ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হযরত উমর বেশ কয়েকবার কোরআন এবং নবীকে অমান্য করে কুফরি কর্ম করেছিল। সেই কুফরি কর্মগুলোর তালিকা এখানে একত্রিত করা হচ্ছে। কিন্তু তার আগে জেনে নেয়া প্রয়োজন, ইসলামের বিশ্বাস হচ্ছে, নবীর সাহাবীদের সম্পর্কে কোন সমালোচনা করা যাবে না। অর্থাৎ নবীর সাথে সাথে নবীর সাহাবীদের সমালোচনা নিষিদ্ধ। কিন্তু সমালোচনা নিষিদ্ধ হলে, সত্য জানার পথ তো বন্ধ হয়ে যায়। আর ইসলামের বিশ্বাস যদি এমনই হয়, তাহলে তো সাহাবীদের হাজারো দোষ প্রমাণ হলেও একজন মুসলিম ঈমান হারাবার ভয়ে সেগুলো মানতে চাইবে না। নানা ধরণের অযৌক্তিক কথা বলে অন্ধভাবেই বিশ্বাস করবে যে, এগুলো সত্য নয়। কী অদ্ভুত কথা। আসুন শুরুতেই একটি বক্তব্য শুনে নিই,
ইতিহাসকে নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করা যেকোন সত্যান্বেষী মানুষের কর্তব্য হওয়া উচিত। কিন্তু নিরপেক্ষ হওয়ার পথে যদি ইমান এসে বাধা দেয়, তাহলে তো বিপদ। আসুন পর্যালোচনা করে দেখা যাক, হযরত উমর তার জীবদ্দশায় কী কী কুফরি কর্ম করেছিল।
কোরআন অমান্য করে স্ত্রী সহবাস
প্রাথমিক অবস্থায় রোজার সময় ঈশার নামাজের পরে খানাপিনা এবং স্ত্রীর সহবাস হারাম ছিল। আল্লাহ পাকের বিধান সেই সময়ে ছিল এমন যে, ঈশার নামাজের পরে সারারাত আর কেউ এই কাজগুলো করতে পারবে না। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেল, নবী মুহাম্মদের সাহাবীগণের মধ্যে অনেকেই আল্লাহর এই বিধানের বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে ঈশার পরেও স্ত্রী সহবাস চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজে অগ্রবর্তী ছিল নবী মুহাম্মদের অন্যতম সাহাবী খোদ হযরত উমর। তিনি আল্লাহর বিধানকে পাত্তা না দিয়ে তার কাজ করছিলেন। পরবর্তীতে তারা সকলে মিলে এই নিয়ে তাদের আপত্তি নবীকে জানালেন। অর্থাৎ তারা বললেন, এই আয়াতটি তাদের মনোঃপুত হচ্ছে না! আল্লাহর এই বিধানটি পরিবর্তন করে দেয়া হোক! শেষমেশ অনেক সাহাবীই যখন আর আল্লাহর হুকুম মানতে চাচ্ছে না, ওজর আপত্তি জানাচ্ছে, বাধ্য হয়ে সর্বশক্তিমান এবং সর্বজ্ঞানী আল্লাহ পাক পূর্বের বিধানটি রহিত করে দিয়ে নতুন বিধান জারি করলেন যে, রমজান মাসে রাতের বেলা স্ত্রী সহবাস করা যাবে। বেচারা আল্লাহর আর কী বা করার ছিল? সাহাবীরা তো আল্লাহর হুকুম মানতেই চাইছে না! তাই বেচারা আল্লাহ তার আইনই বদলে দিলেন! আসুন কোরআনের সূরা বাকারার একটি আয়াত আগে পড়ি, [1] –
তোমাদের জন্য রমাযানের রাতে তোমাদের বিবিগণের নিকট গমন করা জায়িয করা হয়েছে, তারা তোমাদের আচ্ছাদন আর তোমরা তাদের আচ্ছাদন। আল্লাহ জানতেন যে, তোমরা নিজেদের সঙ্গে প্রতারণা করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করলেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিলেন। অতএব, এখন থেকে তোমরা তাদের সঙ্গে সহবাস করতে পার এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা কিছু বিধিবদ্ধ করেছেন তা লাভ কর এবং তোমরা আহার ও পান করতে থাক যে পর্যন্ত তোমাদের জন্য কালো রেখা হতে ঊষাকালের সাদা রেখা প্রকাশ না পায়। তৎপর রাতের আগমন পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর, আর মাসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সহবাস করো না। এসব আল্লাহর আইন, কাজেই এগুলোর নিকটবর্তী হয়ো না। আল্লাহ মানবজাতির জন্য নিজের আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা মুত্তাকী হতে পারে।
— Taisirul Quran
রামাযানের রাতে আপন স্ত্রীদের সাথে মেলামেশা করা তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে, তারা তোমাদের জন্য এবং তোমরা তাদের জন্য আবরণ, তোমরা যে নিজেদের ক্ষতি করছিলে আল্লাহ তা জ্ঞাত আছেন, এ জন্য তিনি তোমাদের প্রতি প্রত্যাবৃত্ত হলেন এবং তোমাদের (ভার) লাঘব করে দিলেন; অতএব এক্ষণে তোমরা (রামাযানের রাতেও) তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা অনুসন্ধান কর এবং প্রত্যুষে কালো সূতা হতে সাদা সূতা প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত তোমরা আহার ও পান কর, অতঃপর রাত সমাগম পর্যন্ত তোমরা সিয়াম পূর্ণ কর; তোমরা মাসজিদে ই‘তিকাফ করার সময় (তোমাদের স্ত্রীদের সাথে) মিলিত হবেনা; এটিই আল্লাহর সীমা। অতএব তোমরা উহার নিকটেও যাবেনা; এভাবে আল্লাহ মানবমন্ডলীর জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ বিবৃত করেন, যেন তারা সংযত হয়।
