16.ইসলামে গানবাজনা হারাম

গান ও সঙ্গীত মানবজাতির অন্যতম মৌলিক অনুভূতি ও সৃজনশীলতার চর্চার একটি শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে মানুষ তার অন্তর্নিহিত আবেগ, অনুভূতি এবং মনের গভীরতাকে প্রকাশ করতে সক্ষম হয়। সঙ্গীত মানুষের মনোজগৎকে প্রশান্তি দেয়, একাকীত্ব দূর করে, এবং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক হয়। এটি শুধু বিনোদন বা আনন্দের মাধ্যম নয়, বরং মানুষের মননশীলতা ও সৃষ্টিশীলতাকে বিকশিত করে এবং সাহিত্যের ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে। সঙ্গীত, কবিতা, ও সাহিত্য একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে, যা সমাজে শিল্প ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে বহু প্রাচীন সভ্যতাই সঙ্গীতের মাধ্যমে তাদের সংস্কৃতি, বিশ্বাস এবং চিন্তাধারাকে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সংরক্ষণ করেছে।

শিল্প সাহিত্য বা ফোকলোরের বিকাশে সঙ্গীত এক অমূল্য অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু ইসলামে গান-বাজনাকে হারাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, যা মানুষের সৃজনশীলতা এবং শিল্প-সাহিত্যের বিকাশের পথে একটি বড় বাধা। নবী মুহাম্মদ ব্যক্তিগতভাবে গান-বাজনা অপছন্দ করতেন এবং সেটি ইসলামের ধর্মীয় বিধানে পরিণত করেন। অনেক হাদিসে গান-বাজনাকে নিষিদ্ধ ও হারাম হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এমনকি এটিকে ব্যভিচার এবং অন্যান্য পাপের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা সঙ্গীতের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং মানুষের মৌলিক আবেগ প্রকাশের পথকে অবরুদ্ধ করে। এমন ধর্মীয় বিধান মানুষের স্বাধীন চিন্তাভাবনা, শিল্প-সংস্কৃতির বিকাশ এবং সৃজনশীলতার বিরুদ্ধে একটি তীব্র বাধা সৃষ্টি করে। সঙ্গীতকে পাপ হিসেবে গণ্য করার এই ধারণা যুক্তিহীন ও অযৌক্তিক, কারণ এটি মানুষের প্রকৃত অনুভূতি ও আবেগের বিকাশে বাধা দেয় এবং সমাজে সুস্থ বিনোদনের বিকল্প রুদ্ধ করে। মানুষের সুস্থ মানসিক ও সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য সঙ্গীত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি নিষিদ্ধ করা কেবল মানুষের মৌলিক সৃজনশীলতাকে দমন করে না, বরং সমাজে একধরনের সাংস্কৃতিক শূন্যতা সৃষ্টি করে, যা ধর্মীয় অন্ধত্ব, অন্ধবিশ্বাস এবং জঙ্গিবাদ এসে পূরণ করে। সুতরাং, ইসলামে গান-বাজনাকে হারাম ঘোষণা করা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি, সৃষ্টিশীলতার বিকাশ এবং সুস্থ মানসিকতার চর্চার জন্য প্রতিকূল এবং একধরনের অযৌক্তিক নিষেধাজ্ঞা, যা আধুনিক সমাজের অগ্রগতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৭৪/ পানীয়
৭৪/৬. যে ব্যক্তি মদকে ভিন্ন নামে নামকরণ ক’রে তা হালাল মনে করে।
৫৫৯০. ‘আবদুর রহমান ইবনু গানাম আশ’আরী (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার নিকট আবূ আমির কিংবা আবূ মালিক আশ’আরী বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর কসম! তিনি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলেননি। তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে অবশ্যই এমন কতগুলো দলের সৃষ্টি হবে, যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল জ্ঞান করবে। তেমনি এমন অনেক দল হবে, যারা পাহাড়ের ধারে বসবাস করবে, বিকাল বেলায় যখন তারা পশুপাল নিয়ে ফিরবে তখন তাদের নিকট কোন অভাব নিয়ে ফকীর আসলে তারা বলবে, আগামী দিন সকালে তুমি আমাদের নিকট এসো। এদিকে রাতের অন্ধকারেই আল্লাহ তাদের ধ্বংস করে দেবেন। পর্বতটি ধ্বসিয়ে দেবেন, আর বাকী লোকদেরকে তিনি ক্বিয়ামাতের দিন পর্যন্ত বানর ও শূকর বানিয়ে রাখবেন। (আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৮০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৭৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

হাদীস সম্ভার
অধ্যায়ঃ ২২/ নিষিদ্ধ কার্যাবলী
পরিচ্ছেদঃ গান-বাজনা ও নাচ
(২৩০৯) আনাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, অবশ্যই আমার উম্মতের মাঝে (কিছু লোককে) মাটি ধসিয়ে, পাথর বর্ষণ করে এবং আকার বিকৃত করে (ধ্বংস করা) হবে। আর এ শাস্তি তখন আসবে, যখন তারা মদ পান করবে, নর্তকী রাখবে এবং বাদ্যযন্ত্র বাজাবে
(ইবনে আবিদ দুনয়া, সহীহুল জামে’ ৫৪৬৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

আসুন এই বিষয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহর বক্তব্য শুনে নেয়া যাক,

আসুন আর একটি বক্তব্য শুনি,