01.বিবর্তন-জাস্ট এ থিওরি?

বিবর্তন তত্ত্বকে নিয়ে সৃষ্টিতত্ত্ববাদী বা ক্রিয়েশনিস্টদের বেশ কিছু প্রচলিত অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে একটি সবচেয়ে সাধারণ অভিযোগ হচ্ছে, “বিবর্তন তত্ত্ব শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব, প্রমাণিত সত্য বা ফ্যাক্ট নয়”। এমনকি জাকির নায়েকের মতো ধর্মীয় বক্তারাও এই ধরনের বক্তব্য দিয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছেন। এই বক্তব্যগুলো শ্রোতাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং অনেকেই এর সত্যতা যাচাই না করেই মেনে নিয়েছেন। সেই ভিডিওতে জাকির নায়েক বলেছিলেন, বিবর্তন তত্ত্ব হচ্ছে জাস্ট এ থিওরি, কোন প্রতিষ্ঠিত সত্য বা ফ্যাক্ট নয়। এমনকি এটিও বলেছিলেন, বেশিরভাগ বিজ্ঞানীই নাকি বিবর্তন তত্ত্বকে মেনে নেয় নি। এই কথাগুলো এত বেশী জনপ্রিয়তা পায় যে, এরপরে অসংখ্য মানুষের মুখে আমরা একই কথা বারবার শোনা গেছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, যারা এগুলো বলে থাকেন, তাদের কেউই সায়েন্টিফিক থিওরি কাকে বলে, এর সাধারণ সংজ্ঞাটি কী, সেটি বলতে পারেন নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক এই কারণে যে, একটি সায়েন্টিফিক টার্ম ব্যবহার করতে হলে সেই সম্পর্কে যে নূন্যতম ধারণা থাকা জরুরি, সেটি না থাকার পরেও জাকির নায়েক থেকে শুরু করে হালের আরিফ আজাদ, সকলেই অল্পশিক্ষিত মানুষকে এসব শেখান এবং অল্পশিক্ষিত মানুষ যেহেতু যাচাই করতে ইচ্ছুক হন না, সেগুলোই মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন। বিবর্তন তত্ত্বকে সমর্থনকারীদের পক্ষে প্রমাণের পর্বত থাকা সত্ত্বেও, কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠী শুধুমাত্র ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাসের কারণেই এরকম করে থাকেন। এই নিবন্ধে আমরা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রকৃতি, বিবর্তন তত্ত্বের প্রমাণ এবং “তত্ত্ব” বলতে কী বোঝায়, তার বিস্তারিত বিশ্লেষণ করব। আসুন জাকির নায়েকের বক্তব্য শুরুতেই শুনে নেয়া যাক,


বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং সায়েন্টিফিক পদ্ধতি

সায়েন্টিফিক থিওরি বা বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব শব্দটি অনেকের কাছে ভুল ধারণার জন্ম দেয়। সাধারণ কথোপকথনে “তত্ত্ব” বলতে মানুষ একটি অনুমান বা ধারণাকে বোঝায়, কিন্তু বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তত্ত্বের সংজ্ঞা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমেরিকার জাতীয় বিজ্ঞান একাডেমির মতে, “বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হল প্রাকৃতিক কোনো একটি ঘটনা বা বাস্তবতার (phenomenon) প্রতিপাদিত ব্যাখ্যা।” [1]। এটি অনুমান বা ধারণা নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরীক্ষার ফলাফল।

বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের ভিত্তি তৈরি হয় পর্যবেক্ষণ এবং অসংখ্যবার পরীক্ষার মাধ্যমে। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রাকৃতিক ঘটনার (যেমন আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়ে) কারণ ব্যাখ্যা করার জন্য একটি অনুকল্প বা হাইপোথিসিস গঠন করেন। এই হাইপোথিসিসকে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে দেখা হয়। যদি হাইপোথিসিসটি পরীক্ষার মাধ্যমে সত্য প্রমাণিত হয় এবং এটি ভবিষ্যতেও প্রায় একইভাবে পুনরাবৃত্তি হয়, ভবিষ্যতে এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কী ঘটবে সেটিও যদি যৌক্তিকভাবে ব্যাখ্যা করে এবং যৌক্তিক ভবিষ্যতবাণী করে, তাহলে সেটিকে তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণ করা হয়।

বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উদাহরণ হিসেবে নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব উল্লেখ করা যেতে পারে। আমরা জানি, আপেল গাছ থেকে নিচে পড়ে। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা এবং আমরা এ ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করতে পারি, যা একটি ফ্যাক্ট। কিন্তু কেন এটি ঘটে, তা বোঝার জন্য নিউটন মহাকর্ষ তত্ত্ব উদ্ভাবন করেন, যা পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। একাধিক বার পরীক্ষার পরও এই তত্ত্ব ভুল প্রমাণিত হয়নি, ফলে এটি একটি সায়েন্টিফিক থিওরি হিসেবে স্বীকৃত।

বিবর্তন তত্ত্ব: ফ্যাক্ট এবং তত্ত্ব উভয়ই

বিবর্তন তত্ত্বকে অনেকেই শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব বলে ভুল করে, কিন্তু এটি আসলে একই সাথে একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং প্রমাণিত বাস্তবতা [2] [3]। বিবর্তন তত্ত্ব মূলত জৈবিক জীবগুলোর পরিবর্তন এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন প্রজাতির উদ্ভবের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া বর্ণনা করে। এটি বহু পর্যবেক্ষণ, ডিএনএ বিশ্লেষণ, ফসিল রেকর্ড এবং জীববিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার গবেষণার মাধ্যমে সমর্থিত।

বিবর্তন একটি প্রক্রিয়া হিসেবে অবিরাম পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, জীববিজ্ঞানে এক ধরনের মাইক্রো-বিবর্তন আমরা দেখতে পাই, যেমন জীবাণুদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের উদ্ভব। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার শুরু হলে জীবাণুগুলোর মধ্যে যেসব প্রজাতি অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী নয়, তারা ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং প্রতিরোধী প্রজাতিগুলো টিকে থাকে। এটি জীববিজ্ঞানের প্রাথমিক স্তরে বিবর্তনের সরাসরি প্রমাণ।

সৃষ্টিবাদের ভুল যুক্তি: বিবর্তন কেবল একটি তত্ত্ব?

সৃষ্টিবাদীরা প্রায়ই একটি সুনির্দিষ্ট ভুল যুক্তি প্রদান করে, তা হলো, “বিবর্তন কেবল একটি তত্ত্ব, এটি কোন ফ্যাক্ট নয়।” তারা বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা জানে না অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যায়। জাকির নায়েক তার বক্তৃতায় দাবি করেন, “বিবর্তন তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত সত্য নয়, বরং শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব।” তার এই বক্তব্যে বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের প্রকৃত অর্থ এবং এর গুরুত্ব সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে, একইসাথে বিজ্ঞানের একটি বিষয় নিয়ে মারাত্মক মিথ্যাচারের মাধ্যমে অন্ধবিশ্বাসী অল্পশিক্ষিত কিছু মানুষকে বোকা বানানো হয়েছে। এই বক্তব্যের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া অনেক ছাত্রছাত্রীই আজকাল বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বলতে আসলে কী বোঝায়, তা বুঝতে সক্ষম হন না। তারা মনে করেন, বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব শুধু কিছু মানুষের মনগড়া ধারণা মাত্র! যা মারাত্মক ভুল!

একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এবং সাধারণ তত্ত্বের মধ্যে পার্থক্য বোঝা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব অনেক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা এবং প্রমাণের ভিত্তিতে গঠিত হয়। বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব নির্ভুল প্রমাণ ও পর্যবেক্ষণ ছাড়া তৈরি হয় না। এটির প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছ এবং পুনরাবৃত্তিযোগ্য, এবং তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল দেখাতে সক্ষম।

বৈজ্ঞানিক ফ্যাক্ট, হাইপোথিসিস এবং তত্ত্বের পার্থক্য

সঠিকভাবে বিবর্তন তত্ত্ব বুঝতে হলে, আমাদের প্রথমে “ফ্যাক্ট”, “হাইপোথিসিস”, “থিওরি” এবং “ল” শব্দগুলোর পার্থক্য স্পষ্টভাবে বুঝতে হবে।

  • ফ্যাক্ট বা পর্যবেক্ষণযোগ্য উপাদান
    • বিজ্ঞানের জগতে ফ্যাক্ট হচ্ছে সরাসরি ইন্দ্রিয় দ্বারা পর্যবেক্ষণযোগ্য বিষয়াদি।ফ্যাক্ট হলো প্রাকৃতিক বাস্তবতা, যা সরাসরি পর্যবেক্ষণযোগ্য। যেমন, “পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘোরে” এটি একটি প্রমাণিত সত্য বা ফ্যাক্ট। যেমন ধরুন, একটি আপেল গাছ থেকে নিচের দিকে পড়ে। উপরের দিকে উড়ে চলে যায় না। এটি একটি ফ্যাক্ট। এটি পৃথিবীর সকল গাছের জন্য সত্য, সকল আপেল কমলা কলা সবকিছুর জন্য একই ফলাফল আসবে। এগুলো সবই হচ্ছে ফ্যাক্ট। এর ওপর ভিত্তি করে এর কারণ ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হবে, কেন এটি ঘটছে সেই বিষয়ে কিছু ধারণা বা অনুমান তৈরি করতে হবে। সেই ধারণা বা অনুমানগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করলে সেই ধারণা বা অনুমানটিকে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প বা হাইপোথিসিস বলা হবে।
  • অনুকল্প বা হাইপোথিসিস
    • অনুকল্প হলো কোনো একটি ঘটনা বা বিষয়ের একটি প্রস্তাবিত ব্যাখ্যা বা বিবরণ।অর্থাৎ হাইপোথিসিস হলো একটি প্রাকৃতিক ঘটনার সম্ভাব্য ব্যাখ্যা বা ধারণা, যা সত্যও হতে পারে, ভুলও হতে পারে। কোনো অনুকল্পকে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প হতে হলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুযায়ী এটিকে পরীক্ষাযোগ্য হতে হবে, পরীক্ষার সময় কীভাবে পরীক্ষাটি করা হচ্ছে সেটি উল্লেখ করে দিতে হবে এবং এর ফলসিফায়েবিলিটি উল্লেখ করে দিতে হবে। যেন পৃথিবীর যেকোন প্রান্তের মানুষ সেটিকে পুনরায় পরীক্ষানিরীক্ষা করে এর সত্যতা যাচাই করতে পারেন। সেই অনুকল্প বা হাইপোথিসিসটি পূর্ববর্তী পর্যবেক্ষণসমূহের ওপর নির্ভর করে গড়ে উঠলেই তাকে বৈজ্ঞানিক হাইপোথিসিস বলা হবে এবং সেটি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা হবে। বৈজ্ঞানিক অনুকল্প আর বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব এক জিনিস নয়। একটি কার্যকর অনুকল্প হলো বিস্তারিত গবেষণার জন্য অস্থায়ীভাবে গৃহীত একটি অনুকল্প। এটিকে নিয়ে বারবার পরীক্ষা করা হবে, এবং কোন পরীক্ষায় যদি একটি বারও সেটি ভুল প্রমাণ করা যায়, সেটিকে বাতিল করে দেয়া হবে। কিন্তু যদি সবগুলো পরীক্ষায় সেটি উত্তীর্ণ হয়, এবং একইসাথে ভবিষ্যতে কী ঘটবে সেই সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য দিতে পারেন, তখন সেটিকে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সায়েন্টিফিক থিওরি হিসেবে মনোনীত করা হতে পারে।
