আসুন বুখারী শরীফ থেকেই দুইটি হাদিস পাশাপাশি রেখে পড়ি। প্রথম হাদিসটি লক্ষ্য করুন, হযরত উসমান নির্দেশ দিচ্ছেন যে, কোরআন কুরাইশদের ভাষায় নাজিল হয়েছে, সুতরাং কুরাইশদের ভাষায় নাজিল হওয়া কোরআন ছাড়া বাদবাকি সকল কোরআন তিনি পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দিলেন। এবারে ডানদিকের অন্য হাদিসটি পড়ুন, যেখানে দেখা যাচ্ছে, খোদ নবী মুহাম্মদ, যার ওপর কোরআন নাজিল হয়েছে বলে ইসলামে বিশ্বাস করা হয়, তিনিই বলছেন, কোরআন শুধু কুরাইশদের ভাষায় নয়, সাতটি উপ বা আঞ্চলিক ভাষায় নাজিল হয়েছে। তাহলে যেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে উসমান বাদবাকি উপভাষার কোরআন পুড়িয়ে দিলেন, সেই তথ্যটি সম্পুর্ণ ভুল ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখয়ে না। তাহলে, তিনি কেন এই ভুল তথ্যটি দিলেন? শুধু ভুল তথ্যই দিলেন তা নয়, ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ছয়টি উপ বা আঞ্চলিক ভাষার কোরআন পুড়িয়ে ফেললেন কেন? সেই ছয় উপ বা আঞ্চলিক ভাষার কোরআনগুলো তো আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এর দায় কার? [1] [2] [3]
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন
পরিচ্ছেদঃ কুরআন সংকলন
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪৬২৬, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৯৮৭ – ৪৯৮৮
৪৬২৬। মূসা (রহঃ) … আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) একবার উসমান (রাঃ) এর কাছে এলেন। এ সময় তিনি আরমিনিয়া ও আযারবাইজান বিজয়ের ব্যাপারে সিরীয় ও ইরাকী যোদ্ধাদের জন্য রণ-প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কুরআন পাঠে তাঁদের মতবিরোধ হুযায়ফাকে ভীষণ চিন্তিত করল। সুতরাং তিনি উসমান (রাঃ) কে বললেন, হে আমীরুল মু’মিনীন! কিতাব সম্পর্কে ইহুদী ও নাসারাদের মত মত পার্থক্যে লিপ্ত হবার পূর্বে এই উম্মতকে রক্ষা করুন। তারপর উসামান (রাঃ) হাফসা (রাঃ) এর কাছে জনৈক ব্যাক্তিকে এ বলে পাঠালেন যে, আপনার কাছে সংরক্ষিত কুরআনের সহীফাসমূহ আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, যাতে আমরা সেগুলোকে পরিপূর্ণ মাসহাফসমূহে লিপিবদ্ধ করতে পারি। এরপর আমরা তা আপনার কাছে ফিরিয়ে দেব।
হাফসা (রাঃ) তখন সেগুলো উসমান (রাঃ) এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর উসমান (রাঃ) যায়দ ইবনু সাবিত (রাঃ), আবদুল্লাহ ইবনু যুবায়র (রাঃ), সাঈদ ইবনু আস (রাঃ) এবং আবদুর রহমান ইবনু হারিস ইবনু হিশাম (রাঃ) কে নির্দেশ দিলেন। তাঁরা মাসহাফে তা লিপিবদ্ধ করলেন। এ সময় উসমান (রাঃ) তিনজন কুরাইশী ব্যাক্তিকে বললেন, কুরআনের কোন বিষয়ে যদি যায়দ ইবনু সাবিতের সঙ্গে তোমাদের মতপার্থক্য দেখা দেয়, তাহলে তোমরা তা কুরাইশদের ভাষায় লিপিবদ্ধ করবে। কারণ, কুরআন তাদের ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তাঁরা তাই করলেন। যখন মূল লিপিগুলো থেকে কয়েকটি পরিপূর্ণ গ্রন্থ লিপিবদ্ধ হয়ে গেল, তখন উসমান (রাঃ) মূল লিপিগুলো হাফসা (রাঃ) এর কাছে ফিরিয়ে দিলেন। তারপর তিনি কুরআনের লিখিত মাসহাফ সমূহের এক একখানা মাসহাফ এক এক প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন এবং এতদভিন্ন আলাদা আলাদা বা একত্রে সন্নিবেশিত কুরআনের যে কপিসমূহ রয়েছে তা জ্বালিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিলেন।