— Sheikh Mujibur Rahman
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব, এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। আর আহার কর ও পান কর যতক্ষণ না ফজরের সাদা রেখা কাল রেখা থেকে স্পষ্ট হয়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষের জন্য স্পষ্ট করেন যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করে।
— Rawai Al-bayan
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী-সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে [১]। তারা তোমাদের পোষাকস্বরূপ এবং তোমরাও তাদের পোষাকস্বরূপ। আল্লাহ্ জানেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত করছিলে। সুতরাং তিনি তোমাদের তওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন। কাজেই এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ্ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা কর। আর তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ রাতের কালোরেখা থেকে উষার সাদা রেখা স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রকাশ না হয় [২]। তারপর রাতের আগমন পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ কর। আর তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত [৩] অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহ্র সীমারেখা। কাজেই এগুলোর নিকটবতী হয়ো না [৪]। এভাবে আল্লাহ্ তাঁর আয়াতসমূহ মানুষদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তারা তাকওয়ার অধিকারী হতে পারে।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন এই আয়াতটির তাফসীর পড়ে দেখা যাক, [2] –

এবারে আসুন তাফসীরে মাযহারীতে কী বলা হয়েছে দেখে নিই, [3] –

এবারে আসুন তাফসীরে ইবনে কাসীর থেকে দেখে নেয়া যাক, উমর এবং অন্য সাহাবীদের স্ত্রী সহবাসের ইচ্ছার কাছে আল্লাহর অসহায় আত্মসমর্পণ [4]


নবীর নির্দেশ অমান্য করা
মৃত্যুর ঠিক আগে নবী মুহাম্মদ একটি কাগজ চেয়েছিলেন, কিছু জরুরি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য। কিন্তু হযরত উমরের নির্দেশে সেই সময়ে নবী মুহাম্মদের কাছে কাগজ কলম দেয়া হয় নি। ইসলামের প্রতিষ্ঠিত আকীদা অনুসারে নবী মুহাম্মদের নির্দেশ সর্বাবস্থায় অবশ্য পালনীয় হয়ে থাকলে, উমরের এমন ধৃষ্টতার মানে কী? এই নিয়ে সাহাবীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষও ছিল। রীতিমত ঝগড়া এবং মারামারির উপক্রমও হয়ে যাচ্ছিল। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে শেষবেলায় কী বলতে চেয়েছিল মুহাম্মদ? তা আর জানা যায় নি [5] [6] –
সহীহ বুখারী (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৩/ ইলম বা জ্ঞান
পরিচ্ছেদঃ ৮১। ইলম লিপিবদ্ধ করা
১১৫। ইয়াহইয়া ইবনু সুলায়মান (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যখন বেড়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমার কাছে কাগজ কলম নিয়ে এস, আমি তোমাদের এমন কিছু লিখে দিব যাতে পরবর্তীতে তোমরা ভ্রান্ত না হও। ‘উমর (রাঃ) বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রোগ যন্ত্রণা প্রবল হয়ে গেছে (এমতাবস্থায় কিছু বলতে বা লিখতে তাঁর কষ্ট হবে)। আর আমাদের কাছে তো আল্লাহর কিতাব রয়েছে, যা আমাদের জন্য যথেষ্ট। এতে সাহাবীগণের মধ্য মতবিরোধ দেখা দিল এবং শোরগোল বেড়ে গেল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা আমার কাছ থেকে উঠে যাও। আমার কাছে ঝগড়া-বিবাদ করা উচিত নয়। এ পর্যন্ত বর্ণনা করে ইবনু আব্বাস (রাঃ) (যেখানে বসে হাদীস বর্ণনা করছিলেন সেখান থেকে এ কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন যে, ‘হায় বিপদ, সাংঘাতিক বিপদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর লেখনীর মধ্যে যা বাধ সেধেছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে যে, সহিহ হাদিস অনুসারে মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও কিন্তু নবীর কাছে ওহী নাজিল হচ্ছিল। তাহলে মৃত্যুর আগে নাজিল হওয়া কোরআনের আয়াতগুলো কোথায়? নবী কী সেগুলোই লিখে যেতে চেয়েছিলেন? উমর তাহলে কেন শেষ মূহুর্তে নবীর লেখায় বাধা দিয়েছিলেন? সেই সময়ে ওহী নাজিল হয়ে থাকলে, কিংবা নবী মুহাম্মদের খুবই জরুরি কিছু বলার থাকলে, সেটি এখন আমরা কীভাবে জানবো?
সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৫৬। তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ পরিচ্ছেদ নাই
হাদিস একাডেমি নাম্বারঃ ৭৪১৪, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৩০১৬
৭৪১৪-(২/৩০১৬) আমর ইবনু মুহাম্মাদ ইবনু বুকায়র আন নাকিদ, হাসান ইবনু আলী আল হুলওয়ানী ও ’আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আনাস ইবনু মালিক (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইন্তিকালের পূর্বে ও ইন্তিকাল পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর ধারাবাহিকভাবে ওয়াহী অবতীর্ণ করেন। যেদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তিকাল করেন সেদিনও তার প্রতি অনেক ওয়াহী অবতীর্ণ হয়। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৭২৪৩, ইসলামিক সেন্টার ৭২৯৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আনাস ইবনু মালিক (রাঃ)
ইসলামের আকীদা হচ্ছে, অসুস্থ হোক কিংবা সুস্থ, সর্বাবস্থায় নবীর নির্দেশ পালন করা যেকোন মুসলিমের জন্য ফরজ। কোরআনে পরিষ্কারভাবেই বলা হয়েছে, মুহাম্মদকে অমান্য করা যাবে না [7] –
আল্লাহর বাণী পৌঁছানো ও তাঁর পায়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন; তাতে তারা চিরকাল থাকবে।
Taisirul Quran
কেবল আল্লাহর বাণী পৌঁছানো এবং তা প্রচার করাই আমার কাজ। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে।
Sheikh Mujibur Rahman
কেবল আল্লাহর বাণী ও তাঁর রিসালাত পৌঁছানোই দায়িত্ব। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে, তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন। তাতে তারা চিরস্থায়ী হবে।
Rawai Al-bayan
‘শুধু আল্লাহর পক্ষ থেকে পৌঁছানো এবং তাঁর রিসালতের বাণী প্রচারই আমার দায়িত্ব। আর যে-কেউ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে (১)।’
Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এই বিষয়টি ইসলামের অন্যতম মৌলিক ভিত্তি, মৌলিক নির্দেশনা যে, আল্লাহর সাথে নবীর আদেশকেও ঠিক আল্লাহর আদেশের মত করেই পালন করতে যেকোন মুসলমান বাধ্য হাদিসেও বিষয়টি পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে [8]
হাদীস সম্ভার
১৩/ সুন্নাহ
পরিচ্ছেদঃ সুন্নাহ পালনের গুরুত্ব ও তার কিছু আদব প্রসঙ্গে
(১৪৯৯) মিকদাম বিন মা’দিকারিব বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শোন! আমাকে কুরআন দান করা হয়েছে এবং তারই সাথে তারই মতো (সুন্নাহ) দান করা হয়েছে। শোন! সম্ভবতঃ নিজ গদিতে বসে থাকা কোন পরিতৃপ্ত লোক বলবে, ‘তোমরা এই কুরআনের অনুসরণ কর; তাতে যা হালাল পাও, তাই হালাল মনে কর এবং তাতে যা হারাম পাও, তাই হারাম মনে কর। সতর্ক হও! আল্লাহর রসূল যা হারাম করেন, তাও আল্লাহর হারাম করার মতোই।
(আবূ দাঊদ ৪৬০৬, ইবনে মাজাহ ১২, দারেমী ৫৮৬, মিশকাত ১৬৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ মিকদাম (রাঃ)
এবারে আসুন এই হাদিসের নিচের অংশে বর্ণিত নির্দেশনাটি পড়ে নিই [9] [10] –
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪/ মাগাযী [যুদ্ধ]
পরিচ্ছেদঃ ৬৪/৮৪. নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগ ও তাঁর ওফাত।
