ওয়ারাকা ইবন নওফেল ছিলেন মক্কার একজন বিশিষ্ট বাইবেল বিশেষজ্ঞ ও অনুবাদক, যিনি নবী মুহাম্মদ-এর নবুওয়াতের প্রাথমিক পর্যায়ে তার ওহীর বিষয়টি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতেন এবং তাকে সমর্থনও করেছিলেন। কিন্তু ওয়ারাকার মৃত্যুর পরপরই মুহাম্মদের কাছে ওহী আসা কিছু সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়, যা তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে এবং তিনি প্রচণ্ড মানসিক অস্থিরতার মধ্যে পড়েন। এমনকি, সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে যে, এই মানসিক অস্থিরতা এতটাই প্রকট আকার ধারণ করেছিল যে, মুহাম্মদ একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। মানসিক চাপ এবং ওহীর অনুপস্থিতি তাকে এমন এক মানসিক অবস্থায় নিয়ে যায়, যা থেকে তিনি পরিত্রাণ পেতে নিজেকে পাহাড় থেকে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে প্রতিবারই জিবরাইল তার সামনে উপস্থিত হয়ে তাকে সান্ত্বনা দিতেন, বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার ফেরত পাঠাতেন এবং আল্লাহর রাসূল হিসেবে তার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিতেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে, ওয়ারাকার মৃত্যুর পরপরই কেন ওহী আসা বন্ধ হয়ে গেল? এটি কি শুধুই একটি আকস্মিক ঘটনা ছিল, নাকি এর পেছনে অন্য কোনো কারণ ছিল? যদি মুহাম্মদ শুধুমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে ওহী পেতেন, তবে ওয়ারাকার মৃত্যুর পরও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার কথা ছিল। ওয়ারাকার মৃত্যুর সঙ্গে ওহী বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং মুহাম্মদের অস্থিরতা দেখা দেওয়া একটি অদ্ভুত সমাপতন, যা ইতিহাসের গবেষকদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে। এছাড়াও, মুহাম্মদের এই আত্মহত্যার প্রবণতা ও মানসিক অস্থিরতা আধুনিক মনোবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে, এটি একটি গুরুতর মানসিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, যা সময়োপযোগী চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। যদি তিনি আজকের সময়ে জন্ম নিতেন, তবে হয়তো একজন দক্ষ মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে তিনি মানসিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারতেন। এই ঘটনা শুধু তার মানসিক অবস্থারই নয়, বরং সেই সময়ের পরিস্থিতি এবং ওহী আসার প্রকৃত উৎস সম্পর্কেও নতুন প্রশ্নের জন্ম দেয় [1]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯১/ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করা
তাওহীদ পাবলিকেশন
… এরপর কিছু দিনের মধ্যেই ওরাকার মৃত্যু হয়। আর কিছু দিনের জন্য ওয়াহীও বন্ধ থাকে। এমনকি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ অবস্থার কারণে অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়লেন। এমনকি আমরা এ সম্পর্কে তার থেকে জানতে পেরেছি যে, তিনি পর্বতের চূড়া থেকে নিচে পড়ে যাবার জন্য একাধিকবার দ্রুত সেখানে চলে গেছেন। যখনই নিজেকে ফেলে দেয়ার জন্য পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিবরীল (আঃ) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে বলতেন, হে মুহাম্মাদ! নিঃসন্দেহে আপনি আল্লাহর রাসূল। এতে তাঁর অস্থিরতা দূর হত এবং নিজ মনে শান্তিবোধ করতেন। তাই সেখান থেকে ফিরে আসতেন। ওয়াহী বন্ধ অবস্থা যখন তাঁর উপর দীর্ঘ হত তখনই তিনি ঐরূপ উদ্দেশে দ্রুত চলে যেতেন। যখনই তিনি পর্বতের চূড়ায় পৌঁছতেন, তখনই জিবরীল (আঃ) তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করে আগের মত বলতেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন সহজ নসরুল বারী থেকে হাদিসটির ব্যাখ্যাও পড়ি, [2] –
তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৬৯৮২ [↑]
- সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, ১২ তম খণ্ড, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা মুহাম্মদ উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৯৭, ২৯৮ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"