23.ইসলামের পূর্বে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার ছিল না?

ইসলামপন্থীদের একটি প্রচলিত দাবি হলো, ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে নারীদের কোনো সম্পত্তির অধিকার ছিল না এবং তাদের প্রতি সমাজের আচরণ ছিল চরম অমানবিক। এই দাবির যৌক্তিকতা এবং ঐতিহাসিক সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা জরুরি। প্রতিটি বিজয়ী গোষ্ঠী তাদের শাসনের বৈধতা প্রতিষ্ঠার জন্য আগের সময়কে খারাপ দেখানোর প্রবণতা রাখে। এটি একটি সাধারণ রাজনৈতিক কৌশল। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রায় প্রতিটি বিজয়ী বাহিনীই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ঢোল বাজাবার জন্য আগের আমল সম্পর্কে নানা ধরণের মিথ্যাচার করে। কেউ কখনো এরকম বলবে না যে, আগের আমল ভাল ছিল। যেমন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে বলে বিএনপির আমলে জনগনের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিল না, সব লুটপাট করা হয়েছে। আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও আগের আওয়ামী শাসন সম্পর্কে একই কথা বলে। এগুলো বলে নিজেদের শাসনকে আগের চাইতে ভাল প্রমাণের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, বিএনপি আওয়ামী দুই আমলেই জনগনের অবস্থা খারাপই থাকে। সত্যিকার অর্থে, আগের আমলকে অত্যন্ত খারাপ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা গেলে এই আমলের খারাপগুলোকে তখন আগের আমলের বেশি খারাপের সাথে তুলনা দিয়ে ভাল প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। তাই প্রশ্ন জাগে, ইসলামপন্থীরা কি আসলে ইসলাম পূর্ব সময়ের আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে যা প্রচার করে, তার কি আদৌ কোন ভিত্তি আছে?

ইসলামের আগে নারীদের জীবন্ত পুঁতে ফেলার গল্পটি প্রায়ই শোনা যায়। তবে এখানে একটি মৌলিক প্রশ্ন হলো: যদি এই প্রথা ব্যাপকভাবে প্রচলিত থাকত, তবে নবী মুহাম্মদ এবং তাঁর সাহাবারা এত সংখ্যক নারী কোথায় পেলেন, যাঁদের সঙ্গে তাঁরা বিবাহ করেছিলেন বা যৌনদাসী হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন? যদি সত্যিই কন্যাশিশুদের হত্যা করা হতো, তবে সেই সমাজে নারীদের সংখ্যা এতটা কম হয়ে যাওয়ার কথা যে বহুবিবাহের মতো প্রথাগুলো সম্ভব হতো না। খাদিজার উদাহরণ এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নবী মুহাম্মদের প্রথম স্ত্রী খাদিজা ছিলেন একজন বিধবা এবং একজন ধনী ব্যবসায়ী। তিনি ইসলামের পূর্বেই বিপুল সম্পদের মালিক ছিলেন। যদি নারীর সম্পত্তির কোনো অধিকার না থাকত, তবে তিনি কীভাবে এই সম্পদ অর্জন করলেন এবং সেটির মালিকানা ধরে রাখলেন? যদি সেই যুগের সমাজব্যবস্থা নারীদের এতটাই অধিকারহীন করে রাখত, তবে খাদিজাকে বিধবা বা তালাক প্রাপ্ত হওয়ার পরেই দাসী বানানো হলো না কেন?

এখানে দুটি বিপরীত তথ্য সামনে আসে। একদিকে বলা হয়, ইসলামপূর্ব আরব সমাজে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। অন্যদিকে, খাদিজার মতো নারীদের আর্থিক এবং সামাজিক অবস্থানের উদাহরণ দেখা যায়। এই দুটি তথ্য একইসঙ্গে সত্য হতে পারে না।

