ভূমিকা
মহাবিশ্বের স্রষ্টা, যিনি সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞ হিসেবে বিবেচিত, তার প্রাণীদের মতো শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন হাত-পা থাকার ধারণাটি যৌক্তিকভাবে সম্ভব নয় বলে গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিকগোন মনে করে। এর প্রধান কারণ মূলত, ধর্মতাত্ত্বিক এবং বৈজ্ঞানিক জ্ঞান। কারণ হাত পা বা আকার আকৃতি সম্পন্ন হওয়া মূলত প্রাণীর শারীরিক বৈশিষ্ট্য। এই বিষয়গুলো যৌক্তিকভাবে ঈশ্বরের ধারনাকে সীমাবদ্ধ ও নির্ভরশীল করে ফেলে। ঈশ্বরকে একটি সর্বশক্তিমান, অসীম সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যিনি মানবিক সীমাবদ্ধতা বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যের ঊর্ধ্বে।
- ১. শারীরিক সীমাবদ্ধতা এবং স্রষ্টার অসীমতা
- প্রাণীদের শরীর যেমন হাত, পা, চোখ, কান ইত্যাদি, শারীরিক সত্তার অংশ, যা তাদের চলাচল, দেখাশোনা এবং কাজ করতে সাহায্য করে। কিন্তু মহাবিশ্বের স্রষ্টা হলেন অসীম, সর্বত্র বিরাজমান এবং শাশ্বত সত্তা, যার শারীরিক সীমাবদ্ধতা নেই। শারীরিক অঙ্গ থাকা মানে একটি নির্দিষ্ট স্থানে থাকা এবং সীমিত ক্ষমতার অধিকারী হওয়া। স্রষ্টা যদি হাত বা পা বা শারীরিক অঙ্গ দ্বারা সীমাবদ্ধ হন, তবে তাঁর সর্বশক্তিমান ও অসীম ক্ষমতার বিষয়গুলো প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। মহাবিশ্বের স্রষ্টা যদি সর্বত্র বিরাজমান এবং শারীরিক সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে হয়ে থাকেন, তার জন্য শারীরিক অঙ্গ থাকা যৌক্তিকভাবে অপ্রয়োজনীয় বা সেগুলো থাকার কোন যুক্তি নেই।
- ২. স্রষ্টার অশরীরীতা (Immateriality)
- ঈশ্বরকে সাধারণত অশরীরী (immaterial) সত্তা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দার্শনিক এবং ধর্মতাত্ত্বিকভাবে স্রষ্টাকে এমন একটি সত্তা হিসেবে দেখা হয়, যার নির্দিষ্ট কোনো শারীরিক রূপ নেই বা দেহ নেই। তার দেহ থাকা অর্থ এই যে, তার দেহটি কোন পদার্থ দ্বারা তৈরি। তখন যৌক্তিক প্রশ্ন ওঠে, সেই পদার্থের উদ্ভব কীভাবে হল? স্রষ্টার ধারণাটিকে সত্য বলে ধরে নিলে, তার স্থান-কাল এবং পদার্থের সীমাবদ্ধতার বাইরে থাকার কথা। শারীরিক অঙ্গ যেমন হাত বা পা থাকলে স্রষ্টাকে একটি শারীরিক সত্তা হিসেবে বিবেচনা করতে হবে, যা তার অশরীরী অস্তিত্বের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। স্রষ্টার অশরীরীতা তাঁকে অসীম ও সর্বশক্তিমান হিসেবে পরিচয় দেয়, যা একটি শারীরিক সত্তার মাধ্যমে সম্ভব নয়।
- ৩. প্রয়োজনের অনুপস্থিতি
- প্রাণীরা হাত বা পা ব্যবহার করে দৈনন্দিন কাজ সম্পন্ন করে, যেমন চলাচল, খাওয়া, শিকার করা বা কোনো কিছু ধরতে। কিন্তু স্রষ্টা যিনি সমস্ত কিছুর স্রষ্টা এবং নিয়ন্ত্রক, তাঁর জন্য শারীরিক অঙ্গের প্রয়োজন নেই। যিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং সমস্ত শক্তি ও জ্ঞানের অধিকারী, তার পক্ষে কোনো নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে হাত-পা বা শারীরিক অঙ্গ ব্যবহার করা প্রয়োজনীয় নয়। তার ইচ্ছা বা আদেশের মাধ্যমেই সবকিছু সম্ভব হয়।
