31.নবী ছিলেন পেটুক স্বভাবের

মুহাম্মদ সম্পর্কে কাফেরদের অভিযোগ

আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নবীর এই খাবার ব্যাপারে অতিরিক্ত লোভ লালসা এবং অতিরিক্ত নারী লোভ নিয়ে ইহুদীরা নবীকে কটাক্ষ করে বলতেন, এই লোকের আহারে পরিতৃপ্তি হয় না, এই লোক নারী ছাড়া আর কিছু বুঝে না [1]

পেটুক

সামনের তিন পা ওয়ালা ছাগল

অনেক মুসলিমকেই আজকাল বলতে শোনা যায় যে, নবী নাকি খুবই অল্প খেতেন, এবং অল্প খেতে পরামর্শ দিতেন। এমনকি, অল্প আহার করা নাকি নবীর সুন্নতও। অথচ সহিহ হাদিস বলে ভিন্ন কথা। নবী খাবারের ব্যাপারে ভয়াবহ লোভীই ছিলেন বলে হাদিস থেকে বোঝা যায়। আসুন হাদিসগুলো পড়ি, যেখানে দেখা যায়, একটি বকরী বা ছাগলের দুই দুইটি সামনের রান খাবার পরেও নবী আরও রান চাইতেন। আপনি ভাবুন তো, মাঝারি সাইজের একটি বকরী বা ছাগলের সামনের রানে কয় কেজি মাংস হয়? দুই দুইটি রান খাবার পরেও একজন কীভাবে আরও রান চাইতে পারে? [2] [3]

সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
২৬. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর তরকারীর বর্ণনা
১২৬. আবু উবায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য এক ডেগ গোশত রান্না করলাম। তিনি বকরীর সামনের উরুর গোশত অধিক পছন্দ করতেন। তাই আমি তাকে সামনের একটি পা দিলাম। তারপর তিনি বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি তাকে সামনের আরেকটি পা দিলাম। তারপর তিনি পুনরায় বললেন, আমাকে সামনের আরেকটি পা দাও। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! বকরীর সামনের পা কয়টি থাকে? তিনি বললেন, সে মহান সত্তার কসম, যার হাতে আমার জীবন! যদি তুমি চুপ থাকতে তাহলে আমি যতক্ষণ সামনের পা চাইতাম, ততক্ষণ তুমি দিতে পারতে।[1]
[1] মুজামুল কাবীর, হা/১৮২৮৬; মুসনাদে বাযযার, হা/৮৩৪৫।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি)
ভূমিকা
পরিচ্ছেদঃ ৭. খাদ্যে বরকত প্রদানের মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যে মর্যাদা প্রদান করা হয়েছে
৪৫. শাহর ইবনু হাওশাব, আবু উবাইদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণনা করেন, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্য এক হাঁড়ি (গোশত) রান্না করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন: ’আমাকে সামনের একটি রান দাও।’ তিনি সামনের রানের গোশত পছন্দ করতেন। সে তাঁকে সামনের রান দিল। তিনি আবার বললেন: ’আমাকে সামনের রান দাও।’ তখন সে তাঁকে সামনের রান দিল। তিনি আবারও বললেন: ’আমাকে সামনের রান দাও।’ তখন আমি তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! একটি ছাগলের সামনের রান কয়টি হয়? তিনি উত্তরে বললেন: ’যার হাতে আমার প্রাণ সেই মহান সত্তার কসম! তুমি যদি চুপ থাকতে তাহলে যতক্ষণ আমি চাইতাম ততক্ষণ তুমি আমাকে সামনের রান দিতেই থাকতে।’[1]
[1] তাহক্বীক্ব: সনদ হাসান, শাহর ইবনু হাওশাবের কারণে।
তাখরীজ: তাবারানী, কাবীর ২২/৩৩৫ নং ৮৪২; তিরমিযী, শামাইল ১৭০।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)


