15.পোস্টমর্টেম করা হারাম

পোস্টমর্টেম হলো মৃতদেহের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, যা সাধারণত মৃত্যুর কারণ এবং পরিস্থিতি নির্ধারণের জন্য পরিচালিত হয়। এটি চিকিৎসা ও ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং এর মাধ্যমে জানা যায়, কেউ স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন নাকি আঘাত, বিষক্রিয়া বা অন্য কোনো অস্বাভাবিক কারণ রয়েছে। পোস্টমর্টেম শব্দটি এসেছে লাতিন ভাষা থেকে, যার অর্থ হলো “মৃত্যুর পর।”

মৃত্যুর কারণ নির্ধারণের জন্য পোস্টমর্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাভাবিক মৃত্যু এবং অস্বাভাবিক মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য বোঝা, বিশেষত সন্দেহজনক বা অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে, এটি অপরিহার্য। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনো ব্যক্তি আকস্মিকভাবে মারা যান এবং মৃত্যুর কারণ অস্পষ্ট থাকে, তখন পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বের করা হয়। অনেক সময় এটি চিকিৎসক বা কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে যে, মৃত্যুর পেছনে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জড়িত ছিল কি না।

আইনগত দৃষ্টিকোণ থেকে পোস্টমর্টেম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যখন মৃত্যুর সঙ্গে অপরাধের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়, তখন ফরেনসিক পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়, যা আইনগত প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা যায়। অপরাধের তদন্তে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কারণ এর মাধ্যমে শরীরে থাকা আঘাতের চিহ্ন, বিষক্রিয়া বা অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য পাওয়া যায়। এই তথ্যগুলো অপরাধের ধরন এবং দায়ী ব্যক্তির সনাক্তকরণে সাহায্য করে।

পোস্টমর্টেম শুধু আইনি ও ফরেনসিক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি চিকিৎসা গবেষণায়ও অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন রোগের প্রকৃতি এবং তাদের ফলে মৃত্যুর কারণ বুঝতে এই প্রক্রিয়ার ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, নতুন কোনো রোগ বা মহামারির সময় পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে রোগের সংক্রমণ প্রক্রিয়া এবং তার প্রভাব বোঝা যায়। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানকে উন্নত করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে নতুন দিকনির্দেশনা প্রদান করে।

পরিবারের জন্যও পোস্টমর্টেম প্রায়শই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানার মাধ্যমে পরিবার অনেক সময় মানসিক প্রশান্তি পায় এবং তাদের কোনো ধরনের সন্দেহ দূর হয়। এছাড়াও, অনেক ক্ষেত্রে বীমা দাবি বা আর্থিক সুরক্ষা পাওয়ার জন্য পোস্টমর্টেম রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রমাণ দেয় যে, মৃত্যুর পেছনের কারণটি বীমার শর্তাবলীর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা।

পোস্টমর্টেম প্রক্রিয়াটি সাধারণত দুই ধাপে পরিচালিত হয়: বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা। বাহ্যিক পরীক্ষায় মৃতদেহের চেহারা, আঘাতের চিহ্ন, ক্ষত বা অন্য কোনো দৃশ্যমান প্রমাণ বিশ্লেষণ করা হয়। অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায় দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়, যা মৃত্যুর কারণ নির্ধারণে সহায়ক।

সব মিলিয়ে, পোস্টমর্টেম হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা শুধুমাত্র মৃত্যুর কারণ উদঘাটনেই নয়, সামাজিক, আইনি এবং চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবলমাত্র মৃত ব্যক্তির জন্য নয়, জীবিতদের জন্যও সত্য এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

এবারে আসুন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ইসলামিক আলেম আল্লামা আলবানীর ফতোয়া পড়ে নিই [1] ,

পোস্ট
পোস্ট 1

তথ্যসূত্র

  1. ফাতাওয়ায়ে আলবানী, আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) , মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী (অনুবাদক) , শাইখ আব্দুল্লাহ মাহমুদ (অনুবাদক) , শাইখ ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী (অনুবাদক), পৃষ্ঠা ৩৫১, ৩৫২ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"