নবী মুহাম্মদের একটি হাদিস অনুসারে, সকালবেলা সাতটি উৎকৃষ্ট খেজুর খেলে সেটি সেইদিন বিষক্রিয়ার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এবং কোনো বিষাক্ত পদার্থ খাওয়ার পরেও ক্ষতি করবে না। এই ধরনের বক্তব্য ইসলামিক বিশ্বাস অনুসারে সত্য হিসেবে গ্রহণ করা হলেও, বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি সম্পূর্ণরূপে অবৈজ্ঞানিক এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে থাকা একটি উদ্ভট দাবি। খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল এবং এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে, কিন্তু এটি কোনোভাবেই বিষক্রিয়া প্রতিরোধে সক্ষম নয়। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বিষাক্ত পদার্থ, যেমন পটাশিয়াম সায়ানাইড, মানবদেহের সেলুলার শ্বাসপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে এবং মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এরকম একটি মারাত্মক বিষক্রিয়াকে কয়েকটি খেজুর খাওয়ার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। যদি এটি সত্যিই কার্যকরী হতো, তবে আজকের দিনে বিষক্রিয়ার চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে খেজুর বিতরণ করা হতো, যা আমরা কখনোই দেখি না। সুতরাং, এই হাদিসের ভিত্তিতে বিষ প্রতিরোধের ধারণা সম্পূর্ণরূপে অসার এবং অবৈজ্ঞানিক।
অন্যদিকে, এমন একটি বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য যদি কোন মুসলিমকে সকালে সাতটি উৎকৃষ্ট খেজুর খেয়ে পটাশিয়াম সায়ানাইড খাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাহলে কেউই এতে অংশগ্রহণ করতে রাজি হবেন না। যদিও তারা এই হাদিসকে মুখে সত্য বলে মেনে নেন, বাস্তবে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণ করার মতো সাহস তাদের নেই। এর কারণ হলো, বাস্তবিক জ্ঞান ও যুক্তি তাদের মনে গোপনে হলেও বলে দেয় যে, খেজুর খেয়ে বিষক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকা অসম্ভব। ফলে, মুখে নবী মুহাম্মদের হাদিসের প্রতি শত বিশ্বাসের দাবি করলেও এমন পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের জীবন নিয়ে পরীক্ষা করতে চান না। এটি প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় বিশ্বাসে যে সমস্ত অসঙ্গতিপূর্ণ বা অবৈজ্ঞানিক ধারণা রয়েছে, তা আসলে মানুষ মনের গভীরে সত্য হিসেবে বিশ্বাস করতে পারে না। কেবলমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি অন্ধ আনুগত্য এবং সামাজিকভাবে বিশ্বাসী পরিচিতি বজায় রাখার জন্যই তারা এসব ধারণা মেনে চলেন। তাই, খেজুরের মতো একটি সাধারণ ফলকে বিষের প্রতিষেধক হিসেবে প্রচার করা এবং সেটিকে সত্য বলে মেনে নেওয়া ধর্মের নামে মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিকে চরমভাবে অপমানিত করার শামিল। মানুষের উচিত এমন মিথ্যা বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে এসে বৈজ্ঞানিক চিন্তা এবং যুক্তির আলোকে সত্যকে নিরূপণ করা [1] [2] ( সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, ৫ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৪ ))-
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭৬/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ ৭৬/৫২. আজ্ওয়া খেজুর দিয়ে যাদুর চিকিৎসা প্রসঙ্গে।
৫৭৬৯. সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি সকালবেলায় সাতটি আজ্ওয়া মাদ্বীনায় উৎপন্ন উৎকৃষ্ট খুরমা) খেজুর খাবে, সে দিন কোন বিষ বা যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না। [৫৪৪৫] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৪)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)