মুহাম্মদ মাঝারি উচ্চতার মানুষ ছিলেন

এই আলোচনায় যেই বিষয়টি জেনে নেয়া জরুরি তা হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ ছিলেন একজন মাঝারি উচ্চতার মানুষ। অর্থাৎ তার উচ্চতা হওয়ার কথা ৫ ফুট ৪ থেকে ৫ ফুট ৮ এর মধ্যে। আসুন একটি হাদিস পড়ি,

সহীহ শামায়েলে তিরমিযী
১. রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর দৈহিক গঠন 1. The Noble Features Of Rasoolullah (Sallallahu alaihe wasallam)
পরিচ্ছেদঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশী দীর্ঘ ছিলেন না, আবার বেশী খাটোও ছিলেন না:
১. আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুব দীর্ঘ ছিলেন না আবার খাটোও ছিলেন না। তিনি ধবধবে সাদা কিংবা বাদামী বর্ণেরও ছিলেন না। তাঁর চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না, আবার একদম সোজাও ছিল না। ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ তা’আলা তাকে নবুওয়াত দান করেন। এরপর মক্কায় ১০ বছর এবং মদিনায় ১০ বছর কাটান। আল্লাহ তা’আলা ৬০ বছর বয়সে তাঁকে ওফাত দান করেন। ওফাতকালে তাঁর মাথা ও দাড়ির ২০টি চুলও সাদা ছিল না।[1]
[1] সহীহ বুখারী, হা/৫৯০০; সহীহ মুসলিম, হা/৬২৩৫; মুয়াত্তা মালেক, হা/১৬৩৯; ইবনে মাজাহ, হা/১৩৫৪৩; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬১৮৯; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৭৩৫; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৩৮৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

অর্থাৎ নবী মুহাম্মদ বিরাট কোন বড়সড় ব্যক্তি ছিলেন না। দশাসই বড়সড় ব্যক্তি স্বাভাবিকভাবেই সাধারণত একটু বেশি খেতে পারে। কিন্তু মুহাম্মদ সেরকম কেউ ছিলেন না। এই বিষয়টি জানা আমাদের পরবর্তী আলোচনার জন্য প্রয়োজন, তাই আমরা জেনে নিলাম।


ছাগলের পায়ে মাংসের পরিমাণ

একটি সাধারণ মানের পূর্ণবয়স্ক ছাগলের সামনের একটি পায়ে গড়ে প্রায় ১.৫ থেকে ২.৫ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যেতে পারে, তবে এটি ছাগলের বয়স, জাত (ব্ল্যাক বেঙ্গল, জামুনাপাড়ি, বোয়ার ইত্যাদি), খাদ্যাভ্যাস এবং মোট ওজনের উপর নির্ভর করে। আমরা সাধারণভাবে একটি হিসেব করতে পারি, তবে এটি খুব নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। সাধারণভাবে:

  • ছোট আকৃতির ছাগল (১৫–২০ কেজি) → সামনের এক পায়ে মাংস হতে পারে ১.২–১.৮ কেজি
  • মাঝারি আকৃতির ছাগল (২৫–৩০ কেজি) → সামনের এক পায়ে ২–২.৫ কেজি মাংস
  • বড় ছাগল (৪০ কেজি বা তার বেশি) → সামনের এক পায়ে ২.৫–৩ কেজি পর্যন্ত মাংসও হতে পারে

এই হিসাব শুধু মাংসের, অর্থাৎ চামড়া, হাড় ইত্যাদি বাদে খাওয়ার উপযোগী অংশ বোঝানো হয়েছে। সামনের দুইটি পায়ে একটি মাঝারি সাইজের ছাগলের মোট মাংসের পরিমাণ হওয়ার কথা ৪ কেজি বা তার বেশি।


