বর্তমান সময়ে আমরা যেই কোরআন দেখি, সেটি সংকলন করেছিলেন ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান। সংকলনের পরে হযরত উসমান ঘোষণা দিলেন যে, যার কাছে যত কোরআন আছে সেগুলো সব পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যখন কুফাতে শোনা গেল যে, তাদের কাছে সংরক্ষিত সব কোরআনের আয়াত পুড়িয়ে দিয়ে শুধুমাত্র যায়েদ ইবন সাবেতের মুসহাফ এখন থেকে ব্যবহার করতে হবে, আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ এর বিরোধিতা করলেন। এই হুকুম শুনে তিনি কুফা শহরে এইভাবে খুৎবা দিলেন [1] –
কোরআনের পাঠে লোকেরা ছলনার দোষে পরেছে। আমি এর পাঠ বেশি পছন্দ করি (মুহাম্মদের), যার পাঠ আমি যায়েদ বিন সাবেতের পাঠ থেকে বেশি ভালবাসি। আল্লাহ্র কসম! যিনি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই। আমি আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ)-এর মুখ থেকে সত্তরেরও বেশী সূরা শিখেছি যখন যায়েদ ইবন সাবেত যুবক ছিলেন, এর মাত্র দুইটি কেশপাশ চুল ছিল এবং যুবকদের সাথে তখন খেলা করতেন।”
মুহাম্মাদ ইবনে ঈসা আত-তিরমিজি লিখেছেন [2] [3] –
যুহরী (র) বলেনঃ ইবায়দুল্লাহ্ ইবনে আব্দুল্লাহ্ ইবনে উতবা বলেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রা) যায়েদ ইবনে ছাবিতের এ তৈরী কপি পছন্দ করেন নি। তিনি বলেছেনঃ “হে মুসলিম সম্প্রদায়!” কুরআনের মুসহাফ লিপিবদ্ধ করার কাজে আমাকে দূরে রাখা হয়েছে আর এর দায়িত্ব বহন করেছে এমন এক ব্যক্তি যে আল্লাহ্র শপথ আমি যখন ইসলাম গ্রহণ করি তখন সে ছিল এক কাফিরের ঔরসে। (এই কথা বলে তিনি যায়েদ ইবনে ছাবিতের দিকে ইঙ্গিত করেছেন)। আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ (রা) বলেছেনঃ হে ইরাকবাসী! তোমাদের কাছে যে মুসহাফগুলো রয়েছে সেগুলো লুকিয়ে রাখ।
ইবনে আবু দাউদের কিতাবুল মাসাহিফ গ্রন্থে আছে যে ইবনে মাসউদ বলতেন [4] –
আমি সরাসরি আল্লাহ্র রাসূল (সাঃ) থেকে সত্তর সূরা পেয়েছি যখন যায়েদ বিন সাবেত তখনও একজন বাচ্চা মানুষ ছিল—এখন আমি কি ত্যাগ করব যেটা আমি আল্লাহ্র রাসূল থেকে সরাসরি পেয়েছি?”
উসমানের এই সংকলন কী অন্যদের কাছে বিতর্কের উর্ধ্বে ছিল? ইসলামের অনুসারী অন্যান্য সাহাবীগণ কী উনার এই সংকলনের পদ্ধতি সম্পর্কে একমত ছিলেন? সেটি ইসলামের ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তর জানতে, আমাদের জানা দরকার, হযরত উসমানের মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল। [5]
প্রশ্ন হচ্ছে, খলিফা উসমানকে কিতাবুল্লাহ বা কোরআনে পরিবর্তনের অভিযোগে অভিযুক্ত কারী এই মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে ছিলেন? হ্যাঁ, তিনি ছিলেন খোদ প্রথম খলিফা হযরত আবু বকরের সন্তান এবং অত্যান্ত ধার্মিক একজন মুসলিম হিসেবে যিনি ছিলেন বিখ্যাত।
তথ্যসূত্র
- কিতাবুল তাবাকাত আল-কবির, ইবন সা’দ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৪৪ [↑]
- জামিউত তিরমিযী, সোলেমানিয়া বুক হাউস, পৃষ্ঠা ৮৫১ [↑]
- Jami’ at-Tirmidhi Vol. 5, Book 44, Hadith 3104 [↑]
- কিতাবুল মাসাহিফ, ইবন আবি দাউদ, পৃষ্ঠা ১৫ [↑]
- আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, আল্লামা ইবনে কাসীর, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সপ্তম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৩২-৩৩৩ [↑]
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৪ "সংশয় - চিন্তার মুক্তির আন্দোলন"