23.খালিদ বিন ওয়ালিদের নৃশংসতা

ইসলামের ইতিহাসে যদি কারও নাম চরম নিষ্ঠুরতা, বর্বরতা, এবং অমানবিক হত্যাযজ্ঞের প্রতীক হিসেবে উঠে আসে, তবে খালিদ বিন ওয়ালিদ সেই তালিকার শীর্ষে থাকবে। তার কর্মকাণ্ড ছিল এমনই ভয়াবহ যে, তাকে “সিরিয়াল কিলার” বা “সাইকোপ্যাথ” বললেও কম বলা হয়। আর-রাহীকুল মাখতূম-এ বর্ণিত আছে, তিনি বিভিন্ন এলাকায় সৈন্য গিয়ে মূর্তি, উপাসনালয়, এমনকি সেসব স্থানে উপাসনায় লিপ্ত নিরীহ মানুষদেরও নির্বিচারে হত্যা করতেন। নারীরাও তার রক্তপিপাসু উন্মত্ততা থেকে রেহাই পেত না। প্রায় সাড়ে তিনশ মানুষকে বেঁধে তিনি তার সঙ্গীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, এক একজন এক একজনার গলা কেটে হত্যা করবে। ধর্মের নামে এ এক অসভ্য হত্যাযজ্ঞ, যেখানে মানবতা বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব ছিল না।

ইসলামের বিশ্বাস হচ্ছে, নবীর সাহাবীদের সম্পর্কে কোন সমালোচনা করা যাবে না। অর্থাৎ নবীর সাথে সাথে নবীর সাহাবীদের সমালোচনা নিষিদ্ধ। কিন্তু সমালোচনা নিষিদ্ধ হলে, সত্য জানার পথ তো বন্ধ হয়ে যায়। আর ইসলামের বিশ্বাস যদি এমনই হয়, তাহলে তো সাহাবীদের হাজারো দোষ প্রমাণ হলেও একজন মুসলিম ঈমান হারাবার ভয়ে সেগুলো মানতে চাইবে না। নানা ধরণের অযৌক্তিক কথা বলে অন্ধভাবেই বিশ্বাস করবে যে, এগুলো সত্য নয়। কী অদ্ভুত কথা। আসুন শুরুতেই একটি বক্তব্য শুনে নিই,

ইতিহাসকে নিরপেক্ষভাবে পর্যালোচনা করা যেকোন সত্যান্বেষী মানুষের কর্তব্য হওয়া উচিত। কিন্তু নিরপেক্ষ হওয়ার পথে যদি ইমান এসে বাধা দেয়, তাহলে তো বিপদ। খালিদের নৃশংসতা এতটাই সীমা অতিক্রম করেছিল যে, তার এসব কর্মকাণ্ড দেখে মুহাম্মদ নিজেও বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন—যা তাঁর নৃশংসতার মাত্রা কেমন ছিল, তা সহজেই বোঝায়। একজন মানুষ কতটা হৃদয়হীন হলে সাড়ে তিনশো বন্দিকে একত্রে বেঁধে ঠাণ্ডা মাথায় জবাই করতে পারে? এমন ভয়াবহ নির্মমতার বিবরণ পড়লে গা শিউরে ওঠে। ভাবা যায়, নবীর অন্য সাহাবীরাও তাঁর বর্বরতা দেখে হতবাক হয়েছিল!

খালিদ বিন ওয়ালিদের এই হত্যাযজ্ঞ কোনো যুদ্ধের “কৌশল” ছিল না—এ ছিল খাঁটি রক্তপিপাসার বহিঃপ্রকাশ, যেখানে শক্তির দাপটে মানুষ হত্যাকে গর্বের বিষয় মনে করা হতো। এমন নিষ্ঠুরতার পেছনে ধর্মের ছায়া টেনে সেটিকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা ইতিহাসের এক নিকৃষ্ট উদাহরণ ছাড়া আর কিছুই নয়। [1]

