শিক্ষিত, যুক্তিবাদী ও সভ্য মানুষ মাত্রই জানেন যে, ঝাড়ফুঁক একটি পুরনো দিনের বাটপারির ব্যবসা ছাড়া আর কিছুই নয়। এটি একটি এমন কৌশল যেখানে মানুষের ভয়, অজ্ঞতা ও দুর্দশাকে কাজে লাগিয়ে কিছু স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি নিজেদের প্রভাব ও আয় নিশ্চিত করে থাকে। রোগাক্রান্ত ব্যক্তি বা তার পরিবারবর্গ যেহেতু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে, তাই তাদের এই দুর্বল সময়ে তাদের সাথে এই ধরণের বাটপারি করেহাজার বছর ধরেই ধর্মবেত্তারা ধনী হয়েছে। রোগের উপসর্গ, মানসিক দুর্বলতা, দুর্ভাগ্য কিংবা অলৌকিক ভয়কে পুঁজি করে যে “ঝাড়ফুঁকের মাধ্যমে আরোগ্য” দেওয়া হয় — তার পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই, নেই কোনো যৌক্তিকতা। এটি একটি অবাস্তব, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, এবং সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি, যা আজকের যুগে শুধুমাত্র অশিক্ষা ও ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের উপর ভর করেই টিকে আছে।
ইসলাম ধর্ম এই অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রতি শুধু সহানুভূতিশীলই নয়, বরং একে বৈধতা দিয়েছে এবং ধর্মীয় বাণিজ্যের এক প্রাথমিক রূপ হিসেবেও উপস্থাপন করেছে। সহীহ বুখারির একটি হাদিসে দেখা যায়, এক সাহাবী (আবু সাঈদ আল-খুদরী) সুরা ফাতিহা পড়ে ঝাড়ফুঁক করেন এবং এর বিনিময়ে ছাগল গ্রহণ করেন। তিনি রোগীকে আরোগ্য করে তোলেন — শুধু কথার মাধ্যমেই, কোনো চিকিৎসা ছাড়াই — এবং পরবর্তীতে নবী মুহাম্মদ নিজে এই কাজের অনুমোদন দেন এবং ছাগলের একটি ভাগ নিজের জন্য দাবি করেন। (সহীহ বুখারী: ২২৭৬)
এই হাদিস চরম উদ্বেগজনক একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। কারণ এটি শুধু কুসংস্কারকে অনুমোদন দেয় না, বরং ধর্মের বাণিজ্যিক ব্যবহারের বৈধতা দেয়। মানুষ কষ্টে আছে, চিকিৎসা দরকার — সেখানে কোরআনের আয়াত ফুঁ দিয়ে পড়ে রোগ সারিয়ে তোলা, আর তার বিনিময়ে পারিশ্রমিক নেওয়া — এটা নিছকই অসারতা ও প্রতারণার মিশ্রণ। নবী মুহাম্মদের মতো একটি চরিত্র যখন এমন প্রতারণাকে বৈধতা দিয়ে বসে, নিজেও টাকার ভাগ দাবী করে, তখন প্রশ্ন উঠে — কে বড় চোর! আসুন একটি ভিডিও দেখি,
আধুনিক যুগে যখন বিজ্ঞান, মেডিসিন এবং মনোবিজ্ঞানের বিস্ময়কর উন্নয়ন ঘটেছে, তখনো কোটি কোটি মানুষ এই ‘রুকিয়া’, ‘হাওজ পানি’, ‘তাবিজ কবচ’ ও ‘পীর ফুঁ’–এর ফাঁদে পড়ে চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে মারা যাচ্ছে। ধর্মের ছায়ায় এই কুসংস্কারকে পুষ্ট করা এক গুরুতর অপরাধ। এবং এই অপরাধের প্রাথমিক ভিত্তি যদি হাদিসেই পাওয়া যায়, তবে সেই ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মব্যবস্থার নৈতিক বৈধতা নিয়েই প্রশ্ন তোলা অত্যন্ত জরুরি।
