13.এক’শ হত্যা করেও জান্নাতি

ইসলামের বিধান হচ্ছে, একজন মানুষ শতাধিক খুন করার পরেও, শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি যুক্তিপ্রমাণহীন বিশ্বাস এবং আল্লাহর কাছে তওবা করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেই, সে জান্নাতে যেতে পারবে। একটি বিখ্যাত হাদিসে এই বিষয়টি খুব পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। [1] [2] [3] [4] তাহলে যারা একটিও খুন করেন নি, অথচ তাদের ভাগ্যে আল্লাহ আগেই জাহান্নামি লিখে দিয়েছেন, তাদের সাথে বিষয়টি ইনসাফ হলো কী?

রিয়াযুস স্বা-লিহীন
অধ্যায়ঃ ১/ বিবিধ
পরিচ্ছেদঃ ২: তওবার বিবরণ
৮/২১। আবূ সাঈদ সা‘দ ইবনু মালেক ইবনু সিনান খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘তোমাদের পূর্বে (বনী ইস্রাইলের যুগে) একটি লোক ছিল; যে ৯৯টি মানুষকে হত্যা করেছিল। অতঃপর লোকদেরকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাকে একটি খ্রিষ্টান সন্নাসীর কথা বলা হল। সে তার কাছে এসে বলল, ‘সে ৯৯ জন মানুষকে হত্যা করেছে। এখন কি তার তওবার কোন সুযোগ আছে?’ সে বলল, ‘না।’ সুতরাং সে (ক্রোধান্বিত হয়ে) তাকেও হত্যা করে একশত পূরণ করে দিল। পুনরায় সে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলেম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। এবারও তাকে এক আলেমের খোঁজ দেওয়া হল। সে তার নিকট এসে বলল যে, সে একশত মানুষ খুন করেছে। সুতরাং তার কি তওবার কোন সুযোগ আছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ আছে! তার ও তওবার মধ্যে কে বাধা সৃষ্টি করবে? তুমি অমুক দেশে চলে যাও। সেখানে কিছু এমন লোক আছে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে। তুমিও তাদের সাথে আল্লাহর ইবাদত কর। আর তোমার নিজ দেশে ফিরে যেও না। কেননা, ও দেশ পাপের দেশ।’
সুতরাং সে ব্যক্তি ঐ দেশ অভিমুখে যেতে আরম্ভ করল। যখন সে মধ্য রাস্তায় পৌঁছল, তখন তার মৃত্যু এসে গেল। (তার দেহ-পিঞ্জর থেকে আত্মা বের করার জন্য) রহমত ও আযাবের উভয় প্রকার ফিরিশ্তা উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক আরম্ভ হল। রহমতের ফিরিশ্তাগণ বললেন, ‘এই ব্যক্তি তওবা করে এসেছিল এবং পূর্ণ আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে তার আগমন ঘটেছে।’ আর আযাবের ফিরিশ্তারা বললেন, ‘এ এখনো ভাল কাজ করেনি (এই জন্য সে শাস্তির উপযুক্ত)।’ এমতাবস্থায় একজন ফিরিশ্তা মানুষের রূপ ধারণ করে উপস্থিত হলেন। ফিরিশ্তাগণ তাঁকে সালিস মানলেন। তিনি ফায়সালা দিলেন যে, ‘তোমরা দু’ দেশের দূরত্ব মেপে দেখ। (অর্থাৎ এ যে এলাকা থেকে এসেছে সেখান থেকে এই স্থানের দূরত্ব এবং যে দেশে যাচ্ছিল তার দূরত্ব) এই দুয়ের মধ্যে সে যার দিকে বেশী নিকটবর্তী হবে, সে তারই অন্তর্ভুক্ত হবে।’ অতএব তাঁরা দূরত্ব মাপলেন এবং যে দেশে সে যাওয়ার ইচ্ছা করেছিল, সেই (ভালো) দেশকে বেশী নিকটবর্তী পেলেন। সুতরাং রহমতের ফিরিশতাগণ তার জান কবয করলেন।’’ (বুখারী ও মুসলিম)
সহীহতে আর একটি বর্ণনায় এরূপ আছে যে, ‘‘পরিমাপে ঐ ব্যক্তিকে সৎশীল লোকদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পাওয়া গেল। সুতরাং তাকে ঐ সৎশীল ব্যক্তিদের দেশবাসী বলে গণ্য করা হল।’’
সহীহতে আরো একটি বর্ণনায় এইরূপ এসেছে যে, ‘‘আল্লাহ তা‘আলা ঐ দেশকে (যেখান থেকে সে আসছিল তাকে) আদেশ করলেন যে, তুমি দূরে সরে যাও এবং এই সৎশীলদের দেশকে আদেশ করলেন যে, তুমি নিকটবর্তী হয়ে যাও। অতঃপর বললেন, ‘তোমরা এ দু’য়ের দূরত্ব মাপ।’ সুতরাং তাকে সৎশীলদের দেশের দিকে এক বিঘত বেশী নিকটবর্তী পেলেন। যার ফলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হল।’’
আরো একটি বর্ণনায় আছে, ‘‘সে ব্যক্তি নিজের বুকের উপর ভর করে ভালো দেশের দিকে একটু সরে গিয়েছিল।’’(1)
(1) সহীহুল বুখারী ৩৪৭০, মুসলিম ২৭৬৬, ইবনু মাজাহ ২৬২৬, আহমাদ ১০৭৭০, ১১২৯০
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫১/ তাওবা