ইসলামপূর্ব যুগে শুধু খাদিজাই নন, আরও অনেক নারী ছিলেন যাঁরা সামাজিকভাবে সম্মানিত এবং প্রভাবশালী ছিলেন। উদাহরণ হিসেবে হিন্দ বিনতে উতবা এবং আসমা বিনতে মারওয়ানের নাম উল্লেখ করা যায়। তাঁদের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান এই দাবি প্রশ্নবিদ্ধ করে যে সেই সময়ে নারীদের অধিকার ছিল না। তাহলে “আইয়্যামে জাহেলিয়াত” সম্পর্কে প্রচলিত বর্ণনাগুলো কতটা ঐতিহাসিক সত্যের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে? একদিকে নারীর সম্পত্তির অধিকারহীনতার কথা বলা হয়, অন্যদিকে খাদিজা এবং অন্যান্য নারীর উদাহরণ থেকে বিপরীত চিত্র পাওয়া যায়।

প্রত্যেক সমাজের মতো, ইসলামপূর্ব আরব সমাজও নিঃসন্দেহে ছিল ত্রুটিপূর্ণ। কিন্তু এই ত্রুটিগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করার মাধ্যমে ইসলামী শাসনকে মহান প্রমাণের চেষ্টা করা হয়। আগের সময়ের সঙ্গে তুলনা করে বর্তমান সময়কে বৈধতা দেওয়ার এই প্রচেষ্টা নতুন কিছু নয়। এটি শুধুমাত্র ইসলামের ক্ষেত্রেই নয়, প্রতিটি শাসনব্যবস্থার ক্ষেত্রেই দেখা যায়। কিন্তু ইতিহাসের একটি সঠিক চিত্র পেতে হলে অতিরঞ্জন এবং প্রচারণার বাইরে গিয়ে সমালোচনামূলকভাবে বিষয়গুলো বিচার করা প্রয়োজন।

নারীর সম্পত্তির অধিকার

পৃথিবীব্যাপী লিঙ্গ বৈষম্য দুর করার জন্য নারী পুরুষের সমান সম্পত্তি অধিকার আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের একটি মৌলিক দিক। সম্পত্তি অধিকারের ধারণাটি শতাব্দী ধরে মানবাধিকার আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এবং এতে সম্পত্তি, আবাসন এবং জমির অধিকার সহ বিভিন্ন মানবাধিকারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও অনেক সভ্য দেশই নারী ও পুরুষের সমান সম্পত্তির অধিকার আছে তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে, কিন্তু এই অধিকারগুলিকে বিশ্বজুড়ে সম্পূর্ণরূপে সুরক্ষিত এবং বাস্তবায়িত করা নিশ্চিত করতে এখনও অনেক দূর যেতে হবে। বিশেষ করে ধর্মপ্রবণ দেশগুলোতে এই অধিকার নিশ্চিত করা অত্যন্ত কষ্টকর, কারণ ধর্মীয় বিধিবিধান এখানে একটি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

সম্পত্তির অধিকার একটি সর্বজনীন মানবাধিকার, এটি মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণার অন্তর্ভূক্ত। এই অধিকারটি এই নীতিতে ভিত্তি করে যে, প্রত্যেক ব্যক্তির জমি সহ সম্পত্তির মালিক হওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এই অধিকার রক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। রাষ্ট্র কোনভাবেই কোন নাগরিকের সাথে লিঙ্গের ভিত্তিতে বৈষম্য করতে পারে না। বহু শতাব্দী ধরেই ধর্ম ও প্রথার নামে নারীদের সম্পত্তির অধিকারের সমান সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এটি বিশেষত পিতৃতান্ত্রিক সমাজে দেখা যায় যেখানে মহিলাদের পুরুষদের অধীনস্থ হিসাবে দেখা হয় এবং নারীদের সম্পত্তির মালিক হওয়ার সুযোগ কমিয়ে দেয়। কিছু দেশে, মহিলাদের তাদের নিজস্ব সম্পত্তির মালিক হতে বা তাদের পিতামাতা বা স্বামীর কাছ থেকে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হওয়ারও অনুমতি নেই। সম্পত্তির অধিকার না থাকলে কিংবা কম থাকলে অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতা সহ মহিলাদের জন্য সুদূরপ্রসারী সমস্যার উদ্ভব ঘটে। লিঙ্গ সমতা অর্জন এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নারীর সম্পত্তির সমান অধিকার থাকাটি অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু ধর্মীয় বৈষম্যমূলক আইন এবং সামাজিক নিয়মাবলী, সেইসাথে আইনি এবং আর্থিক সম্পদের সুবিধা নেয়াতে পিছিয়ে থাকা, নারীদের সম্পত্তির মালিকানা এবং উত্তরাধিকারী হতে বাধা দেয়। এই বাধাগুলি প্রায়শই ধর্ম এবং অন্যান্য ধরণের বৈষম্য দ্বারাও সংঘটিত হতে পারে।

অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মগুলোর মতই ইসলামও নারীকে সম্পত্তির সমান অংশ পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সেটি কীভাবে করে, এখানে তা আলোচনা করা হবে।

প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে নারীর সম্পত্তিতে অধিকার

প্রাচীন মেসোপটেমিয়াতে নারীর আইনগত অধিকার সরাসরি সম্পর্কিত ছিল তার সামাজিক ভূমিকার সঙ্গে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের অধিকারের দিকগুলো বিবেচিত হতো তার প্রজনন, পৈত্রিক সম্পত্তি, বা যৌনতার প্রসঙ্গে। এই আইনে নারীদের শাস্তি এবং পরিস্থিতির মোকাবিলার ধরন নির্ধারিত হত তাদের সামাজিক অবস্থানের ভিত্তিতে। হামুরাবির কোডে এমন তথ্য পাওয়া যায় যে, মেসোপটেমীয় সমাজে নারীদের সম্পত্তি, ডিভোর্স, প্রজনন এবং যৌনতার ক্ষেত্রে সীমিত অধিকার ছিল। [1]

হামুরাবির কোডের আওতায় নারীর আইনগত অবস্থান বোঝার জন্য, বংশপরম্পরা সংক্রান্ত আইনগুলোর দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। যদি কন্যার জন্য কোনও যৌতুক না থাকত, তবে পিতার মৃত্যুর পর তারা উত্তরাধিকারী হিসেবে তাদের পিতার সম্পত্তির একটি অংশ গ্রহণের অধিকার পেত। নারীরা তাদের পিতা বা মাতা থেকে সম্পদ বা টাকা উত্তরাধিকারী হতে পারতেন, যা মেসোপটেমীয় সমাজে পুরুষদের মতো নারীদেরও কিছুটা আইনি সমতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত ছিল। এক্ষেত্রে, যদি কোনও বিবাহিত মহিলা মারা যেতেন, তার জমানো অর্থ তার সন্তানদের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত এবং তা তার পিতার কাছে ফিরে দেওয়া হত না।

বাইবেলে নারীর সম্পত্তি

শুরুতেই আসুন দেখে নেয়া যাক, ইসলামের আগের ধর্ম ইহুদি খ্রিস্টান গ্রন্থগুলোতে নারীর সম্পত্তির অধিকার সম্পর্কে কী ধারণা পাওয়া যায় [2]

ইয়োবের কন্যারা সারা দেশের মধ্যে সব চেয়ে সুন্দরী নারী ছিল| ইয়োব তাঁর সম্পত্তির একটি অংশ তাঁর কন্যাদের দিলেন- ওরা ওদের ভাইদের মতোই সম্পত্তির অংশ পেল|

সম্পত্তি

এটি একথা প্রমাণ করে যে, বাইবেল অনুসারে নারীদেরও পুরুষদের মতো সম্পত্তির অধিকার ছিল। ইয়োবের কন্যারা তাঁর সম্পত্তির সমান অংশ পেয়েছিল, যা নারীর সম্পত্তির অধিকারকে পুরুষদের সাথে সমানভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এটি ছিল একটি ন্যায়সংগত আইনি প্রথা, যেখানে নারী ও পুরুষকে সম্পত্তি ভোগের ক্ষেত্রে সমান অধিকার দেওয়া হয়েছিল।

এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, ইহুদী এবং খ্রিস্টান ধর্মের ইতিহাসেও নারীর সম্পত্তির অধিকার ছিল, যা ইসলামিক আইনের চেয়ে উন্নত। কারণ এই আইনে একজন মেয়ে তার পিতার কাছ থেকে সমান সম্পত্তিই পেয়েছিল। সময়ের সঙ্গে কিছু পরিবর্তন হলেও প্রাথমিকভাবে এই গ্রন্থগুলোতে সমান অধিকারের ধারণারই পরিচয় মেলে। বাইবেল নারীর এই অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং তা থেকে বোঝা যায় যে, ইসলামের আগেও এই ধারণা ছিল এবং প্রাচীন ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোতে নারীর সম্পত্তি ও অধিকার সংক্রান্ত তত্ত্বগুলি স্বীকৃত ছিল।

প্রাচীন মিশর ও গ্রিসে নারীর সম্পত্তির অধিকার

প্রাচীন মিশর ও গ্রিসেও নারীদের সম্পত্তির অধিকার ছিল, যদিও এই অধিকারগুলি কিছুটা আলাদা ধরনের ছিল। প্রাচীন মিশরের ক্ষেত্রে, নারীদের সম্পত্তির অধিকার বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মিশরীয় সমাজে নারীরা একটি সংসারের অংশ হিসেবে সম্পত্তি লাভ করতেন এবং তাঁদের পরামর্শ ও সম্মতির মাধ্যমে সম্পত্তি হস্তান্তরিত হতো। মিশরের বিশেষজ্ঞরা তাঁদের আইনি পরামর্শের মাধ্যমে নারীকে সম্পত্তির অধিকার প্রদান করতেন এবং আইন প্রণেতারা নারীদের মালিকানা নিশ্চিত করতেন।

মিশরের ফারাওরা তাদের মহিলাদেরও জমি, সম্পত্তি এবং ব্যবসা পরিচালনার অধিকার প্রদান করতেন। বিশেষভাবে দেখা যায়, মিশরের রানী হতেরাপস বা নেফারতিতি, যিনি একাধারে রাজকুমারী, রানী এবং শাসক ছিলেন, তাঁর সম্রাটত্বকালেও নারীর সম্পত্তির অধিকার অক্ষুণ্ণ ছিল। তাঁদের সমাজে নারীরা সংসারের সম্পত্তির অংশীদার ছিলেন এবং তাঁদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত ছিল। [3]

প্রাচীন গ্রিসে যদিও নারীরা কিছুটা সীমিত অধিকার ভোগ করতেন, তবুও তারা সম্পত্তির মালিক হতে পারতেন। গ্রিসের সমাজে নারীদের সম্পত্তির অধিকার কিছুটা শর্তাধীন ছিল, বিশেষত যখন তারা পুরুষের তত্ত্বাবধানে ছিল। তবে তাদেরও নির্দিষ্ট আইনি অধিকার ছিল এবং তারা বিয়ের পরেও নিজস্ব সম্পত্তি রাখতে পারতেন, বিশেষত যদি তাদের সন্তান না থাকতো অথবা সম্পত্তির উত্তরাধিকারসূত্রে কোনো সমস্যা না থাকতো। [4]

প্রাচীন গ্রিসে, বিশেষত অ্যাথিনিয়ান সমাজে, নারীদের সামাজিক এবং আইনগত অবস্থান পুরুষদের তুলনায় অনেকটা দুর্বল হলেও, নারীরা কিছুটা সীমিত হলেও সম্পত্তির অধিকার পেতেন। এটি প্রমাণ করে যে, প্রাচীন গ্রিসে নারীদের সম্পত্তির অধিকার ছিল, তবে তা পুরুষদের তুলনায় কিছুটা কম ছিল এবং নির্দিষ্ট সামাজিক কাঠামোর ওপর নির্ভরশীল ছিল।

