কোরআনে সর্বনাম এবং বাচ্যের আকস্মিক পরিবর্তন শুধু ভাষাগত অসঙ্গতি নয়, বরং ধর্মীয় বক্তব্যের স্পষ্টতা ও নির্ভুলতাকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, সূরা আন’আমের একটি আয়াতে বলা হয়েছে, “তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন,” যেখানে আল্লাহকে তৃতীয় পুরুষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এরপরের বাক্যে, “আমি এর দ্বারা উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি,” বলা হয়েছে, যা আল্লাহর নিজের বক্তব্য হিসেবে উপস্থাপিত। এখানে ‘তিনি’ থেকে ‘আমি’-তে পরিবর্তন ভাষার ধারাবাহিকতা নষ্ট করে, পাঠকের জন্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে আল্লাহর ভাষার ব্যাবহার ও ব্যাকরণ শিক্ষার অভাবকে পরিষ্কার করে।
একইভাবে, সূরা যারিয়াতের আয়াতে আল্লাহ প্রথমে ‘আমি’ বলে নিজের কথা বলছেন, কিন্তু পরবর্তী আয়াতে নবী মুহাম্মদ ‘আমি’ হিসেবে কথা বলছেন বলে মনে হয়। উদাহরণগুলো পরে আসছে, সেখানে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট হবে। এই ধরনের সর্বনাম ও বাচ্য পরিবর্তন ব্যাকরণগতভাবে বিভ্রান্তিকর এবং কোরআনের বক্তব্যের স্বচ্ছতা ও নির্ভুলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ধর্মীয় গ্রন্থের ক্ষেত্রে, যেখানে প্রতিটি শব্দের তাৎপর্য অপরিসীম, এ ধরনের ভুল বার্তা ধর্মীয় নির্দেশনার নির্ভুলতা ও আধ্যাত্মিকতার দাবিকে ক্ষুণ্ণ করে। উদাহরণস্বরূপ, ধরুন একটি গল্প বলি,
আমি শুক্রবার সকাল সকাল একা একা বাজারে গেলাম। অনেকক্ষণ বাজার ঘুরে এরপর তিনি একটি বড় রুই মাছ কিনলাম, এরপরে আমি শাকসবজির দোকানের দিকে এগুলেন। কিন্তু সেখানে তিনি শাকসবজি কিনলেন না, কারণ শাকসবজি আমি একদমই পছন্দ করি না। এরপরে সে হাঁটতে লাগলাম। কিছু দূর গিয়ে তিনি বাসার উদ্দেশ্যে একটি রিকশা নিলেন, এবং আমি রিকশায় উঠে বসলাম। এরপরে বাসার গেইটের কাছে পৌঁছে তিনি রিকশা থেকে নামার সময় আমার পকেট থেকে রিকশা ভাড়া দিয়ে দিলেন।
উপরের উদাহরণটি লক্ষ্য করুন। এখানে তিনি কে, আর আমি কে? তিনি আর আমির মধ্যে মারাত্মক গণ্ডগোলের কারণে একে তো ব্যাকরণগত ত্রুটি দেখা যাচ্ছে, তার ওপর অর্থের বোধগম্যতা নষ্ট হচ্ছে। তিনি এবং আমি, এই দুইজন কোন অবস্থাতেই একজন হতে পারে না। কেউ যদি বলেন, এখানে একজনকেই বোঝানো হচ্ছে, আসলে বাজারে একজনই গিয়েছিলেন, তাহলে বুঝতে হবে, তার ব্যাকরণ একদমই