সূরা বাকারার ২২১ নম্বর আয়াত দেখিয়ে অনেক মুসলিমই দাবী করেন, ইসলামে তো মুশরিক নারীর সাথে যৌনসঙ্গম হারাম করা হয়েছে। তাহলে যুদ্ধবন্দী মুশরিক নারীদের সাথে মুমিনরা কীভাবে যৌনকর্ম করবে? এ থেকে তারা বলতে চেষ্টা করেন, যুদ্ধবন্দী নারীদের সাথে যৌনসঙ্গম করা ইসলামে নিষিদ্ধ! আসুন, এই আয়াতটি পড়ে দেখি [1]
আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিন দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে।
— Rawai Al-bayan
পাঠক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন, এই আয়াতে বিবাহের কথা বলা হয়েছে, দাসী হিসেবে রেখে যৌনসঙ্গমের প্রসঙ্গে এখানে কিছুই বলা হয়নি। যদিও এটি সত্য যে, কিছু কিছু আলেমের মতে এই আয়াতে ব্যবহৃত শব্দ দ্বারা আসলে যৌনসঙ্গমই বোঝায়। সেই কারণে কিছু আলেম মনে করেন মুশরিক নারীর সাথে সকল ধরণের যৌনসঙ্গমই হারাম। তবে আরেক পক্ষের মতে, যুদ্ধবন্দী মুশরিক নারীর সাথে যৌনসঙ্গম হালাল। কারণ আবু দাউদ শরীফের ২১৫২ নম্বর হাদিসে বলা হয়েছে, মুশরিক নারীদের সাথে সাহাবীগণ যৌনসঙ্গম করেছিলেন [2] [3] –
সূনান আবু দাউদ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ১৩৯. বন্দী স্ত্রীলোকের সাথে সহবাস করা।
২১৫২. উবায়দুল্লাহ্ ইবন উমার ইবন মায়সার …… আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের সময় আওতাস্ নামক স্থানে একটি সৈন্যদল প্রেরণ করেন। তারা তাদের শত্রুদের সাথে মুকাবিলা করে তাদেরকে হত্যা করে এবং তাদের উপর বিজয়ী হয়। আর এই সময় তারা কয়েদী হিসাবে (হাওয়াযেন গোত্রের) কিছু মহিলাকে বন্দী করে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কিছু সাহাবী তাদের সাথে অনধিকারভাবে সহবাস করা গুনাহ মনে করে, কেননা তাদের মুশরিক স্বামীরা তখন বন্দী ছিল। তখন আল্লাহ্ তা’আলা এই আত নাযিল করেনঃ (অর্থ) যে সমস্ত স্ত্রীলোকদের স্বামী আছে তারা তোমাদের জন্য হারাম। তবে যারা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসী অর্থাৎ যেসব মহিলা যুদ্ধবন্দী হিসাবে তোমাদের আয়ত্বে আসবে তারা ইদ্দত (হায়েযের) পূর্ণ করার পর তোমাদের জন্য হালাল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)
কিন্তু এই পুরো বিষয়টিই এক ধরণের ইসলামিক প্রতারণা। ইসলামে দাসীদের সাথে যৌনকর্মের বিষয়টি ধামাচাপা দিতেই ইসলামিস্টগণ এসব বাজে যুক্তির অবতারণা করেন। কারণ এই তথ্যগুলো যদি সঠিকও হতো, তাহলে ইহুদি নাসারা নারীদের গনিমতের মাল হিসেবে ভোগ করা তো জায়েজ, কারণ তারা তো মুশরিক নন। পৌত্তলিক বা মুশরিক নারীদের বাদ দিলেই কী ইহুদি নাসারা নারীদের ধর্ষণ করাটিকে সঠিক হয়ে যায়? এগুলো খুবই অদ্ভুত যুক্তি যে, ইসলাম মুশরিক নারীকে ধর্ষণ করতে নিষেধ করেছে! এর অর্থ তো এই নয় যে, ইহুদি নাসারা নারীদের ধর্ষণ করাটি ভাল কাজ হয়ে গেল!
