07.আল্লাহর আরশ মচমচ করে কাঁপে

ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থ আল্লামা ইবনে কাশ্মীরের আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ পাকের আরশ নাকি আরোহীর ভারে মচমচ করে কাঁপে। আল্লাহ পাকের ওজন নিশ্চয়ই অনেক বেশি, তাই আটজন বিশালাকার ফেরেশতা মিলে আল্লাহর আরশ বহন করতে পারে না। নইলে এটি মচমচ করে কাঁপবে কেন? আরোহী নড়াচড়া করলেই তো এটির এরকম মচমচ করে কাঁপার কথা [1]

আরশ

এবারে আসুন দেখে নিই, আল্লাহর আরশ যে আটজন বিশালাকার ফেরেশতা বহন করে, সেই প্রসঙ্গে আসি। নিচের হাদিসটি পড়ুন, আল্লাহ পাকের ওজনও রয়েছে। অর্থাৎ মধ্যাকর্ষণ বল তার ওপর কাজ করছে। তাকে যেহেতু বহন করার জন্য বিরাট বিরাট ফেরেশতার দরকার হয়, নিঃসন্দেহে তার ওপর মধ্যাকর্ষণ বল্য কার্যকর হচ্ছে। নইলে আমরা জানি, মহাশূন্যে যেখানে মধ্যাকর্ষণ বল্য কাজ করে না, সেখানে সব কিছু এমনিতেই ভাসতে পারে। চেয়ার বহন করতে বিশালাকার ফেরেশতার দরকার হয় না [2] [3]-

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৯. জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় সম্পর্কে
৪৭২৭। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে সকল ফিরিশতা আল্লাহর আরশ বহন করেন, তাদের একজনের সঙ্গে আলাপ করার জন্য আমাকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তার কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত স্থানের দূরত্ব হলো সাতশ বছরের দূরত্বের সমান।[1]
সহীহ।
[1]. তাবারানী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)

আরশ 1

কেউ দাবী করতে পারেন, ঐটা আল্লাহর ওজন নয়, আরশের ওজন। কিন্তু সেটিও যুক্তিতে সঠিক বলা যায় না। কারণ, মাঝে মাঝে রাগে দুঃখে শোকে আল্লাহর আরশ কেঁপেও ওঠে। উপড়েই বলা হয়েছে, আল্লাহর আরশ মচমচ করে। এবারে দেখে নিই, সেই আরশ কেঁপেও ওঠে। আর্মসের তো নিশ্চয়ই নিজস্ব বুদ্ধিবিবেচনা নেই যে, মুহাম্মদের কোন সাহাবীর মৃত্যুতে সে নিজেই কেঁপে উঠবে, তাই না? প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর ওজন না থাকলে আরশ বা আল্লাহর সিংহাসন কেঁপে উঠবে কেন? আরো প্রশ্ন হচ্ছে, নবীর এক সাহাবীর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেন কেঁপে উঠলো? আল্লাহর তো আগে থেকেই জানার কথা, সেই সাহাবী কবে কখন মারা যাবে। আসলে আল্লাহই তো সেই মৃত্যু ঘটান।তাকদীরের সব কিছু তো আল্লাহ পাক আগেই লিখে রেখেছেন। তাহলে আরশ কেন কাঁপলো? সাধারণত আমরা রাগে দুঃখে শোকের কারণে কেঁপে উঠি। কিন্তু আল্লাহর আরশ কাঁপার প্রয়োজন কী? [4]

সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১২২. স্বাদ ইবন মু’আয (রাঃ) এর মর্যাদা
৩৫৩১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … জাবির (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ ত’আলার আরশ কেঁপে উঠে ছিল। আমাশ (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যাক্তি জাবির (রাঃ) কে বলল, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তো বলেন, জানাযার খাট নড়েছিল। তদুত্তরে জাবির (রাঃ) বললেন, সা’দ ও বারা (রাঃ) এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল, (কিন্তু এটা ঠিক নয়) কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে عَرْشُ الرَّحْمَنِ অর্থাৎ আল্লাহর আরশ সা’দ ইবনু মু’আযের (মৃত্যুতে) কেঁপে উঠল বলতে শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তথ্যসূত্র

  1. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৫ []
  2. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৭২৭ []
  3. সুনান আবূ দাউদ, তাহক্বীকঃ আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী, আল্লামা আলবানী একাডেমী, পৃষ্ঠা ৪৫৪, ৪৫৫ []
  4. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫৩১ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"