08.যিনা ব্যভিচার পূর্ব নির্ধারিত

যদি মানুষের যিনা বা ধর্ষণ বা অন্য যেকোনো ধরনের অপরাধ পূর্ব নির্ধারিত থাকে এবং আল্লাহ তা আগেই লিপিবদ্ধ করে রাখেন, তাহলে এখানে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি কীভাবে কাজ করে—এটা একটি বড় প্রশ্ন। যদি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর এমনই একটি নিশ্চিত জ্ঞান হয়, যা কেউ পরিবর্তন করতে না পারে, তাহলে সেই ব্যক্তি কী আদৌ নিজ ইচ্ছায় যিনা বা পাপ থেকে বিরত থাকতে পারতো? যদি কোনো ব্যক্তি আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত তাকদীরের কারণে অপরাধ করে এবং সে সেই তাকদীরের বাইরে যেতে না পারে, তাহলে তাকে অপরাধের জন্য শাস্তি দেওয়া কতটা ন্যায়সঙ্গত? এমন পরিস্থিতিতে সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে নিজের কর্মফলের জন্য দায়ী নয়, কারণ তার জন্য আগে থেকেই সেই কর্ম নির্ধারিত ছিল এবং তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি সেখানে প্রভাব ফেলতে পারেনি, কারণ সে তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার করে তাকদীর পরিবর্তন করাতে পারতো না। এর মানে দাঁড়ায়, আল্লাহর জ্ঞান যদি শুধুমাত্র সম্ভাবনার ভিত্তিতে না থেকে নিশ্চিত জ্ঞান হয়, এবং সেই জ্ঞানের বাইরে কিছু না ঘটে, তবে একজন ব্যক্তি চাইলেও তার পূর্বনির্ধারিত কাজ এড়াতে পারে না।

এই অবস্থায়, সেই ব্যক্তি তো প্রকৃত অর্থে কোনো স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী নয়; বরং সে একজন নিয়ন্ত্রিত সত্তা, যার জীবন ও কর্ম পূর্বনির্ধারিত স্ক্রিপ্টের মতো পরিচালিত হচ্ছে। যদি সেটাই সত্য হয়, তাহলে এমন একজন ব্যক্তিকে অপরাধী হিসেবে শাস্তি দেওয়া বা তার প্রতি নিন্দা আরোপ করা ন্যায়বিচারের অবমাননা এবং ন্যায়পরায়ণতার মৌলিক ভিত্তির সাথে সাংঘর্ষিক। ব্যক্তি যা কিছুই করবে, তা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং সে কখনোই তার ইচ্ছাশক্তি প্রয়োগ করে তা পরিবর্তন করতে পারবে না। এমন পরিস্থিতিতে, আল্লাহর নির্ধারণ ও তার জ্ঞানের বিরুদ্ধে ব্যক্তি কোনো কাজ করতে অক্ষম, তাই তাকে শাস্তি দেওয়া আদতে আল্লাহর ন্যায়বিচারের প্রতি এক বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করে। সুতরাং, আল্লাহর পূর্বনির্ধারিত জ্ঞান এবং মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার মধ্যে এই সাংঘর্ষিক ধারণা যুক্তির আলোকে অসংগত, অন্যায়, অযৌক্তিক এবং যুক্তিবাদের মৌলিক নীতির সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ [1] [2] [3] [4] [5]