বিভিন্ন অভিযান ও প্রতিনিধি প্রেরণ (السَّرَايَا وَالْبُعُوْثِ):
১. মক্কা বিজয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কাজকর্ম সুসম্পন্ন করার পর যখন তিনি কিছুটা অবকাশ লাভ করলেন তখন ৮ম হিজরীর ২৫ রমযান উযযা নামক দেব মূর্তি বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে একটি ছোট সৈন্যদল প্রেরণ করলেন। উযযা মূর্তির মন্দিরটি ছিল নাখলা নামক স্থানে। এটি ভেঙ্গে ফেলে খালিদ (রাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,‏ (‏هَلْ رَأَيْتَ شَيْئًا‏؟‏‏)‏‘তুমি কি কিছু দেখেছিলে?’ খালিদ (রাঃ) বললেন, ‘না’ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করলেন, ‏(‏فَإِنَّكَ لَمْ تَهْدِمْهَا فَارْجِعْ إِلَيْهَا فَاهْدِمْهَا‏)‏ ‘তাহলে প্রকৃতপক্ষে তুমি তা ভাঙ্গ নি। পুনরায় যাও এবং তা ভেঙ্গে দাও।’ উত্তেজিত খালিদ (রাঃ) কোষমুক্ত তরবারি হস্তে পনুরায় সেখানে গমন করলেন। এবারে বিক্ষিপ্ত ও বিস্ত্রস্ত চুলবিশিষ্ট এক মহিলা তাঁদের দিকে বের হয়ে এল। মন্দির প্রহরী তাকে চিৎকার করে ডাকতে লাগল। কিন্তু এমন সময় খালিদ (রাঃ) তরবারি দ্বারা তাকে এতই জোরে আঘাত করলেন যে, তার দেহ দ্বিখন্ডিত হয়ে গেল। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে তিনি এ সংবাদ অবগত করালে তিনি বললেন, ‏(‏نَعَمْ، تِلْكَ الْعُزّٰى، وَقَدْ أَيِسَتْ أَنْ تَعْبُدَ فِيْ بِلَادِكُمْ أَبَدًا‏) ‘হ্যাঁ’, সেটাই ছিল উযযা। এখন তোমাদের দেশে তার পূজা অর্চনার ব্যাপারে সে নিরাশ হয়ে পড়েছে (অর্থাৎ কোন দিন তার আর পূজা অর্চনা হবে না)।
২. এরপর নাবী কারীম (সাঃ) সে মাসেই ‘আমর ইবনুল ‘আস (রাঃ)-কে ‘সুওয়া’ নামক দেবমূর্তি ভাঙ্গার জন্য প্রেরণ করেন। এ মূর্তিটি ছিল মক্কা হতে তিন মাইল দূরত্বে ‘রিহাত’ নামক স্থানে বনু হুযাইলের একটি দেবমূর্তি। ‘আমর যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন প্রহরী জিজ্ঞেস করল, ‘তোমরা কী চাও?’ তিনি বললেন, ‘আল্লাহর নাবী (সাঃ) এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলার জন্য আমাদের নির্দেশ প্রদান করেছেন।’
সে বলল, ‘তোমরা এ মূর্তি ভেঙ্গে ফেলতে পারবে না।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘কেন?’
সে বলল, ‘প্রাকৃতিক নিয়মেই তোমরা বাধাপ্রাপ্ত হবে।’
‘আমর (রাঃ) বললেন, ‘তোমরা এখনও বাতিলের উপর রয়েছ? তোমাদের উপর দুঃখ, এই মূর্তিটি কি দেখে কিংবা শোনে?’
অতঃপর
মূর্তিটির নিকট গিয়ে তিনি তা ভেঙ্গে ফেললেন এবং সঙ্গীসাথীদের নির্দেশ প্রদান করলেন ধন ভান্ডার গৃহটি ভেঙ্গে ফেলতে। কিন্তু ধন-ভান্ডার থেকে কিছুই পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি প্রহরীকে বললেন, ‘বল, কেমন হল?’
সে বলল, ‘আল্লাহর দ্বীন ইসলাম আমি গ্রহণ করলাম।’
৩. এ মাসেই সা‘দ বিন যায়দ আশহালী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে বিশ জন ঘোড়সওয়ার সৈন্য প্রেরণ করেন মানাত দেবমূর্তি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে। কুদাইদের নিকট মুশাল্লাল নামক স্থানে আওস, খাযরাজ, গাসসান এবং অন্যান্য গোত্রের উপাস্য ছিল এ ‘মানত’ মূর্তি। সা‘দ (রাঃ)-এর বাহিনী যখন সেখানে গিয়ে পৌঁছেন তখন মন্দিরের প্রহরী বলল, ‘তোমরা কী চাও?’
তাঁরা বললেন,
‘মানাত দেবমূর্তি ভেঙ্গে ফেলার উদ্দেশ্যে আমরা এখানে এসেছি।’
