সূচিপত্র
ভূমিকা
সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত ধারণা হলো “দ্বীনে কোনো জোর নেই,” বা “ইসলামে কোন জবরদস্তি নেই” যা সূরা বাকারার ২৫৬ নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত। এই আয়াতটি প্রায়ই ইসলামের সহনশীলতার প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হয়। অনেকেই মনে করেন, ইসলাম ধর্ম পালনে বাধ্য করে না এবং প্রত্যেকেরই নিজস্ব বিশ্বাস অনুসরণ করার অধিকার রয়েছে। তাহলে সবচাইতে জরুরি প্রশ্ন যা চলে আসে, ইসলাম ধর্মে যদি জোরজবরদস্তি না-ই থাকে, ধর্ম চাপিয়ে দেয়া না-ই থাকে, তাহলে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে কেন? কেনই বা শিশুদের ক্ষেত্রে নামাজ না পড়লে মারপিট করে নামাজ পড়তে বাধ্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে? আবু বকরের আমলে কেন-ই বা মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী এবং যাকাত দিতে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে আবু বকর খোলা তরবারী নিয়ে যুদ্ধে নেমেছিল এবং সেইসব কাফেরদের গণহারে জবাই করেছিল?
কিন্তু ইসলামিক তাফসীর গ্রন্থগুলো গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এই আয়াতের প্রকৃত অর্থ এবং এর প্রয়োগ ইসলামিক শাস্ত্রীয় বিধানে পুরোপুরি ভিন্ন। বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ আহকামুল কোরআনসহ অন্যান্য তাফসীরগুলোতে বলা হয়েছে যে, এই আয়াতটি কোরআনের পরবর্তী যুদ্ধে আহ্বানমূলক আয়াতগুলো দ্বারা রহিত (মানসুখ) হয়ে গেছে, বিশেষভাবে মুশরিকদের জন্য। বিশেষত সূরা তাওবার ৫ ও ৭৩ নং আয়াত, যা সরাসরি জিহাদের আহ্বান করে এবং অমুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়, এই সহনশীলতার ধারণাকে কার্যত অস্বীকার করে।
ইসলামের এই দ্বৈত অবস্থান মানবাধিকারের মৌলিক নীতির সরাসরি লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজস্ব ধর্ম পালনের স্বাধীনতা এবং ধর্মান্তর না হওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ইসলামের ইতিহাস এবং ধ্রুপদী আলেমদের দ্বারা লিখিত গ্রন্থগুলোতে দেখা যায়, ইসলামের এই সহনশীলতা মূলত শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং তা বাস্তবে কার্যকর নয়। ইসলামের আইন অনুযায়ী, যদি কোনো মুসলিম ইসলাম ত্যাগ করে, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। মুরতাদ বা ধর্মত্যাগীদের ক্ষেত্রে এই কঠোর শাস্তি এবং আক্রমণাত্মক জিহাদের মধ্যমে ধর্ম গ্রহণের বাধ্য করার ঐতিহাসিক দলিলগুলো স্পষ্টতই দেখায় যে, ইসলামে ধর্ম পালনের স্বাধীনতা নেই; বরং এটি ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে এবং ধর্মত্যাগ করলে শাস্তি নিশ্চিত করে। এর সাথে, অমুসলিমদের জন্য আরোপিত জিযিয়া করও একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা, যা তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকত্বের অধীনে রাখে এবং তাদের সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে অবমাননা, অসম্মান এবং অপমান করে।
দ্বীনে কোনো জোর নেই?
