22.আল্লাহর বলদামীঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের বাস্তবতা

ইসলামের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দলিলাদির মধ্যে খুব স্পষ্টভাবেই বর্ণিত আছে যে, মেরাজের রাতে আল্লাহ নাকি মুসলিমদের জন্য ‘পঞ্চাশ ওয়াক্ত’ নামাজ ফরজ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মহাবিশ্বের সর্বজ্ঞানের অধিকারী আল্লাহ পাক, যিনি সকল সিদ্ধান্তই নিশ্চিতভাবে খুব বুঝেশুনে নেন, তার এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে যখন মুহাম্মদ নিচের আসমানে নামেন, মুসা তখন তাকে আল্লাহর সাথে দরাদরি করে নামাজ কমাবার জন্য উৎসাহিত করেন। যার ফোলে মুহাম্মদ আবার গিয়ে বারবার দরাদরি করে নামাজের পরিমাণ কমিয়ে নিয়ে আসেন।

প্রশ্ন জাগে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাহলে হযরত মুসা কী আল্লাহর চাইতেও বেশি জ্ঞানী কিনা। খেয়াল করুন, হাদিসে বর্ণিত আছে, আল্লাহ প্রথম দফায় ৫০ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের হুকুম দিলেন। মুসার সাথে তখন নবীর দেখা হয়ে গেল। নবী মুহাম্মদের কাছে এই কথা শুনে আল্লাহর সরাসরি নির্দেশনার ওপর মুসা পাকনামি করা শুরু করে দিলেন। বললেন, আল্লাহ যা দিয়েছেন, আল্লাহর হুকুম নিয়ে দর কষাকষি করতে! যেন কাচা বাজারে কাচকি মাছের ভাগা নিয়ে মুলামুলি। সর্বজ্ঞানী আল্লাহর চাইতেও বেশি পাকনা মুসা নবীর পরামর্শে নবী মুহাম্মদ আল্লাহর সাথে রীতিমত কাঁচাবাজারে কাচকি মাছের দর কষাকষির মত মুলামুলি করে নামাজের পরিমাণ কমিয়ে আনেন। এ থেকে মুসা নবীকে আল্লাহর চাইতেও বেশি পাকনা বলে যে কারো মনে হতেই পারে, যেহেতু মুসা নবী আল্লাহর নির্ধারিত সালাত বিষয়ে আপত্তি তুলে সেটি কমানোর পরামর্শ দেন। অথচ আল্লাহ বলেছেন, [1] [2] [3]

তোমার পূর্বে আমি আমার যে সব রসূল পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রে এটাই ছিল নিয়ম আর তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবে না।
— Taisirul Quran
আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে যাদেরকে আমি পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম এবং তুমি আমার নিয়মের কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেনা।
— Sheikh Mujibur Rahman
তাদের নিয়ম অনুসারে যাদেরকে আমি আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে পাঠিয়েছিলাম এবং তুমি আমার নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না।
— Rawai Al-bayan
আমাদের রাসুলদের মধ্যে আপনার আগে যাদেরকে পাঠিয়েছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও ছিল এরূপ নিয়ম এবং আপনি আমাদের নিওমের কোনো পরিবর্তন পাবেন না [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

(এটাই) আল্লাহর বিধান, অতীতেও তাই হয়েছে, তুমি আল্লাহর বিধানে কক্ষনো কোন পরিবর্তন পাবে না।
— Taisirul Quran
ইহাই আল্লাহর বিধান, প্রাচীনকাল হতে চলে আসছে; তুমি আল্লাহর এই বিধানে কোন পরিবর্তন পাবেনা।
— Sheikh Mujibur Rahman
তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদের ব্যাপারে এটি আল্লাহর নিয়ম; আর তুমি আল্লাহর নিয়মে কোন পরিবর্তন পাবে না।
— Rawai Al-bayan
এটাই আল্লাহ্‌র বিধান—পূর্ব থেকেই যা চলে আসছে, আপনি আল্লাহর বিধানে কোনো পরিবর্তন পাবেন না।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