৪৪৫৮. ‘আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রোগাক্রান্ত অবস্থায় তাঁর মুখে ঔষধ ঢেলে দিলাম। তিনি ইশারায় আমাদেরকে তাঁর মুখে ঔষধ ঢালতে নিষেধ করলেন। আমরা বললাম, এটা ঔষধের প্রতি রোগীদের স্বাভাবিক বিরক্তিবোধ। যখন তিনি সুস্থবোধ করলেন তখন তিনি বললেন, আমি কি তোমাদের ওষুধ সেবন করাতে নিষেধ করিনি? আমরা বললাম, আমরা মনে করেছিলাম এটা ঔষধের প্রতি রোগীর সাধারণ বিরক্তিভাব। তখন তিনি বললেন, ‘আব্বাস ব্যতীত বাড়ির প্রত্যেকের মুখে ঔষধ ঢাল তা আমি দেখি।[1] কেননা সে তোমাদের মাঝে উপস্থিত নেই। এ হাদীস ইবনু আবূ যিনাদ ……. ‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। [৫৭১২, ৬৮৮৬, ৬৮৯৭; মুসলিম ৩৯/২৭, হাঃ ২২১৩, আহমাদ ২৪৩১৭] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪১০১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৪১০৪)
[1] প্রথমতঃ এখানে অতি সামান্য ব্যাপারেও কিয়াসের বৈধতা প্রমাণিত হয়। দ্বিতীয়তঃ নাবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্থ ও অসুস্থ সর্বাবস্থাতেই তার নির্দেশ পালনের অপরিহার্যতা সমভাবে প্রযোজ্য।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)

এবারে আসুন সহজ দরসে ইবনে মাজাহ গ্রন্থের একটি পাতা পড়ে নেয়া যাক, যা থেকে বোঝা যায়, নবী নিজে থেকে কিছুই বলেন না। আল্লাহই নবীকে দিয়ে আসলে বলায়। তাহলে, উমর কেন আল্লাহ তথা নবীর কথা শুনতে চাইছিলেন না? [11]

নবীর নির্দেশ বাতিল করে দেয়া
জনৈক ব্যক্তিকে নবী মুহাম্মদ একটি উপনাম দিয়েছিলেন। উপনামটি ছিল আবূ ঈসা। এই কারণে উমর তাকে পেটাচ্ছিলেন। তখন তিনি বললেন, এই উপনামটি তাকে খোদ নবী মুহাম্মদই দিয়েছে। এ কথা শোনার পরেও, নবীর নির্দেশের বিরুদ্ধে উমর নির্দেশ জাড়ি করেন এবং নামটি বদলে দেন
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৩৬/ শিষ্টাচার
পরিচ্ছেদঃ ৭২. আবূ ঈসা উপনাম রাখা
৪৯৬৩। যায়িদ ইবনু আসলাম (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। উমার (রাঃ) তার এক ছেলে আবূ ঈসা উপনাম করায় তাকে প্রহার করেন। মুগীরাহ ইবনু শু’বাহ (রাঃ)-এর উপনাম ছিলো আবূ ঈসা। উমার (রাঃ) তাকে বললেন, তোমার উপনাম পালটে আবূ আব্দুল্লাহ রাখলে কি যথেষ্ট নয়? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে এ উপনাম দিয়েছেন। উমার (রাঃ) বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পূর্বাপরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। আর আমরা তো উদ্বিগ্ন আছি। এরপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার পদবী আবূ আব্দুল্লাহ ছিলো।[1]
হাসান সহীহ।
[1]. বায়হাক্বী।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ যায়দ ইবনু আসলাম (রহঃ)
হাজরে আসওয়াদকে অবজ্ঞা করা
মুহাম্মদ সরাসরি হাজরে আসওয়াদ পাথরটির ফজিলত বর্ণনা করে বলেছেন যে, কিয়ামতের দিনে এই কালো পাথর মানুষের পক্ষে বা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। অর্থাৎ, এই কালো পাথরের কিছু না কিছু ক্ষমতা অবশ্যই আছে, এবং একে খুশি রাখার জন্য সত্যতার সাথে চুম্বন করাও জান্নাতে যাওয়ার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। যার থেকে প্রমাণ হয়, এই পাথরের উকালতিতে কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে। ধরুন, একজন ব্যক্তি মুসলিম হিসেবে সৎ ও ন্যায়পরায়ণ জীবনযাপন করেছেন, কিন্তু কখনো হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করেননি। অন্যদিকে, আরেকজন ব্যক্তি একইভাবে সততার সাথে জীবনযাপন করেছেন, কিন্তু তিনি হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করেছেন। কিয়ামতের ময়দানে এই দুইজনের মধ্যে হাজরে আসওয়াদ কার পক্ষে সাক্ষ্য দেবে? নিশ্চয়ই যে চুম্বন করেছে, তার পক্ষে, তাই না?
