সূচিপত্র
- 1 ভূমিকা
- 2 সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি এবং আল্লাহর নির্দেশ
- 3 লিখে রাখার প্রয়োজনীয়তা: স্মৃতি, ভুল ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা
- 4 কলম কী একটি চিন্তাশীল সচেতন সত্তা?
- 5 গায়েবের জ্ঞানের শরীকানা কলমের?
- 6 প্রতীকী বা রূপক অর্থের সমস্যা
- 7 তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
- 8 উপসংহার: ইসলামি ঈশ্বরতত্ত্বের অন্তঃসারশূন্যতা
- 9 তথ্যসূত্র
ভূমিকা
ইসলামী ধর্মতত্ত্বে সবচেয়ে মৌলিক বিশ্বাসগুলোর একটি হলো, “আল্লাহই একমাত্র গায়েব বা অদৃশ্য জগতের জ্ঞান রাখেন।” এই বিশ্বাসে এমন এক সর্বজ্ঞানী ঈশ্বর কল্পনা করা হয়, যিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবকিছু সম্পর্কে একচ্ছত্রভাবে জ্ঞানী। কিন্তু ইসলামের মূল গ্রন্থগুলোতে এমন অনেক বক্তব্য পাওয়া যায়, যেখানে বলা হয়েছে—আল্লাহ একটি “কলম” সৃষ্টি করেন এবং তাকে আদেশ দেন কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, তা লিখে ফেলতে। সেখানে কলমটি আল্লাহকে আবার প্রশ্ন করে—“আমি কী লিখবো?”—এবং আল্লাহ তাকে উত্তর এবং নির্দেশ দেন সব ভবিষ্যৎ ঘটনাবলী লেখার জন্য।
এই বক্তব্য কেবল শিশুতোষ পৌরাণিক উপাখ্যানের মতো শোনায় না, বরং ইসলামের একেশ্বরবাদী বিশ্বাস, ঈশ্বরের গায়েবজ্ঞান ও মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির ধারণার উপর সরাসরি আঘাত হানে। এই প্রবন্ধে আমরা কঠোর যুক্তি, দার্শনিক বিশ্লেষণ ও প্রামাণিক সূত্র ব্যবহার করে এই ধর্মতাত্ত্বিক দ্বিচারিতা উন্মোচন করব।
সর্বপ্রথম কলম সৃষ্টি এবং আল্লাহর নির্দেশ
কোরআনে খুব পরিষ্কার ভাবেই বলা আছে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ অদৃশ্য বিষয় বা গায়েবের বিষয় জানে না [1]
বল, আকাশ ও পৃথিবীতে যারা আছে তারা কেউই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখে না আল্লাহ ছাড়া, আর তারা জানে না কখন তাদেরকে জীবিত ক’রে উঠানো হবে।
— Taisirul Quran
বলঃ আল্লাহ ব্যতীত আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে কেহই অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান রাখেনা এবং তারা জানেনা তারা কখন পুনরুত্থিত হবে।
— Sheikh Mujibur Rahman
বল, ‘আল্লাহ ছাড়া আসমানসমূহে ও যমীনে যারা আছে তারা গায়েব জানে না। আর কখন তাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে তা তারা অনুভব করতে পারে না’।
— Rawai Al-bayan
বলুন, ‘আল্লাহ্ ব্যতীত আসমান ও যমীনে কেউই গায়েব জানে না [১] এবং তারা উপলব্ধিও করেনা কখন উত্থিত হবে [২]।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন দেখে নিই, আল্লাহ সকল বিষয় কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন [2]
পৃথিবীতে অথবা তোমাদের নিজেদের উপর এমন কোন মুসীবত আসে না যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। এটা (করা) আল্লাহর জন্য খুবই সহজ।
— Taisirul Quran
পৃথিবীতে অথবা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয় আসে আমি তা সংঘটিত করার পূর্বেই তা লিপিবদ্ধ থাকে, আল্লাহর পক্ষে এটা খুবই সহজ।
— Sheikh Mujibur Rahman
