14.মুরতাদ ওহী লেখক আবদুল্লাহ ইবনে সাদ

প্রথমেই বলে নেয়া দরকার, মক্কা বিজয়ের সময় হযরত মুহাম্মদ উসমানের দুধভাই প্রখ্যাত ওহী লেখক আবু ইয়াহইয়া আবদুল্লাহ ইবন সাদ ইবন সারাহ আল আমিরি আল কুরাইশীকে হত্যার নির্দেশ দেন। তিনি আগে মুসলিম ছিলেন, পরে ইসলাম ত্যাগ করে মক্কায় পালিয়ে আসেন। তাকে নিয়ে মুহাম্মদের খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছিল। কারণ সেই সময় উসমান সুপারিশ করেন যে, তাকে যেন ক্ষমা করা হয়। মুহাম্মদ না পারছিলেন তাকে হত্যা করতে, না পারছিলেন জীবিত রাখতে। এক অস্বস্তিকর উভয় সঙ্কট উপস্থিত হয়েছিল। মনে মনে চাচ্ছিলেন, কেউ তাকে হত্যা করুক, কিন্তু চক্ষুলজ্জার খাতিরে তা করতেও পারছিলেন না। এর পরিষ্কার বিবরণ পাওয়া যায় আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া গ্রন্থে [1]

কিন্তু কী এমন ঘটেছিল, কে ছিল এই লোক? যাকে মুহাম্মদ এত তীব্রভাবে ঘৃণা করতো যে, তাকে হত্যার হুকুম দিয়েছিল এবং উসমানের সুপারিশের পরেও মনে মনে তাকে হত্যা করতে চেয়েছিল? এর বিবরণ পাওয়া যায় তাফসীরে মাযহারীতে [2]

1
3

সহিহ হাদিস থেকেও জানা যায়, মুহাম্মদের মক্কা বিজয়ের পরে সে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য হয়, কিন্তু মুহাম্মদ তাকে হত্যার ইচ্ছাই করেছিলেন [3]

সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৯/ জিহাদ
পরিচ্ছেদঃ ২১. ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার আগে, কোন বিধর্মী বন্দীকে হত্যা করা।
২৬৭৪. ’উসমান ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) …. সা’দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চারজন ও দুইজন মহিলা ব্যতীত অন্যান্য সকলকে নিরাপত্তা প্রদান করেন এবং তিনি তাদের নামও ঘোষণা করেন। আর ইবন আবূ সারাহ্ এরপর হাদীস বর্ণিত হয়েছে। রাবী সা’দ বলেনঃ ইবন রাবী সারাহ্ ’উছমান (রাঃ) এর নিকট আত্মগোপন করে থাকেন। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন বায়াত গ্রহণের জন্য সকলকে আহ্বান জানান, তখন উছমান (রাঃ) তাকে সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং তাকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সামনে দাঁড় করে দেন এবং বলেনঃ হে আল্লাহর নবী! আপনি ’আবদুল্লাহকে বায়াত করান। তিনি তাঁর মাথা উঠান এবং তিনবার তার দিকে তাকান এবং প্রত্যক বারই বায়াত করাতে অস্বীকার করেন।
তৃতীয় বারের পর তিনি তাকে বায়াত করান, পরে তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বলেনঃ তোমাদের মাঝে এমন কোন চালাক লোক কি ছিল না, যখন সে আমাকে দেখল যে, আমি তাকে বায়াত করাচ্ছি না, তখন কেন সে তাকে হত্যা করল না? তাঁরা (সাহাবীরা) বললেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমরা তো আপনার অন্তরের কথা বুঝতে পারিনি। আপনি (এ ব্যাপারে) চোখ দিয়ে কেন আমাদেরকে ইশারা করলেন না? তিনি বললেনঃ কোন নবীর জন্য এ উচিত নয় যে, সে চোরা দৃষ্টিতে তাকাবে।
আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেনঃ
আবদুল্লাহ্ ছিলেন ’উছমান (রাঃ) এর দুধ ভাই এবং ওয়ালীদ ইবন ’উকবা ছিলেন ’উছমান (রাঃ) এর বৈমাত্রেয় ভাই। উছমান (রাঃ) তাঁর শাসনামলে মদ্যপানের অভিযোগে তাকে শাস্তি দেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)

আসুন কোরআনের সেই আয়াতটি পড়ে নিই, পড়ে দেখুন আয়াতটির বাক্যের গঠনের সমস্যা [4]

Then We made the sperm-drop into a clinging clot, and We made the clot into a lump [of flesh], and We made [from] the lump, bones, and We covered the bones with flesh; then We developed him into another creation. So blessed is Allāh, the best of creators.
— Saheeh International
পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি জমাট বাঁধা রক্তে, অতঃপর মাংসপিন্ডকে পরিণত করি হাড্ডিতে, অতঃপর হাড্ডিকে আবৃত করি মাংস দিয়ে, অতঃপর তাকে এক নতুন সৃষ্টিতে উন্নীত করিকাজেই সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কতই না মহান!
— Taisirul Quran
পরে আমি শুক্রবিন্দুকে পরিণত করি রক্তপিন্ডে, অতঃপর রক্তপিন্ডকে পরিণত করি মাংসপিন্ডে এবং মাংসপিন্ডকে পরিণত করি অস্থিপঞ্জরে; অতঃপর অস্থিপঞ্জরকে ঢেকে দিই মাংস দ্বারা; অবশেষে ওকে গড়ে তুলি অন্য এক সৃষ্টি রূপে; অতএব নিপুণতম স্রষ্টা আল্লাহ কত কল্যাণময়!
— Sheikh Mujibur Rahman
তারপর শুক্রকে আমি ‘আলাকায় পরিণত করি। তারপর ‘আলাকাকে গোশতপিন্ডে পরিণত করি। তারপর গোশতপিন্ডকে হাড়ে পরিণত করি। তারপর হাড়কে গোশ্ত দিয়ে আবৃত করি। অতঃপর তাকে অন্য এক সৃষ্টিরূপে গড়ে তুলি অতএব সর্বোত্তম স্রষ্টা আল্লাহ কত বরকতময়!
— Rawai Al-bayan

তথ্যসূত্র

  1. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১১ []
  2. তাফসীরে মাযহারী, আল্লামা কাজী মুহাম্মদ ছানাউল্লাহ পানিপথী, হাকিমাবাদ খানকায়ে মোজাদ্দেদিয়া প্রকাশনী, চতুর্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬০-২৬১ []
  3. সুনান আবূ দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন), হাদিস নম্বরঃ ২৬৭৪ []
  4. কোরআন, সূরা আল-মুমিনুন | আয়াতঃ ১৪ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"