এক্ষেত্রে, সেই ব্যক্তি অতিরিক্ত সুবিধা পেল, যা প্রমাণ করে যে এই পাথরের নিজস্ব কিছু ক্ষমতা রয়েছে। তা না হলে, শুধুমাত্র চুম্বনের কারণে কেউ বিশেষ সুবিধা পাওয়ার কথা নয়। মূর্তি এবং পাথরের কোন ক্ষমতা নেই, এই দাবী করা মুহাম্মদের মুখে যখন এরকম স্ববিরোধী বক্তব্য শোনা যায়, তখন হাসবো না কাঁদবো বুঝে উঠতে পারি না।
সুনান ইবনু মাজাহ
১৯/ হজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ১৯/২৭. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা
২/২৯৪৪। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এই পাথরকে উপস্থিত করা হবে। তার দু‘টি চোখ থাকবে, তা দিয়ে সে দেখবে, যবান থাকবে তা দিয়ে সে কথা বলবে এবং সে এমন লোকের অনুকূলে সাক্ষ্য দিবে যে তাকে সত্যতার সাথে চুমা দিয়েছে।
তিরমিযী ৯৬১, আহমাদ ২২১৬, ২৩৯৪, ২৬৩৮, ২৭৯৩, ৩৫০১, দারেমী ১৮৩৯, মিশকাত ২৫৭৮, আত-তালীক আলা ইবনু খুযাইমাহ ২৭৩৫, ২৭৩৬।
তাহকীক আলবানীঃ সহীহ।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা‘ঈদ ইবনু যুবায়র (রহঃ)
সূনান আত তিরমিজী (তাহকীককৃত)
৭/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ১১৩. হাজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে
৯৬১। ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ প্রসঙ্গে বলেছেনঃ আল্লাহর শপথ! এই পাথরকে আল্লাহ তা’আলা কিয়ামতের দিন এমন অবস্থায় উঠাবেন যে, এর দুটি চোখ থাকবে যা দিয়ে সে দেখবে এবং একটি জিহ্বা থাকবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। যে লোক সত্য হৃদয়ে একে পর্শ করবে তার সম্বন্ধে এই পাথর আল্লাহ্ তা’আলার নিকটে সাক্ষ্য দিবে।
— সহীহ, মিশকাত (২৫৭৮), তা’লীকুর রাগীব (২/১২২), তা’লীক আলা ইবনু খুযাইমা (২৭৩৫)
এই হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান বলেছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সুনান আদ-দারেমী
৫. হজ্জ অধ্যায়
পরিচ্ছেদঃ ২৬. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করার ফযীলত
১৮৭৬. ইবনু আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন এই পাথরকে আল্লাহ এমন অবস্থায় পুন:উত্থিত করবেন যে, এর দু‘টি চোখ থাকবে, যা দিয়ে সেটি দেখবে এবং একটি জিহবা থাকবে যা দিয়ে সেটি কথা বলবে এবং যে ব্যক্তি তাকে যথাযথভাবে চুম্বন করেছে, সেটি সেই লোকের পক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করবে।(1)
সালমান (তার বর্ণনায়) বলেন: যে ব্যক্তি তাকে চুম্বন করেছে, তার জন্য (অর্থাৎ ‘যথাযথভাবে’ শব্দটি ব্যতীত)।
(1) তাহক্বীক্ব: এর সনদ সহীহ।
তাখরীজ: [41]
আমরা এর পূর্ণ তাখরীজ দিয়েছি মুসনাদুল মাউসিলী নং ২৭১৯; সহীহ ইবনু হিব্বান নং ৩৭১১, ৩৭১২ ও মাওয়ারিদুয যাম’আন নং ১০০৫ তে।
এছাড়া, তাবারানী, আল কাবীর ১২/৬৩ নং ১২৪৭৯।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
এই নিয়ে ঝামেলা আরো বাড়ে, যখন মুহাম্মদ সরাসরি এই পাথরের ফজিলত বর্ণনা করেন, এবং ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা আবার এই একই পাথরকে ক্ষমতাহীন পাথর বলে আখ্যায়িত করেন! বলেন যে, এই পাথর কারো ক্ষতি বা উপকার কিছুই করতে পারে না। যা সরাসরি উপরের হাদিসগুলোর নির্দেশনার বিরোধী। এ থেকে উমরের নবীর হাদিসের বিরোধিতা করার প্রমাণ মেলে। কারণ নবীর কথা সত্য হলে, এই পাথরটি তো উমরের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে বলে মনে হয় না।
সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
১৬/ হাজ্জ
পরিচ্ছেদঃ ৩৭. তাওয়াফের সময় হাজারে আসওয়াদ চুম্বন করা মুস্তাহাব
২৯৩৯। খালফ ইবনু হিশাম, মুকাদ্দমী, আবূ কামিল ও কুতায়বা ইবনু সাঈদ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি টাক মাথাওয়ালা অর্থাৎ উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) কে কালো পাথর হাজারে আসওয়াদ চুমো দিতে দেখেছি এবং তিনি বলেছেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে চুন্বন করব এবং আমি অবশ্যই জানি যে, তুমি একটি পাথর, তুমি কারও ক্ষতিও করতে পার না এবং উপকারও করতে পার না। আমি যদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখতাম তবে আমি তোমায় চুম্বন করতাম না।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু সারজিস (রাঃ)