যমীনে এবং তোমাদের নিজদের মধ্যে এমন কোন মুসীবত আপতিত হয় না, যা আমি সংঘটিত করার পূর্বে কিতাবে লিপিবদ্ধ রাখি না। নিশ্চয় এটা আল্লাহর পক্ষে খুবই সহজ।
— Rawai Al-bayan
যমীনে বা ব্যক্তিগতভাবে তোমাদের উপর যে বিপর্যয়ই আসে তা সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই আমরা তা কিতাবে লিপিবদ্ধ রেখেছি [১]। নিশ্চয় আল্লাহর পক্ষে এটা খুব সহজ।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন দেখি, ঐ কিতাবে কীভাবে আসলে সেগুলো লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেটি দেখে নিই। হাদিসে বলা হয়েছে [3] –
সূনান তিরমিজী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩৫/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই।
২১৫৮. ইয়াহইয়া ইবন মূসা (রহঃ) ….. আবদুল ওয়াহিদ ইবন সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার মক্কায় এলাম। সেখানে আতা ইবন আবু রাবাহ (রহঃ) এর সঙ্গে দেখা করলাম। তাঁকে বললামঃ হে আবূ মুহাম্মদ, বাসরাবাসরীরা তো তাকদীরের অস্বীকৃতিমূলক কথা বলে। তিনি বললেনঃ প্রিয় বৎস, তুমি কি কুরআন তিলাওয়াত কর? আমি বললামঃ হ্যাঁ। তিনি বললেনঃ সূরা আয-যুখরুখ তিলাওয়াত কর তো। আমি তিলাওয়াত করলামঃ
হা-মীম, কসম সুস্পষ্ট কিতাবের, আমি তা অবতীর্ণ করেছি আরবী ভাষায় কুরআন রূপে, যাতে তোমরা বুঝতে পার। তা রয়েছে আমার কাছে উম্মূল কিতাবে, এ তো মহান, জ্ঞান গর্ভ (৪৩ঃ ১, ২, ৩, ৪)।
তিনি বললেনঃ উম্মূল কিতাব কি তা জান? আমি বললামঃ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ এ হল একটি মহাগ্রন্থ, আকাশ সৃষ্টিরও পূর্বে এবং যমীন সৃষ্টিরও পূর্বে আল্লাহ তাআলা তা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। এতে আছে ফির‘আওন জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত, এতে আছে তাব্বাত ইয়াদা আবী লাহাবীও ওয়া তাব্বা (تَبَّتْ يَدَا أَبِي لَهَبٍ وَتَبَّ) আবূ লাহাবের দুটি হাত ধ্বংস হয়েছে আর ধ্বংস হয়েছে সে নিজেও।
আতা (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অন্যতম সাহাবী উবাদা ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর পুত্র ওয়ালীদ (রহঃ)-এর সঙ্গে আমি সাক্ষাত করেছিলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলামঃ মৃত্যুর সময় তোমার পিতা কি ওয়াসীয়ত করেছিলেন?
তিনি বললেনঃ তিনি আমাকে কাছে ডাকলেন। বললেনঃ হে প্রিয় বৎস, আল্লাহকে ভয় করবে। যেনে রাখবে যতক্ষণ না আল্লাহর উপর ঈমান আনবে এবং তাকদীরের সব কিছুর ভাল-মন্দের উপর ঈমান আনবে ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি কখনো আল্লাহর ভয় অর্জন করতে পারবে না। তা ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু হয় তবে জাহান্নামে দাখেল হতে হবে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ আল্লাহ তাআলা সর্ব প্রথম কলম সৃষ্টি করেছেন। এরপর একে নির্দেশ দিলেন, লিখ, সে বললঃ কি লিখব? তিনি বললেনঃ যা হয়েছে এবং অনন্ত কাল পর্যন্ত যা হবে সব তাকদীর লিখ। সহীহ, সহিহহ ১৩৩, তাখরিজুত তহাবিয়া ২৩২, মিশকাত ৯৪, আযযিলাল ১০২, ১০৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৫৫ (আল মাদানী প্রকাশনী)
