একটি প্রশ্ন জাগা খুবই স্বাভাবিক যে, মুহাম্মদ যদি লিখতে পড়তে না জেনে থাকেন, তাহলে তিনি কোরআনের আয়াতগুলো কোথায় পেলেন বা পূর্ববর্তী নবীদের গল্প তিনি কীভাবে জানলেন? এর উত্তর কোরআন ও হাদিস থেকেই পরোক্ষভাবে জানা যায়। হাদিসেই বর্ণিত আছে, নবী মুহাম্মদের ওপর এই অভিযোগ পৌত্তলিকরা আরোপ করেছিল যে, নবী ইহুদি খ্রিস্টানদের থেকে বর্ণনা গ্রহণ করে কোরআনের আয়াত বানাতেন [1]। একইসাথে, মুহাম্মদের আমলে ইহুদি খ্রিস্টানগণ হিব্রুভাষায় তাদের গ্রন্থ মানুষকে পড়ে শোনাতেন এবং আরবিতে অনুবাদও করে শোনাতেন। মুহাম্মদ তার অনুসারীদের বারবার নিষেধ করতেন তাদের কাছে কিছু জিজ্ঞেস না করতে। সেইসাথে, কোরআনেই এই বিষয়ে পরিষ্কার আয়াত রয়েছে, যা পড়লে বোঝা যায় যে, সেই সময়ের পৌত্তলিক কুরাইশ এবং অন্যান্যরাও মুহাম্মদের এই আয়াতগুলো নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতো [2] [3] [4] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫০/ আম্বিয়া কিরাম (আঃ)
পরিচ্ছেদঃ ২০৭৫. ইসলাম আগমনের পর নবুয়্যতের নিদর্শনসমূহ
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৩৩৫৯, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩৬১৭
৩৩৫৯। আবূ মামার (রহঃ) … আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক খৃস্টান ব্যাক্তি মুসলিম হল এবং সুরা বাকারা ও সুরা আলে ইমরান শিখে নিল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য সে অহী লিপিবদ্ধ করত। তারপর সে পুনরায় খৃস্টান হয়ে গেল। সে বলতে লাগল, আমি মুহাম্মদ কে যা লিখে দিতাম তার চেয়ে অধিক কিছু তিনি জানেন না। (নাউযুবিল্লাহ) কিছুদিন পর আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু দিলেন। খৃস্টানরা তাকে যথারীতি দাফন করল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাকে বাইরে নিক্ষেপ করে দিয়েছে। তা দেখে খৃস্টানরা বলতে লাগল – এটা মুহাম্মদসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের কাজ।
যেহেতু আমাদের এ সাথী তাদের থেকে পালিয়ে এসেছিল। এ জন্যই তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। তাই যতদুর সম্ভব গভীর করে কবর খুঁড়ে তাতে তাকে দাফন করা হল। কিন্তু পরদিন সকালে দেখা গেল, কবরের মাটি তাঁকে (গ্রহণ না করে) আবার বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবারও তারা বলল, এটা মুহাম্মদ ও তাঁর সাহাবীদের কাণ্ড। তাদের নিকট থেকে পালিয়ে আসার কারণে তারা আমাদের সাথীকে কবর থেকে উঠিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছে। এবার আরো গভীর করে কবর খনন করে সমাহিত করল। পরদিন ভোরে দেখা গেল কবরের মাটি এবারও তাঁকে বাইরে নিক্ষেপ করেছে। তখন তারাও বুঝতে পারল, এটা মানুষের কাজ নয়। কাজেই তারা শবদেহটি বাইরেই ফেলে রাখল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
তারা বলে- ‘এগুলো পূর্ব যুগের কাহিনী যা সে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)] লিখিয়ে নিয়েছে আর এগুলোই তার কাছে সকাল-সন্ধ্যা শোনানো হয়।’
— Taisirul Quran
এবং তারা বলেঃ এগুলিতো সেকালের উপকথা যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলি সকাল-সন্ধ্যায় তার নিকট পাঠ করা হয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
তারা বলে, ‘এটি প্রাচীনকালের উপকথা যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যায় তার কাছে পাঠ করা হয়।
— Rawai Al-bayan
তারা আরও বলে, ‘এগুলো তো সে কালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; তারপর এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে পাঠ করা হয়।’
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
And they say, “Legends of the former peoples which he has written down, and they are dictated to him morning and afternoon.”