যাচ্ছেতাই। হয়তো জীবনে কোনদিন স্কুলে পড়ার সুযোগটি তার হয়নি। সর্বনামের এই ধরনের ব্যাকরণগত ভুল বা অসঙ্গতি বিশেষ করে কোরআনের মতো একটি ধর্মীয় গ্রন্থে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি পাঠকের কাছে ঐশ্বরিক গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, যখন বলা হয়, “আমি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছি,” এবং পরের আয়াতে বলা হয়, “তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান,” তখন এটি স্পষ্ট নয় যে, এখানে আল্লাহর ক্ষমতা সম্পর্কে কথা বলা হচ্ছে, নাকি আল্লাহ এবং নবী মুহাম্মদের ভূমিকা পৃথক করে তুলে ধরা হচ্ছে। এই ধরনের ভাষাগত বিভ্রান্তি বিশ্বাসীদের জন্য চরম সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, কারণ এর ফলে ধর্মীয় বাণীর অর্থ এবং কোরআনের সারমর্ম নিয়ে মারাত্মক ভুল বোঝাবুঝির ঝুঁকি থেকে যায়।
আসুন দেখে নেয়া যাক, উপরের বক্তব্যটি সঠিকভাবে লিখলে কেমন হতো। সঠিকভাবে লিখতে হলে, এভাবে লিখতে হবে,
আমি শুক্রবার সকাল সকাল একা একা বাজারে গেলাম। অনেকক্ষণ বাজার ঘুরে এরপর আমি একটি বড় রুই মাছ কিনলাম, এরপরে আমি শাকসবজির দোকানের দিকে এগুলাম। কিন্তু সেখানে আমি শাকসবজি কিনলাম না, কারণ শাকসবজি আমি একদমই পছন্দ করি না। এরপরে আমি হাঁটতে লাগলাম। কিছু দূর গিয়ে আমি বাসার উদ্দেশ্যে একটি রিকশা নিলাম, এবং আমি রিকশায় উঠে বসলাম। এরপরে বাসার গেইটের কাছে পৌঁছে আমি রিকশা থেকে নামার সময় আমার পকেট থেকে রিকশা ভাড়া দিয়ে দিলাম।
অথবা এভাবে লিখতে হবে,
তিনি শুক্রবার সকাল সকাল একা একা বাজারে গেলেন। অনেকক্ষণ বাজার ঘুরে এরপর তিনি একটি বড় রুই মাছ কিনলেন, এরপরে তিনি শাকসবজির দোকানের দিকে এগুলেন। কিন্তু সেখানে তিনি শাকসবজি কিনলেন না, কারণ শাকসবজি তিনি একদমই পছন্দ করেন না। এরপরে তিনি হাঁটতে লাগলেন। কিছু দূর গিয়ে তিনি বাসার উদ্দেশ্যে একটি রিকশা নিলেন, এবং তিনি রিকশায় উঠে বসলেন। এরপরে বাসার গেইটের কাছে পৌঁছে তিনি রিকশা থেকে নামার সময় তার পকেট থেকে রিকশা ভাড়া দিয়ে দিলেন।