যমীনে উদ্ধত আচরণ আর কু-চক্রান্ত। কু-চক্রান্ত তাকেই ঘিরে ধরবে যে তা করবে। তাহলে তারা কি তাদের পূর্ববর্তীদের উপর (আল্লাহর পক্ষ হতে) যে বিধান প্রয়োগ করা হয়েছে তারই অপেক্ষা করছে? তুমি আল্লাহর বিধানে কক্ষনো কোন পরিবর্তন পাবে না। তুমি আল্লাহর বিধানে কক্ষনো কোন ব্যতিক্রম পাবে না।
— Taisirul Quran
পৃথিবীতে ঔদ্ধত্য প্রকাশ এবং কূট ষড়যন্ত্রের কারণে। কূট ষড়যন্ত্র ওর উদ্যোক্তাদেরকেই পরিবেষ্টন করে। তাহলে কি তারা প্রতীক্ষা করছে পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রযুক্ত বিধানের? কিন্তু তুমি আল্লাহর বিধানের কখনও কোন পরিবর্তন পাবেনা এবং আল্লাহর বিধানের কোন ব্যতিক্রমও দেখবেনা।
— Sheikh Mujibur Rahman
যমীনে উদ্ধত আচরণ ও কূটচক্রান্তের কারণে। কিন্তু কূটচক্রান্ত কেবল তার ধারককেই পরিবেষ্টন করবে। তবে কি তারা পূর্ববর্তীদের (উপর আল্লাহর) বিধানের অপেক্ষা করছে? কিন্তু তুমি আল্লাহর বিধানের কখনই কোন পরিবর্তন পাবে না এবং তুমি আল্লাহর বিধানের কখনই কোন ব্যতিক্রমও দেখতে পাবে না।
— Rawai Al-bayan
যমীনে ঔদ্ধ্যত প্রকাশ এবং কুট ষড়যন্ত্রের কারণে [১]। আর কুট ষড়যন্ত্র তার উদ্যোক্তাদেরকেই পরিবেষ্টন করবে। তবে কি এরা প্রতিক্ষা করছে পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রযুক্ত পদ্ধতির [২]? কিন্তু আপনি আল্লাহর পদ্ধতিতে কখনো কোনো পরিবর্তন পাবেন না এবং আল্লাহর পদ্ধতির কোনো ব্যতিক্রমও লক্ষ্য করবেন না।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আল্লাহর শানে এহেন বেয়াদবির জন্য আল্লাহ মুসা নবীকে কী শাস্তি দেবেন জানি না, তবে আল্লাহও নবীর চাপাচাপিতে নামাজের সংখ্যা কমিয়ে দেন বলে জানা যায়। মানে আল্লাহ নিজের ভুলটিও শুধরে নেন। নইলে নামাজের সংখ্যা কমাবেন কেন? যদি ৫০ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম আল্লাহই হয়ে থাকে, এবং সেটি আল্লাহর অসীম জ্ঞানের দ্বারা নেয়া সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, পরে মুসার পরামর্শে আল্লাহ নিজের ভুল শুধরে নেয়, তাহলে তো বুঝতে হবে, আল্লাহও ভুল করেন। তাহলে সে আল্লাহ হয় কীভাবে? [4]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬০/ আম্বিয়া কিরাম (‘আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ৬০/৫. ইদ্রীস (আঃ)-এর বিবরণ।
৬০/৪. অধ্যায় :
(মহান আল্লাহর বাণীঃ) আর নিশ্চয়ই ইলিয়াসও রাসূলগণের মধ্যে একজন ছিলেন। স্মরণ কর, তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন, তোমরা কি সাবধান হবে না? ………… আমি তা পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (আস্সাফফাতঃ ১২৩-১২৯)
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, (ইলয়াস আঃ-এর কথাকে) মর্যাদার সঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে। ইলয়াসের প্রতি সালাম। আমি সৎ-কর্মশীলদেরকে এভাবেই পুরস্কৃত করে থাকি। নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দাদের অন্যতম- (আস্সাফফাত ১৩০-১৩২)
এবং তিনি নূহ (আঃ)-এর পিতার দাদা ছিলেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আমি তাঁকে (ইদরীস) উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছি। (মারইয়াম ৫৭)
