ইসলামিস্টদের কাছ থেকে একটি খুব জোরালো প্রচারণা শোনা যায় যে, ইসলামের নবী নাকি সারাজীবনে কখনো কাউকে কোন গালি দেননি, বাজে কথা বলেননি। কিন্তু আসলেই কী এই দাবীগুলো সত্য, নাকি ইসলামিস্টোদের অন্যান্য মিথ্যা প্রচারণার মত এটিও আরেকটি ডাঁহা মিথ্যা কথা। সেটি জানতে হলে, আমাদের বেশ কিছু তথ্য প্রমাণ যাচাই করতে হবে।
অন্যের নাম বিকৃতি করা
আমর ইবনে হিশাম বা আবু আল-হাকাম (অর্থ জ্ঞানীর পিতা) ছিলেন মক্কার একজন বহুঈশ্বরবাদী পৌত্তলিক বা মূর্তিপূজারী সম্ভ্রান্ত কুরাইশ নেতা। ইসলামের নবী মুহাম্মদ ও মক্কার মুসলমানদের সাথে তার তীব্র সংঘাত হয়। সেই কারণে নবী মুহাম্মদ তাকে আবু জেহেল বা মূর্খের পিতা বলে গালি দিতে শুরু করেন। সেই থেকে মুসলমানদের মধ্যে আবু আল-হাকামকে আবু জেহেল নামেই ডাকা হয়। কাউকে ব্যঙ্গ করে বা নাম বিকৃত করে মূর্খের পিতা বলে ডাকা তো গালিই হলো। কিন্তু ইসলামিস্টদের এই কথাটি বললেই তারা বলেন, এই গালিতই দেয়ার নাকি যথার্থ কারণ ছিল। যথার্থ কারণ ছিল কিনা, তা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু এটি যে গালি, তা নিয়ে তো কোন বিতর্ক থাকতে পারে না। তাহলে ইসলামিস্টগণ কেন বলেন, নবী কোনদিনই কাউকে গালাগালি করতেন না? তাদের তো বলা উচিত, নবী কারণ থাকলেই শুধুমাত্র গালি দিতেন, তাই না? [1] –

নিজ স্ত্রীকে গালাগালি
একজন স্ত্রী যখন সন্তান জন্ম দিতে পারেন না, সমাজে তিনি নানাভাবে অপমানিত এবং অপদস্থ হন এই কারণে। সমাজে তাকে বন্ধ্যা নারী বলে টিটকারি দেয়া হয়, তাকে এই ধরণের শব্দাবলী ব্যবহার করে অপমানিত করা হয়। যেন সন্তান জন্ম দিতে না পারলেই একজন নারীর আর কোন মূল্য নেই! তার জন্য সবচাইতে অপমানজনক এবং অসম্মানজনক গালিই হচ্ছে বন্ধ্যা বলে ডাকা। একজন সন্তানহীন নারীকে কোন মানবিক মানুষই এই কথাটি মনে করিয়ে দেন না। অথচ, নবী নিজেই তার স্ত্রীকে এই নিয়ে খোটা দিতেন, গালি দিতেন! [2] [3] [4] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১৬/ হাজ্জ
পরিচ্ছদঃ ৬৪. বিদায়ী তাওয়াফ বাধ্যতামুলক কিন্তু ঋতুমতী মহিলার ক্ষেত্রে তা পরিত্যাজ্য
৩০৯৮। মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না, ইবনু বাশশার ও উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয (রহঃ) … হাকাম ইবরাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে এবং তিনি আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রওনা হওয়ার ইচ্ছা করলেন, তখন সাফিয়্যাকে তাঁর তাঁবুর দরজায় চিন্তিতা ও অবসাদগ্রস্তা দেখতে পেলেন। তিনি বললেনঃ বন্ধ্যা, নেড়ি! তুমি আমাদের (এখানে) আটকে রাখবে? তিনি পুনরায় তাকে বললেনঃ তুমি কি কুরবানীর দিন (বায়তুল্লাহ) যিয়ারত করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাহলে রওনা হও।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনানে ইবনে মাজাহ
তাওহীদ পাবলিকেশন
অধ্যায়ঃ ১৯/ হজ্জ
পরিচ্ছদঃ ১৯/৮৩. ঋতুবতী স্ত্রীলোক বিদায়ী তাওয়াফ না করে প্রস্থান করতে পারে
২/৩০৭৩। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাফিয়্যা (রাঃ) সম্পর্কে জানতে চাইলে আমরা বললাম, সে ঋতুবতী হয়েছে। তিনি বলেনঃ বন্ধ্যা, ন্যাড়া, সে তো আমাদের আটকে ফেলেছে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তিনি কোরবানীর দিন তাওয়াফ করেছেন। তিনি বলেনঃ তাহলে অসুবিধা নেই। তোমরা তাকে রওনা হতে বলো।