এবারে আসুন শায়েখ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের একটি ওয়াজ শুনি,
নবীর স্ত্রীকে উত্যক্ত করা
সহিহ হাদিস থেকে জানা যায়, ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর সরাসরিই নবীপত্নী সাওদাকে রাস্তায় উত্যক্ত করেছিলেন, তার পর্দা না থাকার কারণে। শুধু উত্যক্তই করেনি, একজন প্রস্রাব পায়খানা করতে যাওয়া নারীর পথ আটকে দিয়ে তাকে ঘরে ফেরত যেতে বাধ্য করেছেন। বর্তমান সময়ে অনেক জায়গাতেই দেখা যায়, পোষাকের কারণে রাস্তাঘাটে মেয়েদের নাজেহাল করা হয়, নানা বাজে মন্তব্য করা হয়। কার পোষাক কীরকম হবে, এই নিয়ে কিছু মানুষের সীমাহীন চুলকানি। তারা এইসব কাজের প্রেরণা হযরত উমর থেকে পান কিনা, সেটিও চিন্তার বিষয়। কারণ উমর নিজেও একই কাজ করতেন বলে জানা যায়। ঘটনাটি হচ্ছে এরকম, পরপুরুষ দেখে ফেলবে এই ভয়ে সারাদিন প্রশ্রাব পায়খানা আটকে রেখে রাতের বেলা নবীর স্ত্রীগণ খোলা ময়দানে প্রাকৃতিক কাজ করার জন্য বের হতেন। সেরকম এক সময়ে প্রাকৃতিক কাজ করার জন্য বের হলে উমর সাওদার পিছু নেন এবং পথ আটকে রাখেন। একইসাথে, তিনি সাওদাকে তিরষ্কার করেন ঠিকভাবে পর্দা না করার জন্য। পথ আটকে রাখার জন্য প্রাকৃতিক কাজ করতে না যেতে পেরে সাওদা নবীর কাছে নালিশ নিয়ে যান এবং নবী তাকে বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেন। আসুন হাদিসগুলো পড়ে নিই, [12] [13] [14]
সহীহ মুসলিম (ইফাঃ)
অধ্যায়ঃ ৪০/ সালাম
পরিচ্ছদঃ ৭. মানুষের প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণের জন্য স্ত্রীলোকের বাইরে যাওয়ার বৈধতা
৫৪৮৪। আবদুল মালিক ইবনু শুআয়ব ইবনু লায়স (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রীগণ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় রাতের বেলা ‘মানাসি’ এর দিকে বেরিয়ে যেতেন। الْمَنَاصِع (মানাসি) হল প্রশস্ত ময়দান। ওদিকে উমার ইবনু খাত্তাব (রাঃ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতেন, আপনার স্ত্রীগণের প্রতি পর্দা বিধান করুন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেননি। কোন এক রাতে ইশার সময় নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সহধর্মিনা সাওদা বিনত যাম’আ (রাঃ) বের হলেন। তিনি ছিলেন দীর্ঘাঙ্গী মহিলা। উমার (রাঃ) তাঁকে ডাক দিয়ে বললেন, হে সাওদা! আমরা তোমাকে চিনে ফেলেছি। পর্দার বিধান নাযিল হওয়ার প্রতি প্রবল আকাঙ্ক্ষায় (তিনি এরূপ করলেন)। আয়িশা (রাঃ) বলেন, তখন আল্লাহর তাআলা পর্দা-বিধি নাযিল করলেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫২/ তাফসীর
পরিচ্ছেদঃ আল্লাহ্ তা’আলার বাণীঃ لا تدخلوا … عند الله عظيما হে মু’মিনগণ! তোমরা খাওয়ার জন্য খাবার প্রস্তুতির অপেক্ষা না করে নাবীর ঘরে তোমাদেরকে অনুমতি না দেয়া পর্যন্ত প্রবেশ করবে না; তবে তোমাদেরকে ডাকা হলে তোমরা প্রবেশ করবে এবং খাওয়া শেষ হলে নিজেরাই চলে যাবে, কথাবার্তায় মাশগুল হয়ে পড়বে না। তোমাদের এ আচরণ অবশ্যই নাবীকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদেরকে উঠিয়ে দিতে সংকোচ বোধ করেন। কিন্তু আল্লাহ সত্য বলতে সংকোচবোধ করেন না। তোমরা যখন তাঁর পত্নীদের নিকট হতে কোন কিছু চাইবে, তখন পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র উপায়। আল্লাহর রসূলকে কষ্ট দেয়া এবং তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পত্নীদেরকে বিবাহ করা তোমাদের কারও পক্ষে কখনও বৈধ নয়। এটা আল্লাহর কাছে সাংঘাতিক অপরাধ। বলা হয় إِنَاهُ খাদ্য পরিপাক হওয়া। এটা أَنَى يَأْنِيْ أَنَاةًথেকে গঠিত। لَعَلَّ السَّاعَةَ تَكُوْنُ قَرِيْبًا সম্ভবত ক্বিয়ামাত অতি নিকটবর্তী। যদি তুমি স্ত্রী লিঙ্গ হিসেবে ব্যবহার কর, তবে قَرِيْبَةً বলবে। আর যদি الصِّفَةَ না ধর ظَرْفًا বা بَدَلًا হিসেবে ব্যবহার কর তবে ‘তা’ নিয়ে যুক্ত করবে না। তেমনি এ শব্দটি একবচন, দ্বি-বচন, বহুবচন এবং নারী-পুরুষ সকল ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন নাম্বারঃ ৪৪৩২, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৪৭৯৫
