01.মোজেজার পরীক্ষায় ফেল্টু নবী

তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে ১৫ দিন

মুহাম্মদকে ইহুদিদের কাছ থেকে জেনে এসে তিনটি জটিল প্রশ্ন করেছিল কাফেররা, মুহাম্মদ আসলেই নবী কিনা সেটি পরীক্ষার জন্য। মুহাম্মদ উত্তরে তাদের বলেছিল, আগামীকাল তিনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন। অথচ তার পনেরোদিন পর্যন্ত মুহাম্মদের উত্তরের কোন খোঁজ খবর পাওয়া যায়নি। তার কাছে নাকি এই পনেরোদিন জিব্রাইল আসেনি। এরকম একটি জরুরি মূহুর্তে, যেখানে আল্লাহ এবং মুহাম্মদের মান সম্মান নিয়ে টানাটানি, ইসলামের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন এবং চ্যালেঞ্জ করেছে কাফেররা, সেখানে জিব্রাইল নাকি আসেনি। পরে মুহাম্মদ অজুহাত দেখিয়েছিল যে, সে নাকি সেইদিন ইনশাল্লাহ বলেনি দেখে আল্লাহ গোস্বা করে জিব্রাইলকে পাঠায়নি! এরকম ফালতু অজুহাত আমি জীবনে কোনদিন শুনিনি! এরকম একটি জরুরি মূহুর্ত, সেই সময়ে হঠাৎ আল্লাহ নাকি গোস্বা খেয়ে বসে আছেন! কী মুসিবত। এরপরে জিব্রাইল ব্যাটা আসলো, কিন্তু যেই উত্তর দিলো, সেগুলো কোনটিই আসলে সেই প্রশ্নগুলোর সঠিক কোন উত্তর নয়। সেগুলো নিয়ে পরে আসছি। আগে দেখে নিই, পনেরোদিন ওহী নাজিল বন্ধ ছিল কেন এবং কীভাবে, সেটি। এই পনেরোদিন নবী মুহাম্মদ কোথায় কোথায় প্রশ্নের উত্তরের জন্য ঘোরাঘুরি করেছে, কোন কোন ইহুদি আলেমের হাতেপায়ে ধরেছে, সেটি অবশ্য আমাদের জানা নেই! [1]

জনৈক মিসরী শায়েখের বরাত দিয়ে ইকরামা সূত্রে ইসহাকের মাধ্যমে ইবনে জারীর বর্ণনা করেছেন, হজরত ইবনে আব্বাস বলেছেন, কুরায়েশ গোত্রাধিনায়কেরা একবার নজর বিন হারেছ এবং উকবা বিন আবী মুয়ীতকে মদীনার ইহুদী আলেমদের কাছে পাঠালো। তাদেরকে বলে দিলো, তোমরা ইহুদী পণ্ডিতদেরকে মোহাম্মদ ও তার কথাবার্তা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে দেখো। তারা গ্রন্থধারী। তাই তারা মোহাম্মদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য বলতে পারবে। তারা যা বলে তা শুনে এসে তোমরা আমাদেরকে জানিয়ো। নজর ও উকবা পৌঁছে গেলো মদীনায়। রসুল স. সম্পর্কে সব কথা তারা খুলে বললো ইহুদী পণ্ডিতদের নিকট । পণ্ডিতেরা বললো, তোমরা তাকে এই তিনটি প্রশ্ন কোরো। প্রশ্ন তিনটির জবাব দিতে পারলে, মনে করবে তিনি সত্য নবী। আর জবাব দিতে না পারলে মনে করবে, সে ভণ্ড। প্রশ্ন তিনটি এই— ১. অতীত যুগের ওই সকল যুবক কারা, যারা পৃথিবীতে ঘটিয়েছিলো একটি অসাধারণ ঘটনা। ২. ওই ব্যক্তির পরিচয় কী, যে পরিভ্রমণ করেছিলো পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত থেকে পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত। ৩. রূহ কী ? নজর ও উকবা ফিরে এলো মক্কায়। গোত্রাধিনায়কদের বললো, এবার তবে মোহাম্মদের সঙ্গে একটা চূড়ান্ত মীমাংসা হয়েই যাক। তোমরা তাঁকে এই তিনটি প্রশ্ন করে দেখো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হলেন রসুল স. স্বয়ং। তারা তখন একে একে রসুল স.কে বর্ণিত প্রশ্ন তিনটি করলো। রসুল স. বললেন, তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দিবো আমি আগামীকাল। কিন্তু একথার সঙ্গে তিনি স. ইনশা আল্লাহ্ (আল্লাহ্ যদি চান) কথাটি উচ্চারণ করলেন না। পরিণতি হলো এই যে, একাধারে পনেরো দিন পর্যন্ত হজরত জিবরাইল আবির্ভূত হলেন না । অবতীর্ণ হলো না কোনো প্রত্যাদেশও। রসুল স. বড়ই পেরেশান হয়ে পড়লেন । অংশীবাদিরা করতে লাগলো নানা রকম অপমন্তব্য। এমতাবস্থায় সুরা কাহ্ফ নিয়ে অবতীর্ণ হলেন হজরত জিবরাইল। এতে সন্নিবেশিত করা হলো অংশীবাদিদের প্রশ্নত্রয়ের উত্তর। সেই সঙ্গে তিরস্কার ও ভর্ৎসনা করা হলো অংশীবাদিদেরকে।