    • উপরে বর্ণিত ফ্যাক্টের আলোচনায় আমরা দেখেছিলাম, আপেল গাছ থেকে নিচের দিকে পড়ে। সেটি ছিল পর্যবেক্ষণযোগ্য উপাদান বা ফ্যাক্ট। এর ওপর ভিত্তি করে ধরুন দশজন বিজ্ঞানী দশ ধরণের অনুমান করতে পারেন। এর কারণ ব্যাখ্যার চেষ্টা করতে পারেন। সেই ধারণা বা অনুমানগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে করা হলে, সেগুলোকে বৈজ্ঞানিক অনুকল্প বা সায়েন্টিফিক হাইপোথিসিস বলা হবে।
  • বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সায়েন্টিফিক থিওরি
    • একটি বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হলো কোন প্রাকৃতিক ঘটনার এমন ব্যাখ্যা, যা পর্যবেক্ষণ, পরিমাপ এবং ফলাফলের মূল্যায়নের সময় অবজেকটিভ বা নৈর্ব্যক্তিক, বৈজ্ঞানিক ও স্বীকৃত উপায় ব্যবহার করা হয় এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বারবার পরীক্ষানিরীক্ষা ও যাচাই বাছাইয়ের পরে যেই সিদ্ধান্তে আসা হয়। থিওরি হলো একটি সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যাখ্যা যা অনেকগুলি পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। এটি পরীক্ষার সময় প্রমাণিত এবং পুনরাবৃত্ত হতে সক্ষম। প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্বগুলি কঠোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এবং আমাদের প্রকৃতিকে ব্যাখ্যা করেছে। অনেক বিজ্ঞানী অনেক ধরণের অনুকল্প বা হাইপোথিসিস দিতে পারেন, সেগুলোকে বারবার পরীক্ষানিরীক্ষা করা হয় এবং সবগুলো পরীক্ষায় সেটি অনুকল্প বা হাইপোথিসিসকে সমর্থন করলে, কোথাও ভুল প্রমাণ করা না গেলে, ভবিষ্যতে কী ঘটবে বা ফিউচার প্রেডিকশন দিতে পারলে তাকে তখন থিওরি হিসেবে গন্য করা হয়। প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব সাধারণ কোন অনুমান বা ধারণা নয়, বরঞ্চ বিজ্ঞানের জগতে সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ একটি বিষয়।
    • গাছ থেকে আপেল নিচের দিকে পড়ার প্রাকৃতিক পর্যবেক্ষণযোগ্য ঘটনা বা ফ্যাক্ট থেকে অনেকে অনেক অনুমান বা ধারণা দিয়ে বিষয়টি ব্যাখ্যার চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু সেই সব অনুমান বা ব্যাখ্যার মধ্যে স্যার আইজ্যাক নিউটনের গ্রাভিটেশনাল থিওরি বা তত্ত্বটি সবগুলো পরীক্ষানিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে, কোন পরীক্ষায় এটিকে ভুল প্রমাণ করা যায় নি, এবং মঙ্গল গ্রহে আপেলটি কীভাবে নিচের দিকে পড়বে, সেটিও বোধগম্য হয়েছে। এর ওপর ভিত্তি করে নিউটনের সেই হাইপোথিসিসটিকে থিওরির মর্যাদা দেয়া হয়েছে। যদি একটি পরীক্ষাতেও কোন ভুল পাওয়া যেতো, তাহলে সেটিকে আর থিওরি হিসেবে গণ্য করা হতো না।
  • সায়েন্টিফিক ল’ বা সূত্র
    • একটি প্রতিষ্ঠিত বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব বা সায়েন্টিফিক থিওরি যখন কোন ঘটনাকে ব্যাখ্যা করতে পারে, তখন সেই ব্যাখ্যার ওপরে নির্ভর করে মাঝে মাঝে কিছু সূত্র দেয়া হতে পারে। যেমন, উপরের আপেল নিচের দিকে পড়ার ঘটনাটির ক্ষেত্রে একটি সূত্র দেয়া হতে পারে যে, আপেলটি কী গতিতে নিচের দিকে পড়বে। সেই গতিকে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হতে পারে। তবে সকল থিওরি থেকেই যে সূত্র বা ল’ আসবে, এমন কোন কথা নেই।