৪৪৩২। যাকারিয়া ইবনু ইয়াহ্ইয়া (রহঃ) … আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর সাওদা প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে যান। সাওদা এমন মোটা শরীরের অধিকারিণী ছিলেন যে, পরিচিত লোকদের থেকে তিনি নিজকে গোপন রাখতে পারতেন না। উমর ইবনু খাত্তাব (রাঃ) তাঁকে দেখে বললেন, হে সাওদা! জেনে রাখ, আল্লাহর কসম, আমাদের দৃষ্টি থেকে গোপন থাকতে পারবে না। এখন দেখ তো, কেমন করে বাইরে যাবে? আয়িশা (রাঃ) বলেন, (এ কথা শুনে) সাওদা (রাঃ) ফিরে আসলেন। আর এ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে রাতের খানা খাচ্ছিলেন। তাঁর হাতে ছিল টুকরা হাড়। সাওদা (রাঃ) ঘরে প্রবেশ করে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজনে বাইরে গিয়েছিলাম। তখন উমর (রাঃ) আমাকে এমন এমন কথা বলেছে। আয়িশা (রাঃ) বলেন, এ সময় আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর নিকট ওহী নাযিল করেন। ওহী অবতীর্ণ হওয়া শেষ হল, হাড় টুকরা তখনও তাঁর হাতেই ছিল, তিনি তা রাখেননি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, অবশ্যই প্রয়োজনে তোমাদের বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা বিনত আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ)
নবীকে যুদ্ধের ময়দানে ফেলে পালানো
উমর সম্পর্কে এই অভিযোগটি সবচাইতে মারাত্মক। আসুন শুরুতেই কোরআনের একটি আয়াত পড়ে নেয়া যাক, ঘটনাটি হুনায়নের যুদ্ধের। এই যুদ্ধে মুহাম্মদকে ফেলে সাহাবীরা পালিয়ে গিয়েছিল, তাই আল্লাহ নবীর সাহাবীদের তিরস্কার করছে [15]
বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদেরকে বহু যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন আর হুনায়নের যুদ্ধের দিন, তোমাদের সংখ্যার আধিক্য তোমাদেরকে গর্বে মাতোয়ারা করে দিয়েছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি, যমীন সুপ্রশস্ত হওয়া সত্বেও তা তোমাদের নিকট সংকীর্ণই হয়ে গিয়েছিল, আর তোমরা পিছন ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে।
— Taisirul Quran
অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে (যুদ্ধে) বহু ক্ষেত্রে বিজয়ী করেছেন এবং হুনাইনের দিনেও। যখন তোমাদেরকে তোমাদের সংখ্যাধিক্য গর্বে উম্মত্ত করেছিল, অতঃপর সেই সংখ্যাধিক্য তোমাদের কোনই কাজে আসেনি, আর ভূ-পৃষ্ঠ প্রশস্ত থাকা সত্ত্বেও তা তোমাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে গেল, অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন পূর্বক পলায়ন করলে।
— Sheikh Mujibur Rahman
অবশ্যই আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু জায়গায় এবং হুনাইনের দিনে, যখন তোমাদের সংখ্যাধিক্য তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল, অথচ তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি। আর যমীন প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তোমাদের উপর সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করেছিলে।
— Rawai Al-bayan
অবশ্যই আল্লাহ্ তোমাদেরকে সাহায্য করেছেন বহু ক্ষেত্রে এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে [১] যখন তোমাদেরকে উৎফুল্ল করেছিল তোমাদের সংখ্যাধিক্য হওয়া; কিন্তু তা তোমাদের কোনো কাজে আসেনি এবং বিস্তৃত হওয়া সত্বেও যমীন তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল। তারপর তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পালিয়েছিলে [২]।