আপাতত আসুন শেষ প্রশ্নটি অর্থাৎ রূহ কী, তার উত্তর মুহাম্মদ কী দিয়েছিল, সেটি দেখে নিই, [2]

সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৪৪/ তাফসীরুল কুরআন
পরিচ্ছেদঃ ১৮. সূরা বানী ইসরাঈল
৩১৪০। ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কুরাইশরা ইয়াহুদীদের বলল, তোমরা আমাদেরকে এমন কিছু শিখিয়ে দাও যে প্রসঙ্গে আমরা এই ব্যক্তিকে (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে) প্রশ্ন করতে পারি। ইয়াহুদীরা বলল, তোমরা রূহ প্রসঙ্গে তাকে প্রশ্ন কর। বর্ণনাকারী বলেনঃ তারা রূহ (বা প্রাণ) বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করল। তখন আল্লাহ তা’আলা এ আয়াত অবতীর্ণ করেনঃ “লোকেরা রূহ প্রসঙ্গে তোমার নিকট প্রশ্ন করে। বল, রূহ আমার প্রতিপালকের আদেশ ঘটিত। জ্ঞানের খুব সামান্যই তোমাদেরকে প্রদান করা হয়েছে”- (সূরা বনী ইসরাঈল ৮৫)।
ইয়াহুদীরা বলল, “আমাদের বিরাট বা প্রচুর জ্ঞান দান করা হয়েছে। আমাদেরকে তাওরাত কিতাব দেয়া হয়েছে। আর যাদেরকে তাওরাত গ্রন্থ দেয়া হয়েছে তাদেরকে প্রভূত কল্যাণ দেয়া হয়েছে। এ কথার পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াত অবতীর্ণ হয় (অনুবাদ) “বল, আমার প্রতিপালকের কথাগুলো লেখার জন্য সমুদ্রের সমস্ত পানি যদি কালি হয়ে যায় তবুও তা আমার প্রভুর কথাগুলো লিখে শেষ করার পূর্বেই নিঃশেষ হয়ে যবে। আমরা যদি আবার একই রকম কালি নিয়ে আসি তুবও তা যথেষ্ট হবে না”- (সূরা কাহফ ১০৯)।
সহীহঃ আত্তা’লীকাত আল-হাসসান (৯৯)
আবূ ঈসা বলেন, উল্লেখিত সনদসূত্রে এ হাদীসটি হাসান সহীহ গারীব।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সাফা পাহাড়কে সোনার পাহাড়ে পরিণত করা