- ৪. ধর্মীয় শিক্ষা
- ইসলামিক ধর্মতত্ত্বে বিশেষ করে বলা হয়েছে, আল্লাহ সৃষ্টি থেকে পৃথক। ইসলামিক বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহকে মানুষের মতো বা অন্য কোনো সৃষ্টির মতো কল্পনা করা শিরক (অন্য কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ ভাবা) হিসেবে বিবেচিত হয়। কোরআনে আল্লাহকে অসীম ক্ষমতাধর ও অদ্বিতীয় হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, যার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা করা সম্ভব নয়। কিন্তু হাত পা বা আকৃতি থাকা অর্থই তো কিছু না কিছুর সাথে সামান্য হলেও তুলনীয়।
- ৫. দার্শনিক যুক্তি
- প্লেটো এবং অ্যারিস্টটল সহ প্রাচীন দার্শনিকরা যুক্তি দেন যে, সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কোনো শারীরিক অঙ্গ থাকা যৌক্তিক নয়, কারণ শারীরিক অঙ্গ থাকা মানেই সীমাবদ্ধতা থাকা। সর্বশক্তিমান সত্তার পক্ষে সীমাবদ্ধতা থাকা সম্ভব নয়, কারণ এটি তার শক্তি এবং জ্ঞানের ওপর প্রভাব ফেলবে। দার্শনিকভাবে, স্রষ্টাকে একটি সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, সর্বত্র উপস্থিত সত্তা হিসেবে দেখার ফলে তার কোনো শারীরিক রূপ বা অঙ্গের ধারণা একেবারেই অযৌক্তিক হয়ে ওঠে।
- ৬. বিবর্তন ও শারীরিক অঙ্গের প্রয়োজন
- প্রাণীর শারীরিক অঙ্গ যেমন হাত ও পা, বিবর্তনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এবং জীবনের টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় কাজ করা। স্রষ্টা যিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখেন, তাঁর জন্য এই ধরনের শারীরিক বিবর্তনের প্রয়োজন নেই। তার অস্তিত্ব এবং কাজ করার জন্য কোনো বাহ্যিক অঙ্গের দরকার নেই।
ইসলামের আল্লাহ আকৃতিসম্পন্ন
ইসলামের আকিদা অনুসারে আল্লাহর হাত পা মাথা চোখ নাক কান সবই রয়েছে। আল্লাহ নিরাকার, এরকম কোন বক্তব্য কোরআন হাদিস সীরাত কিংনা কোন ইসলামিক দলিল থেকেই কখনো জানা যায় না। আসুন শুরুতেই মুফতি ইব্রাহিমের একটি বক্তব্য শুনে নিই,
আল্লাহর ওজন
ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ পাকের ওজন রয়েছে। যার প্রমাণ মেলে নিচের হাদিসটি থেকে। তাকে বহন করার জন্য বিরাট বিরাট ফেরেশতার দরকার হয় [1] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৯. জাহমিয়্যাহ সম্প্রদায় সম্পর্কে
৪৭২৭। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে সকল ফিরিশতা আল্লাহর আরশ বহন করেন, তাদের একজনের সঙ্গে আলাপ করার জন্য আমাকে অনুমতি দেয়া হয়েছিল। তার কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত স্থানের দূরত্ব হলো সাতশ বছরের দূরত্বের সমান।[1]
সহীহ।