— Dr. Abu Bakr Muhammad Zakaria
এবারে আসুন দেখা যাক, ঠিক কারা কারা পালিয়ে গিয়েছিল। নবীকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে রেখে সেই পালিয়ে যাওয়া সাহাবীদের মধ্যে আসলে কারা কারা ছিল, তা জানা খুবই জরুরি [16]
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৬৪/ মাগাযী [যুদ্ধ]
পরিচ্ছেদঃ ৬৪/৫৫. মহান আল্লাহর বাণীঃ
৪৩২২. আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনাইন যুদ্ধের দিন আমি দেখলাম যে, এক মুসলিম এক মুশরিকের সঙ্গে লড়াই করছে। আরেক মুশরিক মুসলিম ব্যক্তিটির পেছন থেকে তাকে হত্যা করার জন্য আক্রমণ করছে। তখন আমি তার হাতের উপর আঘাত ক’রে তা কেটে ফেললাম। সে আমাকে ধরে ভীষণ চাপে চাপ দিল। এমনকি আমি শঙ্কিত হয়ে পড়লাম। এরপর সে আমাকে ছেড়ে দিল ও দুর্বল হয়ে পড়ল। আমি তাকে আক্রমণ করে হত্যা করলাম। মুসলিমগণ পালাতে লাগলে আমিও তাঁদের সঙ্গে পালালাম। হঠাৎ লোকের মাঝে ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)-কে দেখতে পেলাম। তাকে বললাম, লোকজনের অবস্থা কী? তিনি বললেন, আল্লাহর যা ইচ্ছা। এরপর লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ফিরে এলেন। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘যে (মুসলিম) ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছে বলে প্রমাণ পেশ করতে পারবে নিহত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদ সে-ই পাবে। আমি যাকে হত্যা করেছি তার সম্পর্কে সাক্ষী খোঁজার জন্য আমি দাঁড়ালাম। কিন্তু আমার পক্ষে সাক্ষ্য দিবে এমন কাউকে পেলাম না। তখন বসে পড়লাম। এরপর আমার সুযোগমত ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম। তখন তাঁর পাশে উপবিষ্ট একজন বললেন- উল্লিখিত নিহত ব্যক্তির হাতিয়ার আমার কাছে আছে, সেগুলো আমাকে দিয়ে দেয়ার জন্য আপনি তাকে সম্মত করুন। তখন আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, না, তা হতে পারে না। আল্লাহর সিংহদের এক সিংহ যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তাকে না দিয়ে এ কুরাইশী দুর্বল ব্যক্তিকে তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম] দিতে পারেন না। রাবী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়ালেন এবং আমাকে তা দিয়ে দিলেন। আমি এর দ্বারা একটি বাগান কিনলাম। আর ইসলাম গ্রহণের পর এটিই ছিল প্রথম সম্পদ, যদ্দবারা আমি আমার আর্থিক বুনিয়াদ করেছি। [২১০০] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩৯৭৮/৩৯৭৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩৯৮৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ ক্বাতাদাহ সালামী (রাঃ)
তথ্যসূত্র
- সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৭ [↑]
- তাফসীরে জালালাইন, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৪ [↑]
- তাফসীরে মাযহারী, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২ [↑]
- তাফসীরে ইবনে কাসীর, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ১১১ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ১১৫ [↑]
- সহিহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন্স, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭২ [↑]
- কোরআন ৭২ঃ২৩ [↑]
- হাদীস সম্ভার, হাদিসঃ ১৪৯৯ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৪৪৫৮ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭০ [↑]
- সহজ দরসে ইবনে মাজাহ, আল কাউসার প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৬৮ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৪৪৩২ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৮০৬ [↑]
- সহিহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৫৪৮২ [↑]
- সূরা তওবা, আয়াত ২৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিসঃ ৪৩২২ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"