সহীহুল বুখারী ৩২৮, ১৫৬১, ১৭৩৩, ১৭৫৭, ১৭৬২, ১৭৭২, ৪৪০১, ৫৩২৯, ৬১৫৭, ৭২২৯, মুসলিম ১২১১, তিরমিযী ৯৪৩, নাসায়ী ৩৯১, আবূ দাউদ ২০০৩, আহমাদ ২৩৫৮১, ২৩৫৮৯, ২৪০০৪, ২৪০৩৭, ২৪১৫৩, ২৪৩৮৫, ২৪৭৮১, ২৪৮৯৭, ২৪৯১৪, ২৪৯৯১, ২৫০৭৫, ২৫১৩৪, ২৫১৯৩, ২৫২৪৯, ২৫৩৪৭,২৫৪১৩, ২৫৬২৮, মুয়াত্তা মালেক ৯৪৩, ৯৪৫, দারেমী ৯৪২, ১৯১৭, ইরওয়া ৪/২৬১। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

বাপের লিঙ্গ কামড়াতে বলা
বংশ নিয়ে গর্ব করা আমরা যারা মুক্তচিন্তার কথা বলি তারাও সমর্থন করি না। কিন্তু যারা বংশ নিয়ে গর্ব করে, নবী মুহাম্মদ তাদের সম্পর্কে একটি অশালীন কথা বলেছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, নবী নিজেই তার কুরাইশ বংশের গর্বে গর্বিত ছিলেন, এবং কুরাইশ বংশকে সর্বোচ্চ মর্যাদায় আসীন করে গেছেন। [5] –
হাদীস সম্ভার
২২/ নিষিদ্ধ কার্যাবলী
পরিচ্ছেদঃ বংশগর্ব
(২০৩৭) উবাই বিন কা’ব (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যদি কোন লোককে দেখো যে, সে জাহেলিয়াতের বংশ-সম্পর্ক উত্থাপন করছে, তাহলে তোমরা তাকে তার বাপের লিঙ্গ কামড়াতে বলো এবং ইঙ্গিত করো না। (বরং স্পষ্ট বলো)।’
(আহমাদ ২১২৩৬, নাসায়ী কুবরা ১০৮১০, ত্বাবারানী ৫৩২, সহীহুল জামে হা/৫৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)
বংশ মর্যাদা, নিজ বংশ বা গোত্রকে অন্যদের চেয়ে উন্নত মনে করা, এগুলো জাতিভেদ বা বর্ণবাদ। মেধা যোগ্যতা বুদ্ধিমত্তা নেতৃত্ব দেয়ার গুণ ইত্যাদির চাইতে যদি কোন কোন গোত্র জন্মগতভাবেই শাসন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন, এরকম ধারণাবশত শাসন ক্ষমতায় কোন নির্দিষ্ট গোত্র বা বংশের মানুষকেই বসাতে হয়, সেটি স্পষ্টভাবে বর্ণবাদের অন্তর্ভূক্ত। যেমন নাৎসিরা মনে করতো, তারাই বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী এবং তারাই পৃথিবী শাসন করার একমাত্র দাবীদার। অন্য সকল জাতি এবং গোত্রকে তাদের অধীনে থাকতে হবে। আবার, হিন্দুদের ভেতরে যারা ক্ষত্রিয়, তারাও মনে করতো, তাদের মধ্যে থেকেই শাসক নির্বাচিত হতে হবে, ব্রাহ্মনদের পরেই তাদের অবস্থান। ইসলামেও ঠিক একইভাবে কুরাইশ বংশকে সম্মানিত বংশ এবং খিলাফতের দাবীদার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইসলামে অসংখ্য হাদিসে কুরাইশ বংশকে শাসন করার জন্য, বিশেষ মর্যাদার অধিকারী বংশ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ, কুরাইশ বংশের একজন অযোগ্য ব্যক্তিও অন্যান্য গোত্রের একজন যোগ্য ব্যক্তির চাইতে বিশেষ সম্মানের অধিকারী হবে, শুধুমাত্র তার জন্ম কুরাইশ বংশে হয়েছে এই কারণে। এটি খুবই স্পষ্টভাবে গোত্রাভিমান, জাতিভেদ এবং বর্ণবাদের প্রকরণ। কোন বিশেষ বংশে জন্ম নিলেই, সে কীভাবে কোন নির্দিষ্ট পদমর্যাদার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হতে পারে, তা আমাদের জানা নেই। তবে এটুকু স্পষ্ট যে, এটি অত্যন্ত বাজে এবং অসভ্য ধারণা। আজ যদি শেখ হাসিনা সংবিধানে এই ধারাটি সন্নিবেশিত করে যে, এই দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে হলে তাদের গোপালগঞ্জে জন্ম নেয়া শেখ পরিবারের সদস্য হলে হবে, সেটি যেমন অসভ্য আইন হবে, এটিও একটি অসভ্য আইন। আসুন হাদিসগুলো পড়ে দেখি, [6] [7] [8] [9]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩৪/ রাষ্ট্রক্ষমতা ও প্রশাসন
পরিচ্ছেদঃ ১. জনগন কুরায়শ এর অনুগামী এবং খিলাফত কুরায়শ এর জন্য
