ইশ্বর কি পৃথিবীর একমাত্র সমস্যা?
অনেকেই প্রশ্নটা করেন- “ধর্মতত্ব, ইশ্বর -ই কি পৃথিবীর একমাত্র সমস্যা? ইশ্বর, ধর্ম ছাড়াই কি সবকিছু শুভ্রসুন্দর হয়ে উঠবে? ইশ্বরহীন পৃথিবী গড়ে কি লাভ? থাকুক না যার যার বিশ্বাস নিয়ে। “
না, ইশ্বর বা ধর্মই মুল সমস্যা নয়, তবে সমস্যার একটা অধ্যায় অবশ্যই।
আধুনিক বিশ্ব যুক্তি প্রমান গবেষনা তথ্য উপাত্তের বিশ্ব। জ্ঞানভিত্তিক সমাজই সভ্যতার মুল শক্তি। ফ্যাক্ট এন্ড এনালাইসিস, বুদ্ধিশানিত করার প্রতিযোগীতা, এটাই সভ্যতার চাকা, টিকে থাকার শক্তি। যে যতবেশি যুক্তি প্রমাণ তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে তা বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এনালাইসিস করতে পারছে, সেই সামনে এগুচ্ছে, বাকিরা তাদের অনুসরণ করছে মাত্র।
অথচ আমাদের সমাজের সাথে বিস্তর ফারাক সেই মূল স্রোতের। আমরা ক্রমশ উল্টা দিকে হাটছি। আমাদের সমাজ জ্ঞানভিত্তিক নয়, বিশ্বাসভিত্তিক। যেটা অবশ্যই সমস্যার শেকড়।
সকল বিশ্বাসকে শ্রদ্ধা করতে হলে, যার যার বিশ্বাস তাকে নিয়ে থাকতে দিতে হলে জামাত শিবিরে বিশ্বাসী, বর্নবাদী, সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাসী, মৌলবাদীতায় বিশ্বাসীদেরও ছাড় দিতে হয়। যে ভাবে “মুখ দিছে আল্লায় খাওনো দিবো আল্লায়”-তার বিশ্বাসকেও সম্মান দিতে হয়! যারা বিশ্বাস করে আল্লার আইন কায়েম না হলে বোমা মেরে সব উড়িয়ে দেয়া উচিৎ , তাদের বিশ্বাসকেও সম্মান জানিয়ে তাদের বিশ্বাস নিয়ে তাদের থাকতে দেয়া উচিৎ। সম্মান করলে সব বিশ্বাসকেও সম্মান করবো, আর তা নাহলে সকল বিশ্বাসকেই প্রশ্ন করবো, যাচাই করে দেখবো তা কতটা কল্যানকর, কতটা যৌক্তিক। এখানে বিবেচ্য হচ্ছে, যেটা যত মানবতাবিরোধী, সেটা তত বেশি প্রশ্নের সম্মুখীন হলে বিব্রতবোধ করে। সেটা নিয়ে প্রশ্ন করতে, তা যাচাই করে দেখতে নিরুৎসাহিত করে।
আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি এখনও বিশ্বাসনির্ভর। আমরা নষ্ট রাজনীতিবিদদের এখনও বিশ্বাস করি, তাদের মেকি কান্না আর তসবি হিজাব দেখে আমাদের যুক্তি লোপ পায়। আমরা তাদের অতীত কর্মকান্ড যুক্তি দিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করি না, আমাদের যুক্তিবোধ দলীয় আদর্শ আর নানান প্রপাগান্ডায় পথ হারায়। আমরা কখনও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করি, কখনও আবার ইসলামী চেতনা আমাদের দখল করে।কিন্তু এদুটোকেই যৌক্তিক উপায়ে গ্রহণ বা বর্জন করতে আমরা শিখিনি।
আমাদের অর্থনীতিও বিশ্বাস নির্ভর। আমরা এই শতাব্দীতেও সুদকে হারাম মনে করি! আবার আমরাই ভিটেমাটি বিক্রি করে শেয়ার মার্কেটে টাকা খাটিয়ে নামাজে বসে লাভের আশায় প্রার্থনা করি। ডেসটিনির মত চকচকে চামারদের হাতে সবকিছু তুলে দেই।
এখনও আমরা দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারীদের দাসী ভাবি, তাদের বেঁচে থাকতে দিয়ে ভাবি অনেক অধিকার দিয়ে ফেললাম। খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে দিয়ে আমরা প্রতিযোগীতায় নামি, প্রতিযোগীতার বিষয়, “আমরাই নারীকে দিয়েছি সর্বোচ্চ অধিকার এবং সুমহান মর্যাদা!”