সংক্ষেপে, ঝাড়ফুঁক কেবল মধ্যযুগীয় এক প্রতারণা নয়, বরং ধর্মের নামে একটি সাংগঠনিক প্রতারণার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ, যার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো প্রতিটি সচেতন মানুষের দায়িত্ব। ঈশ্বর যদি থেকে থাকেনও, তিনি নিশ্চয়ই বিজ্ঞানবিরুদ্ধ, কুসংস্কারনির্ভর এক ব্যাবস্থাকে সমর্থন করবেন না। আসুন হাদিস থেকে পড়ি,
সুনান ইবনু মাজাহ
১২/ ব্যবসা-বাণিজ্য
পরিচ্ছেদঃ ১২/৭. ঝাড়ফুঁককারীর মজুরি।
১/২১৫৬। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের তিরিশজন অশ্বারোহীকে এক ক্ষুদ্র সামরিক অভিযানে পাঠান। আমরা এক সম্প্রদায়ের নিকট পৌঁছে যাত্রাবিরতি করলাম এবং আমাদের মেহমানদারি করার জন্য তাদের অনুরোধ করলাম, কিন্তু তারা অস্বীকার করলো। ঘটনাক্রমে তাদের নেতা (বিষাক্ত প্রাণীর) হুলবিদ্ধ হলো। তারা আমাদের কাছে এসে বললো, তোমাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে বিছার কামড়ে ঝাড়ফুঁক করতে পারে? আমি বললাম, হ্যাঁ, আমি পারি।
তবে তোমরা আমাদেরকে একপাল ছাগল-ভেড়া না দিলে আমি ঝাড়ফুঁক করবো না। তারা বললো, আমরা তোমাদেরকে তিরিশটি বকরী দিবো। আমরা তা গ্রহণ করলাম এবং আমি তার উপর সাতবার ’আলহামদু’ সূরাটি পাঠ করলাম। সে সুস্থ হয়ে উঠলো এবং আমরা ছাগলগুলো গ্রহণ করলাম। পরে এ ব্যাপারে আমাদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হলে আমরা বললাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আমাদের না পৌঁছা পর্যন্ত তোমরা তাড়াহুড়া করো না।
আমরা তাঁর নিকট উপস্থিত হওয়ার পর আমি যা করেছি তা তাঁকে অবহিত করলাম। তিনি বলেনঃ তুমি কিভাবে জানলে যে, এটা দ্বারা ঝাড়ফুঁকও করা যায়! তোমরা সেগুলো বণ্টন করে নাও এবং তোমাদের সাথে আমাকেও একটি ভাগ দাও।
২/২১৫৬ (১)। আবূ কুরাইব-হুমাইম-আবূ বিশর-ইবনে আবিল মুতাওয়াককিল-আবুল মুতাওয়াককিল-আবূ সাঈদ (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে।
৩/২১৫৬(২)। মুহাম্মাদ ইবনে বাশশার-মুহাম্মাদ ইবনে জাফর-শোবা-আবূ বিশর-আবুল মুতাওয়াককিল-আবূ সাঈদ (রাঃ)-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রেও অনুরূপ বর্ণিত হয়েছে। আবূ আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, সঠিক নাম হলো আবুল মুতাওয়াককিল (যিনি আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন )।
সহীহুল বুখারী ২২৭৬, ৫০০৭, ৫৭৩৬, ৫৭৪৯, মুসলিম ২২০১, তিরমিযী ২০৬৩, আবূ দাউদ ৩৪১৮, ৩৯০০, আহমাদ ১০৬৭৬, ১১০০৬, ১১০৮০, ১১৩৭৮, আল-হাকিম ফিল-মুসতাদরাক ১/৫৫৯, ইরওয়া ১৫৫৬।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)