“দ্বীনে কোনো জোর নেই” এই আয়াতের প্রকৃত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ইসলামিক তাফসীর গ্রন্থগুলোতে। এখানে মূলত বোঝানো হয়েছে যে, এই আয়াতটি ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে নাজিল হওয়া একটি বিধান যখন মুসলিমগণ শক্তিহীন ছিল। যা পরবর্তীতে তরবারির আয়াত বা সূরা তওবার মাধ্যমে মুশরিকদের জন্য মানসুখ হয়ে যায়। ইসলামের বিধান অনুসারে, ইসলাম গ্রহণের পর ধর্মত্যাগের কোনো সুযোগ নেই এবং আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিস্টানদের জন্য কেবলমাত্র ইসলাম গ্রহণ, যুদ্ধের সম্মুখীন হওয়া, অথবা জিযিয়া কর প্রদান করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে মুশরিক বা মুর্তি পূজারীদের জন্য শুধু দুইটি রাস্তা খোলা, হয় ইসলাম কবুল করতে হবে নতুবা তাদের হত্যা করা হবে। এটি কোনো ধরনের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নয়; বরং অমুসলিমদের ইসলামিক রাষ্ট্রের অধীনে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক স্বাধীনতা সংকুচিত করা হয়। ইসলামের এই বিধান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদের “ধর্মের স্বাধীনতা” ও “মতপ্রকাশের স্বাধীনতা”র স্পষ্ট লঙ্ঘন, যা প্রতিটি মানুষের জন্মগত অধিকার।
এই আয়াতের প্রেক্ষিতে ইসলামিস্টরা প্রায়ই সহাবস্থানের সপক্ষে কথা বললেও, তাদের কার্যকলাপ এবং ইসলামিক ইতিহাস অন্যকিছু প্রমাণ করে। মক্কা বিজয়ের পর, ইসলামের প্রসারের জন্য বহু যুদ্ধ পরিচালিত হয়, যেখানে অমুসলিম মূর্তিপুজারীদের বেঁচে থাকার জন্য ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প ছিল না। সেগুলো জোরপূর্বক ধর্মান্তরের স্পষ্ট উদাহরণ। নবীর একটি বিখ্যাত হাদিসে বলা হয়েছে যে, তিনি আদিষ্ট হয়েছেন যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ “আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই” এই স্বীকৃতি না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার। এটি স্পষ্টতই নির্দেশ করে, ইসলামে সহনশীলতার স্থান নেই; বরং এটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য অন্যান্য ধর্ম ও মতবাদকে উৎখাত করার আহ্বান জানায়।
এই সমস্ত বিধানগুলো ইসলামের সহিষ্ণুতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার দাবীকে বাস্তবে একেবারেই খণ্ডন করে। ইসলামিক আইন এবং বিধান অনুযায়ী, অমুসলিমদের অধিকার সীমাবদ্ধ এবং তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হয়, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতীক। তাই, “দ্বীনে কোনো জোর নেই” এই আয়াতটি সহনশীলতার প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হলেও, প্রকৃতপক্ষে ইসলাম তার শাস্ত্রীয় বিধান এবং বাস্তবিক কার্যকলাপের মাধ্যমে এটি পুরোপুরি অস্বীকার করে।
শরীয়া-রাষ্ট্রে অমুসলিম নাগরিক (ভিডিও)
আসুন এই নিয়ে আলোচনার শুরুতেই একটি ভিডিও দেখি, যেখানে আরবের একজন ইসলামিক আলেম শেখাচ্ছেন, কীভাবে একটি শরিয়াভিত্তিক রাষ্ট্রে অমুসলিমদের প্রতি পদে পদে অপমান অপদস্ত করতে হবে, যেন তারা বাধ্য হয় ইসলাম গ্রহণ করতে,
সূরা তওবার আনসেন্সরড তাফসীর (ভিডিও)
এবারে আসুন সূরা তওবার একটি নির্ভীক সাহসী ওয়াজ শুনি,
নবী কী জঙ্গি ছিলেন? (ভিডিও)
আসুন আরেকটি ওয়াজ শুনি,
হাদিসের পরিষ্কার বর্ণনা
ইসলাম সরাসরিই জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে, নতুবা অবমাননাকর জিযিয়া কর আরোপ করে। এবারে আসুন কয়েকটি হাদিস পড়ে নেয়া যাক [1] [2] –
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ১. যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষ “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে আমি আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি
২৬০৭। আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর মৃত্যুর পর আবূ বকর (রাযিঃ) যখন খলীফা নির্বাচিত হন, তখন আরবের কিছু সংখ্যক লোক কাফির হয়ে যায়। উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) আবূ বাকর (রাযিঃ)-কে বললেন, আপনি এদের বিরুদ্ধে কিভাবে অস্ত্ৰধারণ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ যে পর্যন্ত না “আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” এই কথার স্বীকৃতি দিবে সেই পর্যন্ত আমি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি। আর যে ব্যক্তি বললো, “আল্লাহ ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই” সে আমার থেকে তার মাল ও রক্ত (জীবন) নিরাপদ করে নিল। তবে ইসলামের অধিকার সম্পর্কে ভিন্ন কথা। আর তাদের প্রকৃত হিসাব-নিকাশ রয়েছে আল্লাহ তা’আলার দায়িত্বে।
আবূ বকর (রাযিঃ) বললেনঃ আল্লাহর শপথ নামায ও যাকাতের মধ্যে যে ব্যক্তি পার্থক্য করে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। কেননা যাকাত সম্পদের হাক্ক। কেউ উটের একটি রশি দিতেও যদি অস্বীকার করে, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে দিত, আল্লাহর কসম! আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবোই। তারপর উমার ইবনুল খাত্তাব (রাযিঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি দেখতে পেলাম আল্লাহ যেন যুদ্ধের জন্য আবূ বাকরের অন্তর উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। অতঃপর আমি বুঝতে পারলাম যে, তার সিদ্ধান্তই যথার্থ।
সহীহঃ সহীহাহ (৪০৭), সহীহ আবূ দাউদ (১৩৯১-১৩৯৩), বুখারী ও মুসলিম।
আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ। শু’আইব ইবনু আবী হামযা (রহঃ) যুহরী হতে, তিনি উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদিল্লাহ হতে, তিনি আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম বর্ণনা করেছেন। এই হাদীস মামার-যুহরী হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ) হতে, তিনি আবূ বাকর (রাযিঃ) হতে এই সূত্রে ইমরান আল-কাত্তান বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনাটি ভুল। ‘ইমরানের ব্যাপারে মা’মার হতে বর্ণিত বর্ণনাতে বিরোধিতা করা হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৩৮/ ঈমান
পরিচ্ছেদঃ ২. আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা “লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ’ বলবে এবং নামায আদায় করবে
২৬০৮। আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য আদিষ্ট হয়েছি যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ তা’আলা ব্যতীত আর কোন প্ৰভু নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ তা’আলার বান্দা ও তার রাসূল এবং আমাদের কিবলামুখী হয়ে নামায আদায় করবে, আমাদের যবেহকৃত পশুর গোশত খাবে এবং আমাদের মতো নামায আদায় করবে। তারা এগুলো করলে তাদের জান ও মালে হস্তক্ষেপ করা আমাদের জন্য হারাম হয়ে যাবে। কিন্তু ইসলামের অধিকারের বিষয়টি ভিন্ন। মুসলিমদের প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা তারাও পাবে এবং মুসলিমদের উপর অর্পিত দায়-দায়িত্ব তাদের উপরও বর্তাবে।
সহীহঃ সহীহাহ (৩০৩) ও (১/১৫২), সহীহ আবূ দাউদ (২৩৭৪), বুখারী অনুরূপ।
মুআয ইবনু জাবাল ও আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে। আবূ ঈসা বলেন, এই হাদীসটি হাসান সহীহ এবং উপরোক্ত সূত্রে গারীব। ইয়াহইয়া (রাহঃ) হুমাইদ হতে, তিনি আনাস (রাযিঃ)-এর সূত্রে একই রকম হাদীস বর্ণনা করেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