ইসলামের আগে আরবে নারীর উত্তরাধিকার

ইসলাম পূর্ব আরবে নারী কী পিতামাতার সম্পত্তিতে অধিকার পেতো? নিচে কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করছি। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সেই পৌত্তলিক আরবে ছেলে মেয়ে সব সন্তানেরই সমান সম্পত্তির অধিকার ছিল। মুহাম্মদ এসে সেটি আল্লাহর নামে বদলে ছেলের জন্য বেশি সম্পদ, আর মেয়ের জন্য তার অর্ধেক সম্পত্তির বিধান দেন। আসুন হাদিসগুলো ভালভাবে পড়ি [5] [6] [7] [8] [9]

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৭/ অসিয়াত
পরিচ্ছেদঃ ১৭১১. ওয়ারিসের জন্য অসীয়াত নেই
২৫৬০। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (সেকালে) উত্তরাধিকারী হিসাবে সম্পদ পেতো সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত। এরপর আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দ মোতাবেক এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুন, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠামাংশ, স্ত্রীর জন্য (যদি সন্তান থাকে) এক অষ্টমাংশ, (না থাকলে) এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য (সন্তান না থাকলে) অর্ধেক, (থাকলে) এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সম্পত্তি 1

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ২৩৩১. আল্লাহর বাণীঃ তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যাক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ তোমাদের জন্য (৪ঃ ১২)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪২২৩, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৫৭৮
৪২২৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত ব্যাক্তির সম্পদ ছিল সন্তানের জন্য, আর ওসীয়ত ছিল পিতামাতার জন্য। এরপর তা থেকে আল্লাহ তাআলা তাঁর পছন্দ অনুযায়ী কিছু রহিত করলেন এবং পুরুষদের জন্য মহিলার দ্বিগুন নির্ধারণ করলেন। পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য ৬ ভাগের ১ অংশ ও ৩ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন, স্ত্রীদের জন্য ৮ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন এবং স্বামীর জন্য ২ ভাগের ১ ও ৪ ভাগের ১ অংশ নির্ধারণ করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৭৩/ উত্তরাধিকার
পরিচ্ছেদঃ ২৭৯৯. সন্তানাদির বর্তমানে স্বামীর উত্তরাধিকার
৬২৮৩। মুহাম্মদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, (প্রথমে) মাল ছিল সন্তানাদির আর ওসিয়াত ছিল পিতামাতার জন্য। কিন্তু পরে আল্লাহ তা রহিত করে দিয়ে এর চেয়ে উত্তমটি প্রবর্তন করেছেন। পূরুষের জন্য নারীদের দু’জনের সমতূল্য অংশ নির্ধারণ করেছেন। আর পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ নির্ধারণ করেছেন। স্ত্রীর জন্য নির্ধারণ করেছেন (সন্তান থাকা অবস্থায়) এক-অষ্টমাংশ এবং (সন্তান না থাকলে) এক-চতূর্থাংশ। আর স্বামীর জন্য (সন্তান না থাকলে) অর্ধেক আর (সন্তান থাকলে) এক-চতুর্থাংশ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৫৫/ ওয়াসিয়াত
পরিচ্ছেদঃ ৫৫/৬. ওয়ারিসের জন্য অসীয়াত নেই।
২৭৪৭. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উত্তরাধিকারী হিসেবে সম্পদ পেতো সন্তান আর পিতা-মাতার জন্য ছিল অসীয়াত। অতঃপর আল্লাহ্ তাআলা তাঁর পছন্দ মত এ বিধান রহিত করে ছেলের অংশ মেয়ের দ্বিগুণ, পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য এক ষষ্ঠাংশ, স্ত্রীর জন্য এক অষ্টমাংশ, এক চতুর্থাংশ, স্বামীর জন্য অর্ধেক, এক চতুর্থাংশ নির্ধারণ করেন। (৪৫৭৮, ৬৭৩৯) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২৫৪৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৫৫৭)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

আসুন এই একই বিষয়ে আরো দুইটি হাদিস পড়ি [10] [11]