৪৫৫০। আবদুল্লাহ ইবনু মাসলামা ইবনু কানাব, কুতায়বা ইবনু সাঈদ, যুহায়র ইবনু হারব ও আমর আন নাকিদ (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “জনগণ এর বিষয়ে (প্রশাসনিক ব্যাপারে) কুরায়শদের অনুসারী। মুসলিমরা তাদের মুসলিমদের এবং কাফেররা তাঁদের কাফেরদের (অনুসারী)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৩৪। প্রশাসন ও নেতৃত্ব
পরিচ্ছেদঃ ১. জনগণ কুরায়শদের অনুগামী এবং খিলাফত কুরায়শদের মধ্যে সীমিত
৪৫৯৭-(৩/১৮১৯) ইয়াহইয়া ইবনু হাবীব হারিসী (রহঃ) ….. জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ লোকজন ভাল-মন্দ উভয় ব্যাপারেই কুরায়শদের অনুসারী। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৪৫৫২, ইসলামিক সেন্টার ৪৫৫৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জাবির ইবনু আবদুল্লাহ আনসারী (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮২/ আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ৩০০৬. আমীর কুরাইশদের থেকে হবে
৬৬৫৪। আবূল ইয়ামান (রহঃ) … মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র ইবনু মুতঈম (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বর্ণনা করেন যে, তারা কুরাইশের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে মুআবিয়া (রাঃ) এর নিকট ছিলেন। তখন মুআবিয়া (রাঃ) এর নিকট সংবাদ পৌছল যে, আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, অচিরেই কাহতান গোত্র থেকে একজন বাদশাহ হবেন। এ শুনে তিনি ক্ষুদ্ধ হলেন এবং দাঁড়ালেন। এরপর তিনি আল্লাহ তা’আলার যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন, তারপর তিনি বললেন, যা হোক! আমার নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌছেছে যে, তোমাদের কতিপয় ব্যাক্তি এরূপ কথা বলে থাকে, যা আল্লাহর কিতাবে নেই এবং যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও বর্ণিত নেই। এরাই তোমাদের মাঝে সবচেয়ে অজ্ঞ। সুতরাং তোমরা এ সকল মনগড়া কথা থেকে যা স্বয়ং বক্তাকেই পথভ্রষ্ট করে সতর্ক থাক। আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, (খিলাফতের) এ বিষয়টি কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যতদিন তারা দ্বীনের উপর কায়েম থাকবে। যে কেউ তাদের সঙ্গে বিরোধিতা করে তবে আল্লাহ তা’আলা তাকেই অধোমুখে নিপতিত করবেন। নুআয়ম (রহঃ) মুহাম্মাদ ইবনু জুবায়র (রহঃ) সুত্রে শুআয়ব এর অনুসরণ করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জুবায়র ইবনু মুত‘ইম (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮২/ আহকাম
পরিচ্ছেদঃ ৩০০৬. আমীর কুরাইশদের থেকে হবে
৬৬৫৫। আহমাদ ইবনু ইউনুস (রহঃ) … ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (খিলাফতের) এই বিষয়টি সর্বদাই কুরাইশদের মধ্যেই থাকবে, যতদিন তাদের থেকে দু’জন লোকও অবশিষ্ট থাকবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইব্ন উমর (রাঃ)
বর্ণবাদ শুধুমাত্র যে কোন বংশ বা গোত্র বা জাতিকে নিচু দেখালে হয় তা নয়, কোন জাতিকে অন্য জাতির চাইতে কোন না কোন ভাবে শ্রেষ্ঠ এরকম বলা হলেও সেটি বর্ণবাদ। অসংখ্য সহিহ হাদিসে নবী মুহাম্মদের বংশের প্রশংসা করা হয়েছে, এবং তার বংশকে সবচাইতে উঁচু স্থান দেয়া হয়েছে। নিচের হাদিসটি পড়ুন, যা পড়ে বোঝা যায়, কুরাইশদের কেউ অপদস্ত করলে আল্লাহ বেশ ক্ষেপে যান। কিন্তু কেন? আল্লাহ নিজেও কি কুরাইশ বংশের নাকি? [10] [11] –