[1]. তাবারানী।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
কেউ দাবী করতে পারেন, ঐটা আল্লাহর ওজন নয়, আরশের ওজন। কিন্তু সেটিও যুক্তিতে সঠিক বলা যায় না। কারণ, মাঝে মাঝে রাগে দুঃখে শোকে আল্লাহর আরশ কেঁপেও ওঠে। প্রশ্ন হচ্ছে, আল্লাহর ওজন না থাকলে আরশ বা আল্লাহর সিংহাসন কেঁপে উঠবে কেন? আরো প্রশ্ন হচ্ছে, নবীর এক সাহাবীর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেন কেঁপে উঠলো? আল্লাহর তো আগে থেকেই জানার কথা, সেই সাহাবী কবে কখন মারা যাবে। আসলে আল্লাহই তো সেই মৃত্যু ঘটান। তাহলে আরশ কেন কাঁপলো? সাধারণত আমরা রাগে দুঃখে শোকের কারণে কেঁপে উঠি। কিন্তু আল্লাহর আরশ কাঁপার প্রয়োজন কী? [2]
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছদঃ ২১২২. স্বাদ ইবন মু’আয (রাঃ) এর মর্যাদা
৩৫৩১। মুহাম্মদ ইবনু মূসান্না (রহঃ) … জাবির (রাঃ) বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি সা’দ ইবনু মু’আয (রাঃ) এর মৃত্যুতে আল্লাহ্ ত’আলার আরশ কেঁপে উঠে ছিল। আমাশ (রহঃ) … নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে, এক ব্যাক্তি জাবির (রাঃ) কে বলল, বারা ইবনু আযিব (রাঃ) তো বলেন, জানাযার খাট নড়েছিল। তদুত্তরে জাবির (রাঃ) বললেন, সা’দ ও বারা (রাঃ) এর গোত্রদ্বয়ের মধ্যে কিছুটা বিরোধ ছিল, (কিন্তু এটা ঠিক নয়) কেননা, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে عَرْشُ الرَّحْمَنِ অর্থাৎ আল্লাহর আরশ সা’দ ইবনু মু’আযের (মৃত্যুতে) কেঁপে উঠল বলতে শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আল্লাহর চেহারা
আল্লাহ আল কুরআনের অনেকগুলো আয়াতে তার চেহারার প্রমাণ দিয়েছেন। সুরা রহমানের ২৭ নম্বর আয়াতের ইংরেজি অনুবাদ এবং বাঙলা অনুবাদ লক্ষ্য করুন [3]
And there will remain the Face of your Lord, Owner of Majesty and Honor.
— Saheeh International
হে রাসূল! কেবল আপনার রবের চেহারাই অবশিষ্ট থাকবে। যিনি নিজ বান্দাদের উপর মহা অনুকম্পা ও অনুগ্রহ প্রদর্শনকারী। ফলে তাঁকে আদৗ কোন ধ্বংসই পাবে না।
— Bengali Mokhtasar
কিন্তু চিরস্থায়ী তোমার প্রতিপালকের চেহারা (সত্তা)- যিনি মহীয়ান, গরীয়ান,
— Taisirul Quran
অবিনশ্বর শুধু তোমার রবের মুখমন্ডল যিনি মহিমাময়, মহানুভব।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর থেকে যাবে শুধু মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের চেহারা*। *চেহারা বলতে কোন কোন তাফসীরকার আল্লাহর সত্তাকে বুঝিয়েছেন।
— Rawai Al-bayan
আর অবিনশ্বর শুধু আপনার রবের চেহারা [১], যিনি মহিমাময়, মহানুভব [২];
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে নিচের আয়াতটি [4] লক্ষ্য করুন-
And do not invoke with Allāh another deity. There is no deity except Him. Everything will be destroyed except His Face.1 His is the judgement, and to Him you will be returned.