৩৩৪২. আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ যার (রাঃ) হাদীস বর্ণনা করতেন যে, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, (লাইলাতুল মি’রাজে) আমার ঘরের ছাদ উন্মুক্ত করা হয়েছিল। তখন আমি মক্কায় ছিলাম। অতঃপর জিব্রাঈল (আঃ) অবতরণ করলেন এবং আমার বক্ষ বিদীর্ণ করলেন। অতঃপর তিনি যমযমের পানি দ্বারা তা ধুলেন। এরপর হিকমত ও ঈমান (জ্ঞান ও বিশ্বাস) দ্বারা পূর্ণ একখানা সোনার তশ্তরি নিয়ে আসেন এবং তা আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর আমার বক্ষকে আগের মত মিলিয়ে দিলেন। এবার তিনি আমার হাত ধরলেন এবং আমাকে আকাশের দিকে উঠিয়ে নিলেন। অতঃপর যখন দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে পৌঁছলেন, তখন জিবরাঈল (আঃ) আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কে? জবাব দিলেন, আমি জিবরাঈল। দ্বাররক্ষী বললেন, আপনার সঙ্গে কি আর কেউ আছেন? তিনি বললেন, আমার সঙ্গে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আছেন। দ্বাররক্ষী জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে কি ডাকা হয়েছে? বললেন, হ্যাঁ। অতঃপর দরজা খোলা হল। যখন আমরা আকাশের উপরে আরোহণ করলাম, হঠাৎ দেখলাম এক ব্যক্তি যার ডানে একদল লোক আর তাঁর বামেও একদল লোক। যখন তিনি তাঁর ডান দিকে তাকান তখন হাসতে থাকেন আর যখন তাঁর বাম দিকে তাকান তখন কাঁদতে থাকেন। (তিনি আমাকে দেখে) বললেন, মারাহাবা! নেক নবী ও নেক সন্তান। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল! ইনি কে? তিনি জবাব দিলেন, ইনি আদম (আঃ) আর তাঁর ডানের ও বামের এ লোকগুলো হলো তাঁর সন্তান। এদের মধ্যে ডানদিকের লোকগুলো জান্নাতী আর বামদিকের লোকগুলো জাহান্নামী। অতএব যখন তিনি ডানদিকে তাকান তখন হাসেন আর যখন বামদিকে তাকান তখন কাঁদেন। অতঃপর আমাকে নিয়ে জিবরাঈল (আঃ) আরো উপরে উঠলেন। এমনকি দ্বিতীয় আকাশের দ্বারে এসে গেলেন। তখন তিনি এ আকাশের দ্বাররক্ষীকে বললেন, দরজা খুলুন! দ্বাররক্ষী তাঁকে প্রথম আকাশের দ্বাররক্ষী যেরূপ বলেছিল, তেমনি বলল। অতঃপর তিনি দরজা খুলে দিলেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর আবূ যার (রাঃ) উল্লেখ করেছেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আকাশসমূহে ইদ্রীস, মূসা, ‘ঈসা এবং ইবরাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাৎ পেয়েছেন। তাঁদের কার অবস্থান কোন্ আকাশে তিনি আমার নিকট তা বর্ণনা করেননি। তবে তিনি এটা উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দুনিয়ার নিকটবর্তী আকাশে আদম (আঃ)-কে এবং ষষ্ঠ আকাশে ইবরাহীম (আঃ)-কে দেখতে পেয়েছেন।
আনাস (রাঃ) বলেন, জিবরাঈল (আঃ) যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহ) ইদ্রীস (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলেন, তখন তিনি (ইদ্রীস (আঃ)) বলেছিলেন, হে নেক নবী এবং নেক ভাই! আপনাকে মারহাবা। (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন) আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল) জবাব দিলেন, ইনি ইদ্রীস (আঃ)! অতঃপর মুসা (আঃ)-এর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি মূসা (আঃ)। অতঃপর ‘ঈসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা! হে নেক নবী এবং নেক ভাই। তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ‘ঈসা (আঃ)। অতঃপর ইবরাহীম (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তিনি বললেন, মারহাবা। হে নেক নবী এবং নেক সন্তান! আমি জানতে চাইলাম, ইনি কে? তিনি (জিবরাঈল (আঃ)) বললেন, ইনি ইবরাহীম (আঃ)।
