বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি শাসক শ্রেণী ইসলামকে খুব খোলামেলাভাবে ব্যবহার করেছিল গণহত্যা এবং নির্যাতনকে জায়েজ করার জন্য। তারা এদেশের মানুষের ওপর চালানো গণহত্যাকে ধর্মীয় রূপ দিতে সচেষ্ট ছিল এবং এএকে ‘হিন্দুদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের পবিত্র জিহাদ’ বলে ঘোষণা করেছিল। পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ও তাদের মিত্ররা পরিকল্পিতভাবে ইসলামকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে দমন করতে চেয়েছিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা এই ভূখণ্ডে নজিরবিহীন হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করে। বিশেষত হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর তাদের বর্বরতা ছিল আরও ভয়াবহ। পাকিস্তানি শাসকরা তাদের প্রচারে দাবি করেছিল, বাঙালিরা প্রকৃত মুসলিম নয়, তাদের সংস্কৃতি হিন্দুয়ানী, তারা ইসলামের শত্রু এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ধর্মীয় দায়িত্ব। এভাবে তারা সাধারণ সেনাদের এবং সমর্থকদের উস্কে দেয়, যেন তারা নিঃসংকোচে হত্যা, ধর্ষণ, এবং নির্যাতন চালাতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের সহযোগী রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী ইসলাম রক্ষার দোহাই দিয়ে নারীদের ওপর ব্যাপক ধর্ষণ চালায়, যা ছিল ভয়াবহ জঘন্য যুদ্ধাপরাধ। তারা ‘কাফের’ হিন্দুদের এবং হিন্দুদের সহযোগী আওয়ামী লীগ ও বাম নেতাকর্মীদের হত্যা করতে এবং বাঙালি মুসলমানদের শাস্তি দিতে এই ধর্মীয় উস্কানিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। পাকিস্তানিরা বারবার প্রচার করে যে, মুক্তিযুদ্ধ এবং এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, আর এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে লড়াই করা ঈমানের অংশ। তারা মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করে যে, পাকিস্তানের সংহতি রক্ষা করাই হলো ধর্মীয় দায়িত্ব। জামাতে ইসলামি সহ ইসলামি রাজনীতি করা অনেকগুলো দলই সেই সময়ে রীতিমত ঘোষণা দিয়েই প্রকাশ্যে গণহত্যায় অংশ নিয়েছিল।
পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী এই যুদ্ধকে ইসলাম রক্ষার যুদ্ধ বলে অভিহিত করে। তারা ধর্মকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের অপরাধ ঢাকার চেষ্টা করে, নারী ধর্ষণকে গনিমতের মাল ভোগ নাম দিয়ে ইসলাম সম্মত বলে ঘোষণা করে। ধর্মকে ব্যবহার করে করা এই নৃশংসতা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে এবং প্রমাণ করে যে, ধর্মকে কখনোই ক্ষমতার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত নয়। রাষ্ট্র থেকে ধর্মের সম্পূর্ণরূপে আলাদা হওয়া উচিত। এই যুদ্ধ শুধু একটি ভূখণ্ডের স্বাধীনতা নয়, বরং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের বিরুদ্ধে মানবতার জয়গানের সাক্ষী। সেই সময়ে প্রকাশিত কিছু পোস্টার এখানে যুক্ত করা হচ্ছে।