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ৫. বনী আদমের যিনা ইত্যাদির অংশ পূর্ব নির্ধারিত
৬৫১৩। ইসহাক ইবনু মানসুর (রহঃ) … আবূ হুরায়রা (রাঃ) সুত্রে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আদম সন্তানের উপর যিনার যে অংশ লিপিবদ্ধ আছে তা অবশ্যই সে প্রাপ্ত হবে। দু’চোখের যিনা হল দৃষ্টিপাত করা, দু’কানের যিনা হল শ্রবণ করা, জিহ্বার যিনা হল কথোপকথন করা, হাতের যিনা হল স্পর্শ করা, পায়ের যিনা হল হেঁটে যাওযা, অন্তরের যিনা হল আকৃষ্ট ও বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৪৮/ তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ৫. বনী আদমের যিনা ইত্যাদির অংশ পূর্ব নির্ধারিত
৬৫১২। ইসহাক ইবনু ইবরাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) … আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রা (রাঃ) যা বলেছেন, ‘লামাম’ (জাতীয় গোনাহ) সম্পর্কে তার চাইতে অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ কোন কিছু আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ আদম সন্তানের যিনার যে অংশ নির্ধারিত করেছেন, তা সে অবশ্যই পাবে (করবে)। আর দু’চোখের যিনা দৃষ্টিপাত করা, কানের যিনা শ্রবণ করা, জিহ্বার যিনা কথোপকথন করা, অন্তরে বাসনা করে। আর লজ্জাস্থান তা বাস্তবায়িত করে কিংবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।
আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) তাঊস (রহঃ) এর বর্ণনায় বলেছেন যে, আমি ইবনু আব্বাস (রাঃ) থেকে শুনেছি।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সহীহ মুসলিম (হাদীস একাডেমী)
৪৭। তাকদীর
পরিচ্ছেদঃ ৫. আদাম সন্তানের উপর ব্যভিচার ও অন্যান্য বিষয়ের অংশ পরিমিত
৬৬৪৬-(২০/২৬৫৭) ইসহাক ইবনু ইব্রাহীম ও আবদ ইবনু হুমায়দ (রহঃ) ….. আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) যা বলেছেন ‘লামাম (আকর্ষণীয় বড় গুনাহ) বিষয়ে তার চেয়ে অধিক সাদৃশ্যপূর্ণ কোন বিষয় আমি দেখিনি। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের যে ভাগ লিখেছেন, নিঃসন্দেহে তা সে পাবে। দু’চোখের ব্যভিচার দেখা, যবানের ব্যভিচার, পরস্পর কথোপকথনের ব্যভিচার, মনের ব্যভিচার কামনা-বাসনা করা। আর লজ্জাস্থান তা সত্যায়িত করে অথবা মিথ্যা সাব্যস্ত করে।
আবদ (রহঃ) তাউস এর বর্ণনায় বলেছেন যে, তিনি ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে শুনেছেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৫১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৫৬৩)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)
৬/ বিবাহ
পরিচ্ছেদঃ ৪৪. যে বিষয়ে দৃষ্টি সংযত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে
২১৫২। ইবনু ‘আব্বাস (রাযি.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ হুরাইরাহ (রাযি.) থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে বর্ণিত হাদীসের চাইতে সগীরাহ গুনাহ সম্পর্কিত কোনো হাদীস দেখিনি। তিনি বলেছেনঃ মহান আল্লাহ প্রতিটি আদম সন্তানের মধ্যে যিনার একটি অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন, যা সে অবশ্যই করবে। সুতরাং দৃষ্টি হচ্ছে চোখের যিনা, প্রেমালাপ হচ্ছে জিহবার যিনা এবং অন্তরের যিনা হচ্ছে তা ভোগ করার আকাঙ্ক্ষা, আর গুপ্তস্থান তা সত্য কিংবা মিথ্যায় পরিণত করে।(1)
সহীহ।
(1). বুখারী, মুসলিম।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ)

মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১ঃ ঈমান (বিশ্বাস)
পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ – তাকদীরের প্রতি ঈমান
৮৬-(৮) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মহান আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানের জন্য তার ব্যভিচারের অংশ লিখে রেখেছেন, সে তা নিশ্চয়ই করবে। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, জিহবার ব্যভিচার কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। আর মন চায় ও আকাঙ্ক্ষা করে এবং গুপ্তাঙ্গ তাকে সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে। (বুখারী, মুসলিম)(1)
কিন্তু সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনায় আছে, আদম সন্তানের জন্য তাক্বদীরে যিনার অংশ যতটুকু নির্ধারণ করা হয়েছে, সে ততটুকু অবশ্যই পাবে। দুই চোখের যিনা তাকানো, কানের যিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের যিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের যিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশে) স্পর্শ করা আর পায়ের যিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের যিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। আর গুপ্তাঙ্গ তা সত্য বা মিথ্যায় প্রতিপন্ন করে।(2)
(1) সহীহ : বুখারী ৬২৪৩, মুসলিম ২৬৫৭, আবূ দাঊদ ২১৫২, আহমাদ ৭৭১৯, সহীহ ইবনু হিব্বান ৪৪২০, ইরওয়া ১৭৮৭, সহীহ আল জামি‘ ১৭৯৭।
(2) সহীহ : মুসলিম ২৬৫৭।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

তথ্যসূত্র

  1. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫১৩ []
  2. সহীহ মুসলিম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিসঃ ৬৫১২ []
  3. সহীহ মুসলিম, হাদীস একাডেমী, হাদিসঃ ৬৬৪৬ []
  4. সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত), হাদিসঃ ২১৫২ []
  5. মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত), হাদিসঃ ৮৬ []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"