আসুন শুরুতেই বাঙলাদেশের একজন প্রখ্যাত আলেমের বক্তব্য শুনে নেয়া যাক,
সহীহ বুখারী হাদিসে বর্ণিত রয়েছে, হিজড়াদেরকে নির্বাসিত করতে হবে। নবী নিজেই তাদের ঘর থেকে বের করে দিতেন। কেন? শুধুমাত্র তারা হিজড়া হয়ে জন্ম নিয়েছে, এই কারণে [1] [2] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৭৫/ কাফের ও ধর্মত্যাগী বিদ্রোহীদের বিবরণ
পরিচ্ছেদঃ ২৮৫২. গুনাহগার ও হিজড়াদের নির্বাসিত করা
৬৩৭৩। মুসলিম ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা’নত করেছেন নারীরূপী পুরুষ ও পুরুষরূপী নারীদের উপর এবং বলেছেনঃ তাদেরকে বের করে দাও তোমাদের ঘর হতে এবং তিনি অমুক অমুককে বের করে দিয়েছেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী অর্থাৎ বুখারী হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে কী বলা রয়েছে, সেটিও দেখে নিই [3],
পাঠক লক্ষ্য করুন, উপরে নসরুল বারী থেকে যেই ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে, সেখানে কবিরা গুণাহে লিপ্ত কথাটির পরে “ও” যুক্ত রয়েছে। এর মানে হচ্ছে, কবিরা গুণাহে লিপ্ত এবং একই সাথে, হিজড়াদের কথা এখানে বলা হয়েছে। যদি “ও” অক্ষরটি না থাকতো, তাহলে অর্থটি হতে পারতো, শুধুমাত্র কবিরা গুণাহে লিপ্ত হিজড়াদের কথা এখানে বোঝানো হচ্ছে। যা অনেক ইসলামিস্টই আজকাল দাবী করে বিষয়টি লুকাবার চেষ্টা করেন। তারা বোঝাবার চেষ্টা করেন, এখানে হিজড়াদের সম্পর্কে নয়, শুধুমাত্র নাকি অপরাধী হিজড়াদের কথা বোঝানো হয়েছে। কিন্তু কথাটি যে সম্পূর্ণ মিথ্যা, তা ঐ “ও” অক্ষরটি দ্বারাই প্রমাণ হয়। সেইসাথে, নবী মুহাম্মদ শুধু যে নির্দেশই দিতেন সেটিই নয়, তিনি নিজেও হিজড়াদের গোত্র ত্যাগে বাধ্য করতেন [4] –
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
অধ্যায়ঃ ২৭/ পোশাক-পরিচ্ছদ
পরিচ্ছেদঃ ৩৫. মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘যৌন কামনা রহিত পুরুষ’’
৪১০৯। আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে অনুরূপ হাদীস বর্ণিত। এতে আরো রয়েছেঃ ‘‘তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে আল-বায়দা নামক স্থানে পাঠিয়ে দিলেন। এরপর সে (হিজড়া) প্রতি শুক্রবার খাদ্যের জন্য শহরে আসতো।(1)
সহীহ।
(1). ইরওয়াউল গালীল (৬/২০৫)।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আয়িশা (রাঃ)
আসুন আরো একটি হাদিস পড়ি যেখানে পরিষ্কার যে, হিজড়াদের গৃহ থেকে বহিষ্কার করাই ইসলামের বিধান [5] –
হাদীস সম্ভার
২৪/ বিবাহ ও দাম্পত্য
পরিচ্ছেদঃ পর্দার বিধান
(২৬৬৫) ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খোজা পুরুষ এবং পুরুষসুলভ আচরণ-কারিণী নারীর উপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন, তোমাদের গৃহ হতে ওদেরকে বের করে দাও। তিনি স্বয়ং এক খোজাকে বহিষ্কার করেছেন এবং উমার (রাঃ) এক হিজড়ে নারীকে গৃহ হতে বহিষ্কার করেছেন।
(আহমাদ ২০০৬, ২১২৩, বুখারী ৫৮৮৬)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)
একইসাথে, নবী মুহাম্মদ হিজড়াদের ঘৃণা করতেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় আরো কিছু সহিহ হাদিস থেকে [6] [7] [8] –
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৫১/ মাগাযী (যুদ্ধাভিযান)
পরিচ্ছেদঃ ২২২০. তায়েফের যুদ্ধ। মুসা ইবন উকবা (রাঃ) এর মতে এ যুদ্ধ অষ্টম হিজরীর শাওয়াল মাসে সংগটিত হয়েছে