(আবু ঈসা বলেন) এ হাদীসটি এ সূত্রে গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তিরমিযী শরীফ বইটি থেকেও সরাসরি দেখে নিই [4] –


লিখে রাখার প্রয়োজনীয়তা: স্মৃতি, ভুল ও জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা
মানুষের ইতিহাসে “লিখে রাখা” একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার। যেহেতু মানুষের স্মৃতি সীমিত, মানুষ সহজেই ভুলে যায়, তাই ভাষা আবিষ্কারের পর যখন জ্ঞান, আইন, ইতিহাস, ধর্মীয় নিয়ম, কিংবা চুক্তিপত্র সংরক্ষণের প্রয়োজন হলো, তখনই লেখা শুরু হয়। লিখে রাখার মূল উদ্দেশ্য হলো ভুলে না যাওয়া, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানো এবং ভুল ব্যাখ্যা ঠেকানো। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি সমাজে আইন কেবল মৌখিকভাবে প্রচারিত হতো, তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কেউ না কেউ ভুলভাবে তা ব্যাখ্যা করত, কেউ হয়তো ইচ্ছাকৃতভাবে বদলাতে পারে। কিন্তু লিখিত আইন পরিবর্তন করা কঠিন, এবং এটি একটি নির্ভরযোগ্য দলিল হয়ে দাঁড়ায়। যেকোন সময়ে অন্য কেউ কোন কিছু নিয়ে প্রশ্ন তুললেই যেন সহজেই লিখা রাখা দলিল থেকে তা দেখিয়ে প্রমাণ করা যায়। তাই লিখে রাখা মানুষের জন্য জরুরি, কারণ মানুষ শুধুমাত্র একটি সীমাবদ্ধ প্রাণী। যার স্মৃতি নষ্ট হতে পারে, যে ভুলে যেতে পারে, যে ভুল করতে পারে। কিন্তু আল্লাহর তো এইসব সীমাবদ্ধতা নেই।
তাহলে আল্লাহর ক্ষেত্রে লেখা কেন? এখানে একটি গভীর প্রশ্ন দাঁড়ায়: যদি ইসলাম ধর্মমতে আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও সর্বজ্ঞানী হন—যার কাছে অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই সমানভাবে স্পষ্ট—তাহলে কেন তাকে ‘লাওহে মাহফুজ’-এ সব কিছু লিখে রাখতে হয়? কেন তাকে আদম সৃষ্টি করার আগেই “কলম” সৃষ্টি করে লিখিয়ে নিতে হয়? আরও প্রশ্ন আসে, সর্বজ্ঞ আল্লাহ কি নিজেই ভুলে যেতে পারেন? ভবিষ্যৎ মনে রাখার জন্যই এই “লিখিত সংরক্ষণ” প্রয়োজন ছিল? সর্বজ্ঞানী এবং সর্বশক্তিমান সত্তার লিখে রাখার তো কোন প্রয়োজন থাকার কথা না, কারণ তার তো মানবিক সীমাবদ্ধতা নেই। বা কাউকে জবাবদিহি করার প্রয়োজনও নেই।
কলম কী একটি চিন্তাশীল সচেতন সত্তা?
সহীহ মুসলিম এবং তিরমিযীর হাদিসে বর্ণিত:
“আল্লাহ প্রথমে কলম সৃষ্টি করেন। তিনি তাকে বলেন, লিখো। কলম বলল, আমি কী লিখব? আল্লাহ বলেন, যা কিছু কিয়ামত পর্যন্ত ঘটবে তা-ই লিখে নাও।”
[5]
[6]
প্রথমত, প্রশ্ন উঠে—‘কলম’ কী? এটি কি একটি সচেতন সত্তা, নাকি নিছক একটি জড় বস্তু? যদি এটি জড় বস্তু হয়, তবে সে কিভাবে কথা বলে? কিভাবে প্রশ্ন করে? আর যদি সে চিন্তাশীল, সিদ্ধান্তগ্রহণক্ষম সত্তা হয়—তবে সে কেবল একটি বস্তু নয়, বরং এক স্বাধীন সত্তা, যার রয়েছে ভাষা, বুদ্ধি, এবং জ্ঞান। তখন ইসলামি তাওহীদের ভিত্তিতেই ধাক্কা লাগে—এক আল্লাহর অধীনে আরেক জ্ঞানসত্তা যে গায়েব জানে?
ইসলামের মৌলিক আকীদা এইখানেই ভেঙে পড়ে। কারণ একটি জ্ঞানবান, স্বাধীন প্রতিক্রিয়াক্ষম সত্তা যদি গায়েব জেনে থাকে, ভবিষ্যতে কী কী হবে সব পুণখানুপুঙ্খভাবে জানে, তাহলে তাকেও সংজ্ঞানুসারে আল্লাহ বলতে হয়। এখানে প্রশ্ন তৈরি হয়, আল্লাহ কী আরেকটি আল্লাহ সৃষ্টি করতে সক্ষম?

গায়েবের জ্ঞানের শরীকানা কলমের?
