সূচিপত্র
ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন কাকে বলে?
শুরুতেই জেনে নেয়া প্রয়োজন, ধর্ষন শব্দটি দ্বারা আসলে কী বোঝায় এবং ধর্ষনের সংজ্ঞা কী। ধর্ষণ হচ্ছে, শারীরিক বলপ্রয়োগ, অন্য যেকোনভাবে চাপ প্রদান, ব্ল্যাকমেইল কিংবা কর্তৃত্বের অপব্যবহারের মাধ্যমে কারোর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা। অনুমতি প্রদানে অক্ষম (যেমন- কোনো অজ্ঞান, বিকলাঙ্গ, মানসিক প্রতিবন্ধী কিংবা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ) এরকম কোনো ব্যক্তির সঙ্গে যেকোন ভাবেই হোক, যৌনমিলনে লিপ্ত হওয়াও ধর্ষণের আওতাভুক্ত। অর্থাৎ, একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে সম্মতি না দিলে, তার সাথে যেকোন ধরণের যৌনমিলনই ধর্ষনের আওতাভুক্ত। আবার, একজনের উপর অন্যজনের চাপিয়ে দেওয়া অনিচ্ছাকৃত যৌন আচরণকে যৌন নির্যাতন বা উৎপীড়ন বলা হয়। যখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যৌনকাজে জোর করা হয় যখন এক পক্ষের কোন সম্মতি থাকে না, তখন তাকে যৌন লাঞ্ছনা বলা হয়। যৌন লাঞ্ছনার মধ্যে অযাচিত স্পর্শ, ক্ষমতার দ্বারা যৌন কাজে সম্মত হওয়ার জন্য চাপ প্রদান ইত্যাদিও অন্তর্ভূক্ত। এ ধরণের ঘটনায় অপরাধীকে যৌন নির্যাতক বা উৎপীড়ক বলে অভিহিত করা হয়। আবার, যদি কোন প্রাপ্তবয়ষ্ক লোক বা তরুণ কোন শিশুকে যৌন কাজে লিপ্ত হওয়ার জন্যে অনুপ্রেরণা দেয় তাকেও যৌন নির্যাতন বলা হবে। শিশু বা নাবালকের সাথে অনুপ্রেরণা দিয়ে যৌন কাজে লিপ্ত হলে তাকে শিশু যৌন নির্যাতন বা বিশেষ আইনের আওতায় ধর্ষন বলা হয়।
এখন আসুন, নবী যৌন নির্যাতক বা ধর্ষক ছিলেন কিনা দেখা যাক।
জাওনিয়াকে যৌন নির্যাতন
বুখারী শরীফে বর্ণিত রয়েছে, নবী একবার তার সঙ্গীদের নিয়ে একটি বাগানবাড়িতে যান, যেখানে নবীর জন্য একজন মেয়েকে নিয়ে আসা হয়। মেয়েটিকে নবীর বাসায় বা মেয়েটির বাসাতে নয়, বিশেষভাবে বাগানবাড়িতে আনা হয়। বাগানবাড়ি কী এবং সেখানে একজন মেয়েকে কেন নিয়ে আসা হয়, সেটি বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ মাত্রই বুঝবেন। সেখানে সেই মেয়েটির সাথে যৌনকর্ম করার জন্য নবী তাকে নবীর কাছে সমর্পন করতে বলে। বাইরে নবী তার সঙ্গীসাথীদের বসিয়ে রেখে এসেছিল, যারা বাইরে অপেক্ষ করছিল নবীর কাজ শেষ হওয়ার। সেই মেয়েটি এই প্রস্তাবটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজেকে একজন রাজকুমারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলে যে, একজন রাজকুমারী কখনো নবীর মত একজন নিচুশ্রেনীর