— Saheeh International
৮৮. আর আপনি আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কোন মা’বূদকে ডাকবেন না। কারণ, তিনি ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই। তিনি ছাড়া অন্য সবকিছুই ধ্বংসপ্রাপ্ত। ফায়সালা করার ক্ষমতা কেবল তাঁরই। তিনি যা চান ফায়সালা করেন। কিয়ামতের দিন হিসাব ও প্রতিদানের জন্য একমাত্র তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে।
— Bengali Mokhtasar
আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তাঁর (সত্তা) ছাড়া সকল কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই, আর তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে আনা হবে।
— Taisirul Quran
তুমি আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডেকনা, তিনি ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছু ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহর সাথে অন্য কোন ইলাহকে ডেকো না, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তাঁর চেহারা (সত্ত্বা)* ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল, সিদ্ধান্ত তাঁরই এবং তাঁর কাছেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। * আয়াতে উল্লিখিত وجه শব্দের অর্থ চেহারা। আল্লাহর চেহারা আছে। আর তাঁর চেহারা যেমন ধ্বংসশীল নয় তেমনি তাঁর সত্ত্বাও ধ্বংসশীল নয়।
— Rawai Al-bayan
আর আপনি আল্লাহ্র সাথে অন্য ইলাহ্কে ডাকবেন না, তিনি ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ্ নেই। আল্লাহ্র সত্তা ছাড়া সব কিছুই ধ্বংসশীল [১]। বিধান তাঁরই এবং তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
আল্লাহর চোখ
আল্লাহ তা’আলা নিজের দেখার ব্যাপারে কুরআনের পঞ্চাশটি আয়াতে প্রমাণ দিয়েছেন। কিন্তু আইন (চোখ) ও আইউন (চোখগুলাে) শব্দ পাঁচটি আয়াতে ব্যবহার করেছেন। হাদিসগুলোতেও আল্লাহর দেখার ব্যাপারে অসংখ্য বর্ণনা পাওয়া যায় [5] [6]
হে মুহাম্মাদ! তােমার প্রতিপালকের হুকুম মােতাবেক তুমি ধৈর্য ধর। কারণ, তুমি আমার চোখের সামনে আছ।
সহীহ মুসলিম (হাঃ একাডেমী)
অধ্যায়ঃ ১। ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছদঃ ৭৫. মারইয়াম পুত্র ঈসা (আঃ) ও মাসীহিদ দাজ্জাল-এর বর্ণনা।
৩১৫-(২৭৪/…) মুহাম্মাদ ইবনু ইসহাক আল মুসাইয়্যাবী (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিঃ) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবাদের সম্মুখে দাজ্জালের কথা উল্লেখ করে বললেন, অবশ্যই আল্লাহ তা’আলা টেরা চোখ বিশিষ্ট নন। জেনে রাখ দাজ্জালের ডান চোখ টেরা যেন ফোলা একটি আঙ্গুর। ইবনু উমার (রাযিঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, একবার আমি স্বপ্নে আমাকে কা’বার কাছে পেলাম। গোধূম বর্ণের এক ব্যক্তিকে দেখলাম। এ বর্ণের তোমরা যত লোক দেখেছ তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর। চুল তার কাঁধ পর্যন্ত বুলছিল। তার চুলগুলো ছিল সোজা। তা থেকে তখন পানি ঝরছিল। তিনি দু’ ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। জিজ্ঞেস করলাম, ইনি কে? বলা হল, ইনি মাসীহ ইবনু মারইয়াম। তারই পেছনে দেখলাম, আরেক ব্যক্তি, অধিক কোঁকড়ানো চুল। তার ডান চোখ ছিল টেরা। সে দেখতে ছিল ইবনু কাতান এর ন্যায়। সেও দু’ ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করছে। জিজ্ঞেস করলাম, এ কে? বলা হল, মাসীহুদ দাজ্জাল। (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২৩, ইসলামিক সেন্টারঃ ৩৩৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এই হাদিসটিই দেখে নিই সরাসরি বই থেকে [7] –
কুরআনে উক্ত আয়াতগুলাে এবং বিভিন্ন হাদীস থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর চোখ আছে।
আল্লাহর হাত
কোরআন হাদিসের অসংখ্য জায়গায় আল্লাহর হাতের কথা খুব পরিষ্কারভাবেই বলা আছে।
আল্লাহ বললেন, হে ইবলীস, আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তার সম্মুখে সেজদা করতে তোমাকে কিসে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে, না তুমি তার চেয়ে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন?