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৫/ কুরআন মাজীদের তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ ৬৫/৪/৫. ‘‘আর তোমরা পাবে অর্ধেক তোমাদের স্ত্রীদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির।’’ (সূরাহ আন-নিসা ৪/১২)
৪৫৭৮. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, মৃত ব্যক্তির সম্পদ লাভ করত সন্তানরা, আর ওয়াসীয়াত ছিল পিতামাতার জন্য। অতঃপর তাত্থেকে আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় পছন্দ অনুযায়ী কিছু রহিত করলেন এবং পুরুষদের জন্য মহিলার দ্বিগুণ নির্দিষ্ট করলেন। পিতামাতা প্রত্যেকের জন্য ষষ্ঠাংশ ও তৃতীয়াংশ নির্ধারণ করলেন, স্ত্রীদের জন্য অষ্টমাংশ ও চতুর্থাংশ নির্ধারণ করলেন এবং স্বামীর জন্য অর্ধাংশ ও চতুর্থাংশ নির্ধারণ করলেন। [২৭৪৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪২১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪২২০)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৮৫/ ফারায়িয
পরিচ্ছেদঃ ৮৫/১০. সন্তান ও অন্যান্য ওয়ারিশগণের সাথে স্বামীর উত্তরাধিকার।
৬৭৩৯. ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, (প্রাথমিক অবস্থায় মৃতের ছেড়ে যাওয়া) মাল ছিল সন্তানাদির জন্য আর ওসিয়াত ছিল পিতামাতার জন্য। অতঃপর আল্লাহ্ তাত্থেকে কিছু রহিত করে দিয়ে অধিকতর পছন্দনীয়টি প্রবর্তন করেছেন। পুরুষের জন্য দু’জন নারীর অংশের সমান নির্ধারণ করেছেন। আর পিতা-মাতার প্রত্যেকের জন্য এক-ষষ্ঠাংশ নির্ধারণ করেছেন। স্ত্রীর জন্য নির্ধারণ করেছেন (সন্তানের বর্তমানে) এক-অষ্টমাংশ এবং (সন্তানের অবর্তমানে) এক-চতুর্থাংশ। আর স্বামীর জন্য (সন্তানের অবর্তমানে-) অর্ধেক আর (সন্তানের বর্তমানে) চার ভাগের একভাগ। [২৭৪৭] (আধুনিক প্রকাশনী- ৬২৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬২৮৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

এই হাদিসগুলো থেকে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যায়, নবী মুহাম্মদের শরিয়ত প্রতিষ্ঠার আগে ছেলে এবং মেয়ে দুইজনারই সম্পত্তিতে সমান উত্তারাধিকার ছিল। মুহাম্মদ মেয়েদের জন্য সেটি কমিয়ে অর্ধেক করেছেন। তাই বোঝা যাচ্ছে, ইসলাম নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিয়েছে, কথাটি সঠিক তো নয়-ই, রীতিমত মিথ্যাচার। এবারে আসুন দেখি ইসলাম তথা কোরআন এবং হাদিস নারীকে আসলেই আর কি কি সম্মানে ভূষিত করেছে।

সম্পত্তিতে নারী পাবে অর্ধেক

ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে ছেলে মেয়ে সব সন্তানেরই ছিল সম্পত্তিতে সমান অধিকার। কিন্তু ইসলাম এসে এই নিয়ম বাতিল করে ছেলেকে বেশি, এবং মেয়ের জন্য অর্ধেক সম্পত্তির বিধান দেয়। এবারে আসুন দেখি, ইসলাম এই বিষয়ে কী নতুন বিধান দিলো- [12]

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেনঃ একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান।

তথ্যসূত্র

  1. Charpin, Dominique (2010). Writing, Law, and Kingship in Old Babylonian Mesopotamia. Chicago, London: University of Chicago Press. p. 73. ISBN 9780226101590. []
  2. যোব ৪২:১৫ []
  3. The Oxford history of ancient Egypt, Edited by Ian Shaw []
  4. “A History of Ancient Greece” – Author: N.G.L. Hammond []
  5. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২৫৬০ []
  6. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮০, ৮১, হাদিসঃ ২৫৬০ []
  7. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪২২৩ []
  8. সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬২৮৩ []
  9. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ২৭৪৭ []
  10. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৪৫৭৮ []
  11. সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৬৭৩৯ []
  12. সূরা নিসা, আয়াত ১১ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"