ইসলাম ধর্মের পবিত্র গ্রন্থ কোরআনে এরকম অনেকগুলো ত্রুটি রয়েছে। এর একটি বাস্তব উদাহরণ আমরা দেখতে পাই যারিয়াত সূরার ৪৯ থেকে ৫১ আয়াতগুলোতে, যেখানে আল্লাহ প্রথমে নিজের সৃষ্টির কথা ‘আমি’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং হঠাৎ করেই ‘আমি’ শব্দটি নবী মুহাম্মদকে নির্দেশ করছে বলে প্রতীয়মান হয়। যদি এটি নবীর কথা হয়, তবে কোরআনের দাবীকৃত সরাসরি আল্লাহর বাণী হওয়ার অবস্থানটি ক্ষুণ্ণ হয়। এই ধরনের অসঙ্গতি পাঠকের মনে কোরআনের বক্তব্যের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং এর নির্ভুলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে এবং বিশেষত সেইসব মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে যারা ভাষার সূক্ষ্মতা এবং নির্ভুলতার প্রতি বিশেষভাবে মনোযোগী। এই গ্রন্থটি যদি কোন আরব দেশের কোন এক অশিক্ষিত মূর্খ মানুষের লিখিত বলে দাবী করা হতো, তাহলে আমরা কেউই এত সূক্ষ্মভাবে আয়াতগুলো পর্যালোচনা করতাম না। কিন্তু মুসলিমদের দাবী হচ্ছে, এটি মহাবিশ্বের স্রস্টার প্রেরিত বানী, তাই একটু গভীর বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয়।
সব মিলিয়ে, সর্বনাম এবং বাচ্যগত অসঙ্গতি কোরআনের ভাষার উপর কেবল ব্যাকরণগত দুর্বলতা নয়, এটি এর বক্তব্যের সারমর্ম, ধর্মীয় নির্দেশনা এবং ঐশ্বরিকতার অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এ ধরনের অসঙ্গতি কেবল ভাষাগত না থেকে অর্থগত, বিশ্বাসগত, এবং আধ্যাত্মিক সংশয় ও বিভ্রান্তির জন্ম দেয়, যা ধর্মীয় গ্রন্থের পবিত্রতা এবং নির্ভুলতার দাবি ও গ্রহণযোগ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে। এবারে আসুন, নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুন [1],
তিনিই আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন অতঃপর আমি এর দ্বারা সর্বপ্রকার উদ্ভিদ উৎপন্ন করেছি, অতঃপর আমি এ থেকে সবুজ ফসল নির্গত করেছি, যা থেকে যুগ্ম বীজ উৎপন্ন করি। খেজুরের কাঁদি থেকে গুচ্ছ বের করি, যা নুয়ে থাকে এবং আঙ্গুরের বাগান, যয়তুন, আনার পরস্পর সাদৃশ্যযুক্ত এবং সাদৃশ্যহীন। বিভিন্ন গাছের ফলের প্রতি লক্ষ্য কর যখন সেগুলো ফলন্ত হয় এবং তার পরিপক্কতার প্রতি লক্ষ্য কর। নিশ্চয় এ গুলোতে নিদর্শন রয়েছে ঈমানদারদের জন্যে।
কোরআনের ৫১ নম্বর সূরাটি হচ্ছে সূরা যারিয়াত। এই সূরাটির ৪৬ থেকে শুরু করে ৫১ নম্বর আয়াত আসুন পড়ে দেখা যাক, [2] –
৪৬। আর ইতঃপূর্বে নূহের কওমকেও (আমি ধ্বংস করে দিয়েছিলাম)। নিশ্চয় তারা ছিল ফাসিক কওম।
৪৭। আর আমি হাতসমূহ দ্বারা আকাশ নির্মাণ করেছি এবং নিশ্চয় আমি শক্তিশালী।
৪৮। আর আমি যমীনকে বিছিয়ে দিয়েছি। আমি কতইনা সুন্দর বিছানা প্রস্তুতকারী!