সুরা ৩৮ঃ৭৫
আল্লাহর হাত তাদের হাতের উপর রয়েছে।
কুরআন ৪৮ঃ১০
আর ইহুদীরা বলেঃ আল্লাহর হাত বন্ধ হয়ে গেছে। তাদেরই হাত বন্ধ হোক। একথা বলার জন্যে তাদের প্রতি অভিসম্পাত। বরং তাঁর উভয় হস্ত উম্মুক্ত।
কুরআন ৫ঃ৬৪
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৬. সূরা আল-মায়িদাহ
৩০৪৫। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দয়াময় আল্লাহ তা’আলার ডান হাত পূর্ণ। সর্বদা তা অনুগ্রহ ঢালছে। রাত দিনের অবিরাম দান তাতে কখনো কমতি ঘটাতে পারে না। তিনি আরো বলেন, তোমরা লক্ষ্য করেছ কি যেদিন থেকে তিনি আসমান-যামীন সৃষ্টি করেছেন সেদিন হতে কত না দান করে আসছেন, অথচ তার ডান হাতে যা আছে তাতে কিছুই কমতি হয়নি। (সৃষ্টির পূর্বে) তার আরশ ছিল পানির উপর। তার অপর হাতে রয়েছে মীযান (দাঁড়ি-পাল্লা)। তিনি তা নীচু করেন ও উত্তোলন করেন (সৃষ্টির রিযিক নির্ধারণ করেন)।
সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (১৯৭)।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ। এ হাদীসটি হল নিম্নোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যাস্বরূপঃ “ইয়াহুদীরা বলে, আল্লাহ তা’আলার হাত রুদ্ধ। ওরাই আসলে রুদ্ধহস্ত এবং ওরা যা বলে তজ্জন্য ওরা অভিশপ্ত। বরং আল্লাহ তা’আলার উভয় হাতই প্রসারিত, যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন”— (সূরা আল-মায়িদাহ ৬৪)।
ইমামগণ বলেন, এ হাদীস যেরূপে (আমাদের নিকট) এসেছে, কোনরূপ ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ও সন্দেহ-সংশয় ব্যতীতই তার উপর সেভাবেই ঈমান আনতে হবে। একাধিক ইমাম এ কথা বলেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সুফইয়ান সাওরী, মালিক ইবনু আনাস, ইবনু উয়াইনাহ, ইবনুল মুবারাক (রাহঃ) প্রমুখ। তাদের মতে এরূপ বিষয় বর্ণনা করা যাবে, এগুলোর উপর ঈমান রাখতে হবে, কিন্তু তা কেমন এ কথা বলা যাবে না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে সহীহ আত-তিরমিযী শরীফ থেকে [8] কয়েকটি পাতা পড়ে নিই-
এবারে তিরমিযী শরীফ থেকে পড়ি [9] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯৭/ তাওহীদ
৭৪১৩. আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ যমীনকে তাঁর মুঠোয় নিয়ে নেবেন। (৪৮১২) (আধুনিক প্রকাশনী- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৯০৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৫/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ ২১. জাহমিয়্যাহ মতবাদ প্রত্যাখ্যাত
৪৭৩২। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ কিয়ামতের দিন আসমানসমূহকে গুটিয়ে তাঁর ডান হাতে নিয়ে বললেবন, আমি সর্বময় কর্তা ও মালিক, স্বৈরাচারীরা ও অহংকারকারীরা কোথায়? অতঃপর পৃথিবীসমূহকে গুটিয়ে অপর হাতে নিয়ে বলবেন, আমি মালিক স্বৈরাচারীরা ও অহংকারীরা কোথায়?[1]
সহীহ।
[1]. মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ)
আল্লাহর হাতের আঙুল
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