আসুন একটি উদাহরণ দেখে নিই, নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণ কীভাবে কাফের রাজ্যগুলোকে আক্রমণ করতো, এবং আক্রমণের সময়ে তারা কী বলতো [3] [4]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৫৮/ জিযিয়াহ্ কর ও সন্ধি স্থাপন
পরিচ্ছেদঃ ৫৮/১. জিম্মীদের নিকট থেকে জিযইয়াহ গ্রহণ এবং হারবীদের সঙ্গে যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি।
৩১৫৯. জুবাইর ইবনু হাইয়াহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘উমার (রাঃ) মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন বড় বড় শহরের দিকে সৈন্য দল প্রেরণ করলেন। সে সময় হুরমযান ইসলাম গ্রহণ করে। ‘উমার (রাঃ) তাঁকে বললেন, আমি এসব যুদ্ধের ব্যাপারে তোমার পরামর্শ গ্রহণ করতে চাই। তিনি বললেন, ঠিক আছে। এ সকল দেশ এবং দেশে মুসলিমদের দুশমন যে সব লোক বাস করছে, তাদের দৃষ্টান্ত একটি পাখির মত, যার একটি মাথা, দু’টি ডানা ও দু’টি পা রয়েছে। যদি একটি ডানা ভেঙ্গে দেয়া হয়, তবে সে পাখিটি উভয় পা, একটি ডানা ও মাথার ভরে উঠে দাঁড়াবে। যদি অপর ডানা ভেঙ্গে দেয়া হয়, তবে সে দু’টি পা ও মাথার ভরে উঠে দাঁড়াবে। আর যদি মাথা ভেঙ্গে দেয়া হয়, তবে উভয় পা, উভয় ডানা ও মাথা সবই অকেজো হয়ে যাবে। কিসরা শত্রুদের মাথা, কায়সার হল একটি ডানা, আর পারস্য অপর একটি ডানা। কাজেই মুসলিমগণকে এ আদেশ করুন, তারা যেন কিসরার উপর হামলা করে।
বাকর ও যিয়াদ (রহ.) উভয়ে যুবাইর ইবনু হাইয়াহ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, অতঃপর ‘উমার (রাঃ) আমাদের ডাকলেন আর আমাদের উপর নু‘মান ইবনু মুকাররিনকে আমীর নিযুক্ত করেন। আমরা যখন শত্রু দেশে পৌঁছলাম, কিসরার এক সেনাপতি চল্লিশ হাজার সৈন্য নিয়ে আমাদের মুকাবিলায় আসল। তখন তার পক্ষ হতে একজন দোভাষী দাঁড়িয়ে বলল, তোমাদের মধ্য থেকে একজন আমার সঙ্গে আলোচনা করুক। তখন মুগীরাহ (ইবনু শু‘বাহ) (রাঃ) বললেন, যা ইচ্ছা প্রশ্ন করতে পার। সে বলল, তোমরা কারা? তিনি বললেন, আমরা আরবের লোক। দীর্ঘ দিন আমরা অতিশয় দুর্ভাগ্য এবং কঠিন বিপদে ছিলাম। ক্ষুধার জ্বালায় আমরা চামড়া ও খেজুর গুটি চুষতাম। চুল ও পশম পরিধান করতাম। বৃক্ষ ও পাথর পূজা করতাম। আমরা যখন এ অবস্থায় পতিত তখন আসমান ও যমীনের প্রতিপালক আমাদের মধ্য হতে আমাদের নিকট একজন নবী পাঠালেন। তাঁর পিতা-মাতাকে আমরা চিনি। আমাদের নবী ও আমাদের রবের রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন, যে পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহ্ তা‘আলার ‘ইবাদাত কর কিংবা জিযইয়াহ দাও। আর আমাদের নবী আমাদের রবের পক্ষ হতে আমাদেরকে জানিয়েছেন যে, আমাদের মধ্য হতে যে নিহত হবে, সে জান্নাতে এমন নি‘মাত লাভ করবে, যা কখনো দেখা যায়নি। আর আমাদের মধ্য হতে যারা জীবিত থাকবে তোমাদের গর্দানের মালিক হবে। (৭৫৩০) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২৯৩৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ জুবাইর ইবনু হাইয়াহ (রহঃ)

তাফসীর গ্রন্থে পরিষ্কার বিবরণ
এবারে আসুন, দ্বীনে কোন জোর প্রয়োগ নেই, এই আয়াতটি সম্পর্কে ইসলামের বিধানটি আসলে কী, সরাসরি তাফসীর গ্রন্থ থেকে দেখে নিই। কোরআনের এই আয়াতটির শানে নুজুল এবং বিস্তারিত ব্যাখ্যা পড়ে দেখা এই জন্য জরুরি। ইসলামে জোর জবরদস্তি নেই, এরূপ বিবরণ সংবলিত আয়াতটি হচ্ছে সূরা বাকারার ২৫৬ নাম্বার আয়াত, যা কোরআনেরই শেষের দিকে নাজিল হওয়া সূরা তাওবার ৫ নং ও ৭৩ নং আয়াত দ্বারা অর্থাৎ জিহাদের আয়াত দ্বারা মানসুখ বা রহিত হয়ে গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ আহকামুল কোরআনে। একইসাথে, এখানে আসলে কী বোঝানো হয়েছে, সেটি ভালভাবে বোঝার জন্য তাফসীর পড়ে দেখা জরুরি [5] –