বাজারি লোকের সাথে যৌন কর্ম করতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, মেয়েটি এরকম অবস্থায় ক্ষিপ্ত ছিল, এবং হাদিসেও বলা আছে, মেয়েটি রাগান্বিত হয়েছিল। এরপরে নবী তার গাইয়ে হাত দেয়ার চেষ্টা করেন। পরে বুদ্ধিমান মেয়েটি নবীর কাছ থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর দোহাই দেয়, আল্লাহর দোহাই দেয়ার পরে নবী তাকে ছেড়ে দেয় বা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।এই মেয়েটি খুব সম্ভবত একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েশিশু ছিল, যাকে নবী হয়তো জোর করেই বিয়ে করেছিলেন। অথবা আরেকটি সম্ভাবনাও থাকতে পারে যে, এই মেয়েটিকে ঐ বাগানবাড়িতেই আনার পরে নবী তাকে হিবা করতে বলেছিলেন। হিবা কাকে বলে, বা মেয়েটি আসলেই নবীর কোন স্ত্রী ছিলেন কিনা, সেগুলো আপাতত বাদ দিয়ে আসুন হাদিসটি পড়ি [1]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
৬৮/ ত্বলাক
পরিচ্ছেদঃ ৬৮/৩. ত্বলাক্ব দেয়ার সময় স্বামী কি তার স্ত্রীর সম্মুখে ত্বলাক্ব দেবে?
৫২৫৫. আবূ উসায়দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমরা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে বের হয়ে শাওত নামক বাগানের নিকট দিয়ে চলতে চলতে দু’টি বাগান পর্যন্ত পৌছলাম এবং এ দু’টির মাঝে বসলাম। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তোমরা এখানে বসে থাক। তিনি ভিতরে) প্রবেশ করলেন। তখন নু’মান ইব্ন শারাহীলের কন্যা উমাইমার খেজুর বাগানস্থিত ঘরে জাওনিয়াকে আনা হয়। আর তাঁর খিদমতের জন্য ধাত্রীও ছিল। নাবী যখন তার কাছে গিয়ে বললেন, তুমি নিজেকে আমার কাছে সমর্পণ কর। তখন সে বললঃ কোন রাজকুমারী কি কোন বাজারিয়া ব্যক্তির কাছে নিজেকে সমর্পণ করে? রাবী বলেনঃ এরপর তিনি তাঁর হাত প্রসারিত করলেন তার শরীরে রাখার জন্য, যাতে সে শান্ত হয়। সে বললঃ আমি আপনার থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাই। তিনি বললেনঃ তুমি উপযুক্ত সত্তারই আশ্রয় নিয়েছ। এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের নিকট বেরিয়ে আসলেন এবং বললেনঃ হে আবূ উসায়দ! তাকেদু’খানা কাতান কাপড় পরিয়ে দাও এবং তাকে তার পরিবারের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।(৫২৫৭) আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৭১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৫)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ উসাইদ (রাঃ)
বাজারিয়া ব্যক্তি বলতে কী বোঝায়?