অধ্যায়ঃ ৩০/ তাকদীর
পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী
পরিচ্ছদঃ ৭. আল্লাহ তা’আলার দুই আঙ্গুলের মধ্যে সমস্ত অন্তর অবস্থিত
২১৪০। আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দু’আ অধিক পাঠ করতেনঃ হে অন্তরসমূহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে তোমার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত (দৃঢ়) রাখো। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। আমরা ঈমান এনেছি আপনার উপর এবং আপনি যা নিয়ে এসেছেন তার উপর। আপনি আমাদের ব্যাপারে কি কোনরকম আশংকা করেন? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, কেননা, আল্লাহ তা’আলার আঙ্গুলসমূহের মধ্যকার দুটি আঙ্গুলের মাঝে সমস্ত অন্তরই অবস্থিত। তিনি যেভাবে ইচ্ছা তা পরিবর্তন করেন।
সহীহ, ইবনু মা-জাহ (৩৮৩৪)।
আবূ ঈসা বলেন, নাওয়াস ইবনু সাম্আন, উন্মু সালামা, আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ও আইশা (রাঃ) হতেও এ অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। এ হাদীসটি হাসান। আমাশ-আবৃ সুফিয়ান হতে, তিনি আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে একাধিক বর্ণনাকারী একইরকম হাদীস বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ আমাশ-আবৃ সুফিয়ান হতে, তিনি জাবির (রাঃ) হতে, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। আনাস (রাঃ)-এর সূত্রে আবূ সুফিয়ানের বর্ণিত হাদীসটি অনেক বেশি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে সূনান আত তিরমিজী আরো কয়েকটি পাতা পড়ে নিই [10]
আল্লাহর পা
পায়ের পাতার প্রমাণঃ
আবু হুরাইরার বর্ণনায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জাহান্নাম ততক্ষণ ভরবেনা যতক্ষণ না আল্লাহ তাঁর পা জাহান্নামে রেখে দেবেন তখন জাহান্নাম বলতে থাকবে ব্যাস! ব্যাস !!
(বুখারীও মুসলিম, মিশকাত ৫০৫ পৃষ্ঠা)
ইবনু আব্বাসের বর্ণনায় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আলকুর্সী মাওাইল কুদামাইন- কুরসী হচ্ছে আল্লাহর দুটি পায়ের পাতা রাখার জায়গা।
(মুসতাদরকে হা-কিম ২য় খণ্ড, ২৮২ পৃষ্ঠা)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮৬/ জাহ্মিয়াদের মতের খণ্ডন ও তাওহীদ প্রসঙ্গ
পরিচ্ছদঃ ৩১২৭. আল্লাহ্র বাণীঃ আল্লাহ্র অনুগ্রহ সৎকর্মপরায়নদের নিকটবর্তী (৭ঃ ৫৬)
৬৯৪১। উবায়দুল্লাহ ইবনু সা’দ ইবনু ইবরাহিম (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাত ও জাহান্নাম উভয়টি স্বীয় প্রতিপালকের কাছে অভিযোগ করল। জান্নাত বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার ব্যাপারটি কি হলো যে তাতে শুধু নিঃস্ব ও নিম্ন শ্রেনীর লোকেরাই প্রবেশ করবে। এদিকে জাহান্নামও অভিযোগ করল অর্থাৎ আপনি শুধুমাত্র অহংকারীদেরকেই আমাতে প্রাধান্য দিলেন। আল্লাহ জান্নাতকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তুমি আমার রহমত। জাহান্নামকে বললেনঃ তুমি আমার আযাব। আমি যাকে চাইব, তোমাকে দিয়ে শাস্তি পৌছাব। তোমাদের উভয়কেই পূর্ণ করা