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ৬৬. আনসারগণের ও কুরাইশদের মর্যাদা
৩৯০৫। মুহাম্মাদ ইবনু সা’দ (রহঃ) হতে তার বাবার সনদে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কেউ কুরাইশদেরকে অপদস্ত করার ইচ্ছা করবে, আল্লাহ তাকে অপদগ্ৰস্ত করবেন।
সহীহঃ সহীহাহ (১১৭৮)।
আবূ ঈসা বলেন, এ সনদ সূত্রে হাদীসটি গারীব। আবদ ইবনু হুমাইদ-ইয়াকুব ইবনু ইবরাহীম ইবনু সা’দ হতে, তিনি তার পিতা হতে, তিনি সালিহ ইবনু কাঈসান হতে, তিনি ইবনু শিহাব (রাহঃ) হতে উক্ত সনদে একই রকম বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৪। ফাযীলাত
পরিচ্ছেদঃ ১. নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বংশের ফযীলত এবং নুবুওয়াত প্রাপ্তির আগে (তাকে) পাথরের সালাম করা প্রসঙ্গ
৫৮৩২-(১/২২৭৬) মুহাম্মাদ ইবনু মিহরান আর রাযী ও মুহাম্মাদ ইবনু ‘আবদুর রহমান ইবনু সাহম (রহঃ) …… আবূ আম্মার শাদ্দাদ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি ওয়াসিলাহ্ ইবনু আসকা (রহঃ) কে বলতে শুনেছেন যে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ মহান আল্লাহ ইসমাঈল (আঃ) এর সন্তানদের থেকে কিনানাহ-কে চয়ন করে নিয়েছেন, আর কিনানাহ (‘র বংশ) হতে, কুরায়শ’ কে বাছাই করে নিয়েছেন আর কুরায়শ (বংশ) হতে বানু হাশিমকে বাছাই করে নিয়েছেন এবং বানু হাশিম হতে আমাকে বাছাই করে নিয়েছেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৭৩৯, ইসলামিক সেন্টার ৫৭৭০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
একইসাথে, রাজত্ব করার জন্য মুহাম্মদ কুরাইশ বংশকে নির্ধারণ করে গেছেন, আর আযান দেয়ার জন্য নির্ধারণ করে গেছেন হাবশী বা কৃষ্ণাঙ্গ মানুষদের। ধরা যাক, একজন বাঙালি মানুষ নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বেশি যোগ্য। অথচ, যোগ্যতা থাকার পরেও সে কুরাইশ না হওয়ার কারণে খলিফা হতে পারবে না [12]।
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৬/ রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তার সাহাবীগণের মর্যাদা
পরিচ্ছেদঃ ৭২. ইয়ামানের মর্যাদা
৩৯৩৬। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রাজত্ব কুরাইশদের মাঝে, বিচার-বিধান আনসারদের মধ্যে, (সুমধুর সুরে) আযান হাবশীদের মাঝে এবং আমানতদারি আযদ অর্থাৎ ইয়ামানবাসীদের মাঝে।
সহীহঃ সহীহাহ (১০৮৩)।
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার আব্দুর রহমান ইবনু মাহদী হতে, তিনি মু’আবিয়াহ ইবনু সালিহ হতে, তিনি আবূ মারইয়াম আল-আনসারী হতে, তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে এই সনদে উপর্যুক্ত হাদীসের একই রকম বর্ণনা করেছেন, তবে মারফুরূপে নয়। এ হাদীস যাইদ ইবনু হুবাবের বর্ণিত হাদীসটির তুলনায় অনেক বেশি সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুরো গোত্র তুলে গালি দেয়া
বনূ কুরাইযা গোত্র আক্রমণের সময় তাদের বানরের জ্ঞাতিগোষ্ঠী বলে গালাগালি করেছিলেন নবী। কোন সম্প্রদায়কে তাদের ধর্ম বিশ্বাসের কারণে গালাগালি দেয়া, নারী শিশু বৃদ্ধ মানুষ, অপরাধী কিংবা নিরাপরাধ সবাইকে একসাথে, যা অত্যন্ত সাম্প্রদায়িক এবং নোংরা মন মানসিকতার [13]।

অন্যের ধর্মের দেবদেবীদের গালাগালি