ইবনু শিহাব (রহ.) বলেন, আমাকে ইবনু হাযম (রহ.) জানিয়েছেন যে, ইবনু ‘আব্বাস ও আবূ ইয়াহয়্যা আনসারী (রাঃ) বলতেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অতঃপর জিবরাঈল আমাকে ঊর্ধ্বে নিয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত আমি একটি সমতল স্থানে গিয়ে পৌঁছলাম। সেখান হতে কলমসমূহের খসখস শব্দ শুনছিলাম।
ইবনু হাযম (রহ.) এবং আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আল্লাহ আমার উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেছেন। অতঃপর আমি এ নির্দেশ নিয়ে ফিরে আসলাম। যখন মূসা (আঃ)-এর পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আপনার রব আপনার উম্মাত উপর কী ফরজ করেছেন? আমি বললাম, তাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তিনি বললেন, পুনরায় আপনার রবের নিকট ফিরে যান। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য রাখে না। তখন ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার জন্য আবেদন করলাম। তিনি তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে পুনরায় কমাবার আবেদন করুন এবং তিনি (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) পূর্বের অনুরূপ কথা আবার উল্লেখ করলেন। এবার তিনি (আল্লাহ) তার অর্ধেক কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তিনি পূর্বের মত বললেন। আমি তা করলাম। তখন আল্লাহ তার এক অংশ মাফ করে দিলেন। আমি পুনরায় মূসা (আঃ)-এর নিকট আসলাম এবং তাঁকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আরো কমাবার আরয করুন। কেননা আপনার উম্মাতের তা পালন করার সামর্থ্য থাকবে না। আমি আবার ফিরে গেলাম এবং আমার রবের নিকট তা কমাবার আবেদন করলাম। তিনি বললেন, এ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বাকী রইল। আর তা সাওয়াবের ক্ষেত্রে পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের সমান হবে। আমার কথার পরিবর্তন হয় না। অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-এর নিকট ফিরে আসলাম। তিনি এবারও বললেন, আপনার রবের নিকট গিয়ে আবেদন করুন। আমি বললাম, এবার আমার রবের সম্মুখীন হতে আমি লজ্জাবোধ করছি। এবার জিবরাঈল (আঃ) চললেন এবং অবশেষে আমাকে সাথে নিয়ে সিদ্রাতুল মুন্তাহা পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। দেখলাম তা এমন চমৎকার রঙে পরিপূর্ণ যা বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। অতঃপর আমাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করানো হল। দেখলাম এর ইট মোতির তৈরী আর এর মাটি মিসক বা কস্তুরীর মত সুগন্ধময়। (৩৪৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩০৯৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১০৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)


পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময়ের হিসেব

এবারে আসুন একটি হিসেব করি। ইসলামে প্রতিদিন মসজিদে জামাতের সাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে মোট কতটা সময় লাগে, সেটা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের ওপর, যেমন:

  • প্রতিটি নামাজের দৈর্ঘ্য (ইমামের কিরাত ছোট না বড়),
  • মসজিদে যাওয়া ও আসার সময়,
  • আজান ও জামাতের মধ্যবর্তী সময়,
  • জামাতে আগেভাগে যাওয়া (সুন্নত নামাজ পড়া, দোয়া করা ইত্যাদি)।

তবে একটি গড় হিসাব দেওয়া যায়।


গড় সময় হিসাব (প্রতি ওয়াক্তে):

নামাজওযু (মিনিটে)জামাতে আনুমানিক সময় (মিনিটে)একাকী আনুমানিক সময় (মিনিটে)বিস্তারিতগড় (ওযু + নামাজ) (মিনিটে) আনুমানিক
ফজর৫-৭১০–১৫৫-১০২ রাকাত সুন্নত, ২ রাকাত ফরজ, দোয়া১৫-১৭
জোহর৫-৭২০–২৫১৫–২০৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নত, ২ রাকাত নফল, দোয়া২২-২৭
আসর৫-৭১৫–২০১০-১৫৪ রাকাত ফরজ, ৪ রাকাত সুন্নত, দোয়া১৫-২২
মাগরিব৫-৭১০–১৫৭-১২৩ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নত, দোয়া১৫-২২
এশা৫-৭২৫–৪০১৫-২৫৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ, ২ রাকাত সুন্নত, ১-৩ রাকাত বিতর, ২ রাকাত নফল, দোয়া৩০-৩৪

মোট সময় (গড় হিসেবে):

  • ফজর: ১৫-১৭ = ১৬ মিনিট
  • জোহর: ২২-২৭ = ২৪ মিনিট
  • আসর: ১৫-২২ = ১৮ মিনিট
  • মাগরিব: ১৫-২২ = ১৮ মিনিট
  • এশা: ৩০-৩৪ = ৩২ মিনিট

মোট যোগফল:

১৬ + ২৪ + ১৮ + ১৮ + ৩২ = ১০৮ মিনিট, অর্থাৎ প্রায় ১ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট প্রতিদিন।


পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সময়ের হিসেব

স্বাভাবিকভাবেই, পাঁচওয়াক্ত নামাজে গড়ে সময় লাগে ১০৮ মিনিট। কারো কিছুটা কম হতে পারে, আবার কারো কিছুটা বেশিও হতে পারে। সুতরাং পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ পড়লে সময় লাগতো ১০৮০ মিনিট অর্থাৎ ১৮ ঘন্টা। প্রতিদিন একজন মানুষের সময় ২৪ ঘণ্টা। ছয় ঘণ্টা ঘুমালে বাদবাকি পুরো সময়ই তাহলে নামাজ পড়তে হতো। খানাদানা চাকরিবাকরি এমনকি প্রস্রাব পায়খানা করারও সময় থাকতো না।


উপসংহার

উপরের এই হিসেব থেকে খুব স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়, আল্লাহ পাক শুরুতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের যেই সিদ্ধান্ত মুসলিমদের জন্য দিয়েছিলেন, তা নিতান্তই বলদের মত একটি কাজ হয়েছিল। মুসার কারণে আসলে আল্লাহর শেষ রক্ষা হলো। নতুবা এরকম বলদ মার্কা আবদার কোন মুসলিমের পক্ষেই মানা সম্ভব হতো না। সবচাইতে অন্ধবিশ্বাসী মুমিনটিও তখন ইসলাম ত্যাগ করতো। তাই বলা যায়, মুসাই আল্লাহ ও ইসলামের রক্ষাকর্তা। মুসা সেইদিন না থাকলে ইসলামের লাল বাত্তি সেইদিনই জ্বলে যেতো।

তথ্যসূত্র

  1. সূরা ১৭ঃ আয়াত ৭৭ []
  2. সূরা ৪৮ঃ আয়াত ২৩ []
  3. সূরা ৩৫ঃ আয়াত ৪৩ []
  4. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৩৩৪২ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"