সে বলল, ‘তোমরা জান এবং তোমাদের কার্য জানে।’
সা‘দ মানাত মূর্তির দিকে অগ্রসর হতে গিয়ে
একজন উলঙ্গ কালো ও বিক্ষিপ্ত চুল বিশিষ্ট মহিলাকে বেরিয়ে আসতে দেখতে পেলেন। সে আপন বক্ষদেশ চাপড়াতে চাপড়াতে হায়! রব উচ্চারণ করছিল।
প্রহরী তাকে লক্ষ্য করে বলল, ‘মানাত! তুমি এ অবাধ্যদের ধ্বংস কর।’
কিন্তু
এমন সময় সা‘দ তরবারির আঘাতে তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর মূর্তিটি ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে দিলেন। ধন-ভান্ডারে ধন-দৌলত কিছুই পাওয়া যায় নি।
৪. উযযা নামক দেবমূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার পর খালিদ বিন ওয়ালীদ (সাঃ) প্রত্যাবর্তন করলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ৮ম হিজরী শাওয়াল মাসেই বনু জাযামাহ গোত্রের নিকট তাঁকে প্রেরণ করেন। উদ্দেশ্য ছিল আক্রমণ না করে ইসলাম প্রচার। খালিদ (রাঃ) মুহাজির, আনসার এবং বনু সুলাইম গোত্রের সাড়ে তিনশ লোকজনসহ বনু জাযীমাহর নিকট গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করেন। তারা (ইসলাম গ্রহণ করেছি) বলার পরিবর্তে (আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি, আমরা স্বধর্ম ত্যাগ করেছি) বলল। এ কারণে খালিদ (রাঃ) তাদের হত্যা এবং বন্দী করতে আদেশ দিলেন। তিনি সঙ্গী সাথীদের এক একজনের হস্তে এক এক জন বন্দীকে সমর্পণ করলেন। অতঃপর এ বলে নির্দেশ প্রদান করলেন যে, ‘প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিকটে সমর্পিত বন্দীকে হত্যা করবে। কিন্তু ইবনু উমার এবং তাঁর সঙ্গীগণ এ নির্দেশ পালনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলেন। অতঃপর যখন নাবী কারীম (সাঃ)-এর খিদমতে উপস্থিত হলেন তখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলেন। তিনি দু’ হাত উত্তোলন করে দু’বার বললেন, ‏(‏اللهم إِنِّيْ أَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ خَالِدًا) ‘হে আল্লাহ! খালিদ যা করেছে আমি তা হতে তোমার নিকটে নিজেকে পবিত্র বলে ঘোষণা করছি।’(1)
এ পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র বনু সুলাইম গোত্রের লোকজনই নিজ বন্দীদের হত্যা করেছিল। আনসার ও মহাজিরীনগণ হত্যা করেন নি। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আলী (রাঃ)-কে প্রেরণ করে তাদের নিহত ব্যক্তিদের শোণিত খেসারত এবং ক্ষতিপূরণ প্রদান করেন। এ ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে খালিদ (রাঃ) ও আব্দুর রহমান বিন আওফ (রাঃ)-এর মাঝে কিছু উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় এবং সম্পর্কের অবণতি হয়েছিল। এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
‏(‏مَهَلًّا يَا خَالِدُ، دَعْ عَنْكَ أَصْحَابِيْ، فَوَاللهِ لَوْ كَانَ أَحَدٌ ذَهَبًا، ثُمَّ أَنْفَقَتْهُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا أَدْرَكَتْ غُدْوَةَ رَجُلٍ مِّنْ أَصْحَابِيْ وَلَا رَوْحَتَهُ‏)‏‏
‘খালিদ থেমে যাও, আমার সহচরদের কিছু বলা হতে বিরত থাক। আল্লাহর কসম! যদি উহুদ পাহাড় সোনা হয়ে যায় এবং তার সমস্তই তোমরা আল্লাহর পথে খরচ করে দাও তবুও আমার সাহাবাদের মধ্য হতে কোন এক জনেরও এক সকাল কিংবা এক সন্ধ্যার ইবাদতের নেকী অর্জন করতে পারবে না।(2)