পরিচ্ছেদঃ ৮. হত্যাকারীর তাওবা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য; যদিও সে বহু হত্যা করে থাকে
৬৭৫২। মুহাম্মাদ ইবনু মুসান্না ও মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে এক লোক ছিলো। সে নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করার পর জিজ্ঞাসা করল, এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আলিম ব্যক্তি কে? তাকে এক রাহিবের সন্ধান দেওয়া হয়। সে তার কাছে এসে বলল, যে, সে নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করেছো এমতাবস্থায় তার জন্য কি তাওবা আছে? রাহিব বলল, না। তখন সে রাহিবকেও হত্যা করে ফেলল। এবং এর (রাহিবের) হত্যা দ্বারা একশ পূর্ণ করল।
তারপর সে আবার প্রশ্ন করল এ পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় আলিম কে? তখন তাকে এক আলিম ব্যক্তির সন্ধান দেওয়া হল। সে আলিমকে সে বলল যে, সে একশ ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, তার জন্য কি তাওবা আছে? আলিম ব্যক্তি বললেন, হ্যাঁ। এ তাওবার মধ্যে কে অন্তরায় হতে পারে? তুমি অমুক দেশে যাও। সেখানে কতিপয় লোক আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত আছে। তুমিও তাদের সঙ্গে আল্লাহর ইবাদতে মশশুল হয়ে যাও। নিজের দেশে আর কখনো ফিরে যেয়ো না। কেননা এ দেশটি বড় মন্দ। তারপর সে চলতে লাগল। এমন কি যখন সে অর্ধ পথে পৌছে তখন তার মৃত্যু এল।
এরপর রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতার মধ্যে তার সম্পর্কে বিবাদ লেগে গেল। রহমতের ফিরিশতারা বললেন, সে অন্তরের আবেগ নিয়ে আল্লাহর দিকে তাওবার জন্য ধাবিত হয়ে এসেছে। আর আযাবের ফিরিশতারা বললেন, সে তো কখনো কোন নেক আমল করেনি। এ সময় মানুষের সুরতে এক ফিরিশতা এলেন। তারা তাকে তাদের মধ্যে মীমাংসাকারী নির্ধারণ করলেন।
তিনি তাদের বললেন, তোমরা দুই দেশের মধ্যবর্তী দূরত্ব মেপে নাও। দুই স্থানের মধ্যে যে স্থানের দিকে সে অধিক নিকটবর্তী হবে তাকে সে স্থানেরই গণ্য করা হবে। তারা মাপলেন। তখন তাঁরা তাকে উদ্দিষ্ট স্থানের অধিক নিকটবর্তী পেলেন। তখন রহমতের ফিরিশতা তাকে কবজ করে নিলেন। কাদাতা (রহঃ) বলেন, হাসান (রহঃ) বলেছেন, আমাদের নিকট বর্ণনা করা হয়েছে যে, যখন তার মৃত্যু এল, তখন সে বুকের উপর ভর দিয়ে (কিছু এগিয়ে) গেল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৫১/ তাওবা
পরিচ্ছেদঃ ৮. হত্যাকারীর তাওবা আল্লাহর দরবারে গ্রহণযোগ্য; যদিও সে বহু হত্যা করে থাকে
৬৭৫৩। উবায়দুল্লাহ ইবনু মু’আয আনবারী (রহঃ) … আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, এক ব্যক্তি নিরানব্বই ব্যক্তিকে হত্যা করে জিজ্ঞাসা করে বেড়াতে লাগল, তার কি তাওবা আছে? অবশেষে সে এক পাদ্রীর নিকট এসে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। পাদ্রী বলল, তোমার জন্য তাওবা নেই। তখন সে পাদ্রীকে হত্যা করল। এরপর সে আবারো লোকদের জিজ্ঞাসা করতে লাগল। তারপর সে এক জনপদ থেকে অন্য জনপদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল যেখানে কিছু নেক লোকের বসবাস ছিলো। রাস্তার এক অংশে তাকে মৃত্যু পেয়ে বসল। তখন সে বুকের উপর ভর করে সামনের দিকে অগ্রসর হলে। তারপর সে মারা গেল। তখন রহমতের ফিরিশতা ও আযাবের ফিরিশতা তার সম্পর্কে বিবাদে লিপ্ত হল। তখন দেখা গেল যে, সে নেক লোকদের জনপদের দিকে এক বিঘত পরিমাণ নিকটবর্তী রয়েছে। তাই তাকে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত গণ্য করা হল।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ)

আসুন এই সম্পর্কে মিজানুর রহমান আজহারীর বক্তব্য শুনে নিই,

তথ্যসূত্র

  1. রিয়াযুস স্বা-লিহীন, হাদিসঃ ২১ []
  2. সুনান আবু দাউদ, পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৯ []
  3. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৭৫২ []
  4. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৭৫৩ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"