথিবীর বিভিন্ন সভ্যতার মানুষ অনেক বিষয় গবেষনা চালিয়ে গিয়েছিলেন, এমনকি ভারতেও, চীনে এবং গ্রীসে, তা বোঝাবার জন্য। সেই বিভিন্ন সভ্যতার জ্ঞানবিজ্ঞানগুলো দেশে দেশে ছড়িয়ে যেতো, শিক্ষাদানের মাধ্যমে প্রাচীন দার্শনিকগণ তা প্রচার করতেন। মক্কা যেহেতু ছিল একটি গুরুত্বপুর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র, তাই বাণিজ্যের কারণেই ভ্রমণকারীগণ সেখানে আসতেন এবং বাইরের পৃথিবীতে কোথায় কী গবেষনা হচ্ছে, গ্রীসের দার্শনিকগণ কী ভাবছেন তা নিয়েও সেখানে আলোচনা হওয়া খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার।
তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি, কোরানে আগে থেকেই বলা আছে যে, পৃথিবী গোলাকার। তাহলে নিশ্চিতভাবেই, মহানবী অথবা আল্লাহ পাক আহ্নিক গতি বার্ষিক গতি সম্পর্কে অবগত ছিলেন। আসলেই কী তা?
হাদিসে বলা হচ্ছে,
পরিচ্ছদঃ ৩২. তীব্র গ্রীষ্মের সময় তাপ কমে আসলে যোহর আদায় করা মুস্তাহাব
১২৭৯। হারামালা ইবনু ইয়াহইয়া (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, জাহান্নাম বলল, হে রব! আমার একাংশ অন্য অংশকে খেয়ে ফেলল। আমাকে শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিন। তখন তাকে দুটি শ্বাসের অনুমতি দিলেন। একটি শীতকালে এবং আর একটি গ্রীষ্মকালে। অতএব, তোমরা যে শীত অনুভব কর, তা জাহান্নামের শ্বাস; আর যে গ্রীষ্ম অনুভব কর, তাও জাহান্নামের শ্বাস।
গ্রন্থের নামঃ সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
হাদিস নম্বরঃ (1279)
এ থেকে বোঝা যাচ্ছে, পৃথিবীর আহ্নিক গতি এবং বার্ষিক গতি সম্পর্কে মুহাম্মদের কোন ধারণা ছিল না। তাই তিনি শীত এবং গ্রীষ্মকে ভেবেছেন জাহান্নামের শ্বাস। আজকের দিনে যেকোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া ছেলেটিই বলতে পারবে, শীত গ্রীষ্ম কেন হয়, কীভাবে হয়। আগ্রহ থাকলে নিচের ভিডিওটি দেখতে পারেন। আপনি যদি এই বর্তমান যুগেও মনে করেন, পৃথিবীতে শীত গ্রীষ্ম জাহান্নামের নিশ্বাসের কারনে হয়, তাহলে মহা বিপদের কথা। অনুগ্রহ করে কোন পরীক্ষার খাতায় এমনটি লিখবেন না। তাহলে আপনাকে নিয়ে পরীক্ষার খাতা দেখা শিক্ষক হাসতে হাসতেই মারা যাবে। নিচের ভিডিওটি থেকে জেনে নিন কীভাবে শীত গ্রীষ্ম হয়।
■ রোজা রাখার নিয়ম।
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَآئِكُمْ هُنَّ لِبَاسٌ لَّكُمْ وَأَنتُمْ لِبَاسٌ لَّهُنَّ عَلِمَ اللّهُ أَنَّكُمْ كُنتُمْ تَخْتانُونَ أَنفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنكُمْ فَالآنَ بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُواْ مَا كَتَبَ اللّهُ لَكُمْ وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ وَلاَ تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ حُدُودُ اللّهِ فَلاَ تَقْرَبُوهَا كَذَلِكَ يُبَيِّنُ اللّهُ آيَاتِهِ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
রোযার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ অবগত রয়েছেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরন কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোযা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহ কর্তৃক বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের আয়াত সমূহ মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে। ( সুরা বাকারা ২:১৮৭ )
যেহেতু আল্লাহ তালাহ আগে থেকেই জানতেন, পৃথিবী গোলাকার (কিন্তু তিনি তা সরাসরি কোরানে কোথাও বলেন নি), তাই ধরে নিচ্ছি, তিনি এটাও জানবেন যে, পৃথিবীতে উত্তর মেরু নামক একটি জায়গা রয়েছে। আপনারা জানেন নিশ্চয়ই, উত্তর মেরুতে ছয়মাস দিন এবং ছয়মাস রাত থাকে। এটি হয় কারণ পৃথিবী গোলাকার, এবং উপবৃত্তাকার পথে সূর্যকে এটি প্রদক্ষিণ করছে। আর সেই কারণেই, উত্তর মেরুতে কোরান অনুসারে রোজা রাখতে গেলে আপনার ছয়মাস না খেয়ে থাকতে হবে।
নিশ্চিতভাবেই আল্লাহ তালাহ সেই ১৪০০ বছর আগে জানতেন না যে, উত্তর মেরু বলে একটা জায়গা আছে, যেখানে ছয়মাস দিন এবং ছয়মাস রাত থাকবে। জানলে আল্লাহ তালাহ হয়তো রোজা রাখার অন্য কোন নিয়ম বাতলে দিতেন। এবং যেই সব অঞ্চলে দিন এবং রাত অনেক দীর্ঘ, সেই সব অঞ্চলে রোজা রাখার ভিন্ন কোন নিয়ম বাতলে দিতেন। কিন্তু কোরান হাদিস খুঁজে কোথাও কী উত্তর মেরুতে কীভাবে রোজা রাখবো, তা সম্পর্কে সামান্য কোন ধারণাও পাওয়া যায়?
কারণটি হচ্ছে, উত্তর মেরু বলে যে একটি জায়গা আছে, যেখানে ছয়মাস দিন এবং ছয়মাস রাত হয়, তা মুহাম্মদ জানতেন না। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যে দিন এবং রাতের তারতম্য এত বড় হতে পারে, তা সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। ধারণা থাকলে, এগুলো জানা থাকলে স্পষ্টভাবেই বলে যেতেন, অন্য কোন উপায়ে দিন রাত গণনার হিসেব বলে যেতেন। সূর্যের ওপর ভিত্তি করে নয়। কারণ উত্তর মেরুতে ছয়মাস ধরে দিন থাকলে একদিন রোজা রাখতেই মুমিনগণ সব মারা যাবে।
(ক্রমশ)
আগের পর্বগুলোঃ
ভুল তথ্য প্রচার করছেন।