— Saheeh International
এভাবেই আমি নিদর্শনগুলোকে বার বার নানাভাবে বর্ননা করি। যার ফলে তারা (অর্থাৎ অবিশ্বাসীরা) বলে, তুমি (এসব কথা অন্যের কাছ থেকে) শিখে নিয়েছ, বস্তুত আমি জ্ঞানী লোকদের জন্য তা সুস্পষ্টভাবে বিবৃত করি।
— Taisirul Quran
এ রূপেই আমি নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করি, যেন লোকেরা না বলে – তুমি কারও নিকট থেকে পাঠ করে নিয়েছ, আর যেন আমি একে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য প্রকাশ করে দিই।
— Sheikh Mujibur Rahman
আর এভাবেই আমি নানাভাবে আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি এবং যাতে তারা বলে, তুমি পাঠ করেছ এবং আমি যাতে বর্ণনা করি, এ কুরআন এমন কওমের জন্য যারা জানে।
— Rawai Al-bayan
আর এভাবেই আমরা নানাভাবে আয়াতসমূহ বিবৃত করি [১] এবং যাতে তারা বলে, ‘আপনি পড়ে নিয়েছেন [২]’, আর যাতে আমরা এটাকে [৩] সুস্পষ্টভাবে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য বর্ণনা করি [৪]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
And thus do We diversify the verses so they [i.e., the disbelievers] will say, “You have studied,”1 and so We may make it [i.e., the Qur’ān] clear for a people who know.
— Saheeh International
আমি জানি, তারা বলে, ‘এক মানুষ তাকে [অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সা.)-কে] শিখিয়ে দেয়।’ অথচ দুষ্টবুদ্ধি প্রণোদিত হয়ে তারা যে লোকটির কথা বলছে তার ভাষা তো অনারব, অপরপক্ষে কুরআনের ভাষা হল স্পষ্ট আরবী।
— Taisirul Quran
আমিতো জানিই তারা বলেঃ তাকে শিক্ষা দেয় জনৈক ব্যক্তি। তারা যার প্রতি এটা আরোপ করে তার ভাষাতো আরাবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরাবী ভাষা
— Sheikh Mujibur Rahman
আর আমি অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো শিক্ষা দেয় একজন মানুষ, যার দিকে তারা ঈঙ্গিত করছে, তার ভাষা হচ্ছে অনারবী। অথচ এটা হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।
— Rawai Al-bayan
আর আমরা অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, ‘তাকে তো কেবল একজন মানুষ [১] শিক্ষা দেয়’। তারা যার প্রতি এটাকে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য ঝুঁকছে তার ভাষা তো আরবী নয়; অথচ এটা- কুরআন- হচ্ছে সুস্পষ্ট আরবী ভাষা।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৫/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন
পরিচ্ছেদঃ ৩০৯৯. রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বাণীঃ আহলে কিতাবদের কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করো না। আবুল ইয়ামান (রহঃ) বলেন, শুয়াইব (রহঃ), ইমাম যুহরী (রহঃ) হুমায়দ ইবন আবদুর রহমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মু’আবিয়া (রাঃ) কে মদীনায় বসবাসরত কুরায়শ বংশীয় কতিপয় লোককে আলাপ-আলোচনা করতে শুনেছেন। তখন কা’ব আহযাবের কথা এসে যায়। মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন, যারা পূর্ববর্তী কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি অধিকতর সত্যবাদী, যদিও বর্ণিত বিষয়সমূহ ভিত্তিহীন
