নারীর অধিকার এবং মানবাধিকার বিষয়ে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে, ইসলামী দলিলগুলোতে নারীদের স্বল্প বুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করার ধারণাটি গভীরভাবে আপত্তিকর এবং অবমাননাকর। এমন দৃষ্টিভঙ্গি নারীর মানবিক মর্যাদা এবং তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সক্ষমতাকে খাটো করে দেখে, যা আধুনিক মানবাধিকার ও নারী অধিকারের পরিপন্থী। আজকের সমাজে, নারীর অধিকারকে সমানভাবে মূল্যায়ন করা এবং তাদের মানবিক মর্যাদা, বুদ্ধিমত্তা, কর্মক্ষমতা, এবং সমাজে তাদের ভূমিকা সঠিকভাবে স্বীকৃতি দেয়া জরুরি। তবে ইসলামী ধর্মগ্রন্থগুলোতে এমন কিছু বক্তব্য পাওয়া যায়, যা নারীদের বুদ্ধির ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নিকৃষ্ট এবং তাদের সক্ষমতাকে সীমিত করার চেষ্টা করে। এসব বক্তব্য শুধু নারীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপই নয়, এটি তাদের সম্মানের উপরও আঘাত হানে।
সমাজের প্রত্যেকটি সদস্যের জন্য মানবাধিকার সমানভাবে প্রযোজ্য, এবং আধুনিক মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী, নারীরাও সমান মেধা এবং যোগ্যতার অধিকারী। কিন্তু ইসলামী রেফারেন্সগুলোর অনেক ক্ষেত্রে নারীদের এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যেন তারা বুদ্ধিগতভাবে দুর্বল এবং শুধুমাত্র গৃহস্থালী কাজে পারদর্শী। এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সীমাবদ্ধ করে এবং তাদের জীবনের প্রায় সব ক্ষেত্রেই পুরুষের উপর নির্ভরশীল করে তোলে। অথচ, আধুনিক বিশ্বে নারীরা শিক্ষা, কর্মসংস্থান, রাজনীতি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অসামান্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন। নারীরা পুরুষের সমান মেধা ও দক্ষতা দেখিয়েছেন, এবং তারা শুধুমাত্র গৃহস্থালী কাজের জন্য সীমাবদ্ধ নন এটি প্রমাণ করেছেন। তারা বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, এবং সৃজনশীল শিল্পকলায় সমান অবদান রাখছেন।
নারীর অধিকার রক্ষায় আজকের সমাজে যে মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার মূলে রয়েছে সমান সুযোগ এবং সম্ভাবনার ধারণা। নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সমান অধিকার এবং মর্যাদা নিশ্চিত করা আমাদের সামাজিক দায়িত্ব। নারীর বুদ্ধিমত্তা ও দক্ষতার উপর জনসাধারণের মধ্যে ভুল ধারণা তৈরি নারীর নারীসত্তার ওপর একধরনের আক্রমণ এবং তাদের মৌলিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন। এমনকি সামাজিকভাবে এই দৃষ্টিভঙ্গি নারীদের শিক্ষার অধিকার, কর্মক্ষেত্রে তাদের সমান অংশগ্রহণ, এবং তাদের ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা লাভের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক ধারণা এবং তাদের বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞান ও মেধা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা কেবল সামাজিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতির অন্তরায় নয়, এটি নারীদের সম্মানের উপরও আঘাত হানে। তাই নারীদের অবমাননাকর ও স্বল্পবুদ্ধিসম্পন্ন প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করার যে ধারণাটি ইসলামী রেফারেন্সগুলোতে পাওয়া যায়, তা সম্পূর্ণভাবে অগ্রহণযোগ্য এবং এটি শুধুমাত্র নারীদের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের জন্যই ক্ষতিকর নয়, বরং সমাজের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্যও বড় বাধা। কোরআন- হাদিস এবং প্রায় সকল ইসলামিক রেফারেন্সে কোন রাখঢাক না রেখেই পরিষ্কারভাবে নারীদের স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করার শিক্ষা দেয়া হয়। পাঠক বিবেচনা করবেন, বিষয়টি নারীর জন্য অবমাননাকর কিনা [1] [2] –
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ১/ কিতাবুল ঈমান
পরিচ্ছদঃ ৩৪. ইবাদতের ত্রুটিতে ঈমান হ্রাস পাওয়া এবং কুফর শব্দটি আল্লাহর সাথে কুফুরী ছাড়া নিয়ামত ও হুকুম অস্বীকার করার বেলায়ও প্রযোজ্য
১৪৫। মুহাম্মাদ ইবনু রুম্হ ইবনু মুহাজির আল মিসরি (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ হে রমনীগন! তোমরা দান-খয়রাত করতে থাক এবং বেশি করে ইস্তিগফার কর। কেননা আমি দেখেছি যে, জাহান্নামের অধিবাসীদের অধিকাংশই নারী। জনৈকা বুদ্ধিমতী মহিলা প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! জাহান্নামে আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণ কি? বললেন, তোমরা বেশি বেশি অভিসম্পাত করে থাকো এবং স্বামীর প্রতি (অকৃতজ্ঞতা) প্রকাশ করে থাকো। আর দ্বীন ও জ্ঞান-বুদ্ধিতে ক্রটিপূর্ণ কোন সম্প্রদায়, জ্ঞানীদের উপর তোমাদের চেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী আর কাউকে আমি দেখিনি।
প্রশ্নকারিনী জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! জ্ঞান-বুদ্ধি ও দ্বীনে আমাদের কমতি কিসে? তিনি বললেনঃ তোমাদের জ্ঞান-বুদ্ধির ক্রটি হলো দু-জন স্ত্রীলোকের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান; এটাই তোমাদের বুদ্ধির ক্রটির প্রমাণ। স্ত্রীলোক (প্রতিমাসে) কয়েকদিন সালাত (নামায/নামাজ) থেকে বিরত থাকে আর রমযান মাসে রোযা ভঙ্গ করে; (ঋতুমতী হওয়ার কারণে) এটাই দ্বীনের ক্রটি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ২৪/ যাকাত
পরিচ্ছদঃ ২৪/৪৪. নিকটাত্মীয়দেরকে যাকাত দেয়া।
১৪৬২. আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিত্রের দিনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সদাকাহ দেয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেনঃ লোক সকল! তোমরা সদাকাহ দিবে। অতঃপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেনঃ মহিলাগণ! তোমরা সদাকাহ দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কী? তিনি বললেনঃ তোমরা বেশি অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণকারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি। যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ)-এর স্ত্রী যায়নাব (রাযি.) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। বলা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! যায়নাব এসেছেন। তিনি বললেন, কোন্ যায়নাব? বলা হলো, ইবনু মাস‘ঊদের স্ত্রী। তিনি বললেনঃ হাঁ, তাকে আসতে দাও। তাকে অনুমতি দেয়া হলো। তিনি বললেন, হে আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ আপনি সদাকাহ করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সদাকাহ করার ইচ্ছা করেছি। ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) মনে করেন, আমার এ সদাকায় তাঁর এবং তাঁর সন্তানদেরই হক বেশি। তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সদাকাহর অধিক হাক্দার। (৩০৪, মুসলিম ১২/২, হাঃ ৯৮২, আহমাদ ৭২৯৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১৩৬৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৩৭৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
তথ্যসূত্র
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"