৪৯। আর প্রত্যেক বস্তু থেকে আমি জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি। আশা করা যায়, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে।
৫০। অতএব তোমরা আল্লাহর দিকে ধাবিত হও। আমি তো তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
৫১। আর তোমরা আল্লাহর সাথে কোন ইলাহ নির্ধারণ করো না; আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য এক স্পষ্ট সতর্ককারী।
প্রশ্ন হচ্ছে, ৪৯ নম্বর আয়াত পর্যন্ত আমি বলতে যদি আল্লাহকে বোঝানো হয়, তাহলে ৫০ এবং ৫১ নম্বর আয়াতে এই আমিটি আসলে কে? একই সূরার এক আয়াতে আমি বলতে যদি আল্লাহকে বোঝানো হয়, অর্থাৎ আয়াতটি সরাসরি আল্লাহর বাণী হয়ে থাকে, পরের আয়াতে আমি বলতে নবীর কথা বোঝানো হচ্ছে কেন? এবারে আসুন সূরা ইসরার প্রথম আয়াতটি পড়ি, [3] [4]
পবিত্র ও মহীয়ান তিনি যিনি তাঁর বান্দাহকে রাতের বেলা ভ্রমণ করিয়েছেন মাসজিদুল হারাম থেকে মাসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশকে আমি কল্যাণময় করেছি। তাকে আমার নিদর্শনাবলী দেখানোর জন্য, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
— Taisirul Quran
পবিত্র ও মহিমাময় তিনি যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ভ্রমণ করিয়েছিলেন মাসজিদুল হারাম হতে মাসজিদুল আকসায়, যার পরিবেশ আমি করেছিলাম বারাকাতময়, তাকে আমার নিদর্শন দেখানোর জন্য; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।
— Sheikh Mujibur Rahman
পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা* পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা। * ফিলিস্তীনে অবস্থিত বাইতুল মাকদিস, যা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল।
— Rawai Al-bayan
পবিত্র মহিমাময় তিনি [১], যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে ত্ৰমণ করালেন [২], আল-মসজিদুল হারাম [৩] থেকে আল-মসজিদুল আকসা পর্যন্ত [৪], যার আশপাশে আমরা দিয়েছি বরকত, যেন আমরা তাকে আমাদের নিদর্শন দেখাতে পারি [৫]; তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা [৬]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria

আসুন আরো একটি সূরার দুইটি আয়াত পড়ে দেখি [5] –
১
আলিফ, লাম, রা; এটা এমন একটা গ্রন্থ, এর আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর সবিস্তারে ব্যাখ্যাকৃত মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞের নিকট হতে।
— Taisirul Quran
আলিফ লাম রা। এটি (কুরআন) এমন কিতাব যার আয়াতগুলি (প্রমাণাদী দ্বারা) মাযবূত করা হয়েছে। অতঃপর বিশদভাবে বর্ণনা করা হয়েছে; প্রজ্ঞাময়ের (আল্লাহর) পক্ষ হতে।
— Sheikh Mujibur Rahman
আলিফ-লাম-রা। এটি কিতাব যার আয়াতসমূহ সুস্থিত করা হয়েছে, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্ত্বার পক্ষ থেকে।
— Rawai Al-bayan
আলিফ–লাম-রা, এ কিতাব, যার আয়াতসমূহ সুস্পষ্ট [১], সুবিন্যস্ত ও পরে বিশদভাবে বিবৃত [২] প্রজ্ঞাময়, সবিশেষ অবহিত সত্তার কাছ থেকে [৩];
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
২
(এটা শিক্ষা দেয়) যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ‘ইবাদাত করবে না, আমি অবশ্যই তাঁর পক্ষ হতে তোমাদের জন্য ভয় প্রদর্শনকারী ও সুসংবাদদাতা।
— Taisirul Quran
এ (উদ্দেশে) যে, আল্লাহ ছাড়া কারও ইবাদাত করনা; আমি (নাবী) তাঁর (আল্লাহর) পক্ষ হতে তোমাদেরকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
— Sheikh Mujibur Rahman
(এ মর্মে) যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত করো না। নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য তাঁর পক্ষ থেকে সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা।
— Rawai Al-bayan