নবীর মূর্তি ধংস
নবীর বর্বরতা

এবারে আসুন আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া থেকে পড়ি, আবু বকরের আমলে খালিদ বিন ওয়ালিদের নির্মম নৃশংসতার ঘটনাবলী। বুকে হাত দিয়ে এই বর্ণনাগুলো পড়ুন। আমি নিশ্চিত, একজন চরম অন্ধবিশ্বাস মুসলিমও এসব পড়লে লজ্জা পাবে [2]

খালিদ (গনীমাত হিসাবে) নারী বন্দীদের মধ্য থেকে মালিক ইব্‌ন নুওয়ায়রার স্ত্রীকে বেছে নেন। তার নাম ছিল উম্মু তামীম, মিনহালের কন্যা। দেখতে অত্যন্ত সুন্দরী। ঋতু থেকে পাক হওয়ার পর খালিদ তার সাথে মিলিত হন। কেউ কেউ বলেন যে, খালিদ মালিক ইব্‌ন নওওয়ায়রাকে ডেকে এনে সাজাহর মতাবলম্বন এবং যাকাত প্রদানে বিরত থাকার কারণ জিজ্ঞেস করেন। তিনি বলেন, তোমার কি জানা নেই যে, যাকাতের বিধান সালাতের বিধানের সাথে মিলিয়ে একত্রে দেয়া হয়েছে? মালিক বলল, তোমাদের সাথী (নবী) তো এ রকমই মনে করেন। খালিদ বললেন, তিনি আমাদের সাথী, তোমার সাথী (নবী) নন কি? হে যিরার! এর গর্দান উড়িয়ে দাও! তারপর মালিকের গর্দান উড়িয়ে দেয়া হয়। খালিদের নির্দেশে তার শির ছিন্ন করা হল। তারপর দু’টি পাথর ও মালিকের মস্তক এই তিনটির উপর ডেকচি বসিয়ে খাবার রান্না করা হয়। এই খাবার দিয়ে খালিদ ঐ রাত্রের আহার সারেন। এ ব্যবস্থার উদ্দেশ্য ছিল, আরবের মুবতাদ ও অন্যান্য লোকদেরকে ভীত ও শংকিত করা। কথিত আছে যে, মালিকের মাথার চুলও রান্নার আগুনে দেয়া হয় এবং চুল এত বেশি ছিল যে, গোশ্ত পাকান শেষ হবার পরও চুল অবশিষ্ট ছিল। আবূ কাতাদা খালিদের এই কাজের সমালোচনা করেন এবং এ নিয়ে দু’জনের তর্ক-বিতর্কও হয়। এমন কি আবূ কাতাদা খলীফা হযরত সিদ্দীকের নিকট হাযির হয়ে অভিযোগ পেশ করেন। হযরত উমর (রা)-এ বিষয়ে আবূ কাতাদা থেকে অবগত হয়ে খলীফাকে বলেন, খালিদকে অপসারণ করুন-কেননা তার তরবারীর মধ্যে যুলুম আছে। কিন্তু হযরত আবূ বকর বললেন, যেই তরবারীকে স্বয়ং আল্লাহ্ কাফিরদের জন্য উন্মুক্ত করেছেন আমি তাকে কোষবদ্ধ করতে পারি না। এরপর মুতামমিম ইব্‌ নুওয়ায়রা এসেও খালিদের বিরুদ্ধে খলীফার নিকট অভিযোগ দায়ের করেন। হযরত উমর তাকে সাহায্য করেন।