কোরআনে খুব পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছেম আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর গায়েব, ভুত ভবিষ্যৎ সব একমাত্র আল্লাহই জানেন। এই আয়াত অনুসারে গায়েব একচেটিয়াভাবে আল্লাহর বিষয়। কিন্তু হাদিস অনুযায়ী, কলমও আল্লাহর সাথে সেই গায়েব জানে। কারণ হাদিসটি খেয়াল করে পড়ুন। আল্লাহকে সে জিজ্ঞেস করলো কী লিখবে। এরপরে আল্লাহর নির্দেশ ছিল ভবিষ্যতে যা হবে সব লিখো। এরপরে কলমটি সেগুলো লিখে ফেলে। এর অর্থ সেই কলমটিও ভবিষ্যতে কী হবে সেগুলো জানে। না জানলে লিখবে কীভাবে? এমন যদি হয় যে, আল্লাহ সেই সময়েই এক এক করে সেসব সরাসরি বলে দিয়ে থাকেন, তাহলেও সেইসব তথ্য কলম জানে—অর্থাৎ সে জানে ভবিষ্যৎ কী ঘটবে। এখানেই ইসলামি আকিদা ভেঙে পড়ে—কারণ যে গায়েব জানে, সেই ঈশ্বর—এটাই ইসলামের একটি মৌলিক দাবী [7]।
এ অবস্থায় কলম দুই অবস্থা সৃষ্টি করে:
- সে হয় ঈশ্বরের অংশবিশেষ (যা শিরক)
- অথবা ঈশ্বরের সমকক্ষ আরেক জ্ঞানসত্তা (যা দ্বৈতবাদ)
দুই অবস্থাতেই ইসলামের একেশ্বরবাদ বা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব তাত্ত্বিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়ে।
প্রতীকী বা রূপক অর্থের সমস্যা
অনেক ইসলামি পণ্ডিত অনেক হাদিসকে প্রতীকী ভাষা বা রূপক হিসেবে ব্যাখ্যা করতে চেয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই যুক্তি কি কেবল এই হাদিসের এই অংশটুকুর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? আল্লাহর অস্তিত্ব, ইসলামের মৌলিক ভিত্তিগুলো, নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত এমনকি পরকাল, সবই কী তাহলে আমরা রূপক অর্থে নিতে পারি না? তাহলে কেন মিরাজ, বুরাক, জান্নাতের হুর, কিংবা ফেরেশতা-শয়তানের অস্তিত্বকে আক্ষরিকভাবে বিশ্বাস করতে হয়? যদি এই হাদিস প্রতীক হয়, তাহলে একই সূত্র প্রযোজ্য হবে সকল অলৌকিক বিষয়ের ওপর। নাকি, ইসলামিস্টগণ শুধুমাত্র বিপদের দিনে এই যুক্তি দিয়ে ইসলামকে রক্ষা করতে চান?
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
হিন্দু ধর্মে “ব্রহ্মা” ভবিষ্যৎ লিখে রাখেন বলে পুরাণসমূহে বর্ণিত আছে, তবে সেই লিখিত ভাগ্য বা ভবিষ্যৎ মানুষের কর্মফল, প্রয়াশ্চিত্ত ও সাধনার মাধ্যমে পরিবর্তনযোগ্য বলে বিশ্বাস করা হয়। এখানে “কর্ম”, “ফল”, এবং “পুনর্জন্ম” মিলে এক ধরণের ন্যায়সংগত ভারসাম্য তৈরি করে। এছাড়া ব্রহ্মা হিন্দু ধর্মে চূড়ান্ত বা সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নন—তাঁর উপরে থাকে নিরাকার ও সর্বজ্ঞ পরম ব্রহ্ম বা ঈশ্বরতত্ত্ব।
পক্ষান্তরে ইসলাম ধর্মে “তাকদির” একটি একবারে লেখা, চূড়ান্ত ও অপরিবর্তনীয় ভাগ্যব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপিত হয়। মূলধারার আকীদা মতে, এটি এমন এক পূর্বনির্ধারিত রূপরেখা, যা আল্লাহর ‘লাওহে মাহফুজ’-এ লেখা এবং কোনভাবেই বদলানো সম্ভব নয়। এই ধরণের অনড়, একরৈখিক নিয়তি কেবল ধর্মতাত্ত্বিক অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে না, বরং ব্যক্তি স্বাধীনতা, নৈতিক দায়বদ্ধতা এবং মানবিক মর্যাদার প্রশ্নকেও জটিল করে তোলে।
উপসংহার: ইসলামি ঈশ্বরতত্ত্বের অন্তঃসারশূন্যতা
কলম ও গায়েব সংক্রান্ত কোরআনের দাবী এবং হাদিসগুলো আসলে ইসলামের ঈশ্বরতত্ত্ব, একেশ্বরবাদ এবং নৈতিক কাঠামোকে মৌলিকভাবে ধ্বংস করে দেয়। এর স্ববিরোধীতা এবং আরবের অশিক্ষিত কোন মানুষের মাথা থেকে এগুলো বের হওয়ার সম্ভাবনাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে। এটি খুব পরিষ্কারভাবে যৌক্তিক ও দার্শনিক দেউলিয়াত্বের নিদর্শন। যদিও অন্ধবিশ্বাসীগণ এগুলো মানুষের জ্ঞানের বাইরে বলে নিজেদেরই প্রবোধ দেয়ার চেষ্টা করবে, কিন্তু নিজেও বুঝবে, সব পরস্পরবিরোধী বক্তব্য কতটা অন্তঃসারশূন্য।
তথ্যসূত্র
- কোরআন ২৭ঃ৬৫ [↑]
- কোরআন ৫৭ঃ২২ [↑]
- সূনান তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২১৫৮ [↑]
- সহীহ আত-তিরমিযী, ৪র্থ খণ্ড, তাহক্বীকঃ মোহাম্মদ নাসিরুদ্দীন আলবানী, হোসেইন আল মাদানী প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৫০-২৫২ [↑]
- Sahih Muslim 2653[↑]
- Jami at-Tirmidhi 3319[↑]
- Al-Ghazali, Tahafut al-Falasifa[↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"