হবে। তবে আল্লাহ তা’আলা তার সৃষ্টির কারো উপর যুলম করবেন না। তিনি জাহান্নামের জন্য নিজ ইচ্ছানুযায়ী নতুন সৃষ্টি পয়দা করবেন। তাদেরকে যখন জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, তখন জাহান্নাম বলবে, আরো অভিরিক্ত আছে কি? জাহান্নামে আরো নিক্ষেপ করা হবে, তখনো বলবে, আরো অতিরিক্ত আছে কি? এভাবে তিনবার বলবে। পরিশেষে আল্লাহ তাআলা তাঁর কদম (পা) জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে দিলে তা পরিপূর্ন হয়ে যাবে। তখন জাহান্নামের একটি অংশ আরেকটি অংশকে এই উত্তর করবে যথেষ্ট হয়েছে যথেষ্ট হয়েছে ষথেষ্ট হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আল্লাহর পায়ের নলা
আল্লাহর রূপ রঙ
আমরা আল্লাহর রং গ্রহণ করেছি। আল্লাহর রং এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? আমরা তাঁরই এবাদত করি।
কুরআন ২ঃ১৩৮
আল্লাহর গলা বা কণ্ঠস্বর
যখন সে তার কাছে পৌছল, তখন পবিত্র ভূমিতে অবস্থিত উপত্যকার ডান প্রান্তের বৃক্ষ থেকে তাকে আওয়াজ দেয়া হল, হে মূসা! আমি আল্লাহ, বিশ্ব পালনকর্তা।
কুরআন ২৮ঃ৩০
অতঃপর যখন তিনি আগুনের কাছে আসলেন তখন আওয়াজ হল ধন্য তিনি, যিনি আগুনের স্থানে আছেন এবং যারা আগুনের আশেপাশে আছেন। বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহ পবিত্র ও মহিমান্বিত।
কুরআন ২৭ঃ৮
আল্লাহর কান
আল্লাহ তার কথা শুনেছেন। আল্লাহ আপনাদের উভয়ের কথাবার্তা শুনেন। নিশ্চয় আল্লাহ সবকিছু শুনেন, সবকিছু দেখেন।
কুরআন ৫৮ঃ১
আর আল্লাহ সব কিছু শোনেন ও দেখেন।
কুরআন ৪ঃ১৩৪
উপসংহার
মহাবিশ্বের স্রষ্টা যে শারীরিক অঙ্গ যেমন হাত-পা থাকার ধারণার ঊর্ধ্বে তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় বিভিন্ন ধর্মতত্ত্ব, দার্শনিক যুক্তি এবং শারীরবৃত্তীয় বিবেচনায়। শারীরিক অঙ্গ থাকা মানে সীমাবদ্ধতা, স্থান-কাল-দেহের নিয়ন্ত্রণে থাকা। কিন্তু স্রষ্টা সর্বশক্তিমান, অসীম এবং শারীরিক সীমাবদ্ধতার বাইরে। তাই স্রষ্টার শারীরিক অঙ্গ থাকার ধারণাটি যৌক্তিকভাবে সঠিক নয় এবং তার মহানত্ব ও অসীম ক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধারণাটি বাস্তবতাহীন।
তথ্যসূত্র
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ৪৭২৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩৫৩১ [↑]
- সূরা আর-রহমান, আয়াত ২৭ [↑]
- সুরা আল কাসাস, আয়াত ৮৮ [↑]
- সূরা তুর, ৪৮ আয়াত [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমি, হাদিসঃ ৩১৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর ২০৮, হাদিস নম্বরঃ ৩২৩ [↑]
- সহিহ আত-তিরমিযী, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ৪৪৫, ৪৪৬ [↑]
- তিরমিযী শরীফ, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৮১, ৮২ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), চতুর্থ খণ্ড, পাবলিশারঃ হুসাইন আল-মাদানী, হাদিস নম্বরঃ ২১৪০ [↑]
- সহিহ বুখারী। ইসলামিক ফাউন্ডেশন। অষ্টম খণ্ড। পৃষ্ঠা ২০৪ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"