হযরত উমর ইব্‌ন খাত্তাব (রা) খালিদ ইব্‌ন ওলীদকে সেনাপতির পদ থেকে অপসারণের জন্য খলীফাকে অব্যাহতভাবে চাপ দিতে থাকেন এবং বলতে থাকেন যে, তার তরবারী যুলুমের সাথে জড়িত হয়ে গেছে। অবশেষে খলীফা খালিদকে ডেকে পাঠালেন। তিনি মদীনায় এসে পৌঁছলেন। তখন তিনি লৌহ বর্ম পরিহিত ছিলেন। প্রচুর পরিমাণ রক্ত লাগার কারণে তাতে মরচে ধরে গিয়েছিল। খালিদ তাঁর মাথার পাগড়ির উপর রক্তমাখা একটি তীর গেড়ে রেখে ছিলেন। মসজিদে প্রবেশ করতেই হযরত উমর উঠে তার পাগড়ি থেকে তীরটি নিয়ে ভেংগে ফেললেন, এবং বললেন, তুমি কি দাপট দেখানোর উদ্দেশ্যে একজন মুসলমানকে হত্যা করে তার স্ত্রীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছ। আল্লাহর কসম, তোমাকে আমি পাথর মেরে হত্যা করব। খালিদ হযরত উমরের সাথে কোন কথা বললেন না । তিনি শুধু লক্ষ্য করলেন যে, খলীফার মত এ ব্যাপারে হযরত উমরের মতের অনুরূপ কিনা। তারপর তিনি হযরত আবূ বকরের কাছে গেলেন এবং ওযর পেশ করলেন। খলীফা তাঁর ওযর গ্রহণ করলেন ও ক্ষমা করে দিলেন এবং মালিক ইব্‌ নুওয়ায়রার রক্তপণ আদায় করে দিলেন ।
তিনি যখন খলীফার নিকট থেকে বের হন তখন হযরত উমর মসজিদে বসা ছিলেন। খালিদ তাঁকে লক্ষ্য করে বললেন, ওহে উম্মে শামালার পুত্র, এবার আমার কাছে এসো! উমর কোন উত্তর দিলেন না। তিনি বুঝতে পারলেন যে, খলীফা তার প্রতি প্রসন্ন হয়ে গেছেন । আবূ বকর (রা) খালিদকে সেনাপতির পদে বহাল রাখেন। আসলে মালিক ইব্‌ নুওয়ায়রাকে হত্যার ব্যাপারে খালিদ ইজতিহাদ করেছিলেন, এবং তাতে তাঁর ভুল হয়েছিল । আর একবার রাসূলুল্লাহ্ (সা) আবূ জুযায়মাকে দমন করার জন্য খালিদকে প্রেরণ করলে তিনি সেই সব বন্দীদেরকে হত্যা করেন যারা বলেছিল “আমরা ধর্ম ত্যাগ করেছি, আমরা ধর্ম ত্যাগ করেছি।” আসলে তারা আমরা মুসলমান হয়েছি- কথাটি বলতে অভ্যস্ত ছিল না। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সা) তাদের রক্তপণ আদায় করেন-যার পরিমাণ ছিল বনূ কালবের পশু পালের সমান। রাসূলুল্লাহ্ (সা) দু’হাত তুলে দু’আ করেছিলেন, হে আল্লাহ্! খালিদ যে কাজ করেছে, আমি তা থেকে মুক্ত। তা সত্ত্বেও রাসূলুল্লাহ্ (সা) খালিদকে সেনাপতির পদ থেকে অপসারণ করেননি ।

খালিদ
খালিদ 3
খালিদ 5

তথ্যসূত্র

  1. আর-রাহীকুল মাখতূম, আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী (রহঃ), তাওহীদ পাবলিকেশন্স, পৃষ্ঠা ৪৬৬, ৪৬৭ []
  2. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৮৩-৪৮৫ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"