আল্লাহর কথা,
দ্বীনে কোন জোর প্রয়োগ নেই। হেদায়েতের পথ গুমরাহী থেকে আলাদা স্পষ্ট প্রতিভাত হয়ে উঠেছে।
( সূরা বাকারাঃ ২৫৬ )
দহাক, সুদ্দী, সুলায়মান ইবনে মৃসা বলেছেন, এই আয়াতটি মনসূখ হয়ে গেছে এ আয়াতটি দ্বারাঃ
হে নবী! তুমি কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ কর। (সূরা তওবাঃ ৭৩)
এবং এ আয়াতটি দ্বারাঃ
অতএব তোমরা মুশরিকদের হত্যা কর। (সূরা আত্-তওবাঃ ৫)
আল-হাসান ও কাতাদা বলেছেন, ‘দ্বীনে জোর প্রয়োগ নেই’ কথাটি বিশেষভাবে সেই আহলে কিতাব লোকদের বেলায়, যারা জিযিয়া দিতে প্রস্তুত হবে। আরবের সাধারণ মুশরিকদের বেলায় এ কথা নয়। কেননা তারা বশ্যতা স্বীকার করে জিযিয়া দিতে রাজী হয়নি। তাদের নিকট থেকে হয় ইসলাম কবুল নিতে হবে, না হয় তরবারির আঘাত তাদের উপর পড়বে।
এ পর্যায়ে এ – ও বলা হয়েছে যে , উক্ত আয়াতের অর্থ হল, যুদ্ধের পরে যারা ইসলাম কবুল করেছে তাদের সম্পর্কে বল না যে, জোর – জবরদস্তির ফলে তারা ইসলাম কবুল করেছে ।
আবু বকর বলেছেনঃ দ্বীনে জোর প্রয়োগের অবকাশ নেই। এটি সংবাদ দানরূপে বলা কথা। কিন্তু মূলত একটি আদেশ। এটি সম্ভব যে , আয়াতটি মুশরিকদের বিরুদ্ধে করার আদেশ নাযিল হওয়ার পূর্বে এ আয়াত নাযিল হয়েছিল। ফলে তখন সে কথা সব কাফির সম্পর্কেই প্রয়োগীয় ছিল। যেমন আল্লাহর এই কথাটিঃ
প্রতিরোধ কর সেই পন্থায় যা অতীব উত্তম। তাহলে তোমার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে সহসাই অতীব উষ্ণ বন্ধুতে পরিণত হবে ।
( সূরা হা-মিম-আস সিজদাঃ ৩৪ )
যেমন আল্লাহর কথাঃ
এবং যা অতীব উত্তম পন্থা, তদ্বারা বিরোধীদের সাথে মুকাবিলা কর ।
( সূরা নহলঃ ১২৫ )
আল্লাহর কথাঃযখন তাদেরকে মূর্খ লোকেরা সম্বোধন করে , তখন তারা বসে সালাম।
( সূরা ফুরকানঃ ৬৩ )
ইসলামের প্রথম দিকে যুদ্ধ নিষিদ্ধ ছিল। শেষ পর্যন্ত কাফিরদের প্রতি ইসলাম পেশ করার কাজটি যখন সম্পূর্ণ হয়ে গেল, নবীর সত্যতা প্রতিষ্ঠিত হল, তারপরও যখন তারা শত্রুতা করতে থাকল, তখন মুসলমানদেরকে নির্দেশ দেয়া হল তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্যে। তখন দ্বীনের জোর প্রয়োগ করার অবকাশ নেই ‘ কথাটি আরবের মুশরিকদের বেলায় মনসুখ হয়ে গেল। আয়াত নাযিল হলঃ
মুশরিকদের যেখানেই পাবে , হত্যা করবে। ( সূরা আত্-তওবাঃ ৫)
মুশরিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার হুকুম সম্বলিত আরও বহু আয়াত রয়েছে। তাই উক্ত আয়াতের প্রয়োগ কেবলমাত্র আহলি কিতাবের সাথে থেকে গেল অর্থাৎ দ্বীন গ্রহণের ব্যাপারে তাদের উপর কোন জোর প্রয়োগ করা যাবে না। আর আহলি কিতাবদেরকেও নিষ্কৃতি দেয়া হবে তখন, যদি তারা বশ্যতা স্বীকার করে জিযিয়া দিতে রাজী হয়। তখন তারা মুসলমানদের যিম্মী হয়ে থাকবে। ইসলামের শাসনাধীন হবে।
এ কথার হাদিসী প্রমাণ হচ্ছে , নবী করীম ( স ) নিজে আরবের মুশরিকদের নিকট থেকে ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত হন নি। তা নাহলে তাদের উপর তরবারি চালিয়েছেন।




আকীদা গ্রন্থে পরিষ্কার বিবরণ
এবারে আমরা একটি বিখ্যাত আকিদা গ্রন্থ থেকে দেখে নিবো, এই বিষয়ে ইসলামের হুকুমত এবং বিধান আসলে কী [6]







তথ্যসূত্র
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২৬০৭ [↑]
- সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ২৬০৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৩১৫৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩৫৭, ৩৫৮ [↑]
- আহকামুল কুরআন, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৫ – ৩৫৮ [↑]
- আল-ইতকান ফি তাওহীদ আর-রহমান, শাইখ আব্দল্লাহ আল মুনির, পৃষ্ঠা ১৪-১৭, ২৫-২৭ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"