ঈশ্বরে বিশ্বাস কি অপেক্ষাকৃত বেশি নিরাপদ?

Print Friendly, PDF & Email

প্রশ্নঃ আচ্ছা, আপনাকে বলা হলো বৃষ্টি আসবেনা বা আপনি চিন্তা করছেন যে, বৃষ্টি আসবেনা। তাই আপনি বাহির হলেন ছাতা না নিয়ে, কিছু দূর যাওয়ার পর বৃষ্টি আসলো, অথচ আপনার হাতে ছাতা নাই । এরচেয়ে এইটাই ভালো না যে, ছাতা কষ্ট করে নিলেন, এতে আপনার কি হলো, যদি বৃষ্টি আসে তাহলে ভিজলেন না আর যদি না আসে তাহলে সামান্য কষ্ট হল।

তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, আল্লাহ বলে কেহ নাই। তাহলে নাস্তিকরা বেঁচে গেলো জাহান্নাম থেকে, সাথে সাথে আস্তিকরাও। আর যদি আল্লাহ আখিরাত এসব থেকে থাকে এবং মানুষের বিচার হয় তখন আস্তিকরা বেঁচে যাবে সকল জাহান্নামের আজাব থেকে আর নাস্তিকদের কি হবে? তারা তো ফেঁসে গেল। তাই আল্লাহকে অবিশ্বাস করার চেয়ে বিশ্বাস করাই বেশি যুক্তিযুক্ত। কারণ সাবধানের মার নেই।

বুঝলাম। ঠিকই বলেছেন, এমন একটা কিছু মৃত্যুর পরে হতেই পারে। হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক যে আমরা মৃত্যুর পরে গিয়ে দেখলাম কেউ একজন আছেন এবং তখন আস্তিকেরা ধেই ধেই করে নৃত্য শুরু করে দিলো, আর আহাম্মক নাস্তিকেরা কান্নাকাটি শুরু করে দিলো। কিন্তু, তখন আর কান্নাকাটি করে কোন লাভ নাই, তখন বেচারা নাস্তিকদের ভাগে রয়েছে শুধুই কিল ঘুষি চড় থাপ্পর লাত্থি আগুন সাপ ধস্তাধস্তি মারামারি, আর আস্তিকরা তখন হুর-গেলমান কোলে নিয়ে মদের সাগরে সাঁতার কাটছে, আর বগল বাজাছে।

কিন্তু ভেবে দেখুন, এমনও তো হতে পারে, সারাজীবন ইসলামী নিয়ম কানুন পালন করে এক আল্লাহর উপাসনা করে মৃত্যুর পরে গিয়ে দেখলেন শিব ভদ্রলোক তার প্রকান্ড লিঙ্গ খাড়া করে প্রস্তুত হয়ে আছে, অবিশ্বাসীদের ধর্ষনের জন্য, তখন আপনার কি হবে?

অথবা আফ্রিকার কোন এক পাগলা পুঙ্গা পুঙ্গা দেবতা বড় কোন বাঁশ নিয়ে প্রস্তুত, আপনাকে বাঁশ প্রদানের জন্য, তখন?

অথবা ইহুদীদের হিংস্র জিহভা তার দলবল নিয়ে ছুড়িতে শান দিচ্ছে?
পৃথিবীতে চার হাজারের উপরে ধর্ম, কোটির উপরে দেবতা, আপনাকে তো এভাবে সাবধানী এবং বিজ্ঞ হতে হলে প্রতিটা ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে, প্রতিটি ধর্মগ্রন্থ মুখস্ত করতে হবে, ঘর ভর্তি করে দেবদেবী বা অদৃশ্য ঈশ্বরের উপাসনালয় বানাতে হবে। রাস্তার সব দোকানপাট ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র, অফিস আদালত তুলে দিয়ে ৪০০০ ধর্মের উপাসনালয় বানাতে হবে। সর্বক্ষন প্রতিটা ঈশ্বরের প্রার্থনায় রত থাকতে হবে। কিন্তু তাতেও বিশেষ লাভ হবে বলে মনে হচ্ছে না, অনেক ঈশ্বরই আবার অন্য ঈশ্বরের আরাধনা সহ্য করতে পারে না।
যেমন শুধু ইসলামেই শিরকের শাস্তি কিন্তু ভয়াবহ।

তারমানে পৃথিবীর কোন ধর্ম যদি সত্যি হয়, কোন একটি ঈশ্বর যদি থেকে থাকে, তবে নাস্তিকদের চেয়ে আস্তিকরাই বেশি বিপদে আছে। সারাজীবন একজন ঈশ্বরের আরাধনা করে গিয়ে যদি দেখেন মা কালী ন্যাংটো হয়ে বসে আছে, তখন আপনার কি হবে? কারণ, যেকোন একটি ঈশ্বরের সত্য হওয়ার সম্ভাবনা ততটুকুই যতটা আপনার ঈশ্বরের সত্য হবার সম্ভাবনা রয়েছে, যেহেতু কোন একটি ঈশ্বরের সম্পর্কে কোন প্রমাণই পাওয়া যাচ্ছে না।

তাই এই যুক্তিতেই নাস্তিকদের থেকে বরঞ্চ আস্তিকরাই বেশি বিপদে আছে। কারণ সারাজীবন উপুর হয়ে মাথা ঠুকে পরে গিয়ে ভেজালে পড়লে তখন কি হবে?

আসিফ মহিউদ্দীন

আসিফ মহিউদ্দীন সম্পাদক সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন [email protected]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *