34.কোরআন শিক্ষা দিয়ে অর্থ নেয়া

কোরআন শিক্ষা দিয়ে যেকোন অজুহাতে যেকোন অর্থ গ্রহণ করা ইসলামে সম্পুর্ণ হারাম।

হাদীস সম্ভার
১৪/ ইলম
পরিচ্ছেদঃ ইলমের নামে অর্থোপার্জন
(১৫৮৭) আবুদ দারদা কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআন শিক্ষাদানের উপর একটি ধনুকও গ্রহণ করবে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার পরিবর্তে জাহান্নামের আগুনের ধনুক তার গলায় লটকাবেন।
(বাইহাক্বী ১১৪৬৫, সহীহুল জামে’ ৫৯৮২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবুদ দারদা (রাঃ)

সুনান ইবনু মাজাহ
১২/ ব্যবসা-বাণিজ্য
পরিচ্ছেদঃ ১২/৮. কুরআন মাজীদ শিক্ষাদানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ।
২/২১৫৮। উবাই বিন কাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে কুরআন শিক্ষা দিলে সে আমাকে একটি ধনুক উপহার দেয়। আমি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ তুমি এটি গ্রহণ করলে (জানবে যে,) তুমি জাহান্নামের একটি ধনুক গ্রহণ করেছো। অতএব আমি তা ফেরত দিলাম।
হাদিসটি ইমাম ইবনু মাজাহ এককভাবে বর্ণনা করেছেন। ইরওয়া ১৪৯৩।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১২: ক্রয়-বিক্রয় (ব্যবসা)
পরিচ্ছেদঃ ১৪. তৃতীয় অনুচ্ছেদ – ভাড়ায় প্রদান ও শ্রম বিক্রি
২৯৯০-[১০] ’উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমি এক লোককে লেখা এবং কুরআন শিক্ষা দিয়েছিলাম, সে আমার জন্য একটি ধনুক উপহার দিয়েছে, যা মূল্যবান কোনো মাল নয়। সুতরাং আমি কি জিহাদে ঐ ধনুক ব্যবহার করতে পারি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি তুমি জাহান্নামের শিকল গলায় পরতে ভালোবাসা, তবে তা গ্রহণ করতে পারো। (আবূ দাঊদ ও ইবনু মাজাহ)[1]
[1] হাসান : আবূ দাঊদ ৩৪১৬, ইবনু মাজাহ ২১৫৭, আহমাদ ২২৬৮৯।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ উবাদা ইব্‌নুস সামিত (রাঃ)

এবারে আসুন আহমদুল্লাহর এই বক্তব্যটি শুনে নিই,

এবারে আসুন দেখি, ইজমা কিয়াস কি আসলেই ইসলামি শরীয়তের ভিত্তি?বুখারী শরীফে বলা আছে [1] [2]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
১/ ওয়াহ্‌য়ীর সূচনা
পরিচ্ছেদঃ ১/১. আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি কীভাবে ওয়াহী শুরু হয়েছিল।
এ মর্মে আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ ’’নিশ্চয় আমি আপনার প্রতি সেরূপ ওয়াহী প্রেরণ করেছি যেরূপ নূহ ও তাঁর পরবর্তী নবীদের (নবীদের) প্রতি ওয়াহী প্রেরণ করেছিলাম।’’ (সূরাহ্ আন-নিসা ৪/১৬৩)
১. ’আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল-লায়সী (রহ.) হতে বর্ণিত। আমি ’উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছিঃ আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়্যাত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়্যাত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে ইহকাল লাভের অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশে- তবে তার হিজরত সে উদ্দেশেই হবে, যে জন্যে, সে হিজরত করেছে।] (৫৪, ২৫২৯, ৩৮৯৮, ৫০৭০, ৬৬৮৯, ৬৯৫৩; মুসলিম ২৩/৪৫ হাঃ ১৯০৭, আহমাদ ১৬৮) ( আধুনিক প্রকাশনী- ১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন ১)
শারী‘আহ্‌র মূল উৎস হচ্ছে ওয়াহী। ওয়াহী দু’ প্রকার। ওয়াহী মাতলু (আল-কুরআন) ও ওয়াহী গাইরে মাতলু (সুন্নাহ ও হাদীস)। এবং দ্বীনে ইলাহীর ভিত্তি শুধুমাত্র দু’টি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিত। ইজমা‘ ও কিয়াস কোন শার‘ঈ দলীল নয়। বরং যে কিয়াস এবং ইজমা‘ ওয়াহীর পক্ষে অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহ মুতাবিক হবে তা গ্রহণযোগ্য এবং যেটা বিপক্ষে যাবে সেটা পরিত্যাজ্য ও অগ্রহণযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলার বাণীঃ
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلاً) (النساء:৫৯)
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ) (محمد:৩৩)
কিন্তু বাতিল ফির্কার লোকেরা ইজমা‘ ও কিয়াসকে ওয়াহীর আসনে বসিয়েছে এবং বলে থাকেঃ শারী‘আহ্‌র ভিত্তি চারটি বিষয়ের উপর। কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা‘ ও কিয়াস। বড় আশ্চর্যের বিষয় এই যে, সহাবায়ে কেরাম যাদের উপর আল্লাহ তা‘আলা তার সন্তুষ্টির ঘোষণা দিয়েছেন, তাদেরকে সত্যবাদী বলে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এবং মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে সকলেই একমত। অথচ তারা সহাবায়ে কেরামকে দু’ ভাগে ভাগ করেছেন। (১) ফকীহ (২) গাইরে ফকীহ। আর বলেছেন যে সকল সাহাবী ফকীহ ছিলেন তারা যদি কিয়াসের বিপরীতে হাদীস বর্ণনা করেন তবে তা গ্রহণযোগ্য কিন্তু যে সকল সাহাবী গাইরে ফকীহ অর্থাৎ ফকীহ নন তাঁরা যদি কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করেন তাহলে তা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হবে না।
প্রকৃতপক্ষে এটা উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াহকে সিরাতে মুস্তাকীমের পথ হতে সরিয়ে দেয়ার একটা বড় অস্ত্র এবং পরিকল্পনা। কেননা তাঁরা কিয়াসকে মূল এবং হাদীসকে দ্বিতীয় স্থানে রেখেছেন। সকল সাহাবীর উপর আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্ট কিন্তু তারা খুশী নন। সকল সাহাবীর ব্যাপারে উম্মাতের ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু তাদের নিকট গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ ‘আদিল নন।
ধোঁকাবাজীর কিছু নমুনাঃ তারা বলেন, ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা গ্রহণীয় হবে। কিন্তু গাইরে ফকীহ সাহাবীগণ কিয়াসের খেলাফ হাদীস বর্ণনা করলে তা বাতিল হয়ে যাবে এবং কিয়াসের উপর ‘আমল করতে হবে।
বাই‘য়ি মুসারাহ এর হাদীস আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) হতে বর্ণিত এবং তা কিয়াসের খেলাফ। এই জন্য তা বাতিল। এবং কিয়াসের উপর ‘আমলযোগ্য। অথচ এই হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযি.) হতেও বর্ণিত হয়েছে।
(দেখুন সহীহ বুখারী ২৮৮ পৃষ্ঠা রশিদিয়া ছাপা
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)

