ভূমিকা
ইসলামে নারী নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করার যে হাদিসের রয়েছে, তা আধুনিক যুগে নারী অধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের নীতির সাথে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। ধর্মের নামে নারীর অধিকার সীমাবদ্ধ করা এবং তাদের নেতৃত্ব প্রদানের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা শুধু সামাজিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে না, এটি নারীর প্রতি এক প্রকার অবমাননা। মেধা যোগ্যতা এবং ইচ্ছে থাকা স্বত্বেও ইসলামের দৃষ্টিতে একজন নারী কখনো নেতৃত্ব দেয়াড় জন্য উপযুক্ত নয়, এটি নারীর জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর। ইসলামে বিভিন্ন ফতোয়া ও হাদিসের ভিত্তিতে ইসলামে নারী নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা ইসলামের নারী নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষাপট, এর বৈষম্যমূলক দিক এবং কেন এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা আধুনিক সমাজের নারী অধিকার ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী, তা আলোচনা করবো।
ইসলামের বর্ণনা: নারী নেতৃত্ব হারাম?
ইসলামের অনেকগুলো সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “যে জাতি নারীদের তাদের নেতা হিসেবে নিযুক্ত করে, তারা কখনও সফল হবে না।” (সহিহ আল-বুখারি)। এই হাদিসটি প্রায়শই ইসলামী সমাজে নারী নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করার ভিত্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই বিষয়ে অসংখ্য ফতোয়া রয়েছে, যার মধ্যে ফতোয়া নম্বর ৯৬৪৩২-এও বলা হয়েছে যে, মহিলাদের নেতৃত্ব প্রদানের অনুমতি নেই, কারণ তাদের পদমর্যাদা অনুযায়ী তারা পুরুষের সাথে নেতৃত্ব প্রদানের উপযুক্ত নয়। ইসলামিক আইনশাস্ত্রের দৃষ্টিতে, নারীরা কেবলমাত্র ছোট পদ যেমন স্কুল বা হাসপাতালের দায়িত্ব নিতে পারে, কিন্তু দেশের শাসন, বিচারব্যবস্থা বা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পদে অংশগ্রহণ করতে পারে না। তাদের মতে, এই ধরনের দায়িত্ব নারীর স্বাভাবিক ক্ষমতা এবং সীমাবদ্ধতার পরিপন্থী। নারীদের এইসমস্ত পদে যাওয়ার মত যথেষ্ট মেধা বা যোগ্যতা নেই!
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৮১/ ফিতনা
পরিচ্ছদঃ ২৯৯৪. পরিচ্ছেদ নাই
৬৬১৮। উসমান ইবনু হায়সাম (রহঃ) … আবূ বাকরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি কথা দ্বারা আল্লাহ তা’আলা জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (সে কথাটি হল) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট যখন এ সংবাদ পৌছলে যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার কন্যাকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কখনই সফলকাম হবে না যারা তাদের শাসনভার কোন রমনীর হাতে অর্পণ করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৯২/ ফিতনা
পরিচ্ছদঃ ৯২/১৮. পরিচ্ছেদ নাই।
৭০৯৯. আবূ বকরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি কথা দিয়ে আল্লাহ্ জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন। (তা হল) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যখন এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার মেয়েকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে, তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কক্ষনো সফলকাম হবে না, যারা তাদের শাসনভার কোন স্ত্রীলোকের হাতে অর্পণ করে।(1) (৪৪২৫) (আধুনিক প্রকাশনী- ৬৬০৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬৬১৮)
(1) মুসলমানরা যদি সফলতা পেতে চায় তবে তাদেরকে অবশ্যই নারী নেতৃত্ব পরিহার করতে হবে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৬৪/ মাগাযী (যুদ্ধ)
পরিচ্ছদঃ ৬৪/৮৩. পারস্যের কিসরা ও রোমের অধিপতি কায়সারের কাছে নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পত্র প্রেরণ।