এছাড়া ইসলামিস্টরা এত বছর ধরে যুদ্ধবন্দী বা দাসী ধর্ষণ হালাল করতে যে সকল যুক্তি দিতেন, সেই যুক্তিগুলোও এই যুক্তির দ্বারা উনারা নিজেরাই বাতিল করে দিচ্ছেন। উনারা এতদিন বলতেন, দাসীদের যৌনচাহিদা পূরণ করার মহৎ উদ্দেশ্য নিয়েই নবী ও তার সাহাবীগণ অনিচ্ছাসত্ত্বেও দাসীদের বিছানায় তুলতেন। আহারে, আমাদের সাহাবীদের কত বড় হৃদয়! কত মানবতা! কিন্তু এটি তাদের যুক্তি হলে, মুশরিক নারীদের যৌনচাহিদা কেন তারা পূরণ করতেন না? মুশরিক নারীদের কী যৌনচাহিদা থাকে না? ইসলামিস্টরা এতদিন আরো বলতেন, অসহায় যুদ্ধবন্দী নারীদের নতুন স্বামী সংসার দেয়ার মহৎ উদ্দেশ্যেই নাকি সাহাবীগণ তাদের বিছানায় তুলে নিতেন! কিন্তু মুশরিক নারীদের বিছানায় না তুললে, মুশরিক নারীরা তো এক একজন শাহরুখ খানের মত হ্যান্ডসাম সাহাবীকে যৌনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে, তাই না? ইসলামিস্টদের বক্তব্য অনুসারে, যুদ্ধবন্দী বা দাসী নারীরা নাকি সাহাবীদের বীরত্ব দেখে বাপ ভাই স্বামীর লাশের ওপর দিয়ে উত্থাল পাত্থাল যৌনক্ষুধায় দৌঁড়ে এসে নিজেরা স্বেচ্ছায় সাহাবীদের সাথে সহবত করতো! কিন্তু মুশরিক নারীদের তাহলে উনারা কেন সেই যৌন সুখ দেবেন না? এর কারণ কী? ইহুদি নাসারা মেয়েদের গনিমতের মাল হিসেবে ধর্ষণ করা যাবে, মুশরিক নারীদের ওপর দরদ এত উত্থলে ওঠার কারণ কী? সত্যি কথাটি হচ্ছে, ইসলামি বর্বরতা হালাল করতে এগুলো সবই ইসলামি প্রতারণা।
কারণ আমরা আগেই দেখিয়েছি, আক্রমণাত্মক জিহাদের মাধ্যমে মুশরিকদের জোরজোবরদস্তিমূলকভাবে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করার হুকুমই নবী দিয়ে গেছেন। নবী তাদের জন্য দুইটি অপশন রাখতেন, হয় ইসলাম নতুবা তরবারির আঘাতে মৃত্যু। তাহলে সেইসব মুশরিক যুদ্ধবন্দী নারীদের সামনে ইসলাম গ্রহণ করা ছাড়া আর কি রাস্তা খোলা ছিল? ঐ পাতাটি আসুন আবারো পড়ি [4] –
একইসাথে, উনাদের এই সকল যুক্তির বিরুদ্ধে উনাদেরই অত্যন্ত প্রখ্যাত ইসলামিক আলেমগণ জবাব লিখে গেছেন বহু পূর্বেই। আসুন মুসলিম পণ্ডিত ইবন কায়্যিম আল-জাওযিয়্যা কর্তৃক রচিত যাদুল মা’আদ গ্রন্থ থেকে এই বিষয়ে কী বলা আছে দেখে নেয়া যাক, [5] –
এবারে আসুন তাফসীরে যাকারিয়াতে এই সম্পর্কে কী বলা আছে পড়ে নিই, [6]
তথ্যসূত্র
- সূরা বাকারা, আয়াত ২২১ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ২১৫২ [↑]
- সূনান আবু দাউদ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খণ্ড ৩, পৃষ্ঠা ১৬০ [↑]
- আহকামুল কুরআন, খায়রুন প্রকাশনী, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৭ [↑]
- মুখতাসার যাদুল মাআদ, আল্লামা ইমাম ইবনে কাইয়্যিম জাওজিয়্যা, ওয়াহিদীয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরি, পৃষ্ঠা ২৫০ [↑]
- তাফসীরে যাকারিয়া, ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, সৌদি সরকার কর্তৃক প্রকাশিত, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৫ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"