একমাত্র অন্ধবিশ্বাসী মুমিন না হলে স্বাভাবিকভাবেই যেকোন সুস্থ মাথার মানুষই বুঝবে, এই হাদিসে মেয়েটি নবীকে গালাগাল করে অত্যন্ত বাজেভাবে অপমান করেছে। এখানে বাজারিয়া লোক বলতে কী বোঝানো হয়েছে, সেই সময়ে বাজারিয়া লোক বলতে আসলে ঠিক কেমন মানুষকে নির্দেশ করা হতো, সেটি আসুন আরেকটি সহিহ হাদিস থেকে বোঝার চেষ্টা করি, [2]
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৬/ সাহাবী (রাঃ) গণের ফযীলত
পরিচ্ছেদঃ ১৬. উম্মুল মউ’মিনীন উম্মু সালামাহ (রাঃ) এর ফযীলত
৬০৯৩। আবদুল আলা ইবনু হাম্মাদ ও মুহাম্মাদ ইবনু আবদুল আ’লা কায়সী (রহঃ) … সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যদি তোমার পক্ষে সম্ভব হয় তবে বাজারে প্রবেশকারীদের মধ্যে তুমি প্রথম হয়ো না এবং তথা হতে বহির্গমণকারীদের মধ্যে তুমি শেষ ব্যক্তি হয়ো না। বাজার হলো শয়তানের আড্ডাখানা। আর তথায়ই সে তার ঝান্ডা উত্তোলন করে রাখে। সালমান (রাঃ) বলেন, আমাকে এ খবরও দেওয়া হয়েছে যে, জিবরীল (আলাইহিস সালাম) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলেন। তখন তাঁর পাশে উম্মু সালামা (রাঃ) ছিলেন। রাবী বলেন, অতঃপর জিবরীল (আলাইহিস সালাম) কথা বলতে লাগলেন এবং পরে চলে গেলেন।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে সালামাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইনি কে ছিলেন? বা এরূপ কথা বললেন। উম্মে সালামা (রাঃ) উত্তর দিলেন, দাহইয়া কালবী। তিনি বলেন, উম্মু সালামা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম! আমি তো তাকে দাহইয়া কালবী বলেই ধারণা করেছিলাম। যতক্ষন না রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভাষণ শুনলাম। তিনি আমাদের কথা বলছিলেন অথবা এরূপ বলেছিলেন। অর্থাৎ জিবরীলের আগমনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি রাবী আবূ উসমানকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনি এ হাদীস কার মাধ্যমে শুনেছেন? তিনি বললেন, উসামা ইবনু যায়দ (রাঃ) থেকে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সালমান ফারসী (রাঃ)
এই সম্পর্কে আরও একটি হাদিস পড়ে নেয়া জরুরি, [3]
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫। মাসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ
পরিচ্ছেদঃ ৫২. ফজরের সালাতের পর বসে থাকার এবং মসজিদসমূহের ফযীলত
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ১৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৬৭১
১৪১৪-(২৮৮/৬৭১) হারূন ইবনু মা’রূফ ও ইসহাক ইবনু মূসা আল আনসারী (রহঃ) ….. আবূ হুরায়রাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলার কাছে সব চাইতে প্রিয় জায়গা হলো মাসজিদসমূহ আর সব চাইতে খারাপ জায়গা হলো বাজারসমূহ। (ইসলামী ফাউন্ডেশন ১৪০০, ইসলামীক সেন্টার ১৪১২)
* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। পৃথিবীর মধ্যে মাসজিদগুলি হলো আল্লাহর জিকির, ইবাদত বা উপাসনা প্রতিষ্ঠিত করার স্থান। আল্লাহর জিকির, ইবাদত বা উপাসনার মধ্যে সর্ব শ্রেষ্ঠ বিষয় হলো পাঁচ ওয়াক্তের ফরজ নামাজ।
২। মসজিদসমূহের সম্মান করা অপরিহার্য; তাই সমস্ত মসজিদ পরিষ্কার এবং সুবাসিত করে রাখা ওয়াজিব। এবং অপ্রীতিকর গন্ধ ও ময়লা পোশাক পরিধান করে মসজিদে প্রবেশ করা জায়েজ নয়।
৩। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত স্থান হলো সাধারণতঃ বাজার; কেননা সচরাচর বাজার হলো প্রতারণা, ঠকবাজি, মিথ্যা শপথ ইত্যাদির জায়গা এবং আল্লাহর জিকির থেকে বিরত থাকারও স্থান।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
জাওনিয়াকে কী আসলেই বিয়ে করেছিল?
ইসলামপন্থীরা সহীহ বুখারীর হাদিসের একটি পরিচ্ছেদের শিরোনামের ভিত্তিতে দাবি করে থাকেন যে, ‘জাওনিয়া’ নামের ঐ নারী নাকি নবীর বিবাহিতা স্ত্রী ছিলেন। কিন্তু এই দাবীটি সঠিক হতে পারে না। কারণ, হাদিস গ্রন্থগুলোর এইসব পরিচ্ছেদ বা শিরোনাম মূল হাদিসের অংশ নয়— এগুলো হাদিস সংকলকগণ অনেক পরে সংযুক্ত করেন এবং এগুলো অনেক সময়ই হাদিসকে নির্দিষ্ট একটি বিধানের আওতায় ফেলার উদ্দেশ্যে সন্নিবেশিত হয়। হাদিসের বর্ণনার ভেতরেও এমন কিছু নেই যা এই নারীর সম্মতির কথা নিশ্চিত করে। বরং হাদিস পাঠে স্পষ্ট বোঝা যায়, তাকে কোনো পূর্বসংবাদ না দিয়ে, এমনকি সম্ভবত জোর করেই আনা হয়েছিল। যদি বিবাহিতা স্ত্রীই হতো, সেই বিয়েতে নিশ্চিতভাবেই মেয়েটির সম্মতির প্রয়োজন হতো। মেয়েটি যে কোনভাবেই সম্মত ছিলেন না, সেটি হাদিস থেকে স্পষ্ট। তাহলে দুইটি সম্ভাবনা বাকি থাকেঃ
- ১। মেয়েটি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল, যার কারণে তার সম্মতি ছাড়াই ইসলামের বিধান অনুসারে তার পিতা তাকে বিবাহ দিতে পেরেছে।
- ২। মেয়েটির সাথে বিয়ে হয়নি, নবী মেয়েটিকে ঐ বাগানবাড়িতেই নিজেকে হিবা করতে বলে।
তাছাড়া, হাদিসের পরিচ্ছদে “তালাক” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ একটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি আরবি “ṭ-l-q” ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ “মুক্ত করা”, “বিচ্ছিন্ন করা” বা “বাঁধন থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া”। এই শব্দটির অর্থ নির্ভর করে প্রেক্ষাপটের ওপর। কেবলমাত্র “তালাক” শব্দ ব্যবহার থেকেই ধরে নেওয়া যায় না যে, সম্পর্কটি ছিল বৈবাহিক। যেমন ইসলামী শরিয়তে দাসীদের ক্ষেত্রেও “তালাক” প্রযোজ্য হয়, অর্থাৎ দাসীর সাথে বৈধ বিবাহের সম্পর্ক না থাকলেও তাকে ‘তালাক’ দেওয়া হতে পারে। ফলে পরিচ্ছেদে কেবলমাত্র ‘তালাক’ শব্দ থাকার ভিত্তিতে নবী ও জাওনিয়ার মাঝে বৈবাহিক সম্পর্ক ছিল এমন দাবি করা যুক্তিসংগত নয়।
দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে, আরেকটি হাদিসে একজন আয়িশার কাছে প্রশ্ন করে, কোন সহধর্মিনীর সাথে নবী সঙ্গম না করেই তালাক দিয়েছিলেন? এখানে রাবী কীভাবে প্রশ্নটি করেছেন, আয়িশা কীভাবে উত্তর দিয়েছেন, সব খুব ভালভাবে বিশ্লেষণ করলে সেখান থেকে নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয় যে, জাঙিয়া নামক ঐ মেয়েটিকে নবী বিয়েই করেছিলেন। নবী আসলে ঐ মেয়েকে “নিজেকে হিবা” করে দেয়ার জন্য বলেছিলেন। হিবা করে দেয়া কী সেটি নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন। কিন্তু সেদিকে না গিয়েই, বিখ্যাত ইসলামিক আলেম ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম এর যাদুল মাআদ গ্রন্থ থেকে একটি দলিল দেখে নিই [4]

এরপরে উমাইমাকে যৌন নির্যাতন
জাওনিয়ার সাথে যৌনকর্ম করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে নবী মুহাম্মদ উমাইমা, যার ঘরে এই ঘটনা ঘটছিল, তার সাথে একই কাজ করতে চেষ্টা করেন। আসুন এরপরের হাদিসটি পড়ে নিই, [5]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৮/ ত্বলাক
পরিচ্ছেদঃ ৬৮/৩. ত্বলাক্ব দেয়ার সময় স্বামী কি তার স্ত্রীর সম্মুখে ত্বলাক্ব দেবে?
৫২৫৬-৫২৫৭. (ভিন্ন সনদে) সাহল ইবন সা’দ ও আবূ উসায়দ (রাঃ) বর্ণনা করেন। তাঁরা বলেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উমাইমা বিনতু শারাহীলকে বিবাহ করেন। পরে তাকে তাঁর কাছে আনা হলে তিনি তার দিকে হাত বাড়ালেন। সে এটি অপছন্দ করল। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ উসাইদকে তার জিনিসপত্র গুটিয়ে এবং দুখানা কাতান বস্ত্র প্রদান করে তার পরিবারের নিকট পৌঁছে দেবার নির্দেশ দিলেন।[৫২৫৫] আধুনিক প্রকাশনী- ৪৮৭১ শেষাংশ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৫)
আবূ উসায়দ ও সাহল ইবন সা’দ (রাঃ) থেকে একই রকম বর্ণিত আছে।[৫২৩৭] আধুনিক প্রকাশনী- নাই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৬৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সাহল বিন সা’দ (রাঃ)
অনেক ইসলামিক দাইয়ীরাই এই হাদিসগুলোকে নিয়ে নানা ধরণের মিথ্যাচারে লিপ্ত আছে। সেই কারণে এই হাদিস দুইটি খুব ভালভাবে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। একটু মন দিয়ে নামগুলো পড়বেন। ছবিগুলো নেয়া হয়েছে সরাসরি বই থেকে [6] –

এবারে আসুন পরের হাদিসটি পড়ি [6] – হাদিসের বর্ণনা লক্ষ্য করুন, নু’মান ইবনে শারাহীলের কন্যা উমাইমা এবং জাওনের কন্যা জাওনিয়া কিন্তু দুইজন আলাদা ব্যক্তি। এদের মধ্যে উমাইমাকে নবী বিয়ে করেছিল বলে জানা যায়, কিন্তু জাওনিয়াকে বিয়ে করার কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় না। বরঞ্চ ঘটনা পরম্পরা দেখে বলা যায়, ঐ বাগানবাড়িতে তাকে আনা হয়েছিল ভোগ করার উদ্দেশ্যে, মেয়েটির বিরক্তিভাব থেকেই তা অনেকটা পরিষ্কার। নবীর ইজ্জত রক্ষা করার জন্য অনেক মুমিনই লাজলজ্জার মাথা খেয়ে দুইজনকে একই মানুষ বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করতে পারে। তাই খুব স্পষ্টভাবে আলাদা করে দেয়া প্রয়োজন যা হাদিসেই বর্ণিত আছে। একটু মন দিয়ে পড়ুন [7] –

যৌনকর্ম করতে ব্যর্থ নবীকে সাহাবীর প্রস্তাব
পরপর দুইজন মেয়েদের দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিয়েও কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় নবী নিশ্চয়ই খুবই মর্মাহত হয়েছিল। আসুন দেখি এরপরে নবী আসলে কী করেছিল। তার এক সাহাবী নবীর এরকম অপমানজনক অবস্থায় নবীকে দেখে নবীকে কি বলেছিল, তা জানতে আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থটি দেখতে হবে [8] – পাঠক লক্ষ্য করুন, বাগানবাড়িতে দুই দুইজন মেয়ে নিয়ে এসেও নিজের যৌন কামনা চরিতার্থ করতে না পারার জ্বালায় নবী তখন উত্তেজিত। দুই মেয়ের দিকে হাত বাড়িয়ে লাভ হল না। দুই দুইজন নারী পর পর তার সাথে যৌনকর্ম করতে অসম্মতি জানিয়েছে, একজন তো রীতিমত গালাগালি করেছে। বেচারা নবীকে তখন তার এক চ্যালা স্বান্তনা দিয়ে বলছে, নবী যেন রাগ না করে। তার ঘরে এক সুন্দরী বোন আছে। নবী চাইলে সেই সাহাবী বরঞ্চ তাকে এনে দিবে! রীতিমত নিজের বোনের সৌন্দর্য্যের কথা বলে লোভ দেখায়, বোন কাতীলাকে এনেও দেয়। যেন কামের নবী মুহাম্মদের কামের জ্বালা তাতে মেটে। কী মহান ব্যক্তিবর্গ ছিলেন নবীর উম্মতেরা, ভাবতেই অবাক লাগে! একটা না পাইলে আরেকটা, সেইটাও না পাইলে আর একটা, ছিদ্র হইলেই চলে আর কি! এই সাহাবী এবং তার বোন কাতীলা পরবর্তী সময়ে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন বলে কিছু সূত্র থেকে জানা যায়, সেটি নিয়ে পরে একসময় আলোচনা করা যাবে। আসুন আমরা মুল বিবরণটি পড়ি,
বর্ণনাকারী বলেন, নবী করীম (সা) তাকে বিয়ে করেছিলেন আট হিজরীর যিলকদ মাসে, আর তার মৃত্যু হয়েছিল ষাট হিজরীতে। নবী করীম (সা) যাদের বিয়ে করেছিলেন, কিন্তু তাদের সংগে সহবাস করেননি, এ তালিকায় ইব্ন ইসহাক (র) হতে ইউনুস (র) উল্লেখ করেছেন, আসমা বিনত কা’ব জাওনী ও ‘আমরা বিনত ইয়াযীদ কিলাবীকে। তবে ইব্ন আব্বাস (রা) ও কাতাদা (র) বলেছেন, আসমা বিনতুন নু’মান ইব্ন আবুল জাওন।-আল্লাহই সর্বাধিক অবগত ।
ইবন আব্বাস (রা) বলেন, সে নবী করীম (সা) হতে আল্লাহর আশ্রয় গ্রহণ করলে তিনি রুষ্ট হয়ে তাঁর নিকট থেকে বেরিয়ে আসলে আশ’আছ (রা) তাকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এতে দুঃখিত হবেন না। আমার কাছে তার চেয়ে সুন্দরী গুণবতী রয়েছে। পরে তিনি নিজের বোন কাতীলাকে তার সংগে বিয়ে দিলেন। অন্যান্য বর্ণনা মতে এটি ছিল নবম হিজরীর রাবী (আউয়াল/ছানী) মাসের ঘটনা।

প্রখ্যাত ইসলামের ইতিহাস গ্রন্থ “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”-এর পঞ্চম খণ্ড থেকে এই পুরো ঘটনাটি আবারো জানা যায়। নবী একজন নারীর সাথে যৌনকর্ম করার উদ্দেশ্য নিয়ে তাকে নিজের কাছে সমর্পন করতে বলেছিল। কিন্তু ঐ মহিলা রীতিমত হযরত মুহাম্মদকে এই বলে গালি দেন যে, নবী মুহাম্মদ একজন নিম্নমানের বাজারী লোক। তার সাথে সেই মহিলা যৌনকর্ম করতে ইচ্ছুক নন। নবী মুহাম্মদ তখন তার গায়ে হাত দিয়েছিলেন, কিন্তু সেই নারী আল্লাহর দোহাই দিয়ে নবীকে থামতে বলেন। আল্লাহর দোহাই দেয়ার পরে নবী আর তাকে যৌনকাজে বাধ্য করেন নি [9]


তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, হাদিসঃ ৫২৫৫ [↑]
- সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬০৯৩ [↑]
- সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ১৪১৪ [↑]
- যাদুল মাআদ, ইমাম ইবনুল কাইয়্যুম, প্রথম খণ্ড, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৭৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৫২৫৬-৫২৫৭ [↑]
- সহীহুল বুখারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৮ [↑][↑]
- সহীহুল বুখারী, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১০৯ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৯ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৮৭ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"