নবী মুহাম্মদকে মক্কার কাফেরগণ চ্যালেঞ্জ করে বলেছিল, সাফা পাহাড়কে তাদের চোখের সামনে সোনার পাহাড় করে দেখাতে পারলে মুহাম্মদের নব্যুয়ত্যে তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে। তারা মুসা নবীর মোজেজার মত একটি মোজেজা দেখাবার দাবী জানিয়েছিল। কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে, নবী মুহাম্মদ সেই কাজটি করে দেখাতে পারেননি। বরঞ্চ নির্লজ্জ চাপাবাজির মাধ্যমে নিজের পিঠ রক্ষা করেছিল। আসুন ঘটনাটি পড়ে দেখি, [3]

1

বনূ নাদীরের চ্যালেঞ্জ থেকে পলায়ন

বনু নাদির গোত্রের প্রধানগণ নবী মুহাম্মদ ও তার সাহাবীদের নিমন্ত্রণ করেছিল আলোচনার উদ্দেশ্যে, চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল নবী মুহাম্মদের নবী হওয়ার প্রমাণ দেখাতে। ইহুদিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মুহাম্মদ যদি ইহুদি আলেমদের সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন, তাহলে বনু নাদীর গোত্রের সবাই ইসলামের সত্যতা বুঝতে পারবে এবং ইসলামকে কবুল করে নিবে। একটি নির্দিষ্ট স্থানে মুহাম্মদ ৩০ জন সঙ্গী নিয়ে আসবে, অপরদিকে ইহুদিরাও ৩০ জনকে নিয়ে আসবে। নবী সেখানে গেলেন তার সাহাবীগণ সহ। কিন্তু বিতর্ক শুরুর আগেই হঠাৎ তিনি সেখান থেকে উঠে চলে আসলেন, অন্য সবাইকে ফেলে চুপিচুপি। অন্য সাহাবীগণ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলেন, কিন্তু নবীর আর কোন খোঁজ খবর নেই! তাকে আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরে আরেকজনার কাছ থেকে শুনলেন নবী মদিনা চলে গেছেন। তারা মদিনা ফিরে আসলেন। ফিরে আসার পরে জানতে পারলেন, নবীকে নাকি জিব্রাইল এসে চুপিচুপি বলেছে, তারা যেখানে বসে ছিল সেই ঘরের ছাদে কিছু লোক নবীকে হত্যা করার জন্য বসে ছিল। কিন্তু সেই লোকগুলো কেন নবীর সাহাবীদের হত্যা করলো না, কেন সাহাবীদের কেউই এরকম কাউকে দেখতে পেলেন না, নবীও বা কাউকে কিছু না বলে একা একা চলে আসলেন কেন, তার সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না। অর্থাৎ এই ইহুদিদের এই গোপন ষড়যন্ত্রের কথা শুধুমাত্র নবী একাই জানেন, যার কোন বাস্তব প্রমাণ নেই। সেইদিন বন্ধু সঙ্গি সাথীদের বিপদের মুখে ফেলে নবীর চম্পট দেয়ার এই ঘটনাটি কতটা হাস্যকর এবং ইহুদিদের সাথে বিতর্ক এড়াবার কৌশল, তা বুদ্ধিমান মানুষ মাত্রই বুঝবেন। এর পরদিনই মুহাম্মদের নেতৃত্বে বনু নাদিরের ওপর আক্রমণ চালানো হয় [4]