ইসলাম ধর্মের প্রধান নবী মুহাম্মদ পৌত্তলিকদের দেবদেবী, পূর্বপুরুষদের ধর্ম, এগুলো সম্পর্কে অবমাননাকর কটূক্তি করতো বলেই ইসলামিক সূত্রগুলো থেকে পরিষ্কারভাবেই জানা যায়। মক্কায় সেই সময়ে তাকে ধর্মদ্রোহীতা দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তার ওপর অভিযোগ ছিল-তিনি প্রচলিত ধর্মকে অসম্মান এবং অবমাননা করেছেন। সমাজে শত শত বছর ধরে প্রচলিত ধর্মের সমালোচনা, বাপদাদার ধর্মের অবমাননা, কটূক্তি, দেবদেবী নিয়ে অপমানজনক কথা বলার কারণে বারবার তাকে সতর্ক করা হয়। কিন্তু নবী কখনোই ধর্ম অবমাননা থেকে সরে আসেন নি। উল্লেখ্য, উনাকে কিন্তু শুরুতেই আক্রমণ করা হয় নি [14] –


এবারে আসুন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রচিত মুখতাসার যাদুল মা‘আদ গ্রন্থ থেকে একই বিষয় জেনে নিই, [15]

এবারে আসুন আসহাবে রাসুলের জীবনকথাতে বর্ণিত ইবনু হিসামের আল সীরাহ আন-নাবাবিয়্যাহ গ্রন্থের একটি দলিল পড়ে নিই। এখানে দেখুন, কিছু পৌত্তলিক এসে নবীকে জিজ্ঞেস করলো, আপনিই কি সেই ব্যক্তি, যিনি পৌত্তলিকদের বাপ দাদাদের গালাগালি করেন, তাদের উপাস্যকদের দোষের কথা বলেন, পৌত্তলিকদের বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমান লোকেদের নির্বোধ ও বোকা মনে করেন? উত্তরে নবী বললো, হ্যাঁ, আমিই সেই ব্যক্তি। অর্থাৎ তিনিই এই সব কর্ম করে থাকেন [16] –

এই বিষয়ে আরো জানা যায় সীরাতুল মুস্তফা সা. গ্রন্থ থেকে। নবী মুহাম্মদ নিজেই বলতেন, তিনি মূর্তিকে প্রচণ্ড ঘৃণা করতেন [17] –





এবারে আসুন আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে কয়েকটি পাতা পড়ে নিই এবং দেখি যে, নবী মুহাম্মদই পৌত্তলিক কুরাইশদের ধর্মকে গালাগালি আর নিন্দা শুরু করেছিল কিনা [18] –




তথ্যসূত্র
- সীরাতুল মুস্তফা সা., লেখকঃ আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৯০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৩০৯৮ [↑]
- সুনানে ইবনে মাজাহ, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৩০৭৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬৯, হাদিসঃ ৩০৯৮ [↑]
- হাদীস সম্ভার, হাদিসঃ ২০৩৭ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৫৫০ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদিস একাডেমী, হাদিসঃ ৪৫৯৭ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৬৫৪ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৬৫৫ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩৯০৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৫৮৩২ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩৯৩৬ [↑]
- সিরাতুন নবী (সাঃ), ইবনে হিশাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩১ [↑]
- সীরাতে ইবনে হিশাম : হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর জীবনীগ্রন্থঃ আকরাম ফারুক পৃষ্ঠা ৬১, ৬২ [↑]
- মুখতাসার যাদুল মা‘আদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম, ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরি, পৃষ্ঠা ২০২ [↑]
- আসহাবে রাসুলের জীবনকথা, ষষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০ [↑]
- সীরাতুল মুস্তফা সা. লেখকঃ আল্লামা ইদরীস কান্ধলভী (রহ.) প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ১১৩, ১৪৪, ১৪৯, ১৫৪, ১৫৫ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, তৃতীয় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ৮৯, ৯০, ৯১ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"