৪৪২৫. আবূ বাকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শ্রুত একটি বাণীর দ্বারা আল্লাহ জঙ্গে জামালের (উষ্ট্রের যুদ্ধ) দিন আমার মহা উপকার করেছেন, যে সময় আমি সাহাবায়ে কিরামের সঙ্গে মিলিত হয়ে জামাল যুদ্ধে শারীক হতে প্রায় প্রস্তুত হয়েছিলাম। আবূ বাকরাহ (রাঃ) বলেন, সে বাণীটি হল, যখন নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এ খবর পৌঁছল যে, পারস্যবাসী কিসরা কন্যাকে তাদের বাদশাহ মনোনীত করেছেন, তখন তিনি বললেন, সে জাতি কক্ষণো সফল হবে না স্ত্রীলোক যাদের প্রশাসক হয়। (৭০৯৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪০৭৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪০৮০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
কোরআন, হাদিস এবং ফতোয়ার ভিত্তিতে বলা যে, নারীরা বড় পদে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম নয়, তা শুধু নারীদের সক্ষমতাকে ছোট করে দেখানো নয়, এটি একটি সামাজিক এবং নৈতিক বৈষম্যও। নারীর ক্ষমতায়ন এবং অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এটি একটি মারাত্মক অন্তরায় এবং তাদের মেধা ও দক্ষতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার পথে বড় বাধা। এই প্রসঙ্গে মুক্তমনাদের সমালোচনার জবাবে অনেক ইসলামিক এপোলোজিস্টগণ একটি দাবী করেন যে, জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধে হযরত আয়িশা হযরত আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন। তারা এই বর্ণনার মাধ্যমে অনেক সময় বোঝাতে চান যে, ইসলামে নারীরাও যোদ্ধা হতে পারে এবং নেতৃত্ব দিতে পারে! অথচ, ইসলামের বিধান হচ্ছে, নারী কখনই নেতৃত্ব দিতে পারবে না। আসুন দেখি, এই বিষয়ে ইসলামের অবস্থান কী [1]
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩১/ কলহ ও বিপর্যয়
পরিচ্ছেদঃ ৭৫. যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে
২২৬২। আবূ বাকরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট হতে শুনা একটি উক্তি দ্বারা আল্লাহ তা’আলা আমাকে (উষ্ট্রের যুদ্ধে অংশগ্রহণ হতে) রক্ষা করেছেন। পারস্য সম্রাট কিসরা নিহত হওয়ার পর তিনি প্রশ্ন করেনঃ তারা কাকে শাসক হিসাবে নিয়োগ করেছে? সাহাবীগণ বলেন, তার কন্যাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যে জাতি নিজেদের শাসক হিসাবে নারীকে নিয়োগ করে সে জাতির কখনো কল্যাণ হতে পারে না। বর্ণনাকারী বলেন, তারপর আইশা (রাঃ) বসরায় আসার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঐ বাণী আমার মনে পড়ে গেল। অতএব, এর মাধ্যমেই আল্লাহ তা’আলা আমাকে (আলীর বিরুদ্ধে অস্ত্ৰধারণ হতে) রক্ষা করেন।
সহীহ, ইরওয়া (২৪৫), বুখারী।
আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ বাকরা (রাঃ)
এবারে আসুন নসরুল বারী থেকে বোখারী শরীফের হাদিসটির ব্যাখ্যা পড়ে নিই, [2]
উপরের হাদিস থেকে বোঝা যায়, আয়িশা আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলেও, সেটি আসলে ইসলামের বিধান অনুসারে সঠিক কাজ ছিল না। কারণ ইসলামের সুস্পষ্ট বিধান হচ্ছে, নারী নেতৃত্ব দিতে পারবে না। এবারে আসুন আলেমদের মুখ থেকে শুনে নিই,
মানবাধিকারের দৃষ্টিতে নারী নেতৃত্ব
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যক্তি, নারী বা পুরুষ, সমানভাবে নেতৃত্ব প্রদানের অধিকার রাখে, যদি তার মেধা এবং যোগ্যতা থাকে। লিঙ্গের কারণে কারো প্রতি বৈষম্য করা যাবে না, কোন বিশেষ লিঙ্গের মানুষকে অধিকার বঞ্চিত করা যাবে না, এটিই আধুনিক সভ্য মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণা ১৯৪৮-এর ২১তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “প্রতিটি ব্যক্তির তার দেশের সরকারে সরাসরি বা প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করার অধিকার রয়েছে।” এছাড়াও, জাতিসংঘের “নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্য বিলোপ সনদ” (Convention on the Elimination of All Forms of Discrimination Against Women – CEDAW)-এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করতে হবে এবং তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ অধিকার দিতে হবে।