রাসূলুল্লাহ (সা) তখন তাদের একটি ঘরের দেয়ালের পাশে বসা ছিলেন। তারা বলল, কে আছে যে, ছাদে উঠে ওখান থেকে একটি পাথর ফেলে দিয়ে মুহাম্মাদকে হত্যা করে আমাদেরকে তাঁর হাত থেকে নিষ্কৃতি দেবে? আমর ইবন জাহহাশ এগিয়ে এসে বলল, আমি এ জন্যে প্রস্তুত আছ। সে মতে পাথর নিক্ষেপের উদ্দেশ্যে সে স্থানে উঠে । রাসূলুল্লাহ্ (সা) তখনও সেখানে একদল সাহাবীসহ বসা ছিলেন। তাদের মধ্যে ছিলেন হযরত আবু বকর (রা) উমর (রা) এবং আলী (রা)। ওদের দুরভিসন্ধি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট আসমানী সংবাদ এসে যায়। তিনি কাউকে কিছু না বলে উঠে পড়েন এবং মদীনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। দীর্ঘক্ষণ ঘটনাস্থলে ফিরে না আসায় সাহাবীগণ তাঁর খোঁজে বের হন, মদীনার দিক থেকে আগত এক লোককে দেখে তাঁরা রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কথা তাকে জিজ্ঞেস করে। সে ব্যক্তি বলেছিল যে, আমি তো তাঁকে মদীনায় প্রবেশ করতে দেখেছি। এ সংবাদ পেয়ে সাহাবীগণ সকলে মদীনায় ফিরে এলেন এবং রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর নিকট সমবেত হলেন। তিনি ইয়াহুদীদের বিশ্বাসঘাতকতার কথা তাঁদেরকে অবহিত করলেন।

3

উপরের দলিলে দেখতে পালেন যে, মুহাম্মদ হুট করে তার নবুয়্যতের প্রমাণ না দিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। এবারে আসুন দেখা যাক, এর আগে পরে কী ঘটেছিল [5]