মাঝারি পুরুষের পাকস্থলীতে ধারণ ক্ষমতা

আমরা জানি যে, মানুষের পাকস্থলী একটি সম্প্রসারণশীল প্রত্যঙ্গ। দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ওপর মানুষের পাকস্থলীর ধারণ ক্ষমতা নির্ভর করে। যারা নিয়মিত বেশি বেশি খান, তাদের পাকস্থলীতে ধারণক্ষমতা বেশি থাকে। আর যারা স্বল্পাহারী, তাদের পাকস্থলীতে ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। চাইলে তারা বেশি খেতে পারেন না। একজন মাঝারি সাইজের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের পাকস্থলীর গড় ধারণক্ষমতা প্রায় ১ থেকে ১.৫ লিটার (বা ১–১.৫ কেজি খাবার ও তরলের সমপরিমাণ)। কিছু জরুরি তথ্য:

  • খালি অবস্থায় পাকস্থলীর আয়তন প্রায় ৫০ মিলিলিটার মাত্র।
  • সম্পূর্ণ ভরার পর এটি প্রসারিত হয়ে প্রায় ১.৫–২ লিটার পর্যন্ত ধারণ করতে পারে (অর্থাৎ ১.৫–২ কেজি, যদি তরল বা নরম খাবার হয়)।
  • অতিরিক্ত খাওয়া হলে খুব বেশি প্রসারিত হয়ে ৩ লিটার বা তারও বেশি ধারণ করতে পারে, কিন্তু তা অস্বস্তিকর বা ক্ষতিকর হতে পারে। বমি হয়ে সব বের হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

তাই মোটামুটি বলা যায়: ১–১.৫ কেজি খাবার একজন সাধারণ মানুষের পাকস্থলীতে স্বাভাবিকভাবে ধারণ করা সম্ভব।


পেটুক মানুষের পাকস্থলীর ধারণ ক্ষমতা

পেটুক বা অতিভোজী (gluttonous) মানুষের পাকস্থলীর ধারণক্ষমতা সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশি হতে পারে, কারণ নিয়মিত অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে পাকস্থলী ধীরে ধীরে প্রসারিত হয়ে যায়।

গড় ধারণক্ষমতা তুলনা:

মানুষপাকস্থলীর ধারণক্ষমতা
সাধারণ মানুষ১ – ১.৫ লিটার (প্রায় ১ – ১.৫ কেজি খাবার)
পেটুক/অতিভোজী মানুষ২ – ৪ লিটার (প্রায় ২ – ৪ কেজি খাবার)
প্রতিযোগিতামূলক খাদক (competitive eater)৫ লিটার বা তার বেশি (৫ কেজি পর্যন্তও খেয়ে ফেলেন তারা)

কিছু আগ্রহ উদ্দীপক তথ্য:

  • Takeru Kobayashi, একজন প্রতিযোগিতামূলক হটডগ খাদক, একবারে প্রায় ৬ কেজি খাবার খেয়ে ফেলেছেন।
  • পেটুক মানুষের পাকস্থলী দীর্ঘমেয়াদে প্রসারিত হয় এবং স্নায়ু সেন্সিটিভিটি কমে যাওয়ায় পরিপূর্ণতার অনুভূতিও বিলম্বিত হয়।

সারসংক্ষেপে: পেটুক মানুষের পাকস্থলীর ধারণক্ষমতা হতে পারে ২–৪ কেজি খাবার বা তারও বেশি। স্বল্পাহারী মানুষ মাঝে মাঝে অল্প কিছু বেশি খাবার খেতেই পারে, তবে তা কোনভাবেই খুব বেশি নয়। কারণ তার পাকস্থলীর ধারণ ক্ষমতাই স্বল্পাহারের কারণে কমে যাবে। তারা কোন বিশেষ একদিন ৪ কেজি খাবার খেয়ে ফেলতে পারে না। বমি হয়ে তার বাদবাকি খাদ্য বের হয়ে যাবে।

তথ্যসূত্র

  1. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, দ্বিতীয় খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৩৯, ৪০ []
  2. সহীহ শামায়েলে তিরমিযী, হাদিসঃ ১২৬ []
  3. সুনান আদ-দারেমী (হাদিসবিডি), হাদিসঃ ৪৫ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"