এইসব বিশ্বাসমনস্কতার ফলাফল, জ্ঞান ও যুক্তিহীনতার কুফল, প্রথাগত জীবন আর সামাজিক সংস্কারের অভাব। আমাদের শিক্ষিত সমাজও মোটাদাগে প্রতিক্রিয়াশীল, তারা জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং পড়ে সৃষ্টিতত্বকে বিশ্বাস করে, বিজ্ঞান পড়ে নুহের নৌকায় শান্তি খুঁজে পায়।আমাদের জ্ঞান আর আমাদের বিশ্বাসের এই ফারাকটা আমাদের বিজ্ঞানবিমুখ করে তোলে, বিজ্ঞানকে আমরা পাশ্চাত্যের ষড়যন্ত্র ভাবতে শুরু করি, এবং আমাদের বিশ্বাসের আবর্জনা দুর্গন্ধে ভরা হলেও আমরা ভাবি, এটা আমাদের নিজস্ব। অথচ আমাদের এই সকল বিশ্বাস মধ্যপ্রাচ্যের সাম্রাজ্যবাদের অংশ।
একজন প্রতিক্রিয়াশীল কুসংস্কারাচ্ছন্ন রাজনৈতিক কর্মী কখনই মানবসেবায় কাজে আসবে না, উগ্র জাতীয়তাবাদ আর গোয়েবলসীয় প্রপাগান্ডা দিয়ে ফায়দা লোটার দিন শেষ, এগুলো শুধু আবর্জনাই উত্পাদন করে। এই বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তির, এই বিশ্ব বাক-স্বাধীনতার আর জ্ঞানের।
সকলকে নাস্তিক হতে হবে না, সকলকে রাজনীতি করতে হবে না। তবে যুক্তিমনস্কতা এবং রাজনৈতিক সচেতনতা থাকতেই হবে। এগুলো ছাড়া বারবার খালি প্রতারিতই হতে হবে।
এখন পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে তীব্র গতিতে। মানুষ মহাবিশ্বের সৃষ্টিরহস্য ক্রমশ বুঝতে চেষ্টা করছে। এখন আর ওয়াজ মাহফিলে এক একটা ইহুদী নিধনে কয়টা হুর আর ঢিলা কুলুকের ছহি উপায় নিয়ে বিস্তর গবেষনার প্রয়োজন নাই। সোমবার পশ্চিমদিকে মুখ করে স্ত্রীগমনে পুত্রসন্তান লাভ হবে কিনা, তা নিয়ে মূর্খ আলোচনার উপযোগ নাই।
বিজ্ঞান কোথায় চলে যাচ্ছে, কৃত্রিম জীবন পর্যন্ত এসে গেছে, আর আমরা এখনও আরবী আবর্জনা হাদিস কোরানের সাথে বিজ্ঞানের কি কি মিলেছে না তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি। টিভিতে রোজ দেখি, ইসলামী ছাগলদের ডেকে এনে ফোনে জিজ্ঞেস করা হয়, “হুজুর, আমার বিবির পরদা করে না, আবার কাজ করে, উহাকে কিরুপে তালাক দিয়া নতুন বিবি আনিবো?”
আমরা ভাবছি ওতেই সব জ্ঞান দেয়া আছে, ওটা পড়তে পারলেই জ্ঞানী! কিন্তু সত্য হচ্ছে, ওসবই আবর্জনার ল্যাদা,ওগুলো প্রাচীন সাহিত্য হিসেবে পড়া যায়, কিন্তু সারাজীবন, আধুনিক সভ্যতার সর্বত্র ওটাই মাথায় গুরপাক খেলে আর কিছুই বেরুবে না। একবইয়ের পাঠক সর্বদায় প্রতিক্রিয়াশীল।
আমরা চাই একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ। প্রতিটি মোড়ে ব্যাঙের ছাতার মত গজানো মসজিদ মন্দিরগুলো ভেঙ্গে সেখানে গড়তে চাই লাইব্রেরী, গবেষনাগার আর তর্কবিতর্কের আড্ডা। আমরা সমূলে উত্খাত করতে চাই ধর্মব্যাবসা, কুসংস্কার আর প্রতিক্রিয়াশীলতা।
আমাদের শিশুরা হোক গণিত আর পদার্থবিজ্ঞানে পারদর্শি, আমাদের তরুনরা হোক দর্শন আর শিল্পকলায় শ্রেষ্ট, আমাদের মধ্যবয়সীরা সারাজীবন দুর্নীতি করে শেষ বয়সে হজ্জ্বে না গিয়ে সারাজীবন সৎ থেকে শেষ বয়সে নীতিশিক্ষা দেক, আমাদের বৃদ্ধরা দলবেধে মসজিদে উপুর না হয়ে স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়াক, তাদের সাথে তর্কবিতর্কে অংশ নিক।
সমাজের আনাচে কানাচে ঘুনে ধরা প্রথা আর সংস্কার, সংস্কৃতির নামে আহাম্মকি, নৈতিকতার নামে দুর্নীতি। এই সবের মূলে আঘাত না করলে একসময় আমরাও মধ্যযুগীয় বর্বর মধ্যপ্রাচ্যে পরিণত হবো।
আমরা কি তাদের নবীর লাশকে চেলেঞ্জ করতে পারিনা? তারা বলে হায়াতুন্নবি | লাশ পচে না! আসলেকি লাশ পচে নাই?