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৪/ কর, খাজনা, অনুদান ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সম্পর্কে
পরিচ্ছেদঃ ১৬১. বনূ নযীরের ঘটনা সম্পর্কে।
২৯৯৪. মুহাম্মদ ইবন দাঊদ ইবন সুফইয়ান (রহঃ) ……. আবদুর রহমান ইবন কা’ব ইবন মালিক (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জনৈক সাহাবী হতে বর্ণনা করেছেন যে, কুরায়শ কাফিররা আবদুল্লাহ ইবন উবাই এবং তার মূর্তি-পূজক সাথীদের, যারা আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোক, এ মর্মে পত্র লেখে, যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের আগে মদীনায় অবস্থান করছিলেনঃ তোমরা আমাদের সাথী (মুহাম্মদ) কে জায়গা দিয়েছ। এ জন্য আমরা আল্লাহ্‌র নামে শপথ করে বলছি, হয়তো তাঁর সাথে যুদ্ধ কর, নয়তো তাঁকে বের করে দাও। অন্যথায় আমরা সম্মিলিতভাবে আক্রমণ করে তোমাদের যোদ্ধাদের হত্যা করব এবং তোমাদের স্ত্রীদের আমাদের দখলে আনব।
আবদুল্লাহ ইবন উবাই এবং তার মূর্তিপূজারী সাথীরা এ খবর পাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সংগে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এ খবর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পৌছবার পর তিনি তাদের সাথে সাক্ষাত করেন এবং বলেনঃ তোমরা কুরায়শদের নিকট হতে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী চিঠি পেয়েছ, কিন্তু তা তোমাদের জন্য এত মারাত্মক নয়, যত না ক্ষতি তোমরা নিজেরা নিজেদের করবে। কেননা, তোমরা তো তোমাদের সন্তান-সন্ততি ও ভাইদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সংকল্প করছ।
তারা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে এরূপ কথা শুনলো, তখন তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো। এ খবর কুরায়শ কাফিরদের কাছে পৌছলে তারা বদর যুদ্ধের পর ইয়াহুদীদের নিকট লিখলোঃ তোমরা ঘরবাড়ী ও দুর্গের অধিকারী। কাজেই তোমাদের উচিত আমাদের সাথী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে যুদ্ধ করা। অন্যথায় আমরা তোমাদের সাথে এরূপ করব, সেরূপ করব। আর আমাদের ও তোমাদের স্ত্রীদের মাঝে কোন পার্থক্য থাকবে না।
যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তারা এরূপ চিঠি পেল, তখন বনূ নযীরের ইয়াহুদীরা বিদ্রোহ ঘোষণা করলো এবং তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ মর্মে অবহিত করে যে, আপনি আপনার সাথীদের থেকে ত্রিশজন নিয়ে আমাদের কাছে আসুন এবং আমাদের ত্রিশজন আলিম আপনার সংগে এক আলাদা স্থানে দেখা করবে। তারা আপনার কথা শুনবে, যদি তারা আপনার উপর ঈমান আনে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে আমরা আপনার উপর ঈমান আনব।
পরদিন সকাল বেলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদল সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের উপর হামলা করেন এবং তাদের অবরোধ করে বলেনঃ আল্লাহ্‌র শপথ! তোমরা যতক্ষণ অঙ্গীকার না করবে, ততক্ষণ আমি তোমাদের ব্যাপারে নিশ্চিত নই। তখন তারা (ইয়াহুদীরা) অঙ্গীকার করতে অস্বীকার করে। ফলে তিনি সেদিন তাদের সাথে দিনভর যুদ্ধে রত থাকেন। পরদিন তিনি বনূ নযীরকে বাদ দিয়ে বনূ কুরাইযার উপর আক্রমণ করেন এবং তাদের অঙ্গীকারবদ্ধ হতে বলেন। ফলে তারা তাঁর সংগে অঙ্গীকারবদ্ধ হয়। তখন তিনি তাদের নিকট হতে প্রত্যাবর্তন করে পুনরায় বনূ নযীরকে অবরোধ করেন এবং তাদের সাথে ততক্ষণ যুদ্ধ করেন, যতক্ষণ না তারা দেশত্যাগে বাধ্য হয়।
বনূ নযীরের লোকেরা তাদের উটের পিঠে ঘরের দরজা, চৌকাঠ ইত্যাদি যে পরিমাণ মালামাল নেওয়া সম্ভব ছিল, তা নিয়ে যায়। এবার বনূ নযীরের খেজুরের বাগান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অধিকারে আসে, যা আল্লাহ্‌ তা’আলা বিশেষভাবে প্রদান করেন। যেমন আল্লাহ্‌ বলেনঃ
وَمَا أَفَاءَ اللَّهُ عَلَى رَسُولِهِ مِنْهُمْ فَمَا أَوْجَفْتُمْ عَلَيْهِ مِنْ خَيْلٍ وَلاَ رِكَابٍ
অর্থাৎ আল্লাহ্‌ কাফিরদের মাল হতে যে সস্পদ তাঁর রাসূলকে প্রদান করেন, তা হাসিলের জন্য তোমরা তোমাদের ঘোড়া অথবা উট হাঁকাও নি, অর্থাৎ ঐ সম্পদ বিনা যুদ্ধে হাসিল হয়।
অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মালের অধিকাংশই মুহাজিরদের মাঝে বণ্টন করে দেন এবং অভাবগ্রস্ত দু’জন আনসারকে তা হতে অংশ প্রদান করেন। এ দু’জন ছাড়া অন্য আনসার সাহাবীদের মাঝে এ মাল বিতরণ করা হয়নি। অবশিষ্ট মাল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য সাদকা স্বরূপ ছিল, যা বনূ ফাতিমার নিয়ন্ত্রণে ছিল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তথ্যসূত্র

  1. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, ৭ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২০৪, ২০৫ []
  2. সুনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত), হাদিসঃ ৩১৪০ []
  3. তাফসীরে মাযহারী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮১ []
  4. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৮ []
  5. সুনান আবূ দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২৯৯৪ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"