যে, তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যের ইবাদাত করো না [১], নিশ্চয় আমি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সতর্ককারী ও সুসংবাদদাতা [২]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তাহলে, এই সূরাগুলোর এইসব বক্তব্য কী আল্লাহ নিজ মুখে বলেছেন? নাকি আল্লাহ বলেছেন একভাবে, জিব্রাইল বলেছে আরেকভাবে, আর মুহাম্মদ লিখেছে আরেকভাবে? মানে, ব্যক্তিভেদে বক্তব্যের কী পরিবর্তিত হয়েছে? সরাসরি আল্লাহর বানী হলে তো অন্যরকম হওয়া উচিত ছিল। যেমন ধরুন, সূরা কাউসার এর আয়াতগুলো পড়ি [6] –
আমি তোমাকে (হাওযে) কাওসার দান করেছি।
— Taisirul Quran
আমি অবশ্যই তোমাকে কাওছার দান করেছি,
— Sheikh Mujibur Rahman
নিশ্চয় আমি তোমাকে আল-কাউসার দান করেছি।
— Rawai Al-bayan
নিশ্চয় আমরা আপনাকে কাউছার [১] দান করেছি।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
সূরা ফাতিহা নিয়ে আলোচনার সময় মুমিন ভাইদের বক্তব্য থাকে, সূরা ফাতিহা নাজিল হয়েছে এমনভাবে যেন বান্দারা তা পড়তে পারে। এটি যদি আল্লাহ পাকের বক্তব্য হিসেবে নাজিল হতো, তাহলে কেউ এই সূরাটি নামাজের সাথে পড়তে পারতো না। মুসুল্লিদের পড়ার সুবিধার্থেই সূরাটি এমনভাবে নাজিল হয়েছে। কারণ এভাবে না নাজিল হলে বান্দারা সূরাটি পড়ার সময় সেটি কোন সেন্স মেইক করতো না। কিন্তু একই কথা কী সূরা আল কাউসারের জন্য প্রযোজ্য নয়? এই সূরাটি যখন মুসুল্লিরা নামাজের মাঝে পড়েন, তারা আরবি ভাষাতে বলেন, নিশ্চয়ই আমি (মানে যিনি সূরাটি পড়ছেন তিনি) মুহাম্মদকে আল কাউসার দান করেছি। এর অর্থ হয়, মুসুল্লিরা মুহাম্মদকে কিছু একটা দিচ্ছেন। এই কথাটি কোন অর্থ বহন করে?
এবারে আসুন আরেকটি আয়াত পড়ি। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ নিজেই নিজের কসম কেটে কিছু কথা বলছেন। এটি কেমন কথা যে, আল্লাহ নিজেই নিজের কসম দিচ্ছে! নাকি সত্য কথাটি হচ্ছে, এই আয়াতগুলো লেখার সময় তালগোল পাকিয়ে লেখা হয়েছে, যার কারণে কোন কথাটি মুহাম্মদের, কোন কথাটি জিবরাইলের আর কোন কথাটি আল্লাহর সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি? [7]
আল্লাহর কসম! তোমার পূর্বে আমি বহু জাতির কাছে রসূল পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু শয়ত্বান তাদের কাছে তাদের কার্যকলাপকে শোভনীয় করে দিয়েছিল, আর আজ সে-ই তাদের অভিভাবক, তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ শাস্তি।
— Taisirul Quran
শপথ আল্লাহর! আমি তোমার পূর্বেও বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি; কিন্তু শাইতান ঐ সব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; সুতরাং সে’ই আজ তাদের অভিভাবক এবং তাদেরই জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
— Sheikh Mujibur Rahman
আল্লাহর শপথ, আমি তোমার পূর্বে বহু জাতির নিকট রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর শয়তান তাদের জন্য তাদের কর্মকে শোভিত করেছে। তাই আজ সে তাদের অভিভাবক। আর তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক আযাব।
— Rawai Al-bayan
শপথ আল্লাহ্র! আমরা আপনার আগেও বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি; কিন্তু শয়তান ঐসব জাতির কার্যকলাপ তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল; কাজেই সে –ই আজ [১] তাদের অভিভাকক আর তাদেরই জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
তথ্যসূত্র
- কোরআন ৬ঃ৯৯ [↑]
- সূরা যারিয়াত, আয়াত ৪৬- ৫১ [↑]
- সূরা ইসরা, আয়াত ১ [↑]
- আল কুরআনুল কারীম, সরল অর্থানুবাদ, আল-বায়ান ফাউন্ডেশন বাাংলাদেশ, পৃষ্ঠা ৫৫৮ [↑]
- কোরআন, সূরা হুদ, আয়াত ১, ২ [↑]
- কোরআন, সূরা আল কাউসার, আয়াত ১ [↑]
- কোরআন, ১৬ঃ৬৩ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"