19.দাবা/পাশা খেলা হারাম

ইসলামী শরীয়তে দাবা খেলা এবং পাশা খেলার মতো বুদ্ধিমত্তার চর্চা ও মননশীলতার বিকাশে সহায়ক খেলাগুলোকে সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে, যা একদিকে যেমন অযৌক্তিক, তেমনি মানুষের সৃজনশীলতার বিকাশে চরমভাবে বাধা দেয়। বিভিন্ন হাদিস এবং ইসলামী গ্রন্থে দাবা খেলাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এই যুক্তিতে যে, এটি সময়ের অপচয় ঘটায় এবং মানুষকে জান্নাতে যাওয়ার মূল লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু, এই ধরনের চিন্তাধারা মূলত অত্যন্ত রক্ষণশীল ও সংকীর্ণ মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ। দাবা খেলাকে নিষিদ্ধ করার মাধ্যমে ইসলামী শরীয়ত মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চাকে একটি সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ করে, যা মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর। দাবা খেলা শুধুমাত্র একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং এটি মানুষের বিশ্লেষণ ক্ষমতা, কৌশল নির্ধারণের দক্ষতা এবং ধৈর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। ফলে, এমন একটি খেলাকে হারাম ঘোষণা করা মূলত মানব মস্তিষ্কের সম্ভাবনাকে অস্বীকার করার শামিল।

দাবা খেলা শিশু-কিশোরদের মস্তিষ্ক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। এটি শিশুরা যখন খেলে, তখন তারা বিভিন্ন কৌশল, পদক্ষেপ এবং সমাধানের উপায় নিয়ে চিন্তা করে, যা তাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা, বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাধারা এবং সৃজনশীলতাকে জাগ্রত করে। এমনকি গবেষণায় দেখা গেছে, দাবা খেলা শিশুর IQ বাড়াতে এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে সাহায্য করে। তাছাড়া, এটি শিশুদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, মনোযোগ, এবং ধৈর্যশক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়ক। যদি শিশুরা ছোটবেলা থেকেই দাবার মতো খেলা খেলতে পারে, তাহলে তারা বুদ্ধিমত্তার দিক থেকে শক্তিশালী এবং মননশীলতার দিক থেকে পরিণত হবে। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের এই অযৌক্তিক আইন শিশুদের এমন একটি বিকাশমুখী খেলায় অংশগ্রহণকে নিষিদ্ধ করে, যা একদিকে যেমন বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার পথে বাঁধা সৃষ্টি করে, তেমনি শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশকে রুদ্ধ করে দেয়।

আমরা যদি শিশুদেরকে বুদ্ধিবৃত্তিক উন্নতি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং কৌশলগত চিন্তার বিকাশের জন্য উৎসাহিত করতে চাই, তবে এমন একটি খেলাকে নিষিদ্ধ করা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং শিশুদেরকে দাবা খেলার প্রতি উৎসাহী করা উচিত, যাতে তারা একটি মজবুত এবং সমৃদ্ধ বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হতে পারে এবং ভবিষ্যতে জ্ঞানের আলোকে আলোকিত হয়ে উঠতে পারে।

গ্রন্থঃ মুয়াত্তা মালিক
অধ্যায়ঃ ৫২. স্বপ্ন সম্পর্কিত অধ্যায়
হাদিস নম্বরঃ ১৭৮৫
২. শতরঞ্জ খেলা প্রসঙ্গে
রেওয়ায়ত ৬. আবূ মূসা আশ’আরী (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি শতরঞ্জ খেলা খেলিল, সে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের নাফরমানী করিল (অবাধ্য হইল)।(1)
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, তাহার বাড়ির একটি ঘরে কিছুসংখ্যক লোক বাস করিত। তিনি শুনিয়াছেন যে, উহাদের নিকট শতরঞ্জ রহিয়াছে। অতঃপর তিনি তাহাদের নিকট বলিয়া পাঠাইলেন, তোমরা উহা (শতরঞ্জ) দূর কর। অন্যথায় আমি তোমাদেরকে আমার ঘর হইতে বাহির করিয়া দিব। তিনি উহাকে অত্যন্ত খারাপ মনে করিয়াছেন।
(1) শতরঞ্জ বলিতে শুধু ছক্কা খেলাকেই বোঝায় না, বরং আমাদের দেশে প্রচলিত দাবা খেলা, তাস খেলা, বাঘ-গুটি খেলা ইত্যাদি সমস্তই ইহার অন্তর্ভুক্ত। এই সমস্ত খেলার মাধ্যমে পরস্পরের মধ্যে শক্রতাও পয়দা হয়। ইহাতে মত্ত হইয়া আল্লাহকে ভুলিয়া যায়, নামায কাযা হইয়া যায় এবং আরও নানা রকমের পাপাচারে লিপ্ত হয়। এক হাদীসে আছে, যে ব্যক্তি শতরঞ্জ খেলিয়াছে সে নিজের হস্তকে শূকরের গোশত ও রক্তে রঞ্জিত করিয়াছে। এই জন্য উলামায়ে কেরাম ইহাকে হারাম বলিয়াছেন। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ), ইমাম মালিক (রহঃ) ও আহমদ ইবনে হাম্বল (রহঃ) এই জাতীয় খেলাকে সম্পূর্ণরূপে হারাম বলিয়াছেন। ইমাম শাফিয়ী (রহঃ) বলেন যে, যদি এই খেলার কারণে আল্লাহর কোন ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় কিংবা ইহা অভ্যাসে পরিণত হয়, তাহা হইলে ইহা হারাম, অন্যথায় মকরূহ তানযীহ। হাদিসের মানঃ তাহকীক অপেক্ষমাণ