২০০৮ সাল থেকেই মুসলিম দেশগুলোর পত্রপত্রিকা এবং বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে একটি খবর খুব ভাইরাল হয়ে ওঠে, খবরটি হচ্ছে, মহাকাশ থেকে ফিরে ইসলাম কবুল করলেন সুনিতা উইলিয়ামস।এই ভুয়ো বার্তাটি বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ট দেশের প্রধান প্রধান পত্রপত্রিকাগুলোতেও সেইসময়ে ফলা করে প্রচার করা হয়। ফেইসবুকে এই ভিডিও এবং পোস্টগুলো লক্ষ লক্ষ শেয়ার হয়, এবং ইসলাম প্রচারকগণ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে এগুলো প্রচার করতে থাকে। আমেরিকায় জন্মানো সুনিতা নাসা বা ন্যাশনাল এয়ারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন-এর একজন মহাকাশচারী। তার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এইসব তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট। কিন্তু অন্ধবিশ্বাসী মানুষকে সেগুলো বোঝানো খুবই কঠিন। অন্ধবিশ্বাসী অনেক মুসলিম এখনো মনে করেন, সুনিতা ঠিকই ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তবে ইহুদী নাসারাদের চাপের মুখে নাকি তিনি সেগুলো প্রকাশ করতে পারছেন না। প্রকাশ করলেই নাকি ইহুদী নাসারারা তাকে হত্যা করে ফেলবে! এরকম দাবী অনেকেই মাঝেমাঝেই ফেসবুকেও প্রচার করেন। এইসব ষড়যন্ত্রতত্ত্বের সম্পর্কে আসলে বলার কিছুই নেই।
ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলতে ক্যাপশনে লেখা হয়েছিল, “মহাকাশ থেকে ফিরেই কেন’ সুনিতা উইলিয়াম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন”! সেখানে কিছু ভিডিও দেখানো হয়েছিল, সেই ভিডিওটিতে সুনিতার মুখে এই মিথ্যা উক্তিটি বসানো হয়েছে,“যখন আমি পৃথিবী থেকে ২৪০ মাইল উপরের মহাকাশে পৌঁছই, তখনই দেখতে পাই নীচে জ্বলজ্বল করছে দুটি তারা। তক্ষুণি আমি টেলিস্কোপ লাগিয়ে তারা দুটি দেখার চেষ্টা করি এবং তাদের খুঁজেও পাই। একটি তারা মক্কায় জ্বলছিল, অন্যটি মদিনায়। আমি এ দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে যাই এবং তখনই সিদ্ধান্ত নিই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার। পৃথিবীতে ফিরেই আমি ইসলামকে বরণ করি।” এর পর আরও গাঁজাখুরি সব গল্প ভিডিওটিতে শোনানো হয়—কী ভাবে সুনিতা মক্কা ও মদিনার পবিত্র তীর্থ দ্বারা অভিভূত হন, কী ভাবে পৃথিবীর অত উপরে মহাকাশ থেকেও তিনি দুই মহাতীর্থের উপস্থিতি অনুভব করতে পারছিলেন। “তারার মতো উজ্জ্বল ওই আলো দেখে প্রথমে তিনি বিমূঢ হয়ে গিয়েছিলেন, তারপর সহযাত্রীদের কাছে প্রশ্ন করে তিনি জানতে পারেন ওই উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কগুলি আর কিছুই নয়, ইসলামের দুই মহান তীর্থ মক্কা ও মদিনা,” তিনি আরও বলেন।
২৭ জুলাই এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এম রহমান একটি ভিডিওটি পোস্ট করেন। গোটা ভিডিও জুড়ে বলা হচ্ছে সুনিতা উইলিয়ামস কিভাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। ভিডিওটি পোস্ট করে রহমান লিখেছেন, ”মহাকাশ থেকে ফিরেই কেন’ সুনিতা উইলিয়াম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।” পোস্টটির আর্কাইভ এখানে দেখতে পারেন। পত্রপত্রিকাগুলো সেইসব নিউজ সরিয়ে ফেলেছে বটে, তবে এখনো কিছু পোর্টালে এই খবরগুলো রয়ে গেছে।
Sunita Williams – MossaviModel, December 5, 2008
কিন্তু, সুনিতা উইলিয়ামস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন যাত্রা কালে ভগবত গীতার একটি সংকলন এবং ভগবান গণেশের একটি ছোট প্রতিমূর্তি সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন এবং ২২ জুন ২০০৭ তারিখে পৃথিবীতে ফেরার পর ইসলাম গ্রহন করার কোন লক্ষনই দেখাননি। বরং, তিনি দাবি করেছেন, ভগবান গণেশ তাকে দেখে রেখেছেন। এই দাবীগুলোর ফ্যাক্টচেক করে দেখা গেছে, এগুলো সবি সম্পূর্ণ মিথ্যা। ইসলাম ধর্মকে প্রচার করার জন্য উদ্দেশ্যেমূলকভাবে এই গুজবগুলো রটানো হয়েছে। আসুন সুনিতা উইলিয়ামসের মুখ থেকেই শুনি।