৩৯৮৮। হুমাইদী (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আমার কাছে এক হিজড়া ব্যাক্তি বসা ছিল, এমন সময়ে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন। আমি শুনলাম, সে (হিজড়া ব্যাক্তি) আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়া (রাঃ)-কে বলছে, হে আবদুল্লাহ! কি বলো, আগামীকাল যদি আল্লাহ্ তোমাদেরকে তায়েফের উপর বিজয় দান করেন তা হলে গায়লানের কন্যাকে অবশ্যই তুমি লুফে নেবে। কেননা সে (এতই স্থুলদেহ ও কোমল যে), সামনের দিকে আসার সময়ে তার পিঠে চারটি ভাঁজ পড়ে আবার পিঠ ফিরালে সেখানে আটটি ভাঁজ পড়ে। (উম্মে সালামা (রাঃ) বলেন) তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ এদেরকে (হিজড়াদেরকে) তোমাদের কাছে প্রবেশ করতে দিও না। ইবনু উয়াইনা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, ইবনু জুরায়জ (রাঃ) বলেছেন, হিজড়া লোকটির নাম ছিলো হীত।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
সহীহ বুখারী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৫৪/ বিয়ে-শাদী
পরিচ্ছেদঃ ২৫৩৭. যে পুরুষ মহিলার মত সাজ-গোজ করে, তার সাথে কোন নারীর চলাফেরা নিষেধ
৪৮৫৫। উসমান ইবনু আবূ শায়বা (রহঃ) … উম্মে সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে থাকাকালে সেখানে একজন মেয়েলী ভাবাপন্ন পুরুষ ছিল। ঐ মেয়েলী পুরুষটি উম্মে সালামার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু আবূ উমাইয়াকে বলল, যদি আগামীকাল আপনাদেরকে আল্লাহ তায়েফ বিজয় দান করেন, তবে আমি আপনাকে গায়লানের মেয়েকে গ্রহন করারা পরামর্শ দিচ্ছি। কেননা, সে এত মেদবহুল যে, সে সম্মুখ দিকে আগমন করলে তার পেটের চামড়ায় চার ভাঁজ পড়ে আর পিছু ফিরে যাওয়ার সময় আট ভাঁজ পড়ে। একথা শোনার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, (এ মেয়েলী পুরুষ হিজড়া) সে যেন কখনো তোমাদের কাছে আর না আসে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সুলায়ম (রাঃ)
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
অধ্যায়ঃ ৩৬/ আদব
পরিচ্ছেদঃ ৫৯. নপুংসকদের হুকুম সম্পর্কে।
৪৮৪৬. আবূ বকর ইবন আবূ শায়বা (রহঃ) …. উম্মু সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার কাছে এমন সময় প্রবেশ করেন, যখন আমর কাছে একজন নপুংসক (হিজড়া) উপস্থিত ছিল। আর সে তার ভাইকে বলছিল। আগামীকাল মহান আল্লাহ্ যদি তায়েফের উপর (মুসলমানদের) বিজয় দান করেন, তবে আমি তোমাকে এমন এক স্ত্রীলোকের খবর দেব, যার আসার সময় তার পেটে চারটি ভাঁজ দেখা যায়; আর যখন সে চলে যায় তখন তার পেটে আটটি ভাঁজ দেখা যায়। একথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ঘর থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ উম্মু সালামাহ (রাঃ)
আসুন আর একটি দলিল দেখে নিই, যেখানে নবী মুহাম্মদের হিজড়াদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ পরিষ্কার ভাবে বোঝা যায় [9] –
তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৬৩৭৩ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, দশম খণ্ড, পৃষ্ঠা নম্বর- ২৪০, হাদিস নম্বরঃ ৬৩৭৩ [↑]
- সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, ১২তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪০ [↑]
- সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিস নম্বরঃ ৪১০৯ [↑]
- হাদীস সম্ভার, হাদিস নম্বরঃ ২৬৬৫ [↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৩৯৮৮[↑]
- সহীহ বুখারী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৫৫ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ৪৮৪৬ [↑]
- সহজ নসরুল বারী, শরহে সহীহ বুখারী, আরবি-বাংলা, সহজ তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ, হযরত মাওলানা উসমান গনী, আল কাউসার প্রকাশনী, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৬ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"