ইসলামে নারীদের নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করার জন্য যে কোরআনের আয়াত, হাদিস বা ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে যুক্তি দেওয়া হয়, তা নারীর এই অধিকারকে পুরোপুরি লঙ্ঘন করে। নারীর নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করা মূলত একটি প্রাগৌতিহাসিক সামাজিক ধারণা, যা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রচলিত মানসিকতার প্রতিফলন। এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা নারীদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষমতার ওপর একটি অযৌক্তিক সীমা আরোপ করে, যা তাদের প্রতি একধরনের বৈষম্য সৃষ্টি করে এবং তাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞার বাস্তবতা এবং নারী নেতৃত্বের ক্ষমতা
ইসলামের নারী নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করার মূল যুক্তি হলো, নারীরা শারীরিকভাবে দুর্বল এবং মানসিকভাবে বড় দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম। তারা এটি বলে থাকেন যে, নারীদের যেহেতু মাসের একটি বিশেষ সময় কিছুটা শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, যেটাকে মাসিকের সমস্যা বলে, তাই নারীদের বড় কোন পদে দেয়া ঠিক নয়! অথচ, ইতিহাস প্রমাণ করে, নারীরা নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সমানভাবে সক্ষম। উনিশ শতকে এবং বিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো, এবং বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া—এরা প্রত্যেকেই প্রমাণ করেছেন যে, নারীরা নেতৃত্ব দিতে অক্ষম নয় বরং বড় বড় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। শুধু যে দেশের নেতৃত্ব তাই নয়, অনেক বড় বড় আন্দোলন সংগ্রামেও নারীরা পুরুষের সমকক্ষ হয়ে লড়াই করেছেন, যার উদাহরণ ইতিহাসে অসংখ্য। এরকম বলার কোন যুক্তিই নেই যে, নারীরা এসব কাজে সফল হবেন না!
এই প্রেক্ষাপটে, ইসলামের নারী নেতৃত্বের ওপর নিষেধাজ্ঞা অযৌক্তিক এবং বাস্তবতার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। নারীদের ক্ষমতায়ন এবং নেতৃত্ব প্রদানকে বাধা দেওয়া শুধুমাত্র তাদের প্রতিভা এবং মেধার অপচয় নয়, এটি গোটা সমাজের উন্নয়নকেও বাধাগ্রস্ত করে। নারী নেতৃত্বের প্রতি এই ধরনের বৈষম্য শুধু পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবকে সমর্থন করে এবং সমাজে নারীর অবস্থানকে পিছিয়ে দেয়।
ইসলামিক ফতোয়া এবং সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ইসলামে নারীর নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করার ফতোয়া নারীদের সামাজিকভাবে প্রান্তিক করে তোলে। ইসলামী সমাজে এমন ফতোয়ার কারণে নারীরা নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খায়। পুরুষদের সাথে সমান মর্যাদায় নেতৃত্ব প্রদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া শুধু নারীদের নয়, সমাজের সামগ্রিক অগ্রগতিরও অন্তরায়। নারীদের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক পদে নিষিদ্ধ করা তাদের মেধা ও নেতৃত্বের সক্ষমতাকে অস্বীকার করা।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কিছু নারী সামাজিক দায়িত্ব পালন করতেন, যেমন—আয়িশা বিভিন্ন বিষয়ে ফতোয়া দিতেন এবং পুরুষ সাহাবীগণ তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। তাছাড়া, ‘উমর ইবন আল-খাত্তাব মদিনার বাজারে একজন নারীকে নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। যদিও এই বিষয়টি উমরের নারীকে অধিকার দেয়াড় মানসিকতা থেকে আসেনি, এসেছিল কারণ শিফা বিনতে আবদুল্লাহ ছিলেন উমর এর চাচাত বোন। আসুন এই বিষয়ে একটি বিখ্যাত ফতোয়া দেখে নিই, যেখানে নারীকে এমন কোন পদে দেয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে, যা হচ্ছে কোথাও শীর্ষ অবস্থান, কিংবা যার বহুবিধ দায়িত্ব থাকে, যেমন মন্ত্রী, বিচারক কিংবা প্রশাসক [3]
People who appoint a woman as their leader will never succeed
Fatwa No: 96432
Fatwa Date:29-5-2007 – Jumaadaa Al-Oula 13, 1428
Question
What does the Messenger of God (saas) mean when he says, “Any community ruled by a woman will never succeed?” Jazaakum Allahu Khairan.