৬৮৫৯। মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আহলে কিতাব হিব্রু ভাষায় তাওরাত পাঠ করে মুসলিমদের সামনে তা আরবী ভাষায় ব্যাখ্যা করত। (এই প্রেক্ষিতে) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আহলে কিতাবকে তোমরা সত্যবাদী মনে করো না এবং তাদেরকে মিথ্যাবাদীও ভেবো না। তোমরা বলে দাও, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি এবং আমাদের প্রতি যা অবতীর্ন হয়েছে এর প্রতি …. শেষ পর্যন্ত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৮৫/ কুরআন ও সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারন
পরিচ্ছেদঃ ৩০৯৯. রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর বাণীঃ আহলে কিতাবদের কাছে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করো না। আবুল ইয়ামান (রহঃ) বলেন, শুয়াইব (রহঃ), ইমাম যুহরী (রহঃ) হুমায়দ ইবন আবদুর রহমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি মু’আবিয়া (রাঃ) কে মদীনায় বসবাসরত কুরায়শ বংশীয় কতিপয় লোককে আলাপ-আলোচনা করতে শুনেছেন। তখন কা’ব আহযাবের কথা এসে যায়। মু’আবিয়া (রাঃ) বললেন, যারা পূর্ববর্তী কিতাব সম্পর্কে আলোচনা করেন, তাদের মধ্যে তিনি অধিকতর সত্যবাদী, যদিও বর্ণিত বিষয়সমূহ ভিত্তিহীন
৬৮৬০। মূসা ইবনু ইসমাঈল (রহঃ) … উবায়দুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, তোমরা কিভাবে আহলে কিতাবদেরকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা কর? অথচ তোমাদের কিতাব (আল-কুরআন) তাঁর রাসূলের উপর সদ্য নাযিল হয়েছে, তা তোমরা পড়ছ। যা পূত-পবিত্র ও নির্ভেজাল। এই কিতাব তোমাদেরকে বলে দিচ্ছে, আহলে কিতাবগণ আল্লাহর কিতাবকে পরিবর্তন ও বিকৃত করে দিয়েছে। তারা স্বহস্তে কিতাব লিখে তা আল্লাহর কিতাব বলে ঘোষণা দিয়েছে, যাতে তার দ্বারা সামান্য সুবিধা লাভ করতে পারে। তোমাদের কাছে যে (কিতাব ও সুন্নাহর) ইল্ম রয়েছে তা কি তোমাদেরকে তাদের কাছে কোন মাসআলা জিজ্ঞাসা করতে নিষেধ করছে না? আল্লাহর কসম! আমরা তো তাদের কাউকে দেখিনি কখনো তোমাদের উপর অবতীর্ণ কিতাবের বিষয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করতে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উবাইদুল্লাহ ইবনু আবদুল্লাহ ইবন ‘উতবাহ (রহঃ)
সীরাত গ্রন্থ থেকে এটিও জানা যায় যে, নবী মুহাম্মদ এক যুবক খ্রিস্টানের দোকানে বসে থাকতেন। যেই ক্রীতদাসের সাথে নবীর সুসম্পর্ক ছিল। আরবের পৌত্তলিকদের দাবী ছিল, এই খ্রিস্টান যুবকের কাছ থেকে নবী ইহুদি খ্রিস্টানদের বিভিন্ন গল্পকাহিনী শুনতেন [5] –
তাফসীর গ্রন্থগুলো থেকে আসুন দেখে নিই, সেই সময়ের কাফেরদের বক্তব্যগুলো যা জেনে নেয়া প্রয়োজন। বলাবাহুল্য যে, মুসলিমরা কাফেরদের এই কথাগুলো বিশ্বাস করে না, তাই তাদের গ্রন্থেও এগুলো মিথ্যা কথা সেটিই লেখা থাকবে। যে যুক্তিগুলো মুসলিমদের পক্ষে যায়, মুসলিমদের গ্রন্থে সেগুলোই থাকবে। কাফেরদের যুক্তিগুলো নিশ্চয়ই মুসলিমরা তাদের গ্রন্থে লিখবে না [6] –
তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৩৫৯ [↑]
- সূরা ফুরকান, আয়াত ৫ [↑]
- সূরা আনআম, আয়াত ১০৫ [↑]
- সূরা নাহল, আয়াত ১০৩ [↑]
- সীরাতে রাসুলাল্লাহ , ইবনে ইসহাক, অনুবাদঃ শহীদ আখন্দ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, পৃষ্ঠা ২১৪ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫২৯-৫৩০ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"