সহীহ বুখারী (তাওহীদ পাবলিকেশন)
৭০/ খাওয়া সংক্রান্ত
পরিচ্ছেদঃ ৭০/৪৩. আজওয়া খেজুর প্রসঙ্গে।
৫৪৪৫. সা’দ তাঁর পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রত্যেকদিন সকালবেলায় সাতটি আজওয়া উৎকৃষ্ট খেজুর খাবে, সেদিন কোন বিষ ও যাদু তার ক্ষতি করবে না। [৫৭৬৮, ৫৭৬৯, ৫৭৭৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫০৪২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৯৩৮)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ সা’দ বিন আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ)
সুনান আত তিরমিজী (ইসলামিক ফাউন্ডেশন)
৩১/ চিকিৎসা
পরিচ্ছেদঃ মাসরুম ও আজওয়া খেজুর।
২০৭২. আবূ উবায়দা ইবন আবূ সাফার ও মাহমূদ ইবন গায়লান (রহঃ) …. আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আজওয়া হলো জান্নাতী খেজুর। এতে আছে বিষের প্রতিষেধক, মাসরুম হলো মান্নের অন্তর্ভুক্ত। এর পানি হলো চক্ষু রোগের প্রতিষেধক।
হাসান সহীহ, তাহকিক মিশকাত ছানী ৪২৩৫, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২০৬৬ [আল মাদানী প্রকাশনী]
(আবু ঈসা বলেন) এই বিষয়ে সাঈ ইবন যায়দ, আবূ সাঈদ ও জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকেও হাদীস বর্ণিত আছে। হাদীসটি এই সূত্রে হাসান-গারীব। সাঈদ ইবন আমির (রহঃ) -এর সূত্র ছাড়া মুহাম্মদ ইবন আমরের রিওয়ায়াত হিসাবে এটি সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই।
হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)

আসুন এই হাদিসের ইংরেজি অনুবাদ দেখে নেয়া যাক, [3]
muslim:2047b – Abū Bakr b. Abū Shaybah > Abū Usāmah > Hāshim b. Hāshim > ʿĀmir b. Saʿd b. Abū Waqqāṣ > Saʿd
He who ate seven ‘ajwa’ dates in the morning, poison and magic will not harm him on that day.
– Sound (Muslim)
bukhari:5445 – Jumʿah b. ʿAbdullāh > Marwān > Hāshim b. Hāshim > ʿĀmir b. Saʿd from his father
Messenger of Allah ﷺ said, “He who eats seven ‘Ajwa dates every morning, will not be affected by poison or magic on the day he eats them.”
– Sound (Bukhārī)
bukhari:5779 – Muḥammad > Aḥmad b. Bashīr Abū Bakr > Hāshim b. Hāshim > ʿĀmir b. Saʿd from my father
I heard Messenger of Allah ﷺ saying, “Whoever takes seven ‘Ajwa dates in the morning will not be effected by magic or poison on that day.”
– Sound (Bukhārī)
bukhari:5768 – ʿAlī > Marwān > Hāshim > ʿĀmir b. Saʿd from his father
The Prophet ﷺ said, “If somebody takes some ʿAjwa dates every morning, he will not be affected by poison or magic on that day till night.” (Another narrator said seven dates).
– Sound (Bukhārī)
bukhari:5769 – Isḥāq b. Manṣūr > Abū Usāmah > Hāshim b. Hāshim > ʿĀmir b. Saʿd > Saʿd
I heard Messenger of Allah ﷺ saying, “If someone takes seven ʿajwah dates in the morning, neither magic nor poison will hurt him that day.”
– Agreed Upon (Luʿluʿ wa-al-Marjān)

আসুন এই সম্পর্কিত একটি ভিডিও দেখে নিই,
তথ্যসূত্র
- সহীহ বুখারী, তাওহীদ পাবলিকেশন, হাদিস নম্বরঃ ৫৪৪৫ [↑]
- সুনান আত তিরমিজী, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, হাদিস নম্বরঃ ২০৭২ [↑]
- Sahih-al-bukhari, English, Vol-7 [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"