Answer
All perfect praise be to Allaah, The Lord of the Worlds. I testify that there is none worthy of worship except Allaah, and that Muhammad sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) is His slave and Messenger.
The Prophet sallallaahu `alayhi wa sallam ( may Allaah exalt his mention ) said: “A people who appoint a woman as their leader will never succeed.” (Al-Bukhari). This narration means that it is not permissible for a woman to lead positions of great responsibility, like being a Muslim ruler, a minister, or a judge and the like, as this leads her to mix and be in seclusion with men, and bear great responsibilities which does not befit the nature of a woman.
As regards the small positions which a woman can efficiently run and bear, and in which her responsibility is limited, then it is permissible for her to hold these positions, like running a hospital or a school. For instance ‘Umar may Allaah be pleased with him appointed Ash-Shifaa’ bint ‘Abdullaah Al-‘Adawiyyah may Allaah be pleased with her as an accountant for Al-Madeenah market. Ibn Hajar may Allaah have mercy upon him reported this in a biography about Ash-Shifaa’ may Allaah be pleased with her and ‘Aa’ishah may Allaah be pleased with her was appointed to take care of orphans.
Allaah Knows best.
আধুনিক বিশ্বে নারীর ভূমিকা এবং বৈষম্য
আধুনিক বিশ্বে নারীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। ব্যবসা, প্রযুক্তি, রাজনীতি, এবং সংস্কৃতির মতো ক্ষেত্রে নারীরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং নিজেদের মেধার যোগ্যতা প্রমাণ করছেন। জাতিসংঘের “Gender Inequality Index”-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যে সকল দেশে নারীদের অংশগ্রহণ বেশি, সেসব দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে বেশি।
তাহলে প্রশ্ন ওঠে, কেন ইসলামিক সমাজে নারীর নেতৃত্বকে নিষিদ্ধ করা হয়? এর মূল কারণ হলো পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা, যা নারীর ক্ষমতায়নকে ভয় পায় এবং তাদের সীমাবদ্ধ রাখতে চায়। নারীকে শুধুমাত্র পুরুষের উপভোগের বস্তু এবং ক্ষমতাহীন অসহায় করে রাখার মাধ্যমে পুরুষ নিজেকে নারীর ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচয় দিতে চায়, এবং এই পরিচয় দেয়ার মাধ্যমে নারীকে নিজের নিয়ত্রণে রাখতে চায়। নারীর প্রতি এই ধরনের বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি তাদের সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করে এবং তাদের স্বাভাবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে।
উপসংহার
ইসলামে নারী নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করার ফতোয়া এবং হাদিসের ভিত্তিতে নারীর প্রতি যে বৈষম্য তৈরি হয়েছে, তা আধুনিক সমাজের নারী অধিকার এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। নারী নেতৃত্ব নিষিদ্ধ করা তাদের ক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করা এবং তাদের মেধা ও যোগ্যতার প্রতি অসম্মান প্রদর্শন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, নারীরা নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে পুরুষের সমানভাবে দক্ষ এবং যোগ্য। নারীর প্রতি এই ধরনের বৈষম্য দূর করতে হলে, ইসলামিক সমাজে নারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে এবং নতুন ও আধুনিক ফতোয়ার মাধ্যমে তাদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও সীমাবদ্ধতাকে অস্বীকার করতে হবে। নারীর অধিকার ও নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা না করলে সমাজের উন্নয়ন ও অগ্রগতি কখনোই সম্ভব নয়। সুতরাং, নারীদের ক্ষমতায়ন এবং তাদের পূর্ণ অধিকার প্রতিষ্ঠা সমাজের প্রগতির জন্য অপরিহার্য।
তথ্যসূত্র
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২২৬২ [↑]
- সহজ নসরুল বারী শরহে বুখারী, খণ্ড ১২, পৃষ্ঠা ৩৭৮ [↑]
- People who appoint a woman as their leader will never succeed [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"