শিক্ষা

সেইসাথে, আসুন ইসলামের আকীদাও জেনে নেয়া যাক। ইসলামের আকীদা হচ্ছে, সর্বাবস্থায় নবীর নির্দেশ পালন করা যেকোন মুসলিমের জন্য ফরজ। কোরআনে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে, মুহাম্মদকে অমান্য করা যাবে না [3]

আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তাঁর পায়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে।
Taisirul Quran
কেবল আল্লাহর বাণী পৌঁছানো এবং তা প্রচার করাই আমার কাজ। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
Sheikh Mujibur Rahman
কেবল আল্লাহর বাণী ও তাঁর রিসালাত পৌঁছানোই দায়িত্ব। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।
Rawai Al-bayan
‘শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে পৌঁছানো এবং তাঁর রিসালতের বাণী প্রচারই আমার দায়িত্ব। আর যে-কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে (১)।’
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

এই বিষয়টি ইসলামের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি, মৌলিক নির্দেশনা যে, আল্লাহর সাথে নবীর আদেশকেও ঠিক আল্লাহর আদেশের মত করেই পালন করতে যেকোন মুসলমান বাধ্য হাদিসেও বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে [4]

হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৯) মিকদাম বিন মা’দিকারিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শোন! আমাকে কুরআন দান করা হয়েছে এবং তারই সাথে তারই মতো (সুন্নাহ) দান করা হয়েছে। শোন! সম্ভবতঃ নিজ গদিতে বসে থাকা কোন পরিতৃপ্ত লোক বলবে, ‘তোমরা এই কুরআনের অনুসরণ কর; তাতে যা হালাল পাও, তাই হালাল মনে কর এবং তাতে যা হারাম পাও, তাই হারাম মনে কর। সতর্ক হও! আল্লাহর রসূল যা হারাম করেন, তাও আল্লাহর হারাম করার মতোই।
(আবূ দাঊদ ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ ১২, দারেমী ৫৮৬, মিশকাত ১৬৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিকদাম (রাঃ)

এবারে আসুন সহজ দরসে ইবনে মাজাহ গ্রন্থের একটি পাতা পড়ে নেয়া যাক, [5]

শিক্ষা 1

তাহলে বলুন তো, আহমদুল্লাহদেরকে নবীর আদেশ অমান্য করে ইজমা করার এখতিয়ার কে দিলো? সারা পৃথিবীর আলেম সমাজও যদি একত্রিত হয়ে নবীর বিরুদ্ধে ইজমা করে, তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে কোনটি সঠিক হবে? নবীর আদেশ নাকি আলেমদের ইজমা?

তথ্যসূত্র

  1. সহিহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ১ []
  2. সহিহুল বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১ []
  3. কোরআন ৭২ঃ২৩ []
  4. হাদীস সম্ভার, হাদিসঃ ১৪৯৯ []
  5. সহজ দরসে ইবনে মাজাহ, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৬৮ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"