বিবর্তন

বিবর্তন তত্ত্বের সত্যতার প্রমাণ

বিবর্তন তত্ত্বের প্রমাণ অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং বৈচিত্র্যময়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রমাণসমূহ হলো:

  1. ফসিল রেকর্ড: পৃথিবীর ভূতাত্ত্বিক স্তরগুলোতে বিভিন্ন সময়ে প্রাণীর বিবর্তনকে পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। বিশেষ করে ট্রানজিশনাল ফসিলগুলো যেমন “আরকিওপটেরিক্স” যা সরীসৃপ ও পাখির মধ্যে একটি সংযোগ প্রদান করে, জীবের ক্রমান্বয় বিবর্তনকে নির্দেশ করে।
  2. জিনগত প্রমাণ: জীবের জিনগত ডিএনএ বিশ্লেষণ করে প্রমাণিত হয়েছে যে, বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ডিএনএ এর মিল রয়েছে, যা তাদের একটি সাধারণ পূর্বপুরুষের থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে ইঙ্গিত দেয়।
  3. ভূগোলিক বিতরণ: ভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে একই ধরনের প্রাণীর ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, যেমন চার্লস ডারউইনের বিখ্যাত গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জে ফিঞ্চ পাখির বিবর্তন। এখানে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেয়ার জন্য একই প্রজাতির পাখি বিভিন্ন দ্বীপে ভিন্ন ধরনের ঠোঁটের আকার ধারণ করেছে।
  4. মাইক্রো বিবর্তন: আধুনিক জীববিজ্ঞানে মাইক্রো বিবর্তনের উদাহরণ, যেমন ব্যাকটেরিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধ ক্ষমতা, বিবর্তনের সরাসরি প্রমাণ দেয়। এখানে প্রতিরোধী জীবাণুগুলো বেঁচে থেকে প্রজনন করে, ফলে বিবর্তন ঘটে।

বিবর্তন তত্ত্বের বিরুদ্ধে সাধারণ ভ্রান্তি

বিবর্তন তত্ত্বকে ঘিরে কিছু সাধারণ ভুল ধারণা রয়েছে, যেমন:

  • মানুষ বানর থেকে এসেছে: এই ভ্রান্তি একটি প্রচলিত ভুল ধারণা। বিবর্তন তত্ত্বে বলা হয় না যে মানুষ সরাসরি বানর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। বরং মানুষ এবং আধুনিক বানরদের একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিল, যা থেকে উভয় প্রজাতির বিবর্তন হয়েছে।
  • বিবর্তন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে: বিবর্তন একটি উদ্দেশ্যপূর্ণ প্রক্রিয়া নয়। এটি প্রাকৃতিক নির্বাচন, জেনেটিভ ভ্যারিয়েশন এবং পরিবেশগত চাপের ওপর নির্ভর করে।

উপসংহার

বিবর্তন তত্ত্ব শুধুমাত্র একটি তত্ত্ব নয়, এটি বহু প্রমাণের উপর ভিত্তি করে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান। সৃষ্টিবাদী যুক্তিগুলো বিজ্ঞানসম্মত নয়, বরং ধর্মীয় বিশ্বাস দ্বারা পরিচালিত। প্রকৃত বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বিবর্তন তত্ত্বকে সমর্থন করে, এবং এটি বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য ও স্বীকৃত।


তথ্যসূত্র

  1. 15 Answers to Creationist Nonsense []
  2. Evolution as fact and theory []
  3. বাস্তবতা ও তত্ত্ব হিসেবে বিবর্তন []


সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"