ইবনু শিহাব (রহঃ) খারিজা ইবনু যায়দ ইবনু সাবিতের মাধ্যমে যায়দ ইবনু সাবিত থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, আমরা যখন গ্রন্থকারে কুরআন লিপিবদ্ধ করছিলাম তখন সূরা আহযাবের একটি আয়াত আমার থেকে হারিয়ে যায়; অথচ আমি তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে পাঠ করতে শুনেছি। তাই আমরা অনুসন্ধান করতে লাগলাম। অবশেষে আমরা তা খুযায়মা ইবনু সাবিত আনসারী (রাঃ) এর কাছে পেলাম। আয়াতটি হচ্ছে এইঃ “মু’মিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সঙ্গে তাদের কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করেছে, তাদের কেউ কেউ শাহাদত বরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষায় রয়েছে। তাঁরা তাদের অঙ্গীকারে কোন পরিবর্তন করেনি”। (৩৩: ২৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন
পরিচ্ছদঃ ২৩৯৯. কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল হয়েছে।
৪৬২৬। সাঈদ উব্ন উফায়র (রহঃ) … উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত।
… এবারও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এভাবেও কুরআন নাযিল করা হয়েছে। এ কুরআন সাত উপ (আঞ্চলিক) ভাষায় নাযিল করা হয়েছে। সুতরাং তোমাদের জন্য যা সহজতর, সে পদ্ধতিতেই তোমরা পাঠ কর।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
এবারে আসুন কোরআনের একটি আয়াত পড়ি [4] যেখানে আল্লাহ বলছেন, আল্লাহই কোরআন নাজিল করেছেন এবং আল্লাহর নাজিল করা কোরআনের সংরক্ষক আল্লাহ নিজেই। প্রশ্ন হচ্ছে, নবী মুহাম্মদের পরিষ্কার বক্তব্য অনুসারে, কোরআন সাতটি উপ বা আঞ্চলিক ভাষায় নাজিল হয়েছিল, [3] যেগুলোর সংরক্ষণের দায়িত্ব ছিল আল্লাহর হাতে। হযরত উসমান সেই সাত উপভাষা থেকে একটি বাদে ছয় উপভাষার কোরআন পুড়িয়ে দিলেন[2] (। তাহলে আল্লাহ কী তার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেছেন বলে মনে হচ্ছে? আল্লাহ তো যেই কয় উপভাষায় কোরআন নাজিল করেছিলেন, সবগুলোই সংরক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তাই না? নাকি শুধু কুরাইশদের ভাষায় নাজিল হওয়া কোরআনের দায়িত্ব নিয়েছিলেন?
নিশ্চয় আমিই কুরআন নাযিল করেছি আর অবশ্যই আমি তার সংরক্ষক।
— Taisirul Quran
আমিই জিকর (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এবং আমিই উহার সংরক্ষক।
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি কুরআন* নাযিল করেছি, আর আমিই তার হেফাযতকারী। * الذكر দ্বারা উদ্দেশ্য কুরআন।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আমরাই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরা অবশ্যই তার সংরক্ষক [১]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তথ্যসূত্র
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৩৩৮, ৩৪১ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৬২৬ [↑][↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৬৩০ [↑